জন্ম থেকেই আমরা স্রষ্টা বিশ্বাসী! কেউ আল্লাহ, কেউ ভগবান, কেউ ঈশ্বরে! যে যা-ই বলে ডাকুক-না-কেন, আমরা সকলে কিন্তু একজনকেই ডাকছি। তিনিই মহান স্রষ্টা! তিনি আল্লাহ! তিনি ভগবান! তিনিই ঈশ্বর! উপাসনা করি যাঁর যাঁর ধর্মীয় রীতিতে। কেউ মসজিদে। কেউ মন্দিরে। কেউ গির্জায়। কেউ প্যাগোডায়। কেউ মহান স্রষ্টার উপাসনা করে ধ্যানমগ্ন হয়ে বনেজঙ্গলে। কেউ নামায আদায় করে সেজদা দেয়। কেউ মাটির মূর্তি বানিয়ে পূজো করে।কেউ ঘৃত-মধুর প্রদীপ জ্বালিয়ে ভক্তি করে।
যে যেভাবেই করুক-না-কেন, সবশেষে কেউ দু'হাত তুলে, কেউ দু'হাত জোড় করে, কেউ মাথা ঠেকিয়ে মহান স্রষ্টার কাছে অনেককিছু চেয়ে থাকে। অনেকে অনেকরকম সমস্যার কথাও মহান স্রষ্টার কাছে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে! কেউ বলে, "হে দয়াল, আমার সন্তান নেই! আমাকে সন্তানের মুখ দেখাও!" কেউ বলে, "হে দয়াময়, আমাকে বিস্তর ধনসম্পত্তির মালিক বানিয়ে দাও!" কেউ বলে, "হে দয়াল, তুমি আমাকে আরও ক্ষমতা দাও!" কেউ বলে, "হে দয়াল, আমাকে নির্বাচনে জয়ী করিয়ে দাও!"
প্রিয় ভাই ও বোনদের কাছে আমার একটি ছোট প্রশ্ন– প্রশ্নটি হলো; মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা যে বারবার প্রতিটি মুহূর্তে এটা দাও, ওটা দাও, এই করে দাও, সেই করে দাও বলে হাউমাউ করে দু'হাত তুলে কান্নাকাটি করছি, এতে কি মহান সৃষ্টিকর্তা খুশি হয়? নাকি বিরক্ত হয়?
জানি, এই ছোট প্রশ্নটির উত্তর অনেকেই এড়িয়ে যাবেন! কারণ, আমরা তো সবাই সবসময়ই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে যখন-তখনই কিছু-না-কিছু চেয়েই থাকি। তাই এই প্রশ্নটির উত্তর অনেকে দিতে পারলেও, দিবে না। কারণ যিনি উত্তর দিবেন, হ্যাঁ কিম্বা না! তিনিও হয়তো প্রতিদিন মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু-না-কিছু চেয়ে থাকেন।
তবে অনেকেই হয়তো বলতে পারেন, তাহলে আপনিই বলুন, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে যখন-তখন কিছু চাওয়া কি ঠিক? উত্তরে আমিও বলবো যে, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে তো জীবের কিছু-না-কিছু চাওয়া থাকতেই পারে! কথায় আছে, "না চাইলে নাকি নিজের গর্ভধারিণী মা-ও দুধ দেয় না।"
তবে ঈশ্বরপ্রেমী অনেক সাধকেরা বলে, ভিন্ন কথা। তা হলো, মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের জন্য কিছু চাইতে নেই! এতে মহান সৃষ্টিকর্তা ভীষণ বিরক্ত হন!
যেমন: একটি শিশু বাচ্চা কিছুর জন্য নিজের মায়ের কাছে বারবার গিয়ে কান্নাকাটি করলে মা-ও বিরক্ত হয়ে যান। সহ্য করতে না পেরে মা তখন নিজের গর্ভজাত শিশুটিকে দুরদুর করে তাড়িয়ে দিবে। আর বলবে, "কথা শুনে না, বার্তা শুনে না, ঠিকমতো লেখাপড়া করে না। তারপরও আবার এটা দাও তো, ওটা দাও! চাইলেই কি পাওয়া যায়? যাও ভালোমতো লেখাপড়া করো। ঠিকমতো চলাফেরা করো। তাহলেই সময়মত সবকিছু পেয়ে যাবে। তোমার চাইতে হবে না।"
আবার জন্মদাতা পিতার কাছে বারবার গিয়ে কিছু চাইতে গেলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
শিশুকালে সন্তানের কোনও সমস্যা হলে গর্ভধারিণী মা কিন্তু বুঝতে পারেন যে, সন্তানের কী সমস্যা হয়েছে। আর বাবাও খেয়াল রাখেন যে, সন্তানের কখন কী লাগবে। সন্তান না চাইতেই মা-বাবা সন্তানের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে ব্যস্ত থাকেন।
তেমনি মহান সৃষ্টিকর্তাও মানব তথা সকল জীবের মনের কথা বোঝতে পারেন। কারণ, তিনি তো অন্তর্যামী! তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা সকলের অন্তরের কথাই জানেন, বোঝেন। সৃষ্টির সেরা জীব মানবের কখন কী দরকার, তা তিনি ঠিক সময়মত সমস্যার সমাধান করে দেন; যদি তিনি ঠিকভাবে সৎপথে চলে মহান সৃষ্টিকর্তার উপাসনা বা প্রার্থনা বা ভক্তি করে থাকেন।
তাহলে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়া-পাওয়া নিয়ে এতো কান্নাকাটি কেন? তিনি যদি অন্তর্যামীই হয়ে থাকেন, তাহলে তিনিই তো আমার বলার আগে সব বোঝে নিচ্ছেন। তারপরও যখনতখন আপনি এটা দাও, ওটা দাও করে কান্নাকাটি করতে যাবেন কেন? আপনার জন্য যা করতে হবে তা হলো, ঠিকমত তাঁর উপাসনা, এবাদত করা। তাঁর কাছে দু'হাত কান্নাকাটি করতে হবে শুধু নিজের পাপী দেহটা উদ্ধারের জন্য এবং নিজের মনের ভেতরে জন্ম নেওয়া অমনুষ্যত্ব পাপগুলো ধুয়েমুছে পরিস্কার করে দেওয়া জন্য।
কান্নাকাটি করতে হবে মানুষের উপকার করার মতো ধৈর্য এবং মন-মানসিকতা দেওয়ার জন্য। যাতে নিজেরটা বাদে অপরের উপকার করা যায়। সবসময় যেন দুস্থ মানুষের ডাকে সারা দেওয়া যায়। এসবের জন্যই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে উপাসনার মাধ্যমে, প্রার্থনার মাধ্যমে, ভক্তির মাধ্যমে চাইতে হবে। বারবার প্রতিদিন প্রতিরাতে মন্দিরে মসজিদে গির্জায় বসে বসে নিজের জন্য কিছু চাইতে নেই। নিজেরটা মহান সৃষ্টিকর্তাই দেখবেন।
তাই অনেক ঈশ্বরপ্রেমী সাধকেরা বলে, "যে তাঁর কাছে অনেক চায়, সে কিছুই পায় না। যে তাঁর কাছে নিজের জন্য কিছুই চায় না, সে এতো পায় যে ভাবাও যায় না!"
প্রিয় পাঠকগণ, লেখাটি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখেছি। ভুল হলে বা কারোর মনে আঘাত লাগলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
ছবি সংগ্রহ গুগল থেকে।
২৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
যথার্থ ও বাস্তবতার নিখুঁত প্রকাশ
নিতাই বাবু
মহান
নিতাই বাবু
প্রার্থনার মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে যত চাওয়া, তা হোক জগতের সকল জীবের কল্যাণে। আমার জন্য আমার প্রার্থনাই যথেষ্ট।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দাদা দারুন বলেছেন। আপনার সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করছি। এটাই হয়ে আসছে । ঈশ্বর বলেছে , তুমি তোমার কর্ম করে যাও, ফলের চিন্তা করোনা। ফল আমি দেব। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ রাত্রি
নিতাই বাবু
মহান সৃষ্টিকর্তার প্রার্থনা করি কর্মে, উপাসনায়, ধ্যানে। চাওয়া হোক সকল জীবের কল্যাণে। আমার জন্য বিধাতার কাছি কিছু নাইবা চাইলাম। আমার চাওয়া তো তিনি নিজেই জানেন। তাহলে আর চাইতে হবে কেন?
সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি দিদি।
ছাইরাছ হেলাল
আমরা চাই বা না চাই, প্রকৃত পক্ষে স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পন-ই একটি চাওয়া।
যে যেভাবে যতটুকু মেনে বিধাতাকে গ্রহন করতে পারেন সেটুকুই তার তার মাত্রা।
নিতাই বাবু
চাওয়া বাদ দিয়ে শুধু আত্মসমর্পণই করি। এতেই মহান সৃষ্টিকর্তা অনেক খুশি! আমার যা দরকার, তা আমার অন্তর্যামী নিজেই জানেন।
সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় কবি মহারাজ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দা যতবারই চান না কেন তিনি অখুশী বা নারাজ হন না। বরং বান্দা না চাইলেই তিনি বান্দার প্রতি নারাজ আর অখুশী হন। বান্দা তার কাছে সবকিছুর জন্য প্রার্থনা করুক এতেই সৃষ্টিকর্তা মহাখুশি। আপনি আপনার অনুভূতি আর বিশ্বাস থেকে তাকে আমি সম্মান জানাই। ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
তিনি আমার অন্তর্যামী! তিনি আমার সবকিছুই জানেন। তাহলে আমি শুধু নিজের জন্য এতো এতো চাইতে যাবো কেন? চাইতে হয়ে মানুষের জন্যই কিছু চাইব। যাতে তাঁর সৃষ্টির জীবনের কল্যাণের সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। আমার প্রার্থনা শুধু এটাই হোক।
সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
মাহবুবুল আলম
নিতাই দাদা! ৎ
অনেক ভাল লিখেছেন।
তবে ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী হলো আল্লাহকে যতই ডাকবে ততই তাঁকে পাবে।
আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি চাইলে বেশি বেশি পাওয়া যায়।
শুভেচ্ছা জানবেন। ভাল থাকবেন।
নিতাই বাবু
মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে এবাদতের মাধ্যমে ডাকা আর চাওয়ার মধ্যেও তো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় দাদা। তিনি সৃষ্টিকর্তা তো জীবের অন্তর্যামী। তিনি তো আমার অন্তরের কথা জানেন, বোঝেন। তাহলে তাঁর (মহান সৃষ্টিকর্তা) কাছে আমার চাইতে হবে কেন? আমি শুধু তাঁর এবাদত বন্দেগিই বেশি বেশি করে যাবো। যা দেবার তিনি নিজে থেকে দিয়ে দিবেন বলেই আমার ধারণা।
আমার ধারণার সাথে অন্যজনের ধারণা অন্যরকম থাকতে পারে, দাদা।
সুন্দর ও মূল্যবান মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সুপায়ন বড়ুয়া
দাদা বলেছেন যতার্থ।
আপনার সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করছি।
মানুষ নিজেই কর্মের নিয়ন্তা। ফল নির্ধারন হবে যথাযত। ভালো থাকবেন শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
মহান সৃষ্টিকর্তার দয়া পাবার জন্য শুধু তাঁর উপাসনাই করে যাবো। আমার যাকিছু দরকার, তা তিনিই জোগাড় করে দিবেন বলে আমার ধারণা, দাদা।
আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো।
হালিম নজরুল
আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার জন্য চাইলাম দাদা। পরম করুণাময় আপনার মঙ্গল করুন।
নিতাই বাবু
আপনার চাওয়া যেন মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে মঞ্জুর হয়, সেই কামনা করি।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।
সুরাইয়া নার্গিস
চমৎকার পোষ্ট দাদা।
আপনার সব লেখা আমি পড়ি অনেক ভালো লিখেন, এটার সাথে আমি একমত পোষন করছি।
ভালো থাকুন দাদা।
সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সুস্থ রাখুন।
নিতাই বাবু
এই সময়ে আপনিও পরিবারের সকলকে নিয়ে ভালো থাকুন, এই কামনা করি। সাথে শুভকামনাও থাকলো শ্রদ্ধেয় দিদি।
সাবিনা ইয়াসমিন
সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টির ভাগ্য পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখেন। তারপরেও আমরা চাই, নিজের / পরের সবার জন্যে সময়ে/ অসময়ে তার কাছে দোয়া করি, দয়া চাই। কারণ আমরা জানি তিনি কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেন না। তিনি নিজেই বলেছেন “ তোমার আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দিবো ”। মা-বাবা অথবা কোন অভিভাবক / শুভাকাঙ্ক্ষীর পক্ষে যা দেয়ার ক্ষমতা নেই, সৃষ্টিকর্তা তারচেয়েও বেশি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
শুভ কামনা রইলো দাদা 🌹🌹
নিতাই বাবু
তিনি মহান সৃষ্টিকর্তা জীবের অন্তর্যামী। তিনি সকলের অন্তরের কথাই জানেন। তারপরও তাঁর কাছে বেশি বেশি চাওয়া কেমন যেন মনে হয়! আমি অধম তাঁর বন্দেগিই করে যাবো, যা দরকার, তা তিনি নিজে থেকেই দান করবেন বলে আমার ধারণা, শ্রদ্ধেয় দিদি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কর্মে অধিকার,ফলে নয়।
ভালো কাজের জন্য ভালো ফল,খারাপ কাজের জন্য খারাপ ফল।
আপনার যথার্থ উপস্থাপনের সাথে সহমত পোষণ করছি দাদা।
নিতাই বাবু
আমার বলতে যখন কিছুই নেই, নিজের কর্মটাও মহান সৃষ্টিকর্তার নামের উপর নাহয় চাপিয়ে দিলাম। এতে কর্মও ভালো হবে, ফলনও ভালো হবে নিশ্চয়!
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
তৌহিদ
অন্য ধর্মের কথা জানিনা ইসলাম ধর্মে নিজের জন্যেও চাইবার আছে বটে। তবে তা বাহ্যিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিলাস নয় অন্তরীক্ষ বিষয়সমূহ।
ভালো থাকুন দাদা।
নিতাই বাবু
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা। আশা করি এই সময়ে সপরিবারে ভালো থাকবেন নিশ্চয়।
আরজু মুক্তা
না চাহিলে কি তারে পাওয়া যায়?
আল্লাহ মধ্যরাতে সপ্তম আকাশে আসেন, বলেন, কে কি চাও বলো। আমি কবুল বলবো।
নিতাই বাবু
বেশি বেশি চাই বলেই, কিছুই পাই না। শুধু আকাশ পানে চেয়ে থাকি। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত দিদি। অন্যের বেলায় অন্যরকমও হতে পারে।
শুভকামনা থাকলো।