বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি, ঘুম আসছে না। অথচ ঘুম আসাটা বেশ জরুরি। নাহ্ কিছুতেই ঘুম আসছে না। জানেন তো এমনই হয়, মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক খেলে সবার আগে আমার ঘুম যায় চটকে। বড্ড অধৈর্য কিনা! কিন্তু আজ তো স্থির হয়ে শান্ত মনে প্ল্যান করতে হবে। সবার স্বপ্ন গল্পে দেশ বিদেশ নামাদামী মানুষদের সাথে দেখা সাক্ষাত আলাপ আলোচনা হয়েছে। এই তো সেদিন আমাদের সবার প্রিয় সুপর্ণা দিদিভাই এর গল্পে ব্যাটা লুইচ্ছা ট্রামকে আচ্ছা মতো নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো। কিন্তু আমি এমন কিছু স্বপ্ন দেখতে চাই না বাপু। আমার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরঘুর করছে। যা হোক আগে তো ঘুমানো যাক।

মনে মনে যা পরিকল্পনা করেছি তা নিয়ে আগে জিসান ভাইয়ার সাথে আলোচনা করতে ফোন দিলাম ভাইয়াকে। ফোন রিসিভ করেই ভাইয়া বললেন

-ছোট আপু বলেন কী খবর?

-ভাইয়া আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর সেটা আপনাকে জানাতেই ফোন দিলাম।

- জ্বী ছোট আপু বলেন।

- ভাইয়া আমি সোনেলার সবাইকে আমার বাসায় ইনভাইট করতে চাই। আমি চাই সবাই আমার এখানে এসে আমার ছোট শহরের দর্শনীয় স্থান গুলো দেখুক। আপনি কী বলেন?

- ছোট আপু এটা তো ভালোই ভেবেছেন। কিন্তু আমি তো একা কিছু বলতে পারবো না। আচ্ছা আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি হেলালের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।

-ঠিক আছে ভাইয়া আমি আপনার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছি।

 

ভীষণ টেনশন হচ্ছে ভাইয়া কী বলবে এই ভেবে? কিন্তু আমার মাথায় যখন এসেছে তখন যদি সবাইকে বাসায় না আনতে পারি তবে স্বস্তি পাবো না। ধুর! অপেক্ষার টেনশন একদম নিতে পারছি না। কখন যে ভাইয়া ফোন করবেন? একবার ফোন হাতে নিচ্ছি ভাইয়াকে কল দেবো ভেবে পরক্ষণে আবার মনে হচ্ছে ভাইয়া তো বলেছেন ফোন দেবেন তবুও যদি আগ বাড়িয়ে ফোন দিই খারাপ দেখাবে ব্যাপারটা। কি আর করার একটু অপেক্ষা করিই না হয়। এমন সময় ভাইয়ার ফোন এলো।

- ছোট আপু আমি হেলালের সাথে কথা বললাম। ও বললো যাওয়া যায় তবে এতো গুলো মানুষের দ্বায়িত্ব ঐ পিচ্চি মেয়েটি নিতে পারবে?

- ভাইয়া একদম চিন্তা করতে হবে না। আমি সবটা সামলে নেবো। কিন্তু আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। সব ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ করে জানিয়ে দিতে হবে ভাইয়া।

- সে ঠিক আছে ছোট আপু। আমি সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি সাথে কে কে যেতে আগ্রহী সেটাও আপনাকে বলছি।

- আচ্ছা ভাইয়া।

 

ভাইয়া সবার সাথে কথা বলে আমাকে কল দিলেন। বললেন 

- ছোট আপু সবাই রাজী হয়েছেন। আমরা আসছি আপনার শহরে।

হিপ হিপ হুররে বলেই চেঁচিয়ে উঠলাম ফোন কানে ধরেই। ভাইয়া যে লাইনের আছে বেমালুম ভুলে গেলাম। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শুধু মৃদু হাসির আওয়াজ পেলাম। কিছু টা লজ্জা পেয়ে ভাইয়াকে সরি বলে ফোন রেখে দিলাম।

 

এবার লিস্ট বানাতে বসে পরলাম। আগে সবার পছন্দের খাবার গুলো লিস্ট করতে শুরু করলাম।

প্রথমেই মনে পড়ে গেলো কালাভুনার কথা। কালাভুনা আমার দুটো প্রিয় মানুষের পছন্দ। 

১। সাবিনা আপু সহ আরো একজনের জন্য কালাভুনা করতে হবে। আপু নিজেই বলেছিলেন যদি কালাভুনা করি তবে উনাকেও যেনো দিই। কতদিন খাননি বলেছিলেন। আহারে! আমার খুব ইচ্ছে ছিল আপুকে নিজের হাতে কালাভুনা খাওয়াবো। এবার সেই ইচ্ছেটা পূর্ণ হবে।

২। হেলাল ভাইয়া ও শামীম দাদাভাইয়ের জন্য চিকেন রোস্ট। উনারা কিটো ফিটো করেন তাই সেভাবেই রান্নাটা করতে হবে।

৩। বন্যা আপুর জন্য ভাবছি দুটো আইটেম করবো। ইংলিশ পোলাও আর  ঝাল ঝাল চ্যাপা শুঁটকি ভুনা। আপুকে বলেছিলাম চ্যাপা শুঁটকি রেসিপিটা দিতে কিন্তু উনি এতোই ব্যস্ত যে ভুলেই গেছেন। কিন্তু আমিও কি ছাড়ার পাত্রী? ঠিকই শিখে নিয়েছি।

৪। তৌহিদ ভাইয়া ও ভাবীর জন্য রাজহাঁসের মাংস ভুনা করবো। সে বার যখন অর্ণবের জন্য রেঁধে নিয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া বলেছিলেন একা একা না খেতে।

৫। বিথী আপু আর দুলাভাইয়ের জন্য গরুর মাংস ভুনা।

৬। রুকু আপুর জন্য খাসির নলা। বেচারী আপু আমার নলা ভেবে স্বপ্নে কি সব খাচ্ছিল

৭। সুপর্ণা দিদি, সুপায়ন দাদা, নিতাই দাদা, সঞ্জয় দাদা, প্রদীপ দাদার জন্য খাসির রেজালা করবো সাথে দেশি মুরগির রোস্ট থাকবে।

৮। মমি ভাইয়া ও ইঞ্জা ভাইয়ার জন্য সব আইটেম ই থাকবে। উনারা নিজেদের পছন্দ মতো খাবেন।

৯। আরজু আপুর জন্য রসমালাই, রসমঞ্জুরী আর বগুড়ার স্পেশাল দই।

১০। কোবরা আপু অসুস্থ শুনেছিলাম। তাই আপুর জন্য বেশ স্বাস্থ্যসম্মত বোয়াল মাছের পাতলা ঝোল রাখবো।

নাজমুল হুদা, শামীনুল হক হীরা, উর্বশী , সুরাইয়া নার্গিস, দালান জাহান,  আলমগীর সরকার লিটন, হালিম নজরুল ফয়জল মহী, মাহবুবুর রহমান, ইসিয়াক, কামাল উদ্দিন,কামরুল ইসলাম,মজিবর রহমান, খুরশীদ আলম পপি, তালুকদার, রেজওয়ানা কবির, মুহাম্মদ মাসুদ, শামসুল মাওলা হৃদয়,সাফায়েতুল ইসলাম,তোফাজ্জল হোসেন সহ সব ভাইয়া আপুদের জন্য চিকেন বিরিয়ানি,কাচ্চি বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস।

মাছের মধ্যে রুই মাছের কালিয়া, কাতল মাছের ভুনা, বোয়াল মাছের ঝোল, মলা মাছের চ্চড়ি, সিং মাছের ভুনা।

মিষ্টির মধ্যে থাকবে হাড়িয়া ভাঙ্গা, স্পঞ্জ, দুধকুমারী, লাড্ডু, মালাইকেক, নারিকেল সন্দেশ, ছানার মিষ্টি ইত্যাদি।

মোটামুটি এই হলো লিস্ট। লিস্ট হাতে নিয়ে নিজেই বেড়িয়ে পড়লাম বাজারে। কাউকে ভরসা করা যাবে না এবার। স্পেশাল মানুষের জন্য সব  কিছু স্পেশাল হওয়া চাই। রিক্স না নিয়ে নিজেই বাজার করে নিলাম। ফিরে এসে একে একে সবকিছু রান্না করলাম নিজের হাতে। অবশ্য সবকিছু জোগান দেবার জন্য মেজভাবী ছিলো। রান্না বান্না শেষ করে গুছিয়ে রেখে অপেক্ষা করছি। এমন সময় জিসান ভাইয়ার ফোন এলো।

- ছোট আপু কোথায় আপনি? আমরা তো জয়পুরহাটে এসে গেছি।

- ভাইয়া আমি আসছি। জাস্ট দু মিনিট।

আমি সবাইকে রিসিভ করতে এসে সারপ্রাইজ হয়ে গেছি। জিসান ভাইয়া সবার সাথে অর্ণবকেও নিয়ে এসেছে। আমি বলিনি তবুও কী করে বুঝলো? এই মানুষটি উপস্থিতি আমাকে কতটা আনন্দ দেয় ,প্রাণবন্ত করে তোলে। মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানালাম জিসান ভাইয়াকে। দৌড়ে গিয়ে বন্যা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আহ্ কি প্রশান্তি! একে একে সাবিনা আপু, বিথী আপু আরজু আপু, সুপর্ণা দি সবার সাথে আলিঙ্গন দেখে পুরুষ মহল বলে উঠলেন আপু আমরাও এসেছি। আমাদের দিকেও একটু খেয়াল করুণ। এই নিয়ে বেশ একটা হাসাহাসি হলো। সবাইকে নিয়ে চলে এলাম বাসায়। ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে লাঞ্চ সেরে নিলাম। তারপর যে তার মতো ভাত ঘুম দিলেন। সন্ধ্যায় চা নাস্তার আড্ডায় বসে ঠিক করা হলো পরের প্ল্যান কি? জিসান ভাইয়া বললেন ছোট আপু আপনিই বলেন পরের প্ল্যান কী? আমি বললাম চা চক্র শেষ করে পুরো জয়পুরহাট শহরটা ঘুরে দেখে বাসায় এসে ডিনার সেরে নিয়ে কফি আড্ডা। তখনই অর্ণব বলে উঠলো তোর মতলবটা কি রে! আজ কাউকে ঘুমাতে দিবি না। এমন সময় মহিলা মহল এক যোগে বলে উঠলেন সারাজীবন ঘুমিয়েছেন আজ না হয় নাই বা ঘুমালেন।

হেলাল ভাইয়া বললেন তারপর কী হবে?

কফি আড্ডার সাথে থাকবে নাচ গান কবিতা আবৃত্তি। তারপর দুটোর মধ্যে সবাই ঘুমে যাবো। ভোরে উঠে নাস্তা রেডি করে সবাই বেড়িয়ে পড়বো। এক এক করে জয়পুরহাটে থাকা সমস্ত দর্শনীয় স্থান ঘুরবো। প্রথমে শিশু উদ্যান, তারপর আলতা দিঘী, পাহাড়পুর, নান্দাইল দিঘী,,,,,

তৌহিদ ভাইয়া বলে উঠলেন আপু একদিনে এতো জায়গা ঘোরা সম্ভব! বিথী আপু বললেন একদিন কেনো আছি তো কিছুদিন। বন্যাআপু বললেন ঠিকই তো ছোট বোনের বাড়ি এসেছি থাকবো না কিছু দিন? সাবিনা আপু বললেন কী হচ্ছে ময়না মেয়েটিকে ভয় দেখাচ্ছো কেনো? হেলাল ভাইয়া বলে উঠলেন। ভয়! তাও সুরাইয়ার? এই মেয়েটি আদৌও ভয় পায় বলে আপনার মনে হয়? নাজমুল, শামীম ভাইয়া একযোগে বলে উঠলেন ঠিকই তো আমাদের আপু একদম ভয় পায় না। সুপায়ণ দাদা বললেন আপু কিন্তু বেশ গুছিয়ে আয়োজন করেছেন। কে বলবে উনি আমাদের ছোট?

এরপর সবাই এমন ভাবে বলতে শুরু করলো আমি বেচারী লজ্জায় মরে যাই উপক্রম। সন্ধ্যার আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। মনে হচ্ছে না এই আড্ডা ছেড়ে কেউ বের হতে চাইবে। আমিও চুপচাপ বসে বসে উপভোগ করছি আড্ডা। এমন সময় নিতাই দাদা বললেন চলেন এবার শহরটা ঘুরে দেখি। আমাদের সবার মধ্যমনি দুলামিয়াও বললেন চলেন চলেন। এমন সময় তিতলীর ডাক ডাক মাম্মাম হাঁটতে যাবে না? পাঁচ বেজে গেছে তো। 

 

বিঃদ্রঃ সোনেলার সবার আমার বাড়িতে আসা এটা আমি সত্যি সত্যি স্বপ্নে দেখেছি আরো কয়েক মাস আগে। যখন দেখলাম স্বপ্ন গল্প লিখতে শুরু করেছেন সেদিনই ঠিক করেছিলাম আপনাদের নিয়ে যা স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটাই লিখবো। লিখেও ফেললাম।

0 Shares

৪৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ