রুম নং ৭

আরজু মুক্তা ২১ জুন ২০২০, রবিবার, ০১:১০:২১পূর্বাহ্ন গল্প ৩৩ মন্তব্য

ঝক ঝকা ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ওই

ট্রেন চলছে, ট্রেন চলছে, ট্রেনের বাড়ি কই?

সবারি অপেক্ষা, কখন শোনা যাবে সেই শব্দ। মা ও অপেক্ষা করেন। আমাদের ছোট শহরে দুটা স্টেশন।  নতুন স্টেশন আর পুরাতন স্টেশন। স্টেশনের কাছে বাড়ি হওয়ায়, ট্রেনের শব্দ হলেই মা গেটে গিয়ে দাঁড়ান। যতক্ষণ না ট্রেনটি বাসার পিছন দিয়ে ঘড় ঘড় শব্দ করে পুরাতন স্টেশনে যাচ্ছে।

তারপর মা এসে বলেন, আজ কেউ আসবেনা রে! ভাত উঠায় দে। আগের দিনে গুণে গুণে আত্মীয় আসতো না। দেখা যেতো পাশের বাড়ির খালা, তার ছেলে অথবা তার নাতি আসতো শহর দেখতে।

আমাদের বাড়ি ছিলো স্কুল ঘরের মতো।  বড় বড়,  লম্বা লম্বা। একবার কি হলো! এতো আত্মীয় আসলো যে মেঝে, খাট সবমিলে জায়গা হচ্ছিলো না। আব্বা ফোন দিলো সার্কিট হাউসে। ওখান থেকে একজন কেয়ার টেকার এসে কিছু আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে গেলো। রুম নং ৬ ও ৭ দেয়া হলো। ৭ সিঙ্গেল হওয়াতে মিজানুর, মানে আমার ফুপাতো ভাই এর জায়গা হলো।

ফোন বাজছে। আমি আব্বাকে ডাকলাম। আব্বা, ফোন ধরবো।

ধরো। কিন্তু এতো রাতে! আড়াইটা বাজে।

হ্যালো! আসসালামু আলাইকুম।

আপু, আমি রোকন।

রোকন ভাই, এতো রাতে? কি খবর?

স্যারকে দেন।

আব্বা : কি হয়েছে?

স্যার, তাড়াতাড়ি আসেন। আপনার ভাগ্নারে কে জানি মারছে। সে কি অবস্থা!

আচ্ছা, আসতেছি।

আব্বা, আমিও যাবো।

চলো।

দুজনেই গিয়ে দেখি,  মিজানুরের পুরা গা লাল দাগে পরিপূর্ণ। এমনিতেই তো ও ফর্সা। আরও টকটকে হয়ে আছে।

আব্বা : কি রে, কি হইছে?

মিজানুর : মামা, আমি ঘুমাইছি। হঠাৎ দরজা খুলে যায়। দেখি, একটা ছায়া!  সে কি আলো তার গায়ে। লম্বা দাড়িও আছে। আমারে দাঁড় করায়, সে কি মাইর দিলো।

আমি বললাম,  মারতেছেন ক্যান?

উনি বলে, কথা বলিস? নামাজ পরিসনা ব্যাটা!  প্রসাব করে পানিও নিসনা! আমি এ বিছানায় থাকি। তুই পবিত্রতা নষ্ট করছিস।

বলে আর মারে। একটা জায়গাও খালি রাখে নাই। দেখেন কি অবস্থা! পরে আমার কান্না শুনে রোকন ভাই আসে।

আব্বা ওকে বাড়িতে যেতে বললো।

বাসায় আসার পর সবাই উৎসুক। ঘটনা কি? কেমনে এটা হইলো?

আব্বা বললেন, ওখানে একজন ভালো জ্বীন থাকেন। শীতের সময় মসজিদে নামায পড়ার সময় দরজা জানালা লাগা থাকে। কিন্তু নামায শুরু হলেই,  ফট করে দরজা অটো খুলে যায়,  আবার লাগিয়েও যায়। নামায শেষেও ঐ একই অবস্থা!

আমি একদিন ৭ নং রুমে ছিলাম। রাত ১/২টার দিকে দেখি, কেমন জানি মিষ্টি একটা সুবাস। আর বাতাসটাও ঠাণ্ডা বইছে। আযান হলেই পানির কল খুলে কে জানি ওযু করছে। উনাকে দেখা যায় না। কিন্তু পানির শব্দ পাওয়া যায়। এর থেকে বোঝা যায় ওখানে একজন ভালো জ্বীন থাকে।

৭ রুম এখন লকডাউন। ভয়ে কেউ থাকে না।

★★ভৌতিক ঘটনাগুলো কি আমরা নিজের অজান্তে মনের মধ্যে পুষে রাখি। আর ঘটনা মিলে গেলেই,  সেই সুপ্ত ভুতটি আমাদের অজান্তে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়। প্রশ্নটা আপনাদের কাছে থাকলো। তবে উপরোক্ত ঘটনা সত্যি।

0 Shares

৩৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ