কষ্ট মিশে শূন্যে- ( পর্ব-১)

স্বপ্ন নীলা ২৫ জানুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০২:৪৩:২৪অপরাহ্ন গল্প ৫ মন্তব্য
চারিদিকে ঘন কুয়াশারা একজোট হয়ে দেয়াল তৈরি করে রেখেছে। এক হাত দূরে কি আছে তা কষ্ট করে দেখতে হয়। কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর ঠান্ডা সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এমনই এক কঠিনতম সময়ে একজন সুদর্শন যুবক ধীরলয়ে হাতে হাত ঘষতে ঘষতে চায়ের টং ঘরের দিকে এগিয়ে আসে। যুবকের ব্যাক ব্রাশ করা চুলগুলোতেও যেন কুয়াশারা ভর করেছে। যুবক চুলগুলোতে আলতোভাবে দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে বিলি কাটে। দোকানদারকে বলে ’মাম্মা আদা দিয়া জব্বর মজা কইরা এক কাপ চা দাওতো ‘-- দোকানদার যত্ন করে চা বানায়, চায়ের কাপ যুবকের হাতে তুলে দেয় । চায়ের কাপ হতে ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে কুয়াশা ভেদ করে আকাশে মিশে। যুবক চায়ের কাপে চুমুক দেয়। কানে ভেসে আসে বোনের আকুতি “ ভাইয়া আমি আর স্কুলে যামু না, ঐ পাড়ার বুলেট আমার পেছনে লাইগা থাকে, খারাপ কথা কয়, বাবাকে বইলা বাসা পরিবর্তন কর” - যুবকের চোয়াল শক্ত হয়, একটা কিছু করতেই হইবো, বাসা পরিবর্তন করুম না, আগে চেয়ারম্যান এবং প্রয়োজনে ইউএনওকে জানামু, কিছু একটা সুরাহা করুমই করুম। ওহ্ ওদিকে সামনেই এমবিএ পরীক্ষা। চোখে ভাসে নীলার মায়াভরা মুখ, নীলা আমার সাথে দেখা করতে আসবে-আমার নীলার সাথে দেখা হবে-নীলা আপার কথা ভাবতেই মনের ভেতর কেন যেন একটা ভালো লাগার আলোড়ন তৈরি হয়। দোকানদারকে বলে ’মাম্মা ৫টা সিগারেট দাওতো’। দোকানদার যুবকের হাতে ৫টা সিগারেট দেয়। সে লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরায়- একটার পর একটা করে মোট ৫টা সিগারেট পর পর টেনে যায়।
:
যুবক হাত ঘড়ির দিকে তাকায়- মনে মনে বলে “এখনো তিন ঘন্টা পরে নীলা আসবে। আগে ছাত্র পড়ায়ে নীলার সাথে দেখা করবো”। দোকানদারকে বলে মাম্মা ১ প্যাকেট সিগারেট দাও, এগুলা পরে খামু। আর এখন মাত্র একটা এখন খাওনের জন্য দাও। দরদের মাখানো কন্ঠে বলে মাম্মা তোমার দোকানের সিগারেটে মজার যাদু আছে। খুব টানে-মনে টানে। দোকানদার পরম মমতায় যুবকের হাতে সিগারেট ১টা আস্ত সিগারেটের প্যাকেট তুলে দেয়, আর একটা খোলা সিগারেট তুলে দেয়। আর বলে ’মামা এত বেশি সিগ্রেট খাইয়েন না, এটা খুব বেশি খাওয়া শরীলের জইন্যে ভালা না’ - যুবকের ঠোটে আত্মবিশ্বাসের হাসি - মুখে রসিকতার সুরে বলে ‘আরে দূর মাম্মা, সিগারেট খাওয়া কমাইয়া দিলে তোমার দোকানের বেচাইতো বন্ধ হইয়া যাইবো। যুবক আবারো লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরায়। সিগারেটের ধোঁয়া কুয়াশাতে মিশায় - এগিয়ে চলে আপন ঢংয়ে। দোকানদার বলে ‘মামা চা আর সিগ্রেটের দাম দিয়া গেলেন না’-। যুবক পেছন ফিরে বাঁকা হাসি দেয় -’ভাংটি নাইরে মাম্মা, বাকির খাতায় লেইখ্যা রাখ, মইরা গেলে বাপের কাছ থিকা নিয়া নিও’। দোকানদার হাসতে হাসতে বলে ’কাইল আবার আইসো মামা। আদা-এলাচ-লং দিয়া খুউব জব্বর কইরা চা বানাইয়া দিমু’--। দুই ঠোট ফাঁকা করে আকাশের দিকে মুখ করে যুবক ধোয়া ছুড়ে দেয় শুন্যে--ধোয়ার কুন্ডলীকে পাশ কাটিয়ে যুবক মিশে যায় কুয়াশার মিছিলে !!!
:
-- চলবে--
:
স্বপ্ননীলা
২৫ জানুয়ারী,২০২৪
0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ