চৌদ্দ বছরের মেয়েটি বসে আছে বড় জায়ের ঘরে। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জা নিজেও ঘুমাতে চাইছে, কিন্তু মেয়েটির জন্যে পারছে না। মেয়েটির চোখে ভয়। অশ্রুর দাগ গাল থেকে এখনো মুছে যায়নি। গত একসপ্তাহের বিভৎস স্মৃতি দগদগে হয়ে আছে মেয়েটির গায়ে। বাহিরে পতিদেব দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, মেয়েটিকে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার জন্যে। মেয়েটি রাজি হচ্ছেনা। শেষমেশ জা বোঝাতে শুরু করলো...

__ এমন করোনা বোন। মেয়েদের জন্ম হয়েছে স্বামী কে খুশি রাখার জন্যে। আল্লাহ তায়ালা মেয়েদের বানিয়েছে স্বামী-সন্তান-সংসারের দেখাশোনা করতে। আমাদের উচিৎ স্বামীকে সর্বাবস্থায় আনন্দে রাখা। ঘরে যাও, প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও পরে ঠিক হয়ে যাবে।

__ কিন্ত উনি আমাকে খুব কস্ট দেয়। আমার অনেক ব্যাথা করে। আমাকে আমার মার কাছে নিয়ে যান। আমি এখানে আর থাকবো না।

মেয়েটির অনুরোধ রাখা হয়নি। ফিসফাস কথাবার্তা আর হাসাহাসি শেষে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় অন্ধকার নরকে। চিৎকার, কান্না, ধমক, হুমকির পর নিরবতা নেমে আসে। রাত হয়ে যায় আরও কালো...অন্ধকার।

__ ওতো তোমারই। বিয়ে করেছো যখন, তোমারই থাকবে। ওকে এতো কষ্ট দিওনা ভাই। বাচ্চা মেয়ে, আস্তে আস্তে সব বুঝবে।

__ বিয়ের পর মেয়েরা বাচ্চা থাকেনা। ভালো ভাবে না বুঝলে আমি বোঝানোর কায়দা জানি। ভাবি, আপনি ওকে আর আস্কারা দিবেন না প্লিজ।

অত:পর, মেয়েটি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে তার মায়ের কাছে ফিরে এসেছিলো। গল্পটি এখানে থেমে গেলেই হয়ত ভালো হতো। কিন্তু নিয়তি খুব নিষ্ঠুর। দুই বছরের মাথায় মেয়েটি যখন সুস্থ হলো, তখন সে আসলেই অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছিলো। সে বুঝেছিলো,তার উপর যা চলছে ওটাকে ধর্ষণ বলে। আর এর থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই।

একযুগ পর_

__ তুমি জানো তোমার হাজব্যান্ড পরকিয়া করে?
খারাপ মেয়েদের কাছে যায়।

__ জানি।

__ জেনেও চুপ করে আছো! এটা ঠিক না। হাজব্যান্ড পরনারীতে আসক্ত হলে সব দোষ মেয়েদেরই থাকে। এর অর্থ হলো, ওয়াইফ হাজব্যান্ড কে চাহিদামত খুশি রাখতে পারছেনা।

__ স্বামী কে খুশি রাখা স্ত্রীর কর্তব্য। সে যদি পরনারীতে খুশি থাকে থাকুক। আমি তাকে অখুশি দেখতে চাইনা।

__ আজব! এমন স্ত্রীর কথা জন্মেও শুনিনি। তুমি এখনো পাগলই আছো!!

দেড়যুগ পর__

__ এখনো তোমাকে ঠিক করতে পারলাম না। কতকিছু করলাম,পরকিয়ার নাটক পর্যন্ত করলাম। তবুও তুমি ধরা দিলে না। তুমি চাইলে সব করতে পারি, শুধু অনুরোধ করছি আমাকে ভালোবাসো। নিজেকে সমর্পণ করো।

__ আগে নিজেকে বদলাও। স্ত্রী কে সম্পত্তি নয়, সম্পদ ভাবো। ভালোবাসা রেপ করে পাওয়া যায়না। শ্রদ্ধা-সম্মান-আদর দিয়ে পেতে হয়।

দুইযুগ পর __

__আপা আপনি এটা কি বলছেন? স্বামীর হাতে স্ত্রী রেপ হয় কিভাবে! ওটাতো স্বামীর হক।

__ স্ত্রীর হক কি?

__ কি যে বলেন আপা! আপনি কত শিক্ষিত। নামাজ-রোজা-কোরআন-হাদিস এগুলো আমাদের চেয়েও আপনি অনেক ভালো জানেন। তবুও বলি শোনেন, ফেরাঊন ছিলো পৃথিবীর সব চেয়ে খারাপ লোক। এই খারাপ লোকের অত্যাচারে কত কষ্টই না পেয়েছেন তার স্ত্রী। তবুও স্বামীকে ত্যাগ করেননি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাকে ভালোবেসেছেন। এই জন্যে আল্লাহ তায়ালা তাকে বেহেশত দিয়ে দিয়েছেন। আপনার স্বামীতো আর ফেরাঊনের মতো অত্যাচারী না। তিনি আপনাকে অনেক ভালোবাসেন, আমরা দেখি। আপনি হেটে গেলে আপনার স্বামী পারেনা ঐরাস্তায় ফুল বিছিয়ে দেন। আল্লাহ আল্লাহ করেন। আল্লাহ আপনার ত্যাগের বিনিময়ে অবশ্যই বেহেশত উপহার দিবেন।

এই রকম করে প্রকাশ্যে হাজারো কিশোরী-নারী বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হয়/হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরপুরুষ দ্বারা ধর্ষণে আক্রান্ত হলে বিচার চাওয়া যায়,ক্ষেত্র বিশেষে পাওয়াও যায়। কিন্ত বিবাহ পরবর্তি নিজ স্বামী দ্বারা দৈহিক নির্যাতনের জন্যে বিচার চাওয়া/পাওয়া হয়না। পরিবার, সমাজ, ধর্ম তখন সেটা দেখতে থাকে। কেউ যদি রীতিগত ধারা অমান্য করতে চায়, কেউ যদি স্বেচ্ছামুক্তি পেতে চায় তাহলে প্রশ্ন আসে...

★ কেন? আপনি কি অন্য পুরুষে আসক্ত !?

মুখ খুলে প্রতিবাদ করা হয়না। সব নারীরা নারীবাদ বোঝেনা, মুক্তমনা হতে পারেনা। অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়াতে হয়.. হয়তো এর বিনিময়ে পরকালে বেহেশত মিলবে..

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ