পৃথিবীর পথে পথেঃ ভ্রমণ কাহিনী, নরওয়ে, সাল ২০১৮
"I want to travel. Maybe I'll end up living in Norway"
সাল টা ২০২০ , একটা ভয়াবহ সময় পার করছে সারা পৃথিবীর মানুষ জাতির । যা ইতিহাসে লেখা থাকবে একটা দুর্বিষহ ঘটনা হিসেবে।
কি সেটা? 'Covid ২০১৮'
হ্যাঁ কভিডের কথায় বলছিলাম । স্থান টি ব্রিটেন আর আমরা সেখানে । হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। আমরা ঘরে বন্দী।কিছুদিন আগেই প্রথম ঢেউ এসেছিল । শোনা যাচ্ছে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে।
আমরা আর কতদিন এভাবে গৃহবন্দী হয়ে থাকবো?
সে সময় আল্লাহ্ আমাদের জন্য একটা বাঁচবার পথ খুলে দিলো।
কি সেটা?
সেটায় এখন বলব।
আমাদের মেয়ে জামাই সে সময় ডাক্তার হিসেবে নরওয়ে পোস্টিং। জামাই আমাদের কে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো । আল্লাহ্র বিরাট কুদরত যেন জামাই এর হাত দিয়ে আমারাকে দিলেন।সেই বিভীষিকাময় সময়ে আমরা পালাতে পেরেছিলাম নরওয়ের প্রকৃতির মাঝে । এখন সেই সুন্দর নরওয়ের কথা বলব ।
" ইউরোপের স্বর্গরাজ্য শুধু নয় পৃথিবীর স্বর্গ "
এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে ব্রিটেন থেকে এতো কাছে যে একটি দেশ আছে তা আমার কল্পনায় ছিলনা। এখানে না এলে জানতাম না সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই নরওয়ের কথা।
মানুষ এতো কম। শুধু পাহাড় আর পাহাড় আর তা ঢাকা লম্বা লম্বা পাইন গাছদিয়ে। চারদিকে পাইন গাছের ফরেস্ট । শুধু ফরেস্ট আর ফরেস্ট । প্রায় সব মানুষ নেপাল জানে , সুইজারল্যান্ড জানে, জানে কাশ্মীর। কিন্তু নরওয়ের সৌন্দর্জ সম্বন্ধে তেমন প্রচার প্রচারণা নাই। মনে হয় এখাকার মানুষ প্রচার বিমুখ।
আমাদের কাঠের দুইতলা চার বেড রুমের বাড়িটা একটা টিলার উপরে । যে দিকে চাও শুধু সবুজ পাইন গাছের ফরেস্ট দিয়ে ঢাকা পাহাড় । মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে ছুটে চলেছে একটা পানির প্রবাহ ,চারদিকের পানি সংগ্রহ করে ঝির ঝির শব্দে আপন গতিতে ছুটে চলেছে।
একেক সময়ে একেক রূপ নিচ্ছে। যখন টেম্পারেচার মাইনাস হয়ে যায় তখন এর পানি জমে আইস হয়ে যায়। আর যেখানে উঁচু থেকে পানি নিচে যাচ্ছে একটা ঝর্না সৃষ্টি করে তখন তার এই পড়ন্ত পানি জমে আইস ফল করছে। যা আগে দেখিনাই। ছোটো ছোটো লেক গুলো সব সাদা শক্ত আইসে পরিণত হয়ে যায় ।তখন তার উপর দিয়ে হেঁটে এপার ওপার করা যায়। সে এক মজার ব্যাপার। দুই হাঁটু উঁচু ধবধবে সাদা স্নো পড়ে শীত কালে। তার উপর দিয়ে হাঁটতে যে মজা। চারদিকে বিস্তৃত সাদা ধবধবে নরম স্নো। যার উপর শুয়ে থাকতে যে আরাম। এক অন্য রকম সৌন্দর্জের সৃষ্টি করে।
ঠাণ্ডা ?
তা মোটেও নয় । যদি থাকে শীত উপযোগী কাপড় । যার প্রস্তুতি নরওয়ে যেয়েই কিনে নিতে হয়েছে। স্পেশাল জুতো আর নরম গরম কান আর গলা ঢাকা টুপি ।
নরওয়ে আর্টিক অঞ্চলের মধ্যে। আর্টিক অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে থাকা দেশ। যেমন উত্তর কানাডা, নেদারল্যান্ড,সুইডেন, ফিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড আর আইসল্যান্ড ।
নরওয়েতে মানুষ খুব কম। সে হিসেবে সম্পদ বেশি যার ফলে মানুষের মাথা পিছু আয় অনেক। কি সেই সম্পদ? তেল । পৃথিবীর প্রথম ১০ ধনী দেশের মধ্যে নরওয়ে একটি। তার উপরে আছে গুড গভর্নমেন্ট । করাপসান নাই, নারী আর শিশু ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি। যে চাকরী হোক না কেন , ইনকামের মধ্যে খুব তফাৎ নাই। কারন সব কাজ কেই মর্যাদা দেয়া হয়। সবায় যাতে ভালো মতো খেয়ে পরে বাঁচতে পারে এটাই সরকারের উদ্দেশ্য ।
ক্রাইম রেট এতো কম যা না গেলে জানতাম না। আমাদের কাজ ছিল প্রতিদিন জংগলে দুইবার করে ঘোরা একবার সকালে নাস্তার পর আর একবার বিকালে । মাঝে মাঝে সন্ধ্যা লেগে যেতো জংগলের মধ্যে। নির্ভয়ে চলাফেরা করতাম। একটা বিড়ালও সেখানে নিরাপদ। খুনখারাবি তো দূরের কথা ছিন্তাইও নাই। মানুষের মনে এসব আসেওনা।
পৃথিবীর মধ্যে নরওয়ের সব চেয়ে শান্তির দেশ। পড়াশুনার শেষে চাকরী পাওয়া যাবেই যা একেবারে গ্যারান্টি পুর্ন। মারামারি হানাহানি নায়। নারীর সন্মান আছে। কেউ অসুখী নয়। চিকিৎসা, স্কুল ফ্রি।
ধর্ম নিয়ে এরা মাতামাতি করেনা। তাদের মতে এটা যার যার ব্যাক্তি গত ব্যাপার। বাইরে থেকে যাওয়া মানুষ সন্মানের সাথে থাকে । রেসিস্ট মোটেও নয়। সরকার থেকেই আইন করা আছে সবায়কে সন্মানের সাথে ব্যাবহার করতে হবে।
এরা জীবনকে সহজ ভাবে নায়। সকাল থেকে শুধু কাজ করো এটা তারা পছন্দ করেনা। কাজের পর 'রিল্যাক্স একটা অতি জরুরী'' এই দর্শনে বিশ্বাসী তারা। প্রায় প্রত্যেকের দুটো করে বাড়ি । একটা যেখানে কাজ সেখানে আর একটা গভীর জংগলে বা বিছিন্ন দ্বীপে বা ফিওডের ধারে। ছুটির দিনে সেই বাড়িতে তারা থাকে বিশেষ করে যখন চারদিকে বরফে সাদা হয়ে যায় সে সময় । কাঠের গুঁড়ি দিয়ে বানানো বাড়ি গুলো বাইরে ঠাণ্ডা থাকলেও ভিতরে আরামদায়ক । সে ভাবে বানানো। যেমন ফ্লোরের নিচে ইলেকট্রি সিটি দিয়ে ঘর গরম রাখার ব্যাবস্থা আছে।
সেখানে জানালা দিয়ে স্নো দ্যাখে। জংগল দ্যাখে আর মন কে শান্তি দায়। যা একটা মেডিটেসানের কাজ করে। পাহাড় ,স্নো , জংগল, সমুদ্র, ফিয়ড এই পাঁচটি নরওয়ের বৈশিষ্ট্য ।
নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শীতকাল। কিন্তু আকাশ নীল থাকে, থাকে রোদ। শীত কাল কে এরা ভয় করেনা। কারন তখন আরও মজা করার ব্যাবস্থা করে নিয়েছে।
কি সেগুলো ?
উইন্টার স্পোর্ট, বরফের উপর দিয়ে স্কি করা, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে স্নো এর উপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া। স্পেশাল গাড়ী দিয়ে।
রাস্তা এয়ার পোর্ট এগুলো একটু পর পর স্নো পরিষ্কার গাড়ী দিয়ে সরিয়ে ফেলে। তাই গাড়ী চালানর অসুবিধা নায়। যেমন সমস্যা তেমন সমাধানও আছে। আছে টেকনোলজি ।
পৃথিবীর পথে পথেঃ ভ্রমণ কাহিনী, নরওয়ে, সাল ২০১৮, ১ম পর্ব
"I want to travel. Maybe I'll end up living in Norway"
সাল টা ২০২০ , একটা ভয়াবহ সময় পার করছে সারা পৃথিবীর মানুষ জাতির । যা ইতিহাসে লেখা থাকবে একটা দুর্বিষহ ঘটনা হিসেবে।
কি সেটা? 'Covid ২০২০ '
হ্যাঁ কভিডের কথায় বলছিলাম । স্থান টি ব্রিটেন আর আমরা সেখানে । হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতিদিন। আমরা ঘরে বন্দী।কিছুদিন আগেই প্রথম ঢেউ এসেছিল । শোনা যাচ্ছে আবার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে।
আমরা আর কতদিন এভাবে গৃহবন্দী হয়ে থাকবো?
সে সময় আল্লাহ্ আমাদের জন্য একটা বাঁচবার পথ খুলে দিলো।
কি সেটা?
সেটায় এখন বলব।
আমাদের মেয়ে জামাই সে সময় ডাক্তার হিসেবে নরওয়ে পোস্টিং। জামাই আমাদের কে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো । আল্লাহ্র বিরাট কুদরত যেন জামাই এর হাত দিয়ে আমারাকে দিলেন।সেই বিভীষিকাময় সময়ে আমরা পালাতে পেরেছিলাম নরওয়ের প্রকৃতির মাঝে । এখন সেই সুন্দর নরওয়ের কথা বলব ।
" ইউরোপের স্বর্গরাজ্য শুধু নয় পৃথিবীর স্বর্গ "
এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে ব্রিটেন থেকে এতো কাছে যে একটি দেশ আছে তা আমার কল্পনায় ছিলনা। এখানে না এলে জানতাম না সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই নরওয়ের কথা।
মানুষ এতো কম। শুধু পাহাড় আর পাহাড় আর তা ঢাকা লম্বা লম্বা পাইন বন দিয়ে। চারদিকে পাইন গাছের ফরেস্ট । শুধু ফরেস্ট আর ফরেস্ট । প্রায় সব মানুষ নেপাল জানে , সুইজারল্যান্ড জানে, জানে কাশ্মীর। কিন্তু নরওয়ের সৌন্দর্জ সম্বন্ধে তেমন প্রচার প্রচারণা নাই। মনে হয় এখাকার মানুষ প্রচার বিমুখ।
আমাদের কাঠের দুইতলা চার বেড রুমের বাড়িটা একটা টিলার উপরে । যে দিকে চাও শুধু সবুজ পাইন গাছের ফরেস্ট দিয়ে ঢাকা পাহাড় । মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে ছুটে চলেছে একটা পানির প্রবাহ ,চারদিকের পানি সংগ্রহ করে ঝির ঝির শব্দে আপন গতিতে ছুটে চলেছে।
একেক সময়ে একেক রূপ নিচ্ছে এই নদী টি তার সাথে এখান কার প্রকৃতি । যখন টেম্পারেচার মাইনাস হয়ে যায় তখন এর পানি জমে আইস হয়ে যায়। আর যেখানে উঁচু থেকে পানি নিচে যাচ্ছে একটা ঝর্না সৃষ্টি করে তখন তার এই পড়ন্ত পানি জমে আইস ফল করছে। যা আগে দেখিনাই। ছোটো ছোটো লেক গুলো সব সাদা শক্ত আইসে পরিণত হয়ে যায় ।তখন তার উপর দিয়ে হেঁটে এপার ওপার করা যায়। সে এক মজার ব্যাপার। দুই হাঁটু উঁচু ধবধবে সাদা স্নো পড়ে শীত কালে। তার উপর দিয়ে হাঁটতে যে মজা। চারদিকে বিস্তৃত সাদা ধবধবে নরম স্নো। যার উপর শুয়ে থাকতে যে আরাম। এক অন্য রকম সৌন্দর্জের সৃষ্টি করে।
ঠাণ্ডা ,তা মোটেও নয় । যদি থাকে শীত উপযোগী কাপড় । যার প্রস্তুতি নরওয়ে যেয়েই কিনে নিতে হয়েছে। স্পেশাল জুতো আর নরম গরম কান আর গলা ঢাকা টুপি ।
নরওয়ে আর্টিক অঞ্চলের মধ্যে। আর্টিক অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে থাকা দেশ। যেমন উত্তর কানাডা, নেদারল্যান্ড,সুইডেন, ফিনল্যান্ড, গ্রিনল্যান্ড আর আইসল্যান্ড ।
নরওয়েতে মানুষ খুব কম। সে হিসেবে সম্পদ বেশি যার ফলে মানুষের মাথা পিছু আয় অনেক। কি সেই সম্পদ? তেল ।১৯৬০ সালে সমুদ্রে তেল পায় ১.৩ট্রিলিয়ন ডলার এর মূল্য । পৃথিবীর প্রথম ১০ ধনী দেশের মধ্যে নরওয়ে দ্বিতীয় । তার উপরে আছে গুড গভর্নমেন্ট । করাপসান নাই, নারী আর শিশু ফ্রেন্ডলি কান্ট্রি। যে চাকরী হোক না কেন , ইনকামের মধ্যে খুব তফাৎ নাই। কারন সব কাজ কেই মর্যাদা দেয়া হয়। সবায় যাতে ভালো মতো খেয়ে পরে বাঁচতে পারে এটাই সরকারের উদ্দেশ্য ।
আমি বিসিএস ক্যাডার,আমি ডাক্তার আমি ইঞ্জিনিয়ার এই শ্রেণিভেদ এখানে নেই। আর সেই ক্ষমতা দেখিয়ে সেবক না সেজে জমিদারি ভাব দেখানো কালচার এখানে নাই। সবার সমান মর্যাদা ।বেতনেরও খুব তফাৎ নাই।
ক্রাইম রেট এতো কম যা না গেলে জানতাম না। আমাদের কাজ ছিল প্রতিদিন জংগলে দুইবার করে ঘোরা একবার সকালে নাস্তার পর আর একবার বিকালে । মাঝে মাঝে সন্ধ্যা লেগে যেতো জংগলের মধ্যে। নির্ভয়ে চলাফেরা করতাম। একটা বিড়ালও সেখানে নিরাপদ। খুনখারাবি তো দূরের কথা ছিন্তাইও নাই। মানুষের মনে এসব আসেওনা।
পৃথিবীর মধ্যে নরওয়ের সব চেয়ে শান্তির দেশ। পড়াশুনার শেষে চাকরী পাওয়া যাবেই যা একেবারে গ্যারান্টি পুর্ন। মারামারি হানাহানি নায়। নারীর সন্মান আছে। কেউ অসুখী নয়। চিকিৎসা, স্কুল ফ্রি।
ধর্ম নিয়ে এরা মাতামাতি করেনা। তাদের মতে এটা যার যার ব্যাক্তি গত ব্যাপার। বাইরে থেকে যাওয়া মানুষ সন্মানের সাথে থাকে । রেসিস্ট মোটেও নয়। সরকার থেকেই আইন করা আছে সবায়কে সন্মানের সাথে ব্যাবহার করতে হবে।
এরা জীবনকে সহজ ভাবে নায়। সকাল থেকে শুধু কাজ করো এটা তারা পছন্দ করেনা। কাজের পর 'রিল্যাক্স একটা অতি জরুরী'' এই দর্শনে বিশ্বাসী তারা। প্রায় প্রত্যেকের দুটো করে বাড়ি । একটা যেখানে কাজ সেখানে আর একটা গভীর জংগলে বা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বা ফিওডের ধারে। ছুটির দিনে সেই বাড়িতে তারা থাকে বিশেষ করে যখন চারদিকে বরফে সাদা হয়ে যায় সে সময় । কাঠের গুঁড়ি দিয়ে বানানো বাড়ি গুলো বাইরে ঠাণ্ডা থাকলেও ভিতরে আরামদায়ক । সেই ভাবে বানানো। যেমন ফ্লোরের নিচে ইলেকট্রি সিটি দিয়ে ঘর গরম রাখার ব্যাবস্থা আছে।
সেখানে জানালা দিয়ে স্নো দ্যাখে। জংগল দ্যাখে আর মন কে শান্তি দায়। যা একটা মেডিটেসানের কাজ করে। পাহাড় ,স্নো , জংগল, সমুদ্র, ফিয়ড এই পাঁচটি নরওয়ের বৈশিষ্ট্য ।
নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শীতকাল। কিন্তু আকাশ নীল থাকে, থাকে রোদ। শীত কাল কে এরা ভয় করেনা। কারন তখন আরও মজা করার ব্যাবস্থা করে নিয়েছে।
কি সেগুলো ?
উইন্টার স্পোর্ট, বরফের উপর দিয়ে স্কি করা, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে স্নো এর উপর দিয়ে গড়িয়ে যাওয়া। স্পেশাল গাড়ী দিয়ে যাকে বলে 'ফান তবগান রান ',আইস হকি, ডগ স্লেডিইং আর স্নো বোর্ডিং ।
রাস্তা এয়ার পোর্ট এগুলো একটু পর পর স্নো পরিষ্কার গাড়ী দিয়ে সরিয়ে ফেলে। তাই গাড়ী চালানর অসুবিধা নায়। যেমন সমস্যা তেমন সমাধানও আছে। আছে টেকনোলজি ।
দীর্ঘ ৫/৬ মাস কাটাতে হয়েছে নরওয়ে ।উত্তরে থ্রমসো ,তারও উত্তরে সালভার্ড সব জায়গাতে ঘুরেছি। ট্রেন জার্নি করে লম্বা পথ পাড়ি দিয়েছি যার দুই পাশ এতো সুন্দর যা বলার নয়। মানুষ কম তাই মানুষ বসবাসের একটিভিটিয নাই। তাই গাছ পালা ফরেস্ট যেটা যেখানে সেখানেই আছে ।কে নষ্ট করবে? কে কেটে ফেলবে?
'আজ আমাদের হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা '
আমাদের কাজ নরওয়ের সৌন্দর্জ উপভোগ করা।আমরা জংগল বা ফরেস্টের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো। ফিওডে বোটে বা ফেরী করে ঘুরে বেড়ানো। চার দিকে যখন সাদা ধবধবে নরম নরম স্নো তার মধ্যে আমরা কাঠ আর খাবার নিয়ে গিয়ে পিকনিক করি আর কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালাই পাশে একটা ষ্টোভের মধ্যে দিয়ে। শুধু আমরাই যে তা নয় নরওয়ের এটায় কালচার।
ব্রিটেন সহ সারা পৃথিবী যখন ঘর বন্দী নরওয়েতে তখন সেই কভিডের কোন ভয় নাই। কে ছড়াবে কভিদ ? মানুষ নাই ।
আমরা যেখানে থাকতাম সেই স্থানের নাম 'হসলে' (Hosle) , নরওয়ের রাজধানী ওসলো থেকে ৯.৭ কিমি দূরে । পুরো জায়গাটি পাহাড় । তাতে কোন অসুবিধা নাই। মানুষ বুদ্ধি খাটিয়ে পাহাড়ের উপরে এবং গা ঘেঁষে বাড়ি ঘর বানিয়ে বাস করে । একেকটা বাড়ি একেক টা স্বপ্ন পূরী । যেমন ডিজাইন তেমন তার বিশেষত্ব। প্রায় প্রত্যেক বাড়ির সামনে গাড়ী পার্ক করার ব্যাবস্থা যেমন আছে তেমন আছে একটা করে হাউস বোট বা ইয়াচট(Yacht) রাখার ব্যাবস্থা। বোট গুলো গাড়ির ছাদে করে নিয়ে যায় 'ফিওডে' । সেখানে নিয়ে গিয়ে বোটিইং করে।টেসলা কার আর ইয়াচট ( Yacht) অনেকের সখের জিনিস ।
'ফিয়ড' কি? ফিয়ড হল সমুদ্রের পানি একটা দেশের মাঝখানে মাঝখানে ঢুকে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। বেশ প্রশস্ত । মনে হয় নদী। কিন্তু তা লবণাক্ত । প্রচুর মাছ থাকে। নরওয়েতে সবচেয়ে বেশি ফিয়ড পৃথিবীর মধ্যে। বরফ যুগে এই খাদ গুলোতে পানি আইস হয়ে থেকে গিয়েছিলো। বরফ যুগ চলে গেলেও বরফ গলে পানি হয়ে তা সেই খাদেই থেকে গেছে।
ওসলো
ওসলো রাজধানী শহর । কয়েকবার গেছি। মানুষের ভিড়ভাট্টা নাই। যাতায়াতের এতো সুন্দর ব্যাবস্থা। ট্রাম, বাস , ট্রেন খুব ঘন ঘন আসছে তাই ভিড় নাই । ভাড়াও খুব কম। আমরা কাছাকাছি folk মিউজিয়ামে গেলাম।এইটি একটি ওপেন এয়ার মিউজিয়াম । ১০০ থেকে ৫০০ বছরের পুরানো আমলের নানা রকমের বাড়ি আছে । আগে কেমন করে তারা বাড়ি বানাত সেটা দেখানো আছে। কাঠের গুঁড়ি দিয়ে ফ্লোর থেকে পিলার দিয়ে উঁচু করে বাড়ি বানাত । ড্যামপ যেন না উঠে তাই । শীতের বাতাস ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে তাই দুই গুঁড়ির মাঝে সেঁওলা ঢুকিয়ে রাখতো। মজবুত ছিল ঘর গুলো। ছুটির দিন গুলোতে আগে যেমন তাদের কাপড় ছিল সেই ভাবে ড্রেস পরে মানুষ সেখানে চলাফেরা করে ব্যাপার টা কে জীবন্ত করে রাখে। কেমন ছিল তাদের রান্না ঘর, কি ভাবে চাষ বাস করতো। সব কিছু। বেশ ভালো লাগলো আইডিয়াটি ।
এই লিভিং হিস্ট্রি মিউজিয়ামের আইডিয়া আমরাও করতে পারি টুরিস্ট আকর্ষণের জন্য।
চলবে...।
হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন
৪টি মন্তব্য
কামাল উদ্দিন
আপনার লেখা পড়ে লোভ লাগছে, আমিও ভ্রমণ প্রিয় মানুষ, তবে সিমিত সাধ্য বলে কথা, তবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকবো। কয়েকটি ছবি দিলে পোষ্ট টা আরো প্রাণবন্ত হতো বলে আমার মনে হয়।
নার্গিস রশিদ
অনেক ধন্যবাদ । আমি তো ভাবছি সোনেলা ব্লগের মৃত্যু হয়েছে। আগের মত কেউ লেখা দায় না । কারর লেখাতে কোন মন্তব্য কেউ দায়না । কি ব্যাপার জানিনা ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, একটি মৃত্যুপথযাত্রী ব্লগকে অক্সিজেন নদিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্ঠা করার জন্য, শুভ কামনা নিরন্তর
হালিমা আক্তার
আপনার কল্যাণে নরওয়ে সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সৌভাগ্য হলো।