IMG_20160604_144128
মেঘের দেশের উপরে ভেসে ভেসে চীনের দিকে যাচ্ছি। কত ঘন মেঘ, মনের মাঝে ভাবনার উঁকিঝুঁকি, আচ্ছা কোনভাবে যদি বিমান হতে বাইরে ছিটকে যায়, মেঘ কি ধরে রাখতে পারবে আমাকে? যদি ধরে রাখে হেঁটে হেঁটে কোথায় যাবো মেঘের জমিনে?
বিমানে উঠলে কত কথাই যে মনে আসে। আপাতত মনের কথা বাদ, দেখা যাক বিমানের সময়টুকুতে বিশেষ কিছু করেছি কিনা।

বিমান মিস করার একটা অভ্যাস আছে আমার। মেলবোর্ন হতে সিডনি যাবার সময় সুখ নিদ্রা থেকে উঠতে বিলম্ব হয়ে যায়। কোনমতে ব্যাগ নিয়ে ট্যাক্সি করে বিমান বন্দরের কাছাকাছি আসার সময়ে খেয়াল করি আমার ল্যাপটপ হোটেলের কাউন্টারে রেখে এসেছি। কি আর করা, ফিরে গেলাম হোটেলে ল্যাপটপের মায়ায়। বিকেলে টিকেট কেটে আবার অন্য বিমানে সিডনি। সিউল হতে চীনের কুন্মিং যাবো এবার। এবারেও সারারাত জেগে থাকার ফলে বিলম্বে ঘুম থেকে জাগা, দ্রুততার সাথে বিমান বন্দরে আসায় ব্রেকফাস্ট ও করা হয়নি। বোডিং, ইমিগ্রেশন এর পাট চুকিয়ে বিমানে উঠে বসলাম। বিমান ছাড়ার সাথে সাথে পেটের ক্ষুধায় অস্থির হয়ে গেলাম। লাঞ্চের বক্স আসতে দেরি আছে। পাশের সীটেই এক কোরিয়ান নারী। সাথে ওনার ১২- ১৩ বছরের কন্যাও আছে।

ব্যাগ হতে পলিথিন বের করে আলুর চিপসের মত কি জানি খাচ্ছে দুজনে। দেখে আমার ক্ষুধা আরো বেরে গেলো। তাকিয়ে আছি ওনার হাতে ধরা পলিথিনের দিকে। উনি একবার আমার মুখের দিকে তাকালেন, কিভাবে বুঝে গেলেন কে জানে, পলিথিন থেকে ৬-৭ টি টুকরো দিলেন আমার সামনে, নাও খাও। কোন কথা না বলে মুখে হাসি এনে হাতে নিলাম। জিনিসটা কি বুঝতে পারছিলাম না। মুখে দিয়ে কামড় দিতেই বুঝে গেলাম এটি আপেল। পাতলা করে চিপসের মত করে কেটে রোদে শুকিয়েছেন। এত টেষ্ট আমি খুব কম খাবারেই পেয়েছি। আমার তৃপ্তিটা উনি ভালভাবেই বুঝলেন। এরপর পলিথিন মেলে ধরলেন আমার সামনে। আমিও সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করলাম 🙂 বড় থাবার এক থাবা নিলাম, পলিথিনে অবশিষ্ট থাকলো সামান্যই। মহিলার মুখে হাসি, ওনার কন্যা কিছুটা অবাক। খাচ্ছি আমি তৃপ্তি নিয়ে। উনি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। উজ্জ্বল মুখ ওনার, তৃপ্তি যেন ওনারই বেশি।
বুঝলাম নারী তা সে বাংলাদেশের হোক বা কোরিয়ান হোক, নিজের করা খাবার খাইয়ে তৃপ্তি পান।
ইংরেজী তেমন জানেন না কোরিয়ান সাধারণ জনগন। আসলে আন্তরিকতায় ভাষা কোন সমস্যা নয়। বুঝালেন যে উনি বুঝেছেন যে আমি ব্রেকফাষ্ট করিনি। আমি কিছুটা লজ্জিত হয়ে হেসে বুঝালাম যে ঠিক ভেবেছেন উনি। এরপর ব্যাগ হতে বের করলেন এমন এক খাবার যা দেখে আমি তো পুরাই টাস্কিত। সিদ্ধ আলু, দিলেন আমাকে। সিদ্ধ আলু এত মজা লাগলো কেন? বিমানে বসে কেউ কোনোদিন কাউকে সিদ্ধ আলু দেয়, এই প্রথম জানলাম। বিমানে কত চড়েছি, আমিও এই প্রথম বিমানে সিদ্ধ আলু খেলাম।
কোরিয়ান খাবার খেতে খেতে হঠাত করেই গতরাতে আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছিল। ডাল পেলাম না, আলু সিদ্ধ তো পেয়েছি, মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে উঠলো।
অবশেষে এলাম চীনের কুম্মিং বিমান বন্দরে। এখানেই হোটেলে থাকবো আগামীকাল দুপুর পর্যন্ত। যাত্রীদের জন্য স্বল্পকালীন পোর্ট এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয় এখানে। ভ্রমণ পিয়াসী গন কৌশলে যদি ৩ দিন এখানে ট্রানজিট নেন, তবে তিন দিনের ভিসাই এখান হতে দেয়া হয়। প্রচুর পর্যটক, ব্যাবসায়ী আসেন এখানে, একারনে এখানে হোটেলের রমরমা ব্যবসা। ইচ্ছে করেই ১৭ ঘন্টার ট্রানজিট নিয়েছি দেশে ফেরার সময়, সিউল যাবার সময় নিয়েছিলাম ১৬ ঘন্টা। সাধারনত ১০ ঘন্টা + ট্রানজিটের জন্য এয়ারলাইন্স হোটেলের ব্যাবস্থা করে, টিকেট নেয়ার সময় এটি কনফার্ম করতে হয়। আমি সিউল যাবার সময় এয়ারলাইন্স এর পক্ষে দেয়া হোটেলে ছিলাম।

বুকিং করা হোটেলের পক্ষ থেকে আমার নাম লেখা কাগজের প্লাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির সাথে পরিচিত হলাম। অনেক বাঙ্গালী হোটেলও আছে এখানে। টার্মিনাল হতে বের হবার সাথে সাথে তারা এলো তাদের হোটেল রেষ্ট হাইজে থাকবো কিনা জানতে চাচ্ছেন। আলী নেওয়াজ নামের একজন 'মায়ের দোয়া' রেষ্ট হাইজে থাকার আমন্ত্রন দিল। তাঁকে আমার হোটেলের নাম বলায় বললেন যে ওনার মায়ের দোয়ার কাছেই এই হোটেল। রাতে খেতে যেতে বললেন। ফোন করে জানিয়ে দিলেন ওনার হোটেলে খাবার তৈরী করতে। বিদায় নিয়ে আমার হোটেলের গাড়িতে উঠলাম।

IMG_20160604_201538
আগে থেকেই বুক করা আমার হোটেল। সাইনবোর্ডে চাইনিজ লেখা ব্যতীত কিছু নেই। দেখে ভালোই লাগল। নিজেদের ভাষার কত গুরুত্ব দেয় এরা।
হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে রাতে খাবারের সন্ধানে বের হলাম। মনে পরলো আলী নেওয়াজের কথা। খেতে যাবো ওখানেই। খুঁজতে খুঁজতে গেলাম মায়ের দোয়া রেষ্ট হাউজে। বাঙ্গালীর মিলন মেলা যেনো। অনেক বাঙ্গালী এবং নেপালিজ আছেন ওখানে। মায়ের দোয়া আসলে একটি রেস্ট হাউজ। থাকা এবং খাওয়া বেশ সস্তাই। মাত্র ১৫০ চায়না টাকায় থাকা এবং খাওয়া। পরে কখনো এলে থাকবো এখানেই ভাবছি।

খাবার টেবিলে দশ মিনিটের মধ্যে খাবার দেয়া হলো আমাদের দুইজনকে। খাবার দেখে তো হাসি আর ধরে না মুখে। একশত ভাগ বাঙ্গালী খাবার।  প্রিয় আলু ভর্তা আর ডাল আছে 🙂 সাথে আছে বেগুন ভর্তা, সিম ভর্তা, বাঁধাকপি, ডিম ভর্তা আর চিকেন। বেশ তৃপ্তি সহকারেই খেলাম। আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাবার ইচ্ছে তো পুর্নই হয়ে গেলো।

বেহেশতে থাকা অবস্থায় মানুষের সব ইচ্ছে আল্লাহ্‌ পূর্ন করেন। আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খাবার ইচ্ছে তো পূর্ন হয়েই গেলো। মনে হয় স্বর্গে আছি 🙂

IMG_20160604_202732

 

0 Shares

৫৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ