
মারিয়া আক্তারকে মনে আছে? সাফ গেমসের ভার উত্তোলনে সোনা জিতে যিনি জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে ভীষণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
ওয়াসফিয়া নাজরিনকে চিনতে পারছেন? সর্বকনিষ্ঠ এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে। তিনি সাত মহাদেশের সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন।
আমাদের সাহসী নারীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!
জাহানারা, নারী ক্রিকেটার, যার লাল সবুজের জার্সি আর ঘাম ঝরানো ব্যাটিং এর ফাঁকে তার আইলাইনার এবং লিপগ্লস অনাসায়ে চোখে পরে। আর গর্বে ভরে যায় বুক।
মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে সবখানে। দেশে এবং দেশের বাহিরে। সম্মান বয়ে আনছে সমগ্র জাতির জন্য। সুযোগ পেলে কী চমৎকার উপায়ে নারীরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে!
এই অগ্রযাত্রা না বিষাদের কথা লিখবো? মেয়েরা একদিকে দক্ষ হাতে দেশ এমনকি বিমান চালাচ্ছে। আর অপরদিকে চলছে ধর্ষণের রমরমা প্রতিযোগিতা।
কী ভয়ানক! কী মর্মান্তিক !
ধর্ষক কোনো দলের না। টুপি মাথায় কেউ ধর্ষণ করলে সে দায় ধর্মের না। মন্দিরে ফেলে ধর্ষণ হলে সে দায় পূজারীর নয়।
ধর্ষণের সাথে রাজনীতি করে ধর্ষিতাকে বার বার ধর্ষণ করবেন না। ধর্ষণের মূলে আসেন। ধর্ষণের দায় পুরো জাতির। ধর্ষণের দায় লিঙ্গ বিহীন সমাজের।
আজ শুধু খাগড়াছড়ির এই আদিবাসী মেয়েটি ধর্ষিতা হয় নি। ধর্ষিতা হয়েছে কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া মেয়েটির বাবা-মাও।
ধর্ষিত হয়েছে রাষ্ট্র,সরকার,আইন ব্যবস্থা। ধর্ষিত হয়েছে বিরোধীদল। যাদের আন্দোলনে ধর্ষিতা নেই আছে শুধু ক্ষমতার লড়াই।
ধর্ষিত হয়েছে সেই স্থানীয় বাঙ্গালী নরপশু গুলোর পরিবার -স্বজন। যারা ধর্ষকের নাম শোনার পরেও বিচারের আশায় চোখ বুজে আছে।
ধর্ষিত হয়েছে সেই পুরুষ যারা ধর্ষণের খবরে জিভ চুক চুক করে বউ বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে শুয়ে পড়ছে।
আর কত দর্শক হবো? আমি তো ভাবছি, গতকাল রাতে এই ঘটনা আমার বা আমার স্বজনের সাথেও হতে পারতো। তারপর? গা গুলিয়ে ওঠে। সমাজের যে পরিচয়ে, যে স্তরেই নারীর অবস্থান থাক, সেকি আজ নিরাপদ? এই মেয়েটি আমাদের সত্য কথা জানালো। এই দেশ, এই সমাজ, চিরচেনা চলার পথ, সব অচেনা!
মানুষের মতো দেখতে প্রাণীগুলো দিনশেষে উত্থিত একেকটা পুরুষ। একটু এদিক ওদিক হলেই যারা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পরে। এ ধরণের ঘটনা আমাদের অপরাধী করে দেয়। পিছিয়ে দেয় আরো কয়েকশ বছর।
যন্ত্রণাকাতর প্রিয় বোন আমার। তোমার উপর এই অত্যাচারের ঘটনা আমার মতো কতো অসংখ্য মানুষকে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করছে। স্থির থাকতে দিচ্ছেনা। তীব্র দহন!
যদি নিজের বিবেকের কাছে ধর্ষিতা হতে না চান তবে গুটিকয়েক মানববন্ধন কারী মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দল, বল নির্বিশেষে যান। হাত দুটো এতটা প্রসারিত করুন যেনো, একে অন্যের হাত ছু্ঁয়ে সারা বাংলার মানচিত্রে ছড়িয়ে যায়। এত জোরে হুংকার দিন, যাতে অসভ্যের লিঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
আমি একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের উপর বর্বরতা দেখিনি! তবে বাংলাদেশীদের দ্বারা পাহাড়িদের উপর এমন নির্মমতা দেখছি। পরাধীনতার অনিশ্চয়তায় বন্দি যে ফুলটিকে বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখেছিলো। এতো বছর পর একই করুণ কাহিনী দুমড়ে, মুচড়ে, থেতলিয়ে দিচ্ছে।
খাগড়াছড়ির এই আদিবাসী পাহাড়ি মেয়েটিকে টানা ২ ঘন্টা ধরে পালাক্রমে ৯ বার গ্যাং রেপড করে কিছু স্থানীয় বাঙ্গালী।
মানুষ জন্মেই মানুষ হয়না! তাকে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। তাকে মানুষ হয়ে উঠতে হয় আদর্শে, চেতনায়, মননে।
আমরা মানুষ নয়, ক্রমশ পুরুষ হয়ে উঠেছি।
বাহ্ কী চমৎকার!
“আবার তোরা মানুষ হ!”
ছবিটি প্রতীকী। এটি ২০১২ সনের। ছবি গুগল থেকে নেয়া।
৩২টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
মর্মান্তিক স্পর্শকাতর বিষয়। সত্যি মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেছে লেখাটি পড়ে। খুব সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবচিত্র। আমরা কেউই এই দায় এড়িয়ে যেতে পারিনা।
সব কিছুর আগে মানুষ হওয়া খুব জরুরি।
আরজু মুক্তা
তবে, সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
ফয়জুল মহী
http://www.m.mzamin.com/article.php?mzamin=244339
আরজু মুক্তা
এখানেও ছাত্রলীগ?
আল্লাহ বাঁচাও।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কাল দেখলাম কেউ একজন ছবিটা দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছে ওই যায় বাংলাদেশ।মনটা যন্ত্রণায় দুমড়ে মুছড়ে উঠল কেন কেন? নারী তোমার বাঁচার স্বাধীনতা নাই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ধর্ষককে খোঁজা করে দেয়া হোক।আইন বলবৎ হয়নি।কারন পুরুষরা সমাজের কর্নধার।
কিছু একটা করতে হবে আমাদের ই।কারন অধিকার আমার!
খোজাকরন আইন বলবৎ হোক!!!
শুভ কামনা আপু।
আরজু মুক্তা
এরকম আমি একবার লিখেছিলাম। আমার আইডিতে রিপোর্ট করেছিলো।
মালয়েশিয়া তে এই আইন কার্যকর
ছাইরাছ হেলাল
আবার তো মানুষ হও বললেই যদি আমরা মানুষ হয়ে যেতে পারতাম
তাহলে পৃথিবী আজ স্বর্গে পরিণত হয়ে যেত।
আরজু মুক্তা
আমাদের দৌড় ঐ পর্যন্ত। সরকার বাহাদুর এর উচিত দ্রুত বিচার। যাকে বলে খোজা। মালয়েশিয়াতে এই আইন কার্যকর।
ছাইরাছ হেলাল
ঘটনা একটি আছে, কিন্তু এই ছবি ১২ সনের।
আরজু মুক্তা
ছবিটা ভাইরাল ছিলো। তাই অসঙ্গতি।
ধন্যবাদ
সুপায়ন বড়ুয়া
“আমি একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের উপর বর্বরতা দেখিনি! তবে বাংলাদেশীদের দ্বারা পাহাড়িদের উপর এমন নির্মমতা দেখছি।”
যতার্থ বলেছেন। ইতিহাস আপন গতিতে চলে।
আজ যারা পাহড়ি ও সংখ্যালঘু দের উপর নির্দয় অত্যাচার করছে। তাদের জানা উচিত পাকিস্থান রক্ষা হয়নি।
পাকিস্থানে সংখ্যালঘু নাই। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ ও নিশংসতা থামে নি।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
দাদা, ভালো বললেন।
সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি
আলমগীর সরকার লিটন
ধ্যিকার জানাই এই দায় কেউ এরাতে পারে না সব দায়—————–
আরজু মুক্তা
একদম। দ্রুত বিচার হোক
রেজওয়ানা কবির
বাংলাদেশে এইরকম ঘটনা এখন পেপার খুললে, নেট খুললেই দেখা যাচ্ছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের কষ্ট দেয়।এইরকম বিকৃত মানুষের শুভবোধদয় কবে হবে?আর কবে এই ধর্ষন থেকে মেয়েরা রক্ষা পাবে?সত্যি এইসব ভাবলেই আর কিছু ভালো লাগে না।গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপু।
আরজু মুক্তা
সবার ঘরে তো মেয়ে আছে, কেমনে ভালো লাগবে?
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ইদানিং এই ঘটনাগুলোর বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এমন একটি ঘটনা প্রশাসন নিশ্চয়ই জড়িত আছে। পুরো ঘটনাটা পড়ে শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। মানুষ এতোটা পৈশাচিক, বর্বর হয় কিভাবে ভাবতেই অবাক লাগে!! শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারা ও রেহাই পাচ্ছে না। অবলা নারীদের এভাবেই শিকল পড়িয়ে দিচ্ছে। আবার কখন কি এরা মানুষ হবে?
আরজু মুক্তা
না, একটা প্রকাশ্য ফাঁসি নাহলে দমবেনা!
মোঃ মজিবর রহমান
এদের ধিক্কার জানাতেও গৃনা হয় আমার আরজু আপু। এরা নরাধম, নিকৃষ্ট।
আরজু মুক্তা
জি ভাই। ঘৃণা লাগে। তবুও, সবার ঘরে তো মেয়ে
চিন্তা থাকেই।
মোঃ মজিবর রহমান
কঠর শাস্তি চাই। খুব কষ্টের শাস্তি চাই। তিল তিল করে নির্যাতন করা উচিত এই পশুদের।
তৌহিদ
আমি অনলাইনে আসছিইনা এসব খবরের জন্য। মানুষ এত নির্মম হয় কি করে। নিজের মা বোনের কথা ভাবলে গলা শুকিয়ে আসে, মন অজানা আশংকায় কেঁপে ওঠে। দোষীদের শাস্তি চাই।
এমন একটি বিষয়ে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ আপু।
আরজু মুক্তা
আর বলিয়েন না ভাই। নিজের মেয়ে ভাতিজিদের যে কতো জ্ঞান দিতে হচ্ছে।
মর্মান্তিক।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের মন মানসিকতা, নারীদের প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি যতদিনে না পাল্টাবে ততদিনে এই ধর্ষন কমবে বলে মনে হয় না।
ধর্ষনের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাও এর জন্য অনেক দায়ী। ধর্ষকের পারিবারিক ভাবে নারীদের সন্মান জানানোর কোন শিক্ষা নেই।
একেক টা ধর্ষনের ঘটনা ঘটে আর নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবতে কুন্ঠা বোধ করি।
মানুষ আমরা আর কবে হবো! সমসাময়িক ঘটনা এবং সমস্যা নিয়ে ভালো পোষ্ট।
শুভ কামনা। শুভ ব্লগিং।
আরজু মুক্তা
এদের প্রকাশ্যে ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত ঠিক হবেনা
সুরাইয়া পারভীন
আর কবে কীভাবে এই হিংস্র নরপশু গুলো মানুষ হবে? আর কবে? যখন জানোয়ার গুলো ধর্ষণের খেলায় মেতে ওঠে তখন এদের মা বোন বউ মেয়ের কথা একবারের জন্যও মনে পড়ে না? মস্তিষ্ক বিকৃতি নরপুশুদের ধিক্কার দেবার ভাষাও জানা নেই আমার
আরজু মুক্তা
কি বলবো আপু। এদের কি মা বোন নেই?
আমার মাথা কাজ করেনা
ইঞ্জা
ধর্ষকরা কোনো ক্রমেই নিস্তার না পাই তা দেখার দায়িত্ব সরকারের, আশা করছি সকল ধর্ষকদের সরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে।
খুব ভালো পোস্ট দিলেন আপু, সাধুবাদ জানবেন।
আরজু মুক্তা
সরকারের ধীর নীতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ইঞ্জা
একমত, আমরাও এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রেহানা বীথি
সব ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আরও বসে থাকতে হবে আমাদের? নির্মমতা যেমন, তার বিচারও তেমন হওয়া দরকার। যুগোপযোগী হোক আইন। ফাঁক-ফোকর গলে যেন না বেরোতে পারে এমন পচে যাওয়া অমানুষগুলো।
আরজু মুক্তা
আসলেই, কঠোর আইন এবং তার প্রয়োগ দরকার। এই মানুষগুলো হায়েনা। দ্রুত আইন সংশোধন হোক, এটাই চাওয়া