যাচ্ছিলাম এক স্কুলের পাশ দিয়া।সাউন্ড সিস্টেমের বিকট দ্রিম দ্রিম শব্দে কান ফাইট্যা যাবার অবস্থা।গেটে ভিড়, জিজ্ঞেস করে জানলাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে,একটু পরেই নাটক আরম্ভ হবে। নাটক? দেখতেই হয় তাহলে, কত্তদিন নাটক দেখিনা।গেট দিয়ে ঢুইকা পড়লাম।

উরেব্বাপ্স এত্ত ভীর?নাটক দেখুম কেমনে?ষ্টেজ তো ম্যালা দূর।ছুড কালে নাটক দেখছি এক্কেরে স্টেজের সামনে পাটিতে বইস্যা। স্টেজের সামনে কেমনে যাই? একটা সুই পাইলে ভালো হইত।হালকা গুঁতা দিতে দিতে সামনে চইল্যা যাওয়া যাইত। সুই নাই কি আর করা:(
'দেখি দেখি সরেন তো,সাহেব আইছে (আসলে কিসের সাহেব,কোন সাহেব তা আমিই জানি না) ' কইতে কইতে কেনু দিয়া দু'একটা গুঁতা দিতে দিতে সামনের দিতে আগাইতাছি।

যাক বসার জায়গা পাইছি 🙂 ওম শান্তি ওম। কোন রকমে সামনের একটা চিপা চাপায় বইতে পারছি 🙂

এই যে নাটক শুরু হইল। বাহ মাশাআল্লাহ, কি সৌন্দর্য ! নায়ক আইয়া পরছে 🙂
নাটকের নামঃ শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি , বাহ বাহ খাসা একখান নাম।
নায়ক গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে এসেছে, প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি যাবে।বেশ সরল সে।কাগজে লেখা শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা হারিয়ে ফেলেছে। সে বিশাল বিশাল অট্টালিকা দেখে চমকিত,আনন্দিত।অট্টালিকা দেখে চমকিত হলেও তাঁর উপলব্ধি'ধুর এই সব বাড়ির চাইতে আমাগো বাড়ি অন্নেক ভালো,ইচ্ছে মত উঠানো দৌড় ঝাঁপ করা যায়,লাফ দিয়ে পুকুরে পড়া যায়,নারকেল গাছে উঠে ডাব পেড়ে খাওয়া যায়। আমার বৌ তো এসবের কিছুই দেখলো না। বৌকে এই খুপড়ি গুলো থেকে নিয়ে যেতেই হবে। কিন্তু সমস্যা হলো, সে তো বাড়িই চেনে না। যাক লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করতে করতে শ্বশুর বাড়ি যাবে। তাঁর হাতে এক হাড়ি মিষ্টি, সব সময় পান খায় সে। ধুতি পড়া, উপরে পাঞ্জাবীর সাথে একটি কোট।দারুণ মানিয়েছে তাঁকে।
এই যে এই যে একজন পুজারী বামুন পাওয়া গেছে। বামুন মশাই বামুন মশাই আমাকে একটু আমার শ্বশুর বাড়ির রাস্তাটা দেখিয়ে দিন। কয়েকবার বলার পরে বামুনের প্রশ্নে নায়ক জানায়ঃ
আমার নাম শনি
বাবার নাম ননি
করছি আমি বিয়া
শ্বশুর বাড়ি গেছি ভুইলা।
ইয়া বড় এক বাড়ি,তার সামনে ইয়া বড় এক গেট।
বামুন বলে, আমার পথ ছেড়ে দাও, আমি চিনি না। একথা শুনেই শনি বামুনকে ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করে,পায়ে হাত লাগে,বামন ঠাকুর চিৎকার করে বলে'তুই আমাকে ছুঁয়ে দিলি,আমার আবার স্নান করতে হবে। অভিশাপ দিতে দিতে বামন চলে যায়। শনির উপলব্ধি হয়, এত সহজে একজন ধর্মীয় গুরুর ছুত লাগে ? উজু ভেঙ্গে যায় ?

শনি সামনে আগায় আরো। একজন পথচারীকে থামায়, নিজের পরিচয় দেয় 'আমার নাম শনি .........শ্বশুর বাড়ি গেছি ভুইলা।' পথচারী খুবই আন্তরিক হয়ে বলে,আরে জামাই বাবু আমি তো আপনার কুটুম, আমাকে চিনতে পারেন নাই? আমি নারায়ণ। শনি আকাশের চাঁদ  হাতে পাবার মত করে ঠিকানা জানতে চায়,নারায়ণ বলে বসুন আগে, একটু আলাপ করি। কুটুম যেহেতু, কি মিষ্টি এনেছে দেখতে চায়,একটি মিষ্টি খেতে চায়।সরল শনি মিষ্টির হাড়ি নারায়ণের হাতে দিলে গপাগপ কয়েকটা মিষ্টি সে গিলে ফেলে। কোন রকমে নারায়ণের কাছ থেকে মিষ্টির হাড়ি নেয় শনি। নারায়্ণ দৌড়ে দূরে চলে যায়।

বিষণ্ণ মনে শনি পথ চলে। তিনজন ভদ্র লোক দেখতে পায়।নিজের পরিচয় দেয় সে আগের মত করে।লোক তিনজন বলে যে তারা শনির শশুর বাড়ির এলাকার। শনি খুশি হয়। এরা পূজার জন্য চাঁদার রশিদ বেড় করে এবং অঞ্জন বাবুর জামাই এর বড় অংকের টাকা চাঁদা না দিলে,জামাই এবং শ্বশুর বাড়ির মান ইজ্জত শেষ হয়ে যাবে ইত্যাদি বলে শনির কাছে রাখা সব টাকাই চাঁদা হিসেবে নিয়ে যায়। যাবার আগে বলে যায় সোজা যাবেন,এরপর ডানে,এরপর ডানে,তারপর আবার ডানে গেলেই শ্বশুর বাড়ি পৌছে যাবে। টাকা না থাকায় কিছুটা মন খারাপ হলেও, বাড়ি যেতে পারবে ঠিকানা পেয়েছে ভেবে আনন্দিত হয়। তাঁদের কথামত সোজা গিয়ে তিনবার ডানে যাওয়ায় সে এই স্থানেই আবার ফিরে আসে।
শহরের মানুষ গুলো এমন কেন ?

আবার সামনে আগায় শনি। দেখা হয় একজনের সাথে,কানে কম শোনে সে।বিকট চিৎকার দিয়েও যতই সে বলে আমার নাম শনি -- তখনই লোকটি বলে আজ তো সোমবার।শনিবার নয়। বাবার নাম রনি বলায় কানে কম শোনা লোকটা বলে 'ননি এখানে পাওয়া যায় না,দূরে একটি দোকান দেখিয়ে দেয়। হতাশ শনি বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত হয়ে যায়। এরপর এক বোবা আসে তাঁর কাছে, হাত পা ইত্যাদির মাধ্যমে ইশারা ইংগিতে সে বুঝাতে ব্যার্থ হয়। অভুক্ত ক্লান্ত শনি একটা পার্ক এর বেঞ্চে বসে।পিকনিক হচ্ছে সেখানে। গান বাজছে............ প্রায় ঘুম ঘুম তন্দ্রা .........।।

দর্শক আপনারাও মনে হয় ক্লান্ত। আসুন পিকনিকের গান শুনি। গানের মধ্যেই শনি পেয়ে যায় তাঁর শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা।
শনি প্রায় ঘুমে তন্দ্রার মাঝে, গান বাজছে আগে কি আরামে চুরি করিতাম আমরা ,আগে কি আরামে চুরি করিতাম। আগে ধরা পরিলে মারতো না শরীরে,মেম্বার আসিলে ছাড়া পাইতাম, এখন যদি ধরে র‍্যাবেরা মারে, হাড্ডি গুড্ডি ছারাইয়া দেয় চিন্তায় পরিলাম ...

আরে পাইছি পাইছি, ঠিকানা পাইছি। র‍্যাবের অফিসের পাশেই আমার শ্বশুর বাড়ি। তন্দ্রা থেকে জেগে এক দৌড়ে রাস্তায়। পার্কে না বসলে গান শোনা হতো না, গানের মধ্যে র‍্যাবের কথা শুনেই সব মনে পরে গেলো।

রঞ্জন বাবু অনেক আগেই ইহলোক থেকে বিদায় নিয়েছেন।বাড়ির কর্তা এখন তাঁর ছেলে নিরঞ্জন। আদরের ছোট বোনটাকে বিয়ে দিলেন,জামাই বাবু আজ আসবেন,কি কি বাজার করা যায় আলাপ করছেন ভৃত্য কালার সাথে।

আলাপের মধ্যেই চলে আসে তাঁর পেটুক ছেলে কার্তিক।রুই মাছ আনতে বলে বাবাকে,মাছের মাথা খাবে। বাবা ধমক দেয় এত খেয়ে খেয়ে হাতি হচ্ছো দিন দিন। ছেলে জোরে চিৎকার দিয়ে মাকে ডাক দেয় 'মা আমাকে বাবা হাতি বলে ধমক দিছে।'
কি এত্তবড় কথা আমার ছেলেকে তুমি ধমক দিছো,তোমার এত্তবড় সাহস। না খেতে পেরে আমার ছেলে কত শুকিয়ে গ্যাছে,আহারে 🙁 যাও বাজে যাও, ছেলের পছন্দের রুই মাছ যদি আজ নাই আনো, তোমাকে বটি দিয়ে কেটে মাথা রান্না করে খাবো। স্ত্রীর এমন রণরঙ্গিণী অবস্থা দেখে আতংকে নিরঞ্জন দৌড়ে বাজারে যায়।

অবশেষে শনি শ্বশুর বাড়ি আসে। বৌদিকে দেখে কাচুমাচু করে বলে যে আমার প্রিয়তমা বৌকে এখনই দেখতে চাই। বৌদি রাতে দেখাবে বললেও জামাইয়ের আবদারে ননদ কে আনতে যায়।

ননদকে নিয়ে আসে হলুদ শাড়ি পরিয়ে। শনি বৌকে দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাচতে আরম্ভ করে।


বলি ও ননদি আর দু'মুঠো চাল ফেলে দে হাড়িতে, ঠাকুর জামাই এলো বাড়িতে
  বৌদি গান গাইতে থাকলে ধীরে ধীরে জামাইয়ের সাথে বউ, বউদি, পেটুক ছেলে, সবাই সে নাচে অংশ গ্রহণ করে।

নিরঞ্জন বাজার করে নিয়ে এসে দেখে চলছে গান আর নাচ, সেও অংশ নেয় নাচে।
এই গান আর নাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটক।

নাটকে গাওয়া নাচ ও গানার কিছু অংশ দেখুন লাইভ  , নাচ,গা্‌ন, দর্শকের হাততালিতে আপনিও না নেচে পারবেন না।
নাটক কেমন লাগলো জানাবেন।

 

0 Shares

৫২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ