কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল

সাবিনা ইয়াসমিন ১৪ জুলাই ২০২২, বৃহস্পতিবার, ০৪:১০:১৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ১৬ মন্তব্য

ফলের নাম-কাঁঠাল।

কাঁঠাল হলো আমাদের দেশের(বাংলাদেশের) জাতীয় ফল। আকারে বড়,লম্বা কিছুটা মোটাসোটা হয়। আবার গোলাকৃতিও হয়। বাইরের দিকটা কাঁটাযুক্ত কিন্তু কাঁটা গুলো ভোঁতা থাকে। ভেতরের রঙ হলুদ/গাঢ় হলুদ হয়ে থাকে। খেতে মিষ্টি লাগে। পাঁকা কাঁঠালের ঘ্রাণ খুবই তীব্র। অনেকেই সহ্য করতে পারে না। কিন্তু যাদের কাছে এই ফল অত্যন্ত প্রিয় তারা এর ঘ্রাণেই মুলত বেশি আকৃষ্ট হোন। গাছের ধরন/বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক কাঁঠাল গাছে একাধিক কাঁঠাল ধরে। একেকটি কাঁঠালের সাইজ অনেক বড় হয়। বিশালাকৃতির একটা কাঁঠাল অনেক মানুষ মিলে একসাথে বসে খেতে পারেন।

সময়-কাল: কাঁচা কাঁঠাল যারা খেতে পছন্দ করেন তারা একটু আগে আগেই শুরু করে দেন। কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়। শহুরে এবং গ্রামীণ রান্নায় বিভিন্ন মাংসের সাথে অথবা শুধু সব্জি হিসেবে এঁচোড় বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া এঁচোড়ের কাবাব, এঁচোড় ভর্তা, এঁচোড় এর টক, ইদানীং কালের এঁচোড় বিরিয়ানি ভোজনরসিকদের নিকট মজাদার খাদ্য তালিকায় গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

কাঁঠালকে সময়ের আগেই যারা পাঁকিয়ে খেতে চান তারা অনেক ধরনের সিস্টেম অবলম্বন করেন। তার মধ্যে কাঁঠালে শিক দেয়া একটি অন্যতম সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। এই সিস্টেমে প্রথমে গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে আনতে হয়, তারপর লম্বা সরু সুঁচালো একটা লোহার শিক ( কাঠি) দিয়ে কাঁঠালের এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত ফুঁটো করে দেয়া হয়। এরপর কাঁঠাল পেঁকে যায়/নরম হয়ে যায়।(এই সিস্টেম কিন্তু অন্য ফলের বেলায় কার্যকর হবে না) অনেক সময় পঁচে যাওয়ার রিস্ক থাকে।

সাধারণত জৈষ্ঠ্যমাস থেকে পাঁকা কাঁঠালের মৌসুম শুরু হয়ে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠাল প্রেমীদের মাঝে এটা খাওয়ার ধুম লেগে থাকে।
কেউ কেউ নরম আঁশের মিষ্টি কাঁঠালের রোঁয়া (কোষ) খেতে ভালোবাসেন। আবার অনেকে পাঁকা কিন্তু একটু শক্ত রোঁয়া পছন্দ করেন। যারা শক্ত রোঁয়া পছন্দ করেন তাদেরকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগে। ঐ সময়ের কাঁঠাল গুলো একটু ব্যতিক্রম হয়।

কাঁঠালের গুণ-দোষঃ প্রচুর ভিটামিনে ভরা কাঁঠালের গুণের শেষ নেই(গুগলে গিয়ে খুঁজে পাবেন)। কাঁঠালের গুণ সম্পর্কে প্রচলিত কিছু জনশ্রুতি না বললেই নয়, যদিও সত্য-মিথ্যার নিরিখ করা হয়ে উঠেনি।
কাঁঠাল খেলে নাকি ভালো ঘুম হয়,গায়ের রঙ ফরসা হয়, চুল পরা বন্ধ হয়, শরীরে শক্তি বাড়ে, চোখের জ্যেতি বাড়ে, মন ফুরফুরে থাকে, বাচ্চারা খেলে তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায় আর বৃদ্ধরা খাওয়ার পরে যৌবন ফিরে পায়!

দোষের মধ্যে গুরুতর দোষ হলো বেশি খেলে পেট খারাপ হবে। প্রচুর গরম লাগবে। ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাবে, সুগারের রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

এবার আসি বিঁচিতে: কাঁঠালের আকার-প্রকার-গুণ-দোষ সব কিছু সহ আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো এর বিঁচি মানে আঁটি। অন্যান্য ফলের মতো কাঁঠালের আঁটি/বিঁচি কিন্তু ফেলে দেয়ার জিনিস নয়। অনেকের কাছে কাঁঠালের মতো বা তার চাইতেও বেশি প্রিয় আর আদরের জিনিস হলো এই কাঁঠালের আঁটি/বিঁচি। ( আরেকদিন হয়তো লিখবো)।

কাঁঠালের মুঁচিঃ  কাঁঠালের মুঁচি বলা হয় একদম পিচ্চি অবস্থার কাঁঠালকে। কিছু মানুষ বিশেষ করে মেয়েরা এই মুঁচি কুচিকুচি করে কেটে পাঁকা তেতুল, নুন আর শুকনো মরিচ পোঁড়া দিয়ে এক রকমের ভর্তা বানিয়ে খেতে ভীষণ পছন্দ করে।মনে করেন কাঁঠাল খাওয়ার উদ্ভোদন ঘটে এই মুঁচি ভর্তা দিয়েই।

খোঁসা/ আবরণঃ  পাঁকা কাঁঠালের আবরণ মানে খোঁসা ছাড়ানো একটু কষ্টকর। হাতে ভালো করে তেল মেখে না নিলে কাঁঠাল খাওয়া বরবাদ হবার সমুহ সম্ভাবনা থাকে। যাইহোক কষে ভরা খোঁসা গুলোকে ফেলনা ভেবে ভুল করার কোন উপায় নেই। মানুষের কাছে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা যেমন, গবাদি পশুদের কাছে  তারচেয়েও বেশি প্রিয় এই কাঁঠালের খোঁসা। কারণ তারাও এই ফল/ফলের খোঁসা খেয়ে উপকৃত হয়। গবাদি পশুদের পাশাপাশি সৌখিন ইউটিউবার রাধুনিদের কাছেও কাঁঠালের খোঁসা অনেক পছন্দ। তারা এগুলো দিয়ে বিভিন্ন রেসিপির মাধ্যমে  আমাদের শিখাচ্ছেন কীভাবে কাঁঠালের জ্যাম, জেলি বানিয়ে খেয়ে আমাদের টাকাপয়সা বাঁচিয়ে লাভবান হতে পারি!

মোতাঃ কাঁচা কাঁঠাল, পাঁকা কাঁঠাল, বিঁচি খোঁসা সব খাওয়ার পরে থাকলো মোতা।মোতা হলো কাঁঠালের ভিতর একটু মোটা, গোলগাল লম্বামতো একটা বস্তু। ওটার চতুর্দিকে স্তরে স্তরে কাঁঠালের কোষ সাজানো থাকে। এই মোতাকেও চাইলে কাজে লাগানো যায়। অনেক বাঙালি রান্নাঘরে ভর্তা, গুড়া মাছ বা কষানো মাংসে এই জিনিসের ব্যবহার হতে দেখা যায়।

তো; এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল হয়ে গেছে; 🙂

** জানি এগুলো সবাই জানে তবুও লিখলাম। আসুন দেশি ফল- জাতীয় ফল কাঁঠাল খেয়ে দেশ ও জাতিকে(নিজেকে) ধন্য করি।**

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ