দেশে ধর্ষনের মহা উৎসব লেগেছে। শিশু, কিশোরী, বয়োবৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছেনা ধর্ষকের হাত থেকে। এ যেন অন্ধকার আর এক আইয়্যামে জাহেলিয়াত যুগ দেখছি। আমি বাকরুদ্ধ স্তব্ধ হয়ে পড়েছি। রাগে, ক্রোধে নিজের মমত্ববোধের নিজেই গলা টিপে ধরেছি। আর কোন ছাড় নয়, ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাই। আর তাই এই লেখায় মানবতা, মানবিকতা, সহমর্মিতা এসব শব্দের ব্যবহার করে নিজের মুল্যবোধকে আমি ছোট করতে চাইনা।

গতকাল ফেসবুকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের সেই ভিডিও দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি। নরপশু হায়েনাদের নৃশংসতায় জর্জরিত বোনটির আহাজারিতে কেঁদে ফেলেছি। কল্পনা করুনতো সেই বোনের জায়গার আপনার আমার মা বোন ধর্ষিত হলে আমাদের মানসিক অবস্থা কেমন হতো, আর আপনি কি করতেন? সারাটারাত দু'চোখের পাতা এক করে ঘুমাতে পারিনি। অনলাইন সকল মাধ্যম থেকে দূরে থেকেছি।

বিবেকের তাড়নায় আজ এই লেখাটি যখন লিখছি তখনো টিভি স্ক্রলে সংবাদ দেখাচ্ছে- মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে অধ্যক্ষ পলাতক। তিন বছরের এক শিশু ধর্ষনের শিকার! এদেশ কি রেপিস্টদের দেশ? কিছু ধর্ষকামী কুলাঙ্গারদের জন্য বাকীরা সবাই লজ্জাবনত হবে আর কতদিন? ধর্ষকের মহামারীতে ছেয়ে গেছে গোটা দেশ।

শিক্ষাঙ্গন, মন্দির, মসজিদ, গীর্জায়, প্যাগোডায়, রাস্তাঘাট, ঘরের কোণায় সর্বত্রই ওঁৎ পেতে থাকা ধর্ষকেরা হামলে পড়ছে অবলীলায় এবং কোনো কিছুতেই এদের থামানো যাচ্ছেনা। আইনের শাসন আজ লুন্ঠিত। গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ এখন বিলীন। সামাজিক বন্ধন কি আমরা তা ভুলে গিয়েছি। সভ্যতার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে গেছে।

আমাদের চিন্তার জগত সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা এখন হাস্যরসের পাত্র। রাষ্ট্রীয় আনুকুল্যে থাকা পাতি নেতাদের দৌড়াত্ব আমাদের মা-বোনের ঘরের দরজা পর্যন্ত এসে পড়েছে। অপসংস্কৃতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। অন্যায়কারী ধরা পড়লে আপনারা বলেন- দলের নাম ব্যবহার করেছে দুষ্কৃতকারীরা। কেন? ধর্ষনকারীরা কেউই কি ধর্ষণ লুন্ঠন করার আগে বলে- আমি আওয়ামীলীগ করি বা বিএনপি?

দলে যখন নিয়েছেন তখন যদি প্রকৃত মানুষ বাছাই করে নিতেন তাহলেতো এসব কথা শুনতে হতোনা। আসলে ধরা না পড়লে দিনেরপর দিন তারা এভাবেই দলে থেকে যেতো। কোনদিনও দল থেকে বের করে দিতেন না। রাজনীতি এখন হিংস্র ক্ষমতার থাবায় জর্জরিত। বিবেকবোধ এখানে মূল্যহীন। মানবতা জাগ্রত হয় রাতের আঁধারে। আর আমরা কামুক দৃষ্টি নিয়ে চিৎকার করি- ধর্ষকের ফাঁসি চাই!

খবরে দেখলাম ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবীতে উত্তরা হাউজবিল্ডিং এবং শাহাবাগে আন্দোলন করেছে হাজারো তরুণ! তাদের এই যৌক্তিক দাবীকে আমিও সমর্থন জানাই। সংবিধানে ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইনের ধারা পরিবর্তন এখন সময়ের দাবী।

মনে রাখবেন, আজকে হয়তো অন্যের মা,বোন, স্ত্রীদের কেউ ধর্ষিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ না করলে কালই হায়নাদের পরের শিকার হবে আমার আপনার মা, বোন কিংবা স্ত্রী, সন্তান। ধর্ষনরোধে কঠোর সামাজিক আন্দোলনের আর কোন বিকল্প নেই।

0 Shares

৪১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ