অনেক কঠিন কঠিন ম্যাচও কুদ্দুস তার একক ক্যারিসমায় দলকে জিতিয়ে দিয়েছে । বিশ্বকাপ T20  এর আবেগ প্রায় শেষ । ত্রিদেশীয় ওয়ানডের ফাইনাল খেলা আজ । দেশের পক্ষে সেরা ব্যাটসম্যান কুদ্দুসের সামনে কঠিন পরীক্ষা । ৪৯ তম ওভারের শেষ বলে এক রান নেয়ায় ৫০ তম ওভারের প্রথম বল মোকাবেলা করবে সে। কুদ্দুস সহ হতাশায় নিমজ্জিত পুরো দেশ । স্টেডিয়াম থেকে কান্নায় দুগাল ভিজাতে ভিজাতে দর্শকরা বেড় হতে শুরু করেছে । কি হবে খেলা দেখে ? ৬ বলে ৪২ রান । জেতা অসম্ভব । প্রতি বলে ৬ মারলেও ৩৬ রান আসবে। পরাজয় নিশ্চিত । ৬ টি নো , ওয়াইড এবং ৬ বলে ৩৬ রান হলেই কেবল সম্ভব।

কুদ্দুসের হাতের ব্যাটের অবস্থা ভালো না । আগের ওভারে একটি ছক্কা মারার সময় , কেমন মট করে  শব্দ হলো । ব্যাটের দিকে তাকিয়ে দেখে কুদ্দুস - মাঝ খানে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে । যেহেতু ৪২ রান দরকার , জোড়ে পিটিয়েও যা সম্ভব নয় , তাই হতাশ কুদ্দুস আর ব্যাট পাল্টানোর আগ্রহ দেখালো না । আর একটি কারন হচ্ছে , কুদ্দুসের ক্রিকেট গুরু ছোমেদ এই ব্যাট তাকে দিয়েছে । এতে গুরুর আশীর্বাদ আছে ।

বিশাল দেহি বোলার আগাচোউ ছুটে আসছে বল করতে । করলো বল , ব্যাটে বলে সংযোগ হলো না । ৫ বলে ৪২ রান ।
পরের বল , জোড়ে হাকালো কুদ্দুস - মাঠ গড়িয়ে সীমানার বাইরে ৪ ।  ৪ বলে ৩৮ রান ।
পরের বল , বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল চলে গেলো সীমানার কাছে , বল ফেরত আসার আগে ২ রান। ৩ বলে ৩৬ রান ।
পরের বল , ব্যাটে বলে সংযোগ হয়নি , উইকেট কিপারের দু পায়ের মাঝ দিয়ে সীমানার বাইরে । ২ বলে ৩২ রান ।
পরের বল , স্কয়ার কাট - মাঠ গড়িয়ে সীমানার বাইরে ৪ । ১ বলে ২৮ রান । পরাজয় নিশ্চিত । বিপক্ষ দলের খেলোয়ারদের মুখে হাসি ।
শেষ বল , শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ব্যাট চালালো কুদ্দুস । শেষ বলে যেন ৬ হয় , কিছুটা হলেও তৃপ্তি পাবে সে। শব্দ হলো ব্যাটে বল লাগার এবং পিটানোর । লেগের দিকে পিটিয়েছে । বল দেখা গেলোনা । শুরু করলো দৌড় রানের জন্য । দুই ব্যাটস ম্যান প্রান্ত বদল করলো দ্রুত - ১ - ২ - ৩ দৌড় চলছে , বল দেখা যাচ্ছেনা । আম্পায়ার একবার দুইহাত উপরে তুলে ওভার বাউন্ডারি দেখাতে গিয়েও হাত মাঝ পথ থেকে নীচে নামালো । কুদ্দুসরা দৌড়ে চলছে , ১১ - ১২ - ১৩ থামা থামি নেই । দর্শকদের সাড়িতে উল্লাস । হঠাত এক পিচ্চি শুরু করলো - চার ছক্কা হই হই বল হাড়াইয়া গেলো কই ? ধীরে ধীরে সমস্ত দর্শকদের চিৎকার ' চার ছক্কা হই হই বল হাড়াইয়া গেলো কই ? ' ১৮ - ১৯ - ২০ রান নেয়া চলছে । হাপিয়ে গিয়েছে কুদ্দুস - এক বলে এত দৌড় !! কত আর পারা যায় ?  আর বেশি রান নেই মাত্র ৮ রান দরকার , ২১ - ২২ - ২৩ ---
থার্ড আম্পায়ার , বিপক্ষ দলের খেলোয়ার সবাই চিৎকার করে সারা মাঠ দৌড়ে বল খুজছে ' চার ছক্কা হই হই বল হাড়াইয়া গেলো কই ? '
২৬ - ২৭ পারছে না আর কুদ্দুস । শেষ রানটা নিতেই হবে । স্ট্যাম্পের সামনের লাইন ক্রস করেই পরে গেলো কুদ্দুস , হাত থেকে ব্যাট ছুটে গেলো। ২৮ - জিতে গেলো দেশ । কুদ্দুস কুদ্দুস কুদ্দুস চিৎকারে স্টেডিয়াম প্রকম্পিত ।
আরে এই যে বলটি , উইকেট কিপার যে স্থানে দাঁড়ায় সেখানেই তো বলটি পরে আছে । উইকেট কিপার নেই স্থানে , সে বল খুজতে বাউন্ডারী লাইনে । এখানে বলটি সে দেখেনি আগে । দূর থেকে দেখছে বলটি এখন। কুদ্দুস এর পরে যাওয়া দেখে স্ট্রেচার নিয়ে এসে কুদ্দুসকে উঠানো হলো । একজন বীর , যিনি একাই জিতিয়ে দিলেন ম্যাচ , হাততালি হাততালি । লাভ ইউ কুদ্দুস , মেরী মি , উম্মাআআআ , ভেসে আসছে এমন কথা গ্যালারী থেকে ।

ম্যাচ সেরা খেলোয়ার কুদ্দুস । অসুস্থ তাই পুরস্কার নিতেও মাঠে আসতে পারেনি সে। কেউ বুঝতে পারছেনা , আসলে বল কোথায় ছিল । সুস্থ হলে কুদ্দুস তার ব্যাট ব্যাগে ঢুকাচ্ছে , চোখ আটকে গেলো ব্যাটের মাঝ বরাবর । বেশ বড় একটি পেরেক দেখা যাচ্ছে । বল ওই পেরেকে গেথে গিয়েছিল । পেরেকে গাথা অবস্থায়ই বল নিয়ে দৌড়িয়েছে সে । শেষ রান নেয়ার সময় পরে গিয়ে হাত থেকে ছুটে যায় ব্যাট , বল মুক্ত হয় পেরেক থেকে ।
মনে মনে হাসে কুদ্দুস । গুরু ছোমেদ নিজে রেইন্ট্রি গাছের তক্তা দিয়ে ব্যাট বানায় ।
সব কিছু চেপে গেলো কুদ্দুস 🙂
:p

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ