ধর্ষিত পাহাড়ি বোন এবং আমি

আরজু মুক্তা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ১২:০০:৪৫পূর্বাহ্ন সমসাময়িক ৩২ মন্তব্য

মারিয়া আক্তারকে মনে আছে? সাফ গেমসের ভার উত্তোলনে সোনা জিতে যিনি জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে ভীষণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

ওয়াসফিয়া নাজরিনকে চিনতে পারছেন?  সর্বকনিষ্ঠ এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে। তিনি সাত মহাদেশের সাতটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন।

আমাদের সাহসী নারীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!

জাহানারা, নারী ক্রিকেটার, যার লাল সবুজের জার্সি আর ঘাম ঝরানো ব্যাটিং এর ফাঁকে তার আইলাইনার এবং লিপগ্লস অনাসায়ে চোখে পরে। আর গর্বে ভরে যায় বুক।

মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে সবখানে। দেশে এবং দেশের বাহিরে। সম্মান বয়ে আনছে সমগ্র জাতির জন্য। সুযোগ পেলে কী চমৎকার উপায়ে নারীরা দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে!

এই অগ্রযাত্রা না বিষাদের কথা লিখবো? মেয়েরা একদিকে দক্ষ হাতে দেশ এমনকি বিমান চালাচ্ছে। আর অপরদিকে চলছে ধর্ষণের রমরমা প্রতিযোগিতা।

কী ভয়ানক!  কী মর্মান্তিক !

ধর্ষক কোনো দলের না। টুপি মাথায় কেউ ধর্ষণ করলে সে দায় ধর্মের না। মন্দিরে ফেলে ধর্ষণ হলে সে দায় পূজারীর নয়।

ধর্ষণের সাথে রাজনীতি করে ধর্ষিতাকে বার বার ধর্ষণ করবেন না। ধর্ষণের মূলে আসেন। ধর্ষণের দায় পুরো জাতির। ধর্ষণের দায় লিঙ্গ বিহীন সমাজের।

আজ শুধু খাগড়াছড়ির এই আদিবাসী মেয়েটি ধর্ষিতা হয় নি। ধর্ষিতা হয়েছে কাঁধে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া মেয়েটির বাবা-মাও।

ধর্ষিত হয়েছে রাষ্ট্র,সরকার,আইন ব্যবস্থা। ধর্ষিত হয়েছে বিরোধীদল। যাদের আন্দোলনে ধর্ষিতা নেই আছে শুধু ক্ষমতার লড়াই।

ধর্ষিত হয়েছে সেই স্থানীয় বাঙ্গালী নরপশু গুলোর পরিবার -স্বজন। যারা  ধর্ষকের নাম শোনার পরেও বিচারের আশায় চোখ বুজে আছে।

ধর্ষিত হয়েছে সেই পুরুষ যারা ধর্ষণের খবরে জিভ চুক চুক করে বউ বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে শুয়ে পড়ছে।

আর কত দর্শক হবো?  আমি তো ভাবছি, গতকাল রাতে এই ঘটনা আমার বা আমার স্বজনের সাথেও হতে পারতো। তারপর? গা গুলিয়ে ওঠে। সমাজের যে পরিচয়ে, যে স্তরেই নারীর অবস্থান থাক, সেকি আজ নিরাপদ?  এই মেয়েটি আমাদের সত্য কথা জানালো। এই দেশ, এই সমাজ, চিরচেনা চলার পথ, সব অচেনা!

মানুষের মতো দেখতে প্রাণীগুলো দিনশেষে উত্থিত একেকটা পুরুষ। একটু এদিক ওদিক হলেই যারা হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পরে। এ ধরণের ঘটনা আমাদের  অপরাধী করে দেয়। পিছিয়ে দেয় আরো কয়েকশ বছর।

যন্ত্রণাকাতর প্রিয় বোন আমার। তোমার উপর এই অত্যাচারের ঘটনা আমার মতো কতো অসংখ্য মানুষকে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করছে। স্থির থাকতে দিচ্ছেনা। তীব্র দহন!

যদি নিজের বিবেকের কাছে ধর্ষিতা হতে না চান তবে গুটিকয়েক মানববন্ধন কারী মানুষগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দল, বল নির্বিশেষে যান। হাত দুটো এতটা প্রসারিত করুন যেনো, একে অন্যের হাত ছু্ঁয়ে সারা বাংলার মানচিত্রে ছড়িয়ে যায়। এত জোরে হুংকার দিন,  যাতে অসভ্যের লিঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

আমি একাত্তরে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের উপর বর্বরতা দেখিনি!  তবে বাংলাদেশীদের দ্বারা পাহাড়িদের উপর এমন নির্মমতা দেখছি। পরাধীনতার অনিশ্চয়তায় বন্দি যে ফুলটিকে বাঁচাতে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখেছিলো। এতো বছর পর একই করুণ কাহিনী  দুমড়ে, মুচড়ে,  থেতলিয়ে দিচ্ছে।

খাগড়াছড়ির এই আদিবাসী পাহাড়ি মেয়েটিকে টানা ২ ঘন্টা ধরে পালাক্রমে ৯ বার গ্যাং রেপড করে কিছু স্থানীয় বাঙ্গালী।

মানুষ জন্মেই মানুষ হয়না! তাকে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। তাকে মানুষ হয়ে উঠতে হয় আদর্শে, চেতনায়, মননে।

আমরা মানুষ নয়, ক্রমশ পুরুষ হয়ে উঠেছি।

বাহ্ কী চমৎকার!

"আবার তোরা মানুষ হ!"

ছবিটি প্রতীকী। এটি ২০১২ সনের। ছবি গুগল থেকে নেয়া। 

 

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ