সম্প্রতি আল-এরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের-"নবী মোহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর রচিত কোন হাদিস ই সত্য ও বৈধ নয়",এই কথাটি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। তবে কথাটির ভাষাগত সুক্ষ্ম পার্থক্য হলো- নবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে আসলেও কোন হাদিস রচিত হয়নি।

যা তিনি তাঁর জীবৎকালে করেছেন এবং বলেছেন তাই সহিহ হিসেবে গণ্য করা হয়। এসব হাদিস ভিন্ন সময়ে সাহাবী, তাবে-তাবেঈনদের কাছ থেকেই সত্যতা যাচাই করে সংকলিত হয়ে পরবর্তীতে কেতাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

তাঁর মৃত্যুর পরে যেসব হাদিস সন্দেহের তালিকায় স্থান পায় সেগুলোকে জাল হাদিস আখ্যা দেয়া হয়েছে, যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভবপর হয়নি - এগুলোই যয়ীফ হাদিস।

মহানবী (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ে (২১৭-২৩৩ হিজরীতে) বোখারী শরীফ রচিত হয়। এরপরে অন্যান্য হাদিস গ্রন্থ।[পড়ুন বোখারী শরীফের ইতিহাস]

ঈমাম বোখারী বিভিন্ন মানদণ্ডে ছয় লাখ হাদিস হতে যাচাই বাছাই করে প্রায় ষোল বছর নিরলস সাধনা করে এ প্রসিধ্য গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন। এখানে মোট হাদিস আছে সাত হাজার একশত পঁচাত্তরটি। এই হাদিসগুলোই সহিহ হাদিস হিসেবে অগ্রগণ্য।

সবচেয়ে বড় কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুরো কুরআন লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করেছিলেন ঠিকই; তবে লিখিত অংশগুলো একত্রিত অবস্থায় ছিল না। অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবনকালে বই বা পুস্তক আকারে পূর্নাঙ্গ কোরআনের কোন সংকলিত রুপ ছিল না।

যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেছেনঃ “নবীজী (সা) ইন্তেকাল করলেন এবং তখনও কোরআন শরীফ এক জায়গায় একত্র করা হয় নি।” (আহ্‌মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ ‘আস্কালানী, ইবনে হাজর, ফাত-আল-বারি (কাইরো (১৯৩৯), ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯ )

আলী (রা) থেকে বর্ণিতঃ আবু বকরের উপর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হউক, যিনি পাণ্ডুলিপিগুলো সংকলন করতে পুরস্কৃত হয়েছিলেন, কারণ সর্বপ্রথম তিনিই কোরআন শরীফ দুই জিলদের মধ্যে সংকলন করেছিলেন।” (ইবনে আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ৫)

তাঁর মারা যাওয়ার সময়ে হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁর সাহাবাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ বই আকারে কোন লিখিত কোরআন রাখেননি। ইয়ামামা যুদ্ধের পরে কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় হযরত আবু বকর (রাঃ) পুস্তক আকারে কোরআনের প্রথম লিখিত সংকলন করেন। [পড়ুন পবিত্র কোরআন সংকলনের ইতিহাস]

যেহেতু নবীর মৃত্যুর পরে তাঁর জীবৎকালে লিখিত কোরআনের খন্ডিতাকারের বাণীগুলিকে সংকলিত করে তবেই পূর্নাঙ্গ বই আকারে লিপিবদ্ধ হয়েছে, তাহলে প্রিন্স সালমান কি নিজের কথামতো পবিত্র কোরআনকেও তিনি একইভাবে মূল্যায়ন করেন? আসলে বিষয়টি মোটেও তা নয়।

মোদ্দাকথা হলো, বর্তমানে সৌদি আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্র থেকে অনেক বিষয়েই সরে আসছে। তার উপরের কথাটি সেই সরে আসারই প্রতিচ্ছবি মাত্র, হাদিস বা কোরআনকে বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নে নয়।

তাই কোরআন বা হাদিস সম্পর্কে প্রিন্স সালমানকে আমাদের জাস্টিফাই করার কিছু নেই। উপরের এই কথাগুলো আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানের সমাহার মাত্র। ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ