আমার মা

সুরাইয়া নার্গিস ১০ মে ২০২০, রবিবার, ০৭:২৬:১৬পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২০ মন্তব্য

আজ বিশ্ব মা দিবস।

মায়ের জন্য দিবস নয়, দিবসের জন্য মা নয়। আমার কাছে বছরের ৩৬৫ দিনেই মাকে ভালোবাসার জন্য।বছরের একদিন না প্রতিদিন বলতে চাই ভালোবাসি মা তোমাকে..!

আজকের এই দিনে পৃথিবীর প্রত্যেক মায়ের প্রতি জানাই অসীম শ্রদ্ধা, অশেষ কৃতজ্ঞতা। একটা সংসার সুন্দর সুখি করার জন্য একজন নারীর অবদান অস্বীকার্য।পৃথিবীর সকল মা বোনকে জানাই নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

আম্মু সব সময় চেষ্টা করেন প্রতিদিন আমাদের সবার পছন্দ অনুযায়ী রান্না করতে।

ঘটনাটা অনেক বছর আগের সেটা ছিলো শুক্রবার। দুপুরে খাবার মেনু রুটি আর মুরগির মাংস, সবাই কিছুটা অবাক হলাম। আব্বু বললেন এটা তোমাদের মায়ের পছন্দের খাবার।

সবাই খুব খুশি হলাম অত্যান্ত আনন্দের সাথে তৃপ্তি করে খেলাম।

খাবার শেষে সবাই আব্বু রুমে হাজির হলাম, আব্বু বললেন আজ তোমাদের একজন নারী সম্পর্কে বলবো।

পৃথিবীতে দু'ধরনের নারী আছে।

১) এক ধরনের নারী যারা সারাজীবন স্বামীর কাছে এটা দেও, ওটা দেও।স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করেই তাকে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে সংসারে অশান্তি লাগিয়ে রাখে।

 

২) আরেক ধরনের নারী স্বামীর কাছে কোনদিন কোন কিছুই চায় না,সার্ধ অনুযায়ী যা দেয় তাতেই নিজের সুখ খুঁজে নেয় বরং সারা জীবন স্বামীর সন্তুুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যস্ত থাকে।

আমি বললাম প্রথমটা মেনে নিলাম, দ্বিতীয় ধরনের নারী পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয় না।

আব্বু হেসে বললেন, আছে সে তোমাদের খুবই আপন জন তোমাদের মা।

আমাদের বিয়ের ৩০ বছরে সে আজ পর্যন্ত কোনদিন মুখ ফুটে আমার কাছে কিছুই চায়নি বরং আমি যখন যা দিয়েছি তাতেই মহা খুশি হয়েছে। তার নিজের কোন পছন্দ ছিলো না কারন আমার পছন্দই তার পছন্দ। আমি সব সময় চেয়েছি তোমাদের মা আমার কাছে কিছু আবদার করুক আর আমি সেটা দিতে চাই।

আম্মু হেসে বললেন তোমাদের আব্বু খুব ভালো মানুষ সেটা তোমরা জানো। আমি কিছু চাইলে যদি সে না দিতে পারে তাহলে আমাকে কিছু বলবে না, তবে মানসিক ভাবে খুব কষ্ট পাবে। আর আমি চাওয়ার আগেই সে আমার সকল অভাব পূরণ করে দেয় তাই কখনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। আমি তোমার আব্বুকে স্বামী হিসাবে পেয়ে খুব খুশি। আর আমি সব সময় চেষ্টা করি আমার কোন আচরন বা চাওয়া যেন তাকে কোন প্রকার কষ্ট না দেয়।

আব্বু বললেন, ধন্যবাদ। আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে খুশি এবং সুখি মানুষ কারন এই ৩০ বছরে তোমার আম্মু আমার কাছে কিছু চেয়েছে, তার রুটি দিয়ে মুরগির মাংস খেতে ইচ্ছে করছে।তাই আজ আমি নিজের হাতে সব বাজার করছি,তোমার আম্মুর একটা চাওয়া পূরণ করতে পেরে আজ নিজেকে ধন্য মনে করছি।

আমরা সবাই জোরে করতালি দিলাম,আম্মুকে স্যালুট করলাম।

পুরা ঘটনা আমার দাদুমনি বসে চুপ করে শোনছিলেন। আব্বু,আম্মুর কথা শেষ হতেই দাদুমনির হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেদিলেন। আব্বু কারন জানতে চাইলেন! দাদুমনি বললেন, বাবা রে আজ সকালে আমি রুটি দিয়ে মুরগির মাংস খেতে চাইছিলাম বউমার মন চায়নি সে তোমাকে মিথ্যা বলছে।

আম্মু বললেন বাসায় ময়দা, মুরগির মাংস ছিলো না, মা বয়স্ক মানুষ খেতে চেয়েছে তুমি এটা শুনছো জানলে মা হয়ত কষ্ট পাবেন। তাই নিজের কথা বলছি আমার সন্তানেরা কিছু চাইলে আমি তাদের সে আবদার পুরণ করি। মা আমার সন্তানের মতো তাই তার ইচ্ছাটা আমার চাওয়া বললাম।

সব শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম, কিছু বলার ভাষা খোঁজে পাচ্ছিলাম না।সবার চোখে আনন্দ আর গর্বের অশ্রু। আব্বু বললেন জীবনে হয়ত কোন একটা পূর্ণ করছিলাম যার কারণে তোমার মতো একজন স্ত্রী পেয়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আজ তুমি আমাকে যে উপহার দিলে তার উওম প্রতিদান যেন তিনি তোমাকে হাসরের ময়দানে দেন। আম্মু হেসে বললেন,দোয়া করো মৃত্যুর আগ মুহুত্ব পর্যন্ত যেন তোমার সেবা করতে পারি।

সেদিনেই সেই কথা গুলো কোনদিন ভুলবো না, চেষ্টা করবো আম্মুর মতো একজন পরিপূর্ণ নারী হতে। আল্লাহর কাছে সব সময় প্রার্থনা করি তিনি যেন আমার আব্বু আম্মুকে জান্নাতের নসীব করেন।

আমার দেখা পৃথিবীর সেরা মানুষ আমার আম্মু। মায়ের তুলনা শুধুই মা।

বিঃদ্রঃ ওই একই বছরের শেষের দিকে আমাদের দাদুমনি মারা যান ২৪ ডিসেম্বর।

বিষয়টা আমার ব্যক্তিগত তবে ঘটনাটা খুব সুন্দর, তাই মা দিবসের জন্য পোস্ট করলাম।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ