ঈদে মরিচের ঝাঁজ

রোকসানা খন্দকার রুকু ১ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ০৯:২২:৩৫অপরাহ্ন সমসাময়িক ৫ মন্তব্য

এবারে ঈদ কেমন ক্যারাব্যারা। গতবছর যারা কুরবানী দিয়েছে এবছর তারা অনেকেই কুরবানি দিতে পারেনি। আবার যারা গতবছর দেয়নি তারা এ বছর অনেকেই কুরবানি দিয়েছে। তারমানে নিম্নশ্রেণী এগিয়ে যাচ্ছে আর নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা গরীবের দিকে যাচ্ছে। মধ্যবিত্তদের সবদিকে মেইনটেইন করা আসলেই কঠিন হয়ে গেছে।

ঢাকা শহর কেবল নয় মফস্বলগুলোতেও মাংস নিয়ে গরীবদের আক্ষেপের শেষ নেই।  গরু কিনলেন লাখ টাকার,মাংস দেন এইটুকুন। সব কি ফ্রীজে রাখলেন? এতো চর্বী কেন? হাড় কেন? আপনাদের কুরবানীই হয় না এটাইপ নানা কথা শুনতে হয়।

চামড়ার পয়সাতেও সমস্যা। সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। কারণ ৩০০০ টাকার চামড়া ৩০০ তে নেমে গেছে। সেটা আর ক' জনকেই বা দেয়া যায়।

গ্রামের নিম্নশ্রেণীর মানুষের খুব একটা অভাব নেই।আমার ফ্রীজে যতোটা মাংস আছে মানে ভাগে পেয়েছি আমার বাড়ির আমেনা বু বা খলিল ভাইও কাছাকাছি বা বেশি পেয়েছে। তবুও সবার মাঝে কেমন আক্ষেপ, দৌড়- ঝাঁপ। আসলে আমরা সকল শ্রেণির মানুষ কেমন লোভী হয়ে গেছি। সবকিছুই গচ্ছিত রাখার একটা টেনডেনসি তৈরি হয়েছে যা আগে ছিল না। একসাথে স্বামী,বউ, বাচ্চা সবাই ঝোলা হাতে বেড়িয়ে পড়েছে। যা আগে শুধু পরিবারের বয়সীরা বের হতো। পাঁচবছরের একটা বাচ্চা মাংসের জন্য হাত পেতে নিজেকে অসহায়ের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তি যে সমাজের তরুন বা কিশোরদের জন্য ভয়ংকরতম একটা বিষয় তা আমরা বুঝতেই পারছি না।

প্রতিবছর কুরবানীতে মামু জানের একমাত্র সাপোর্টার আমি। তিনি হাটে গিয়ে প্রচুর দামে গরু কিনেন। হাট থেকে নাজেহাল হয়ে ফিরে চিৎকার দিতে দিতে আশেপাশে থাকা সবার কানের পোকা মারেন।

ঈদের সকালে আবার চিতকার শুরু হয়। আমি সমস্ত পোকা বিসর্জন দিয়ে মাংস মাপতে বসি। এবং মাপতে গিয়ে নানা কারসাজি করে আমাকে মাংস বাড়ায় হিসাব দিতে হয়। মিনিমাম ১০ কেজি বাড়ালে তিনি শান্তি পান যে গরু কিনতে ঠকেন নাই। তারপর উপরে খেতে যান।

সবাই বলে গরুর দাম নাকি ফ্যাক্ট না। আমার কাছে দাম অবশ্যই ফ্যাক্ট। কারণ আমি টাকা দিয়ে গরু কিনবো অবশ্যই হিসাব করেই কিনবো। দালালের তো গরু কেনা-বেচা ব্যবসা। তো যে পয়সা বেশি যাবে সেটা অবশ্যই দান নয়, দালালের ইনকাম। আর হাটে অধিকাংশই দালাল।

আবার গরীবদের মাংস দেবার সময় শুনতে হয় ' গরু নাকি কিনছেন লাখ টাকার, মাংস দেবার বেলায় নাই '।

এখন আপনি ১ লাখ টাকায় ১০০ কেজি মাংস পেয়ে ৩০ কেজি ভাগ গরীবের জন্য বের করলেন। লোকজন এলো ১০০/১৫০ জন। কতটুকুই বা তাদের ভাগে পড়বে! সেক্ষেত্রে আমার কাছে গরু দেখে কেনাটা ফ্যাক্ট। অযথা দাম দিয়ে গরু কিনে সবাই বঞ্চিত হচ্ছি।

এবার পশুর হাটের অনেক গরু বিশেষ করে বড় গরু বিক্রি হয়নি। বড়, ছোট, মাঝারি কোন গরুর দামই কিন্তু কম নয়। কারন হলো, গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর দামও দ্বিগুণ হয়েছে।

আব্বা বেঁচে থাকতে আমাদের কুরবানী হতো বুড়া বলদ কিংবা বুড়া গাই গরু। হাল চাষ করে যেগুলো হাড্ডিসার হয়ে যেত আব্বা ওটাই জবাই দিতেন। মাংস শক্ত কিন্তু চর্বি হীন। সেদ্ধ করে নিতে পারলে সুস্বাদু। আমাদের ছোটদের অবশ্য দাঁত ব্যাথা হয়ে যেত খেতে গিয়ে।

আমাদের এখন গরুর হাল নেই। আমরা প্রচুর কেনা খাবার খাইয়ে গরু লালন- পালন করি। এক একটা হাতির সমান করে হাহাকারে নেমে পড়ি।

আমি বলি দরকার কি হাতি বানানোর? বাড়ির ঘাস,কুড়া,খইল সামান্য ভূষি খাওয়ান। গরুতে খরচ কম হোক। বেশি গরু পালন করেন। আর যার বেশি মাংসের দরকার তারা দেশী, মাঝারী সাইজের গরু লাগলে পাঁচটা কোরবানী দিন।চর্বীহীন মাংস খেয়ে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে।গরুর দামও কমে যাবে।

আমাদের এখন যে জিনিসের দাম বাড়বে তা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। আমি কফিতে চিনি খাই না দুমাস। শুরুতে সমস্যা হলেও এখন হয়না। কাঁচামরিচ ১০০০ টাকা কেজি। আপনি দুটো শুকনা মরিচ গুঁড়ো দিয়ে রান্না করে ফেলুন। তরকারি লাল হবে তো! প্রথমে চোখে লাগবে পরে চোখ সয়ে যাবে। তাছাড়া অতিরিক্ত ঝাল খাওয়া জরুরি কিছু নয়। মসলার দাম দ্বিগুণ, তরকারিতে অল্প পরিমান দিন। কিংবা না দিয়েও রেঁধে ফেলুন। একসময় দেখবেন সবকিছুরই অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে যা একবার বেড়েছে তা আর কমেনি। আর যে দিন আসতেছে তাতে শুধু সেদ্ধ খাওয়ার অভ্যাস করা জরুরি!!!

0 Shares

৫টি মন্তব্য

  • নাজমুল আহসান

    লোভ এই জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আজকে এক গরুওলার খবর শুনলাম। একটা গরু কেনা থেকে শুরু করে লালনপালন আর হাটে নেওয়া বাবদ তার মোট খরচ হয়েছে ৭ লাখ টাকার মতো। সে নিজেই হিসাব দিয়েছে। হাটে এসে শুরুতে গরুর দাম হাঁকিয়েছিল ২০ লাখ। শেষে ৪ লাখে বিক্রি করেছে। ৩ লাখ টাকা লোকসান করে নাকে খত দিয়েছে- এই জীবনে আর গরুর ব্যবসা করবে না। ফাজিল, তুই ৭ লাখ খরচ করে সেটা ২০ লাখ বেচতে চাস কোন হিসাবে?

    আবার দেখেন, কেউ একজন সেই গরুর দাম নাকি বলেছিল ১৫ লাখ! মানুষের টাকার গরম দেখছেন? কেন এতো টাকা দিয়ে গরু কিনতে হবে? ১০০০ টাকা দিয়ে মরিচ কেন কিনতে হবে? মরিচ ছাড়া দুই-একদিন চলে না?

  • মনির হোসেন মমি

    দুঃখজনক হলেও সত্যিই যে আমাদের নৈতিক চরিত্র চেঞ্জ করতে হবে লোভটাকে সামাল দিয়ে মৃত্যু ও পরকালকে বিশ্বাস করতে হবে নতুবা এ থেকে আমাদের নিস্তার নেই।
    চমৎকার বাস্তবধর্মী লেখা।

  • হালিমা আক্তার

    সমসাময়িক বাস্তবতা নিয়ে চমৎকার লেখা। দিনে দিনে আমরা নৈতিকতা বোধ হারিয়ে ফেলছি। সব মন্দের শেষ আছে। এই অধঃপতনের শেষ একদিন হবে। অনেকেরই ধারণা যারা কুরবানী দেয়, তাঁরা গোশত ফ্রিজ ভর্তি করে রেখে দেয়। আর যারা গোশত টোকাতে বের হয়, তারা এগুলো পরে বিক্রি করে দেয়। এই জন্য পরিচিত অথচ কুরবানী দিতে পারে নাই। তাদের দেয়া উত্তম। কে কি বলল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এবার ঢাকাতে শেষ দিন রাতে ২৫/৩০ হাজার টাকায় ছোট গরু পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত লোভ এভাবেই ধ্বংস করে দেয়। আমি বুঝতে পারলাম না, এক লাফে কাঁচা মরিচ এতো উপরে উঠলো কেমতে। আসলে দেখার কেউ নেই। আমাদের নৈতিকতায় পরিবর্তন না হলে কিছু ই হবে না। আল্লাহ এদের হেদায়েত দান করুন। শুভ কামনা রইলো। আপনি এখান কেমন আছেন। শুভ রাত্রি।

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ