কবি নজরুল আর আমি

আরজু মুক্তা ১৭ আগস্ট ২০১৯, শনিবার, ১১:৪৯:৪৯অপরাহ্ন গল্প ৩৬ মন্তব্য

২০১৩! ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে মাগুরা যাচ্ছি। মাইক্রোতে করে ভোর চারটায় রওনা হয়ে পৌঁছিলাম বিকেল চারটায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে, পেটপুরে খেয়ে রওনা হলাম সন্ধ্যে ছ'টায়। তখন জানুয়ারি মাস। প্রচণ্ড ঠান্ডা।আমরা সবাই জড়োসরো হয়ে ঝিমাতে ঝিমাতে যাচ্ছি। ঘ্যাঁস শব্দ করে গাড়ি থামলো। এমন জায়গায় গাড়ি নষ্ট হলো।আশেপাশে খেজুর আর তালগাছ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছেনা। ড্রাইভার বলে, কেউ নামিয়েন না; চলনবিল এলাকা। সর্বহারাদের উৎপাত আছে।

মনে মনে বলি, ঐ ব্যাটা কারে ভয় দেখাস। আমার বাথরুম, খিদা দুটাই লাগছে। বললাম, তুমি গাড়ি ঠিক করো আমি বাথরুম সারি।

আপা, এখানে বাথরুম কই পাবেন?

তুমি তোমার কাজ করো।

হাঁটতে হাঁটতে দেখি , আলো জ্বলছে। ভাবলাম, একটা কাজ হবে।

এক্সকিউজ মি ! আছেন কেউ?

একজন লোক এলো,  বলুন।

এখানে কি ওয়াসরুম আছে?

শুধু ওয়াস কেনো? আপনি খাবারও পাবেন।

এ তো দেখি, মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ভেতরে ঢুকে দেখি শুনশান নিরবতা। ভাবলাম এতো রাতে মানুষ আসবো কই থেকে?

ওয়াসরুম থেকে এসে , বললাম: কি খাবার আছে?

ম্যাডাম, আজ অফার আছে!

যেমন?

আজ প্ল্যানচেট করে আত্মা ডাকা হবে তাকে,আপনি যার সাথে ডিনার করতে চান! যেমন , নজরুল, মেরিলিন মনেরো অথবা রবার্ট ব্রুচ।

দারুণ তো ?

নজরুল ইসলাম কে আনেন!

ওকে , ম্যাডাম। আর খাবার?

পরোটা, কাবাব আর রায়তা।

পনেরো মিনিট লাগবে!

আচ্ছা!!!!

এমন সময় তিনজন লোক এলো । ঘর অন্ধকার করে আত্মা ডাকা শুরু করলো। আমি তো ভাবলাম ভুয়া। কিন্তু ,না! ঠিকই হাজির,  কবি নজরুল।

একটা স্বল্প আলোর বাতি জ্বালানো হলো। লম্বা চুল নিয়ে আমার সামনে বসে, জাতীয় কবি !গান বাজছে, "চমকে চমকে ধীরু ভীরু পায়, পল্লী বালিকা বন পথে যায়!"

 

আমি প্রথমে কথা বললাম। কেমন আছেন?

বুড়ো হয়ে গেছি, কেমন আর থাকবো?

আপনার ' লিচু চোর ' কবিতাটা আবৃত্তি করে আমি প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম। কেমনে লিখেছিলেন?  আচ্ছা আপনিও কি কখনো ওভাবে লিচু চুরি করেছিলেন?

হুম, না করলে লিখলাম কিভাবে?

তাঁর স্মিত হাসি আর কোঁকড়ানো চুল কিন্তু মুখটা বলি রেখায় পরিপূর্ণ । জানেন, আমাদের পাড়ার লুসি আপা আপনার "কারার ঐ লৌহ কপাট" গানটার সঙ্গে যা নাচতো, পুরা পাড়া কাঁপতো, ওনার নাচের ছন্দে।

উনি বললেন,"তোমার মনে অনেক প্রশ্ন ,তাইনা! জানো, একটা প্রশ্ন উদয় হলে, ওটার উত্তরের জন্য কতো তত্ত্ব তালাশ করতে হয়। তবে,সবসময় সত্য আর সুন্দরের পূজারি হবে।

আমি তো হা করে ওনার কথা শুনছি। উনি বললেন, খাও। খাবার তো ঠাণ্ডা হচ্ছে।

কি আর করা লক্ষ্মি মেয়ের মতো খাওয়া শুরু করলাম। মনে হচ্ছে অমর্ত্যলোকে সবকিছু ঘটছে।

হঠাৎ গাড়ির হর্ণ। আমার মতো কবিও ব্যতিব্যস্ত । কে আসলো?

মনে হয় ,আমাদের গাড়ি।

কবি বললেন, মনে রাখবে, সবকিছুর থেকে দেশ বড়! দেশের কথা ভাববে। যেমন ভাবো মায়ের কথা!

ওয়েটার তাগাদা দিচ্ছে । আমি বিল দিয়ে বাহিরে এলাম। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে।

ম্যাডাম, এখানে এতোক্ষণ কি করলেন?

কেনো? খেলাম!

ও কেমন জানি ভীত চোখে আমার দিকে তাকালো। আরে এইটা তো ভাঙ্গাচোড়া বাড়ি!

আমিও ফিরে দেখি ,তাইতো! জীর্ণ শীর্ণ একটা বাড়ি !

আর বকলাম না! চুপচাপ গাড়িতে বসলাম। এফ এম রেডিও তে বাজছে,"মোর প্রিয়া হবে, এসো রাণী; দেবো খোঁপায় তারার ফুল!"

 

0 Shares

৩৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ