গাছ ভালবাসা//

বন্যা লিপি ২৪ অক্টোবর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০১:৫৮:১২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৭ মন্তব্য

দু'দিন ধরে ট্রমায় আছি একরকম বলা যেতে পারে।আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড+এক বড় ভাই আছেন। যথেষ্ঠ জনসচেতনতা মূলক কাজে নিয়োজিত থাকেন সবসময়। তিনি প্রায়ই কোনো না কোনো পোষ্ট আমাকে ট্যাগ করে থাকেন। শতবার নিষেধ করা সত্যেও তিনি অনঢ়। ওনার সবচে বড় পরিচয়, উনি একজন বড়সড় রকম বৃক্ষ প্রেমিক। গতকাল এক মহিলার অন্যায় ভাবে অন্যের বৃক্ষ নিধন বিষয়ক কর্মকান্ড বিশাল ক্ষোভের সহিত পোস্ট ট্যাগ করেছেন প্রায় তাঁর ফেসবুক ফ্রেন্ড ৯৭/৯৯ জনকে।তার মধ্যে আমি একজন।
এরপরে অনলাইন মিডিয়ায় নানাজনের টাইমলাইনে এই একই ভিডিও এবং কির্তী।
দেখতে দেখতে আমি ট্রমায়।
হ্যাঁ,একটু কিছুতেই আমি এমন ট্রমায় পড়ি।

বরগুণায় রিফাত হত্যাদৃশ্য, আবরারের পেটানো, কালশিটে পরা নিথর দেহ, এরকম আরো যাবতীয় ঘটনা আমাকে আহত করে প্রবল ভাবে।

গতকালের ওই মহিলার গাছ নিধন দেখে আমার বার বার মনে পড়ছিলো আমার আম্মা'র কথা। ফিরে গেছি সেই পুরোনো দিনে। ইচ্ছে হলো সেসব নিয়ে কিছু লিখি।

তখন কত আর হবে বয়স! বুঝতে দেখেতে শিখছি সবে।
আমাদের বাসাটা ছিলো বর্তমানের বাসা থেকে উল্টা দিকের রাস্তার পাশে। এটাও দাদুর করা বাড়ি।সামনে বেশ খানিক জায়গা ছিলো। আম্মা যা পান তাই রোপন করেন।তরতরিয়ে বাড়ে সেসব গাছ। সীমানায় ঘিরে কিছু কলা গাছের কন্দ কোত্থেকে সংগ্রহ করে এনে লাগিয়েছিলেন। আমার আম্মা যেদিন লোক ডেকে কলার কাঁদি কেটে ঘরে তুললেন, সেদিনের আম্মার উজ্জ্বল চোখ মুখ আজো চোখে ভাসে। এরপর আব্বা আম্মা দু'জনে মিলে প্রতিযোগীতা মূলক কিছু গাছ বুনলেন। বড় হয়ে ওঠার পরে আম্মা বিজয়ীর হাসি হাসছিলেন "দেখছো! তোমার চেয়ে আমার গাছ বেশি হইছে "আব্বা যেন এই হারাটাকে বড় বেশি উপভোগ করছিলেন আম্মার কাছে।
এরপর আমরা রাস্তার এপারে চলে এলাম দাদুর আরেক বাড়িতে।সেখানে আর তেমন জায়গা না থাকলেও পেছনের দিকে কিছু জায়গা আর সামনে সামান্য কিছু মাটির অংশ ছিলো। আম্মা থেমে নেই। আহাছার মধ্যে হয়তো কোনো ফলজ বা বনজ গাছ পেলেন, অমনি তা বুনে দিতেন। মৌসুমি ফলের বীজ যেখানে সেখানে পড়ে চাড়া গজাতো, আম্মা কি করতেন? পাহারায় থাকতেন, একটু বড় হতেই যত্ন করে আলাদা করে তুলে পছন্দমতো জায়গায় বুনে দিতেন। হঠাৎ করেই একদিন লক্ষ করলাম আমাকে খেলা থেকে ডেকে নিলেন, --"এদিকে আয়,
গেলাম, ধরিয়ে দিলেন গাছ হাতে,-"নে এই গাছগুলো এই গর্তে পুঁতে দে"
আমি হতবম্ভ! -'আমি? দিলেন ঝাড়ি।
-"যা কইছি তাই কর।
ছোটো বেলা থেকেই আব্বা আম্মা দু'জনকেই বাঘের মতো ভয় পেতাম।
কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বুনে দিলাম গাছ।
এরপর থেকে অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেলো যেন। গাছ আমাকেই বুনতে হবে।

অনেক পরে জেনেছিলাম এর রহস্য।হয়তো এখনো কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কারো কারো হাতে গাছ ভালো বাড়বাড়ন্ত হয়,ভালো ফল,ফসল হয়।আম্মাও হয়তো বিশ্বাস করতেন আমার হাতে গাছ ভালো বাড়ে। একবার কি হলো!
আষাঢ় মাসে আব্বাকে দিয়ে লাউ গাছের চাড়া আনালেন। যথারিতী আমাকে দিয়েই বোনা হলো। লাউগাছ তৃন জাতীয় গাছ।মাচান দিতে হয়। আব্বা জিজ্ঞেস করেছিলেন, এ লতা বাইতে দেবে কেমন করে? আমার মেজো চাচার ছাদ দেখিয়ে বলেছিলেন, ওই ছাদে উঠবে।ছাদে ওঠা সিঁড়ি নেই, দেয়ালের গায়ে ফাঁক ফোঁকরে পা রেখে রেখে আমিই উঠি যখন তখন।
এখানেও ভরসা সেই আমি। বাড়ির পেছনে
তিনটে নারকেল গাছ থেকে পাতা কেটে ছাদে বিছিয়ে দেয়া হলো। গাছগুলো ছাদ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে যেতে।

অবাক করা বিষয় মহান স্রষ্টার অসীম কৃপায় সেবার আমি নিজ হাতে প্রতি সপ্তাহে ৪/৫টা করে লাউ কেটে নামিয়েছি।পাড়াপ্রতিবেশী কেউ বাদ যায়নি এই লাউ আর শাক নিতে।

মেহেদি, কাঠাঁল,পেঁপে কামিনী ফুলের গাছ,গন্ধরাজ,মিষ্টি কচু,কলাবতী, নানা রকম গাছে ছোট্ট আঙিনায় হেসে খেলে বড় হতে লাগলো।
আগাছার মতো একবার বেড়ে উঠলো একটা কুল(বড়ই) গাছ।বেশ অনেকটা বড় হয়েছে। কয়েকটা বড়ই ধরেছে গাছে প্রথমবারের মতো। আমি চুরিচুপি পেড়ে মুখে দিয়েছিলাম, ১৪০' কারেন্ট ঝটকা খেয়েছি, এমন টক্। তখনও খেলতে যাই বিকেল হলেই সামনেই কিছু দুরে পুলিশ আর সি ও র মাঠে।সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেই দেখি আম্মা সমানে কাঁদছেন। কারন জিজ্ঞেস করতেও পারছি না উল্টো ঝাড়ি খাবার ভয়ে। কিছুক্ষন পরে যা বুঝলাম!!

আব্বা কৃষি অফিসার ডেকে কুল গাছটা কেটে ফেলেছেন অর্ধেকখানিক। যেহেতু কুল টক্! এটাকে কলম(গাছের বিষেশ একধরনের পদ্ধতি। এক গাছের বাকল অন্য গাছে বিষেশ ভাবে সেটিং করা)
করাবেন। উন্নত জাতের কুলবড়ই এর।
আর তাতেই আম্মার এই কান্না।

সেদিন বুঝেছিলাম আম্মা'র গাছের প্রতি ভালবাসার গভিরতা। সময়ের ক্রমে আমি নিজেও হয়ে উঠেছি বৃক্ষ প্রেমিক। আমিও এটা সেটা এনে লাগাতাম। ফুল গাছের প্রতি সেই ছোটবেলা থেকেই অমোঘ টান আমার। শহরের এই জনারন্যে বসবাস আমাদের।যে যেভাবে পারি সে সেভাবেই কোনো না কোনো ভাবে একটু গাছ লাগাবার চেষ্টায় থাকি।

ছাদকৃষি এখন সময়ের দাবি। বিশ্বউষ্ণায়নয়ের এই সময়ে যার যার অবস্থান থেকে সবাই চেষ্টা করে সামর্থ অনুযায়ী গাছ লাগানোর।
সেখানে গতকালের ওই মহিলার কর্মকান্ড দেখে যাস্ট কি বলবো? তাঁর দা হাতে নির্বিকার চিত্তে গাছকাটা দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গিয়েছি।এই মহিলা তো মানুষ খুন করার মধ্যে পার্থক্য রাখেন নি কোনো!!
আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সঃ) বলে গিয়েছেন, যখন কেয়ামত সংঘটিত আসন্ন হবে,আর তোমার হাতে একটিও গাছ থাকে তবে তা রোপন করে ফেলো "
আরো আছে " গাছের ফল  পশু পাখি খেলে তা সাদাকা এবং অশেষ সওয়াব"

মহিলাকে দেখে মনে হয়েছে তিনি নামাজি এবং ধর্ম সম্পর্কে অবুঝ নন। তাহলে কি করে পারলেন এমন কাজ করতে?????

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ