করোনা বিশ্ববাসীর জন্য একটা বিরাট মোকাবিলা ছিল। তা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হলো রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। আর তা একেবারে পুরো বিশ্বকে কাবু করে ফেলেছে। একের পর এক দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতিতে জনগন নাজেহাল প্রায়। হয়তো দুএকটা জিনিসের দাম ফলাও করা হয়। মূলত দেখা যায় সমস্ত জিনিসের দামই বেড়েই চলছে।

আবার বাড়লো সয়াবিন তেলের দাম। চলছে যেন অস্থির জীবন যাপন। একদিকে তাকালে অন্যদিকে বিপদ এসে হাজির। সুরাহা কবে হবে তা আমরা জানিনা। এইফাঁকে স্বার্থান্বেষী মহলও সিন্ডিকেটে ব্যস্ত।

খাবার- দাবারে না হয় কম- বেশি করা যায়। কিন্তু বিদ্যুৎ অসহনীয় লেভেলে চলে গেছে। প্রতি ঘন্টায় চলছে লোডশেডিং। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামের, ২৪ ঘন্টায় সাকুল্যে ৬/৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অতি গরমে জীবন প্রায় অতিষ্ঠ।

এমতাবস্থায় এ বছর সবচেয়ে বেশি এয়ারকুলার বিক্রি হয়েছে তাপমাত্রা বেশি হবার কারণে। জনসচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে অফিস আদালত ও মার্কেটগুলোতে। প্রয়োজনের বাইরে লাইট, ফ্যান, এসি চালিয়ে আরও সংকটাপন্ন অবস্থার দিকে আমরা যাচ্ছি।

বিশ্বের অনেক দেশেই বিদ্যুৎ এর ব্যাপারে অনেক আগেই সতর্কতা অবলম্বন করলেও, বাংলাদেশ সরকার গত ১৯ জুন ২০২২ থেকে কিছু সেবা খাতকে যেমন রেলস্টেশন, বিমানবন্দর, পরিবহন সার্ভিস টার্মিনাল, হাসপাতাল, দাফন ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকান, ওষুধ ও অপারেশন সরঞ্জাম বিক্রির দোকান, নাপিত ও কেশ প্রসাধনীর দোকান, ক্লাব, হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান, সিনেমা, থিয়েটার, খুচরা পেট্রল বিক্রির দোকান, যেকোনো ময়লানিষ্কাশন বা স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যক্রম এই নির্দেশনার বাইরে রেখে রাত আটটার পর থেকে দোকান, বিপণিবিতান ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে এ সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে কার্যকর ও ফলপ্রসু হচ্ছে না।

আবারও বিদ্যুত সাশ্রয়ে সরকার আগামী ২৪ আগস্ট থেকে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময়সূচি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে।

 

** শুক্রবার ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। রোববার থেকে বৃহস্পতিবার অফিস সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

** আবারও জরুরি পরিসেবাসমূহ নতুন অফিস সময়সূচির আওতাবহির্ভূত রাখা হয়েছে।

** ব্যাংক, বীমা, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক সময়সূচি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে আরও ইফেক্টিভ করা যায় এই মুহূর্তে সেজন্যই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব নির্দেশ দেন, সব সরকারি অফিসে কোথাও পর্দা টাঙানো না রাখার জন্য। এগুলো খুলে ফেলে লাইট যতসম্ভব কম লাগালে চালানো যায় যতটুকু চলবে এবং এয়ারকুলারও যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবও অনুমোদন করা হয়েছে। উনিও নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন, সপ্তাহে দুদিন অর্থাত শুক্রবারও শনিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এবং কর্তৃপক্ষ যেন কঠোরভাবে ক্লাসরুমের অযাচিত লাইট- ফ্যান বন্ধ রাখেন ও নজরদারি করেন এটিও নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসব সিদ্ধান্তের কারণে দুটো সুবিধা হবে বলেও জানান। একটা হলো বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, আরেকটা হলো ট্রাফিক জ্যামটাও অনেকাংশে কমে যাবে।

মন্ত্রী-এমপিদের বাসায় লোডশেডিং দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমিতো বলি মন্ত্রীর বাড়িতেও লোডশেডিং করা হোক। প্রধানমন্ত্রী এটা করলে আমি তাতে সমর্থন দেব।

দেশ যখন সংকটময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় তখন পুরো চাপটাই জনগনকে পোহাতে হয়। তাই সাহসী ও ধৈর্য্যশীল জাতি হিসেবে আমরা সচেতন হবো। অযথা, অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো না। যতটুকু হলে চলে ঠিক ততোটুকু ব্যবহার করে ভালো সময়ের অপেক্ষা করবো। যে কোন বিপদে ধৈর্যধারন ও অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম প্রকাশ!!

ছবি- নেটের

0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ