আবরার ফাহাদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ২১ বছরের টগবগে একজন তরুণ যাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশের অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়া এখন সরগরম এরকম অমানবিক এমন একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। গণমাধ্যমে এসেছে ফেসবুকে নিজের মতামত পোস্ট করার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যাকান্ডে জড়িতরা ছাত্রলীগের কর্মী। এমন একটি খবরে আমি ব্যথিত হয়েছি, মর্মাহত হয়েছি। নিজের বিবেকের কাছে করা প্রশ্নের উত্তরে তাই কিছু কথা আজ না বললেই নয়।

আপনাদের সাথে আমিও এই হত্যাকান্ডের বিরোধিতা করছি। ফাহাদের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখেছি তিনি সবসময় নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলতেন, দেশের পক্ষে কথা বলতেন। যদিও এ সবই তার ব্যক্তিগত মতামত। তিনি যেমন কাশ্মীর ইস্যুতে ভুক্তভোগী নির্যাতিত কাশ্মীরের জনগনের পক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন যেখানে ভারতের মোদী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য ছিলো তেমনি দেশের পক্ষে দেশকে ভালোবেসেও অনেক কথা বলতেন বিভিন্ন ইস্যুতে তবে সেসব কথার অধিকাংশই কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডেএ তীব্র সমালোচনাও ছিলো।

তার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে কিছু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রশ্নে তিনি নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার স্ট্যাটাসে ছবি নিচে দেখুন-

আবরার ফাহাদের সেই ফেসবুক স্ট্যাটাস

আমরা সবাই যারা দেশকে ভালোবাসি তারা অনলাইনে বিভিন্ন সময়ে নানান মতের স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের মতামত পোষণ করি। এটা দোষের কিছু নয়, সমস্যা হচ্ছে স্ট্যাটাস দিতে গিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে দেশবিরোধী কোন কথা সেখানে প্রতীয়মান না হয় কারণ পুরো পৃথিবীর মানুষেরা সেসব দেখেন এবং আমাদের দেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন। এখন আসি আবরারের কথায়। আবরার তার নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেছেন। যদি সেটা অন্যায় হয় তাহলে বলব আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হতে চলেছে যা একটি গণতান্ত্রিক দেশে মোটেই কাম্য নয়, হতে পারেনা। আবরারের হত্যাকান্ড যদি ফেসবুক পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে হয় তাহলে ধরে নিচ্ছি ফেসবুকে পোস্ট কারীদের হত্যা এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়াবে অচিরেই। অতীব দেশপ্রেম অনেকেরই মৃত্যুর কারণ হতে পারে কিন্তু!

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে বুয়েট শেরেবাংলা হলের ছাত্রলীগের যারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তারা শিবির সন্দেহে আবরারকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করে, এরপর পিটিয়ে হত্যা করে। আমি আশ্চর্য হয়েছি, মর্মাহত হয়েছি। হত্যাকান্ডে জড়িত দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে সুযোগ পাওয়া এসব মেধাবী ছাত্র এরা সবাই, কিন্তু মন-মানসিকতায় এরা কুয়োর ব্যাঙ এর মতই সংকীর্ণমনাই রয়ে গিয়েছে। একজন মানুষ ভিন্ন ধারার রাজনীতি করতেই পারেন। যদি সেটা অন্যায় হয় তার জন্য দেশের আইন আছে প্রশাসন আছে। তাই বলে হত্যাকাণ্ড? এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।

আবরার হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তি

যাদের ছত্রছায়ায় এসব ছাত্রলীগ নামধারী নেতারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আশার কথা হত্যাকান্ডে জড়িত কিছু ছাত্রকে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে গ্রেফতার করা হয়েছে, আমরা চাই তাদের শাস্তি হোক।

মনে রাখা দরকার, সরকার যখন দেশের স্বার্থে বন্ধুপ্রতীম কোন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করেন তা দেশকে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে নয়। এর পেছনে আমাদের দেশের অনেক স্বার্থ থাকে যা দেশের জন্য কল্যাণকর। তাই এসব বিষয়ে নিজের মত প্রকাশের আগে ভেবে দেখবেন আপনি আমি কিন্তু সরকার প্রধানের গদিতে বসে নেই। যিনি বসে আছেন তাকে সর্বদিক চিন্তাভাবনা করে এসব চুক্তি সম্পাদন করতে হয়। এদেশের সরকারপ্রধান তিনি নিজেই অনেক বিজ্ঞ। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সহনশীলতার রাজনীতি করেন। তবে তাদের দলের ছত্রছায়ায় যারা নেতাকর্মী সেজে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো অনৈতিক কাজ করছেন তারা আদৌ এই সরকারের ভাল চান কিনা সেটাও ভাবতে হবে। এটি দলে অনুপ্রবেশকারীদের ষড়যন্ত্র হতে পারে কিংবা অতিক্ষমতা ও অতিভালোবাসা পাওয়ার বা দেখানোর লোভে তথাকথিত এসব ছাত্রনেতা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে আদতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন কি না? -এ দিকটিও সেই দলের ভাবতে হবে কিন্তু।

আমরা সাধারন জনগন শান্তি চাই। আমরা দেশকে ভালবাসি বলেই নিজেদের মত প্রকাশ করি। তবে সেই মতামত প্রকাশ করা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে বলতে বাধ্য হচ্ছি এদেশ আমার নয়। এমন দেশ আমি চাইনি আর চাইওনা। দেশের বিরুদ্ধে কিছু হলে আমরা রুখে দাঁড়াবো এটা ঠিক, কিন্তু মনে রাখবেন সে রুখে দাঁড়ানো যেন অন্যায়ভাবে কারো জীবননাশের কারণ না হয়।

0 Shares

৫৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ