সুবাস ( একটি কনভার্সেশান )

এস.জেড বাবু ৫ ডিসেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৪:৫৮পূর্বাহ্ন অন্যান্য ১৮ মন্তব্য

>> কেন শূণ্যতায় বাড়ালে হাত ?

—শুনেছি শূণ্যতার অনেক ভার, বিশ্বাস হয়নি, তাই সত্যিটা জানতে চাই।

>> দীর্ঘশ্বাস বেঁধে দেয়ার মতো কোন শেকল যদি থাকত, তবে নাহয় দু’আঁটি রেখে দিতাম শূণ্য পথে।

—পথে কেন ? শূণ্য হাতে কেন নয় ?

>> বুঝতে পারতে, কতটা উঁচু হয় শূণ্যতার স্পীডব্রেকার, কাউকে কত যত্নকরে গতিশূণ্য করে, নজর এড়ালেই যেখানে নির্ঘাত দুর্ঘটনা।

— কেউ পুঁতে রাখলেই পারে দুটি সবুজের নিশানা ।

>> হাজার বছরের তৃষ্ণার্ত মরুর পথ, চোখের পলকে পাণ করে আকাশের অঝড় কান্না । বুক জুড়ে থাকে ভেজা শূণ্যতায় খানিকক্ষণ বয়ে যাওয়া স্রোতের দাগ।
জলের দাগে সবুজের বীজ খুড়ি মেলে না যে।

—তবু কেন অযথাই আকাশের চোখে জল ? কেন বিজলী আর গগণবিদারী আর্তনাদে মিশে নামে বর্ষন ? এ কি খরার জন্য নীলের ভালোবাসা নাকি শূণ্যতার জন্য দিগন্তের অনুসুচনা ?

>> সে পথের বাঁকে, নগ্ন বুকে চিত হয়েছিল আলেয়া- ষোড়শী নদীর মতো। ভরা পূর্ণিমায় আকাশের বুক ছিড়ে একটি নক্ষত্র ছিটকে পড়েছিল স্নানের নেশায় । উজ্জলতার পরশে উষ্ণ মরুবুকে উঠেছিল ঝড়। মরিচিকায় ভুলে জলের বদলে বালুঝড়ে হারিয়েছিল নক্ষত্রের ইচ্ছে তরী।

—তবে আজও কেন মেঘ ডাকে বেলা অবেলায় ?
আষাঢ়ের স্রোত কি ছুঁতে পায় নক্ষত্রের তৃষ্ণা ?
শ্রাবণ জোয়াড়ে ভরা কোন স্রোতস্মীনী নদীর বুকে ক্ষাণিকক্ষন ভাসে কি ইচ্ছে হারানো তরী ?

>> তবে তো মোহনায় মিশে যেত পথ , সৈকতে হয়ে যেত আলেয়া আর স্রোতের মহাপরিণয় ।

—কি পেলেন একা একা দহনে শূণ্য ঠিকানাহীন, অশ্রুভেজা, ব্যার্থ যাত্রা পথের শেষে ?

>> রোদে জ্বলা তামাটে চামড়া, একটা ভারী চশমা,
আর .....

—আর ?

>> আর একগুচ্ছ বর্ণের খেলাঘর, যে ঘরের দেয়ালে, আলেয়ার রেখে যাওয়া ঘুণেধরা অক্ষরগুলির শব্দার্থ খুঁজে পেলে সারিবদ্ধ করে লিখে রাখি।

—তবে থাক সে আলেয়ার গল্প । মরিচিকায় ভরা পুরুনো গল্প শুনতে মন চাইছে না।

>> তা জানতাম, তবে ফিরিয়ে নাও হাত ।

—কেন ? শূণ্য হাত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তুলিনি।

>> কি দিবো তোমায় নতুন করে ?

—খানিকটা সুবাস দেবেন ! দীর্ঘশ্বাসের গন্ধমাখা দহন ?

>> কর্ম ক্লান্ত পথের শেষে গর্মাক্ত দেহ, পরাজয়ের মেলায় সুবাস কোথায় পাবো বলো !

—তবে ঐ কাঁধের ঝুলিটা দেখতে চাই, ওখানে সুবাস আছে ।

>> নাহ, একটা দেয়শালাই, খানিক জলে পূর্ণ লালচে প্লাস্টিক বোতল, আর তো কিছু নেই

—আরও কিছু আছে, ভেবে বলেন তো

>> কি করে জানলে ? তবে হ্যাঁ - আছে একটা কলম

—আর ?

>> আর একটা পুরুনো ডাইরি ।

—আর ?

>> আর !! আর নেই তো কিছু ।

—মিথ্যে বলছেন ;

>> কেন মিথ্যে বলবো ?

—ডাইরিতে কি আছে বলেন ;

>>ওহহ ! অতটা গভীরে ভাবিনি
তবে আছে ; কিছু অমিমাংসিত বর্ণ সমাহার |

—অমিমাংসিত কেন ?

>> মাঝখানের পৃষ্ঠা হারিয়ে ফেলা উপন্যাস, সময় অসময়ে লিখা ছন্দহীন কবিতা - যাদের করুন চিৎকার এই মন বার বার শুনে, শান্তনা দেয়ার অক্ষর খুঁজে, আর একটা দীর্ঘশ্বাসে সে ইচ্ছে পুড়ে ছাই হয়।
তবু মিলে না বাক্য - এইতো অমিমাংসিত বর্ণমালা ।

—আর কি আছে ডাইরিতে ?

>> একটা শুকনো গোলাপের গুটিকয়েক ঝড়ে যাওয়া পাপড়ি ।

—তবে আমি সত্যি কিছু নিবো , দেবেন ?

>> হুমম,
নাহ- !!
সে গোলাপ তো একটাই, ইচ্ছে ভরা নৌকা ডুবু ডুবু প্রায় , বোঝাই হয়ে গিয়েছিলো, তাই গোলাপটা তুলে রেখেছিলাম।

—কেন দেবেন না ?

>> এটা আমার কাছে আলেয়ার অসমাপ্ত ইতিহাসের সৌধ- আপনার কাছে ঝড়ে পড়া শুকনো পাপড়ি,
যাকে দেয়ার ছিলো তাকে দেয়া হয়নি,
আপনি নাইবা নিলেন ।

—আরে না না - আমি গোলাপ নিবো না-

>> তবে ?

—যদি দিতে চান তবে,
যে পৃষ্ঠার ভাঁজে গোলাপটা রাখা, সে পৃষ্ঠা টা আমায় দেবেন,

>> কি করবেন ?

—ঐ যে বল্লাম,
যে আলেয়ার পিছনে তপ্ত মরুর বুক চষে বেড়িয়েছেন,
কাগজের নৌকায় ইচ্ছে ভাসিয়েছেন,
মরা স্রোতের দাগ দেখে দেখে হৃদয় পুডিয়ে দীর্ঘশ্বাসের ভার মিশিয়ে দিচ্ছেন শূণ্যতায়;
আমি সে হৃদয়ের চর্বি পোড়া ধোঁয়ার মন্ডপে রাখা- গোলাপের চারপাশের বর্ণগুলি থেকে, সেদিনের মতো খানিকটা সুবাস খুঁজে নিবো___॥

-০-

০৭/০২/২০১৯

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ