কষ্ট মিশে শুন্যে- ( পর্ব-৩)

স্বপ্ন নীলা ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার, ০৩:৩৭:৩৩অপরাহ্ন গল্প ৪ মন্তব্য

রেশমাকে ইমারজেন্সেী ইউনিটে ভর্তি করানো হয়েছে। ডাক্তার রেশমাকে দেখছে। ভিতরে শুধুমাত্র রাহাতের বড় বোন আছে। আর সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।গভীর উৎকণ্ঠা নিয়ে রাহাতের বাবা বার বার জানতে চাইছে যে ডাক্তার কি বলছে ? একটু পরে ডাক্তার জানালো যে রেশমা আর নেই। বাক্যটা শোনার সাথে সাথে রাহাতের মনে হলো পৃথিবীটা যেন দুলছে। রাহাত আর দাঁড়াতে পারছে না। বারান্দার ফ্লোরে বসে হাত দিয়ে চুল টেনে ধরে। কত আদরের বোন। পরিবারের কারো কাছেই কোন কিছুর জন্য কোন দিনই আবদার করে নাই। একারণে সবাই যে যার মত করে রেশমার জন্য কিছু নিয়ে যেত।লেখাপড়ায় খুবই ভাল ছিল। পরীক্ষায় প্রথম হয়েই নাইনে উঠে, কিন্তু শুধু ব্যারিস্টারী পড়ার ইচ্ছার কারণেই সাইন্স নেয় নাই। রেশমা বলতো ভাইয়া আমি অনেক পড়ালেখা করুম। খুবই ভালো একজন ব্যারিস্টার হমু। আমাকে তুমি বিলাত পাঠাইবা ভাইয়া। আমি বিলাত যাইয়া পড়ালেখা করমু। মাথা নেড়ে সায় দিত রাহাত। হুম তোরে বিলাত পাঠামু। পরিবারে একজন ব্যারেস্টার না হইলে চলে ! তুই হবি ব্যারিস্টার আর রিমন হইবো ডাক্তার- আর কি চাই। হঠাৎ বুকের ভেতর কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠে। রাহাত উঠে দাঁড়ায়। বাবার কাছে যায়। রাহাতের বাবা বুকে হাত দিয়ে বসে কান্না করছে। সব ব্যবস্থা শেষ করে রেশমার লাশ এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।

পুকুর পাড়ের নীচে ফাঁকা জায়গাতেই রেশমার কবর দেয়া হয়েছে। আর কোন দিনও আসবে না রেশমা। সবাই জানাজা শেষ করে চলে যাচ্ছে। রাহাত আর রাহাতের ছোট ভাই রিমন কবরের কাছে দাঁড়ায়ে আছে। রিমন কান্না করছে। রাহাত রিমনকে জড়ায়ে ধরে। জোড় করে পুকুর ঘাটে নিয়ে আসে। একটা বেঞ্চে বসে। রিমনকে ডান হাত দিয়ে জড়ায়ে ধরে। হীম শীতল বাতাস ওদের ভেদ করে কত বার আসা যাওয়া করে তা ওরা বুজতেই পারে না।

বাড়ির ভিতর হতে মাঝে মাঝে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। রিমন বলছে ভাইয়া, জান ! রেশমা ওর বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যাইতেছিল। বুলেট আর ওর বন্ধুরা রাস্তার ধারের শিমুল গাছের নীচে দাঁড়ায়ে ছিল। ওখান হতে রেশমাকে জোড় করে টেনে অটোতে তুলে। রেশমা সিএনজি হতে লাফ দেয়। পিছন দিক হতে ট্রাক আসতেছিল। আর ট্রাকটা আমাদের বেশমার উপর দিয়া উইঠা যায়। ট্রাকের চালক আর হেলপারকে জনতা ধইরা পিটায়ে তারপর পুলিশে দিছে। বুলেট ওর হুন্ডায় উইঠা পালাইতে চাইছিল। কিন্তু পারে নাই। জনতা ওরেও ধইরা থানায় দিয়া আইছে। রিমনের দুচোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।  রাহাতের চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। রাহাতের মনে হচ্ছে যে বুলেটকে এখন কাছে পেলে ওর দেহটা ছিন্নভিন্ন করতে ফেলতো। একটা সিগারেট ধরায়ে একটা টান দেয়। ছোট ভাই বলে, ভাইয়া তুমি অন্তত আজকে সিগারেট খাইয়ো না। এটা এখন ফালাইয়া দাও। রাহাতের মা ওদের দুজনের কাছে আসে। রাহাত সিগারেট দূরে ফেলে দেয়। রাহাতের মা দুই সন্তানকে জড়ায়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

ভোরের আলো এখনো ভালোভাবে ফুটে ওঠে নাই। দূর প্রান্তে আকাশ জুড়ে লাল আভা ছড়িয়ে আছে। রাহাত বিছানা হতে উঠে। বালিশের নীচ হতে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নেয়। পুকুর ঘাটের আম গাছের নীচে দাঁড়ায়। হিম শীতল বায়ু রাহাতের মুখে এসে লাগে। রাহাত ভাবতে থাকে জীবন কেন এত ছোট ! রেশমা কত আদরের, কত আশা ছিল ওকে নিয়ে। দুই ভাইয়রে কত যত্ন করতো এই পুচকে মেয়েটা। কে এখন এই যত্ন করবে-এত মমতা মাখা ভাইয়া বলে ডাক দিবে ! কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচেই চিরশায়িত হয়েছে তারই বোন। দেখতে দেখতে সাত দিন হয়ে গেল। কেনরে চলে গেলি পাগলি! নিজের অজান্তেই বলে ওঠে, বুলেট তোর সাচ্চা বিচার যদি না হয়, আমি রাহাত তোর মুন্ডটা দেহ থিকা ফালাইয়া দিমু-। একটা সিগারেট ধরায়, জোড়ে জোড়ে টান দেয়, এক জায়গায় দাঁড়িয়েই পাঁচটি সিগারেট সাবাড় করে ফেলে।

পিছন দিক হতে একজন নারীকণ্ঠ রাহাতের ভাবনার জগতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। রাহাত ভাই ! আপনি এত সিগারেট খান কেন ! এত সিগারেট খাওয়া কি ভালো রাহত ভাই ?

রাহাত ঐ নারীর দিকে ফিরে তাকায়। একহারা গড়ন, একটু খাট, গায়ের রং ফর্সা, ডাগড় নয়নে মেয়েটি রাহাতের দিকে তাকায়ে আছে।

মেয়েটি খুবই দ্রুত আবার কথা বলে উঠে, আমি আপনাগো টিউবওয়েল থিকা পানি নেওনের জন্য আইছিলাম। দেখি আপনি একটার পর পর একটা সিগারেট খাইতেছেন। কেন এত সিগারেট খান?

এবার রাহাত বলে, আমার কাজের জন্য আমি কারো কাছে কৈফত দেই না। তুমি এবার আস। মেয়েটি আবারো কথা বলে, শুনেন, রেশমা আমার ছোট বোনের সাথে পড়তো, এটা তো আপনি জানেন। ওর জন্য আমারো খুবই কষ্ট হইতেছে। আল্লাহ রেশমারে জান্নাতবাসী করুন।

রাহাত এবার মেয়েটি নাম ধরে বলে, বীনা তুমি এখন আসতে পারো। আমার এখন কথা কইতে ভাল্লাগতেছে না।

বীনা মাথা নেড়ে পানির জগ হাতে নিয়ে দ্রুত হাটতে থাকে।

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।  রাহাত পুকুরের চালা দিয়ে পায়চারি করতে থাকে। আর পনের দিন পর হতেই পরীক্ষা শুরু। রাহাত ভাবতে থাকে-কি হবে পরীক্ষা দিয়ে! পায়ের নীচের ইটের টুকরা লাত্থি দিয়ে দূরে ফেলে দেয়। দূরে বিলের সবুজে রাহাতের দৃষ্টি মিশে যায়-মনে হয় নীলা সবুজ শাড়ি পরে তার দিকেই যেন এগিয়ে আসছে।

:

-- চলবে--

:

স্বপ্ন নীলা

০৪ ফেব্রুয়ারী,২০২৪

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ