মনের টুকিটাকি

সাবিনা ইয়াসমিন ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার, ০৪:৪৪:৪৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৬ মন্তব্য

দুপুর বেলায় চুপচাপ শুয়ে উদাস নয়নে ঘরের সিলিংফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়ের বাবা ঘরে ফিরেছেন অনেকক্ষণ, খেয়েদেয়ে আবার বাইরে যাবেন। কিন্তু আমি বাতাস খেয়েই যাচ্ছিলাম। সে আমার পাশে এসে হাতে একটা বই দিলো, পড়ো। তাকিয়ে দেখি শার্লক হোমস সমগ্র! হাত নেড়ে নিষেধ করে দিলাম। এরপর  হাতে দিলো ফোন!

ফেসবুক চালাও, ভালো লাগবে।
- ওটার স্ক্রিন নস্ট। কাজ করে না,মেয়ে আমার হয়ে জবাব দিলো।
= তাহলে একটা গান শোনাই? বলেই গানটা সবে শুরু করেছিলো,
একলাফে বিছানা ছেড়ে উঠে খাবার বেড়ে দিলাম। নাও, খেয়েদেয়ে আমাকে ধন্য করো। আমি একদম ঠিকঠাক সুস্থ অবস্থাতেই আছি।

এটা বলতে গিয়েই টের পেলাম আমার মুড আসলেই ঠিক হয়ে গেছে। মন খারাপ ভাবটা উধাও 😮

আমি নানা সময়ে নানা কারণে মন খারাপ করে থাকি। আমার মনটাই এমন। যেকোনো কারনে খারাপ হতে পারে। কখনো এমনি এমনিতেও খারাপ হয়। তখন কি করি? অনেক কিছু করে ফেলি। কিছু কিছু কাজ নিজের কাছেই হাস্যকর মনে হয়। কিন্তু মন খারাপটা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেই। কিভাবে?  ভুলে যাবার আগে লিখে রাখছি।

* যখন মেয়ের বাবার সাথে ঝগড়া করি-

কয়েক বালতি কাপড় বেশি করে সার্ফ এক্সেল দিয়ে ভিজিয়ে রাখি। বাড়িঘর ঝেড়েমুছে ক্লিন করি। তারপর বাথরুমে গিয়ে আচ্ছামতো কাপড় গুলোকে কাচতে থাকি। বিশেষ করে তার জামাকাপড় গুলো। এমন ভাবে আছড়ে দেই যতক্ষণ না তার শার্ট/টি-শার্টের দুয়েকটা বোতাম ভেঙে যায়। এগুলো করার পর যখন বের হয়ে আসি, তখন আমি একদম শান্ত-স্থির 🙂

* যখন মেয়েদের উপর বিরক্ত হই-

মেয়েরা বড়ো হচ্ছে। অনেক সময়েই তাদের আবদার আর আমার মেন্টালিটি মিলছে না। কিন্তু তাদের উপর রাগ করা যাবে না। বোঝাতে হবে। এই জন্য আগে নিজেকে সংযত করার সময় চাই। ফ্রিজে রাখা জিনিস গুলো বের করি। ফ্রিজটা পরিস্কার করে জিনিসগুলো যথাস্থানে সাজিয়ে রাখি। কি আছে, কি নেই লিষ্ট বানাই। মেয়েদের কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করি। এগুলো করতে করতে যে সময় ব্যয় হয়, ততোক্ষণে আমি তাদের সাথে আলোচনা করার মতো স্থিতিশীল অবস্থানে চলে আসি। মেয়েরা আমার বক্তব্য বুঝতে পারে,আমিও তাদেরটা 😇

* যখন পরিবারের কারো সাথে মনোমালিন্য ঘটে-

যদি সে বয়সে বড় হয়, চুপচাপ তার কথা শুনতে থাকি। একদম টু শব্দ করি না। তিনি বলতেই থাকেন, বলতেই থাকেন। এক সময় ক্লান্ত হয়ে তিনি যখন চুপ হয়ে যান, তখন তার-আমার ভুল ভ্রান্তি নিয়ে কথা বলি। এতে কাজ হয়। যেহেতু বকাঝকা সব হজম করে ফেলেছি, তাই অপর পক্ষ খুব বেশি কিছু আর বলেন না। কারন আমরা সবাই জানি, রাগ কমে গেলেই বড়রা তাদের স্নেহ ভালোবাসার পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেন। ছোটদের সাথে আমার মনোমালিন্য হয় না 😀

* ভাই-বোনদের সাথে কথায় না মিললে-

মায়ের কাছে বিচার দেই। মা চিল্লাক, আমরা ভাই-বোনেরা মিলেমিশে আনন্দে থাকি 😊

* যখন অনলাইন ভিত্তিক কোন কারনে মন খারাপ হয়-

ফেসবুক আইডি ডিজেবল করি। মেসেঞ্জার অন করি। বন্যার সাথে চ্যাট করি। মনের যত প্যানপ্যানানি, যত রাগ-ক্ষোভ, কথা-ব্যাথা সব পইপই করে তাকে বলি। বন্যাও! মনোযোগী শ্রোতা হয়ে, অন্যতম ত্রাতা হয়ে, দুঃখ নির্মুল কমিটির সভাপতির মতোন আমার সব কষ্ট গুলোকে জরিমানা সহ অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করে দেয়। আমি উচ্ছ্বসিত হই সোনালী আভায়, সোনেলার মতো 😍

* যখন কাউকে মিস করি-

রক্তের নয়, পারিবারিক নয়, সামাজিকতা রক্ষার্থেও নয়, কিছু মানুষ জড়িয়ে থাকে আত্মায়। কেন জানি মাঝে মাঝে সেই আত্মার আত্মীয়ের উপরই বেশি অভিমান হয় আমার। হয়তো আত্মার অধিকারেই। খুব ঝগড়াঝাটি করে নিজে নিজেই সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়ে ভাবি, একদম ভুলে যাবো। কিন্তু কিভাবে!🙄

ভুলে যেতে হলে, সম্পর্ক নিঃশেষ করতে হলে আরও বেশি বেশি ঝগড়া করা দরকার। ভাবতে ভাবতেই ফিরে আসি। তুমুল ঝগড়াঝাটির পর, জিড়িয়ে নেয়ার অবসরে উপলব্ধি আসে, আসলে ঝগড়া করতে নয়, এসেছি কাছে থাকতে। মিস করছিলাম বলেই ফিরে আসা ❤

অবস্থা যাইহোক, যত প্রতিকূল হোক, মন খারাপ ভাব আমি বেশিক্ষণ নিতে পারি না। আর হ্যা, হোক শত-সহস্রবার ঝগড়া, তবুও মিসিং ফিভার আমার চাই না।

আজকে এই পর্যন্তই।
সবাই ভালো থাকুন। শুভ কামনা অবারিত 🌹🌹

 

 

ছবি- নেট থেকে নেয়া।

0 Shares

২৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ