
লজ্জায় সুনয়নার মরে যাবার জোগাড়। এই অবেলায় এসে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে তাও কিনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানের সামনে তা ভাবতেই পারে না সুনয়না। অথচ আজ সেটাই ঘটলো। সুনয়না
অপরাধী বালিকার মতো মাথা নত করে রইল। সে বুঝতেও পারলো না এখন তার কী বলা বা কী করা উচিত? সেঁজুতি মায়ের দিকে তাকিয়েছিল কিছুক্ষণ। এমন অসহায় লাগছিল যা মুখে বলার নয়। সেঁজুতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠল…
-মামুনি টেক ইট ইজি! এমন করছো যেনো তুমি খুব অন্যায় করেছো।
-নাহ্ সোনা! আমি এসবের কিছুই জানি না।
-আমি জানি তো মামুনি তুমি কিচ্ছু জানো না। যদি জানতে আমার কাছে আড়াল করতে না। তবে এগুলো কে পাঠালো আর কেনো পাঠালো ব্যাপারটা জানতে হবে? আচ্ছা মামুনি এমন কি কেউ ছিল যে তোমাকে পছন্দ করতো?
-আমায় তো কেউ কখনো সে কথা বলেনি।
-আচ্ছা মামুনি যে ছেলেটি এসেছিল তাকে তোমার কেমন লাগলো? না মানে সার্ভিস ম্যান মনে হলো? আমার কিন্তু মনে হয়নি।
-আমারও তো তাই মনে হচ্ছিল। বেশ পরিপাটি নম্র ভদ্র এবং শিক্ষিত মনে হচ্ছিল।
-একেবারেই ঠিক ধরেছো মামুনি। আমার মনে হচ্ছে ছেলেটিকে চেপে ধরলেই জানা যেতো আসল ঘটনা।
-হয়েছে হয়েছে অনেক হয়েছে। এবার ছাড়ো এসব
সুনয়না ঘুমাতে পারলো না। সারারাত এপাশ ওপাশ করে কেটে গেলো। সুনয়নার হঠাৎ করেই শায়নের কথা মনে পড়লো। ভাবছে শায়ন এমনটা করতে পারে! কিন্তু সে ঠিকানা জানবে কী করে? আর তাছাড়া শায়ন এমনটা করতেই যাবে কেনো? সে তো কখনো বলেনি আমাকে ভালোবেসে। তবে আজ এই বেলায় এমন ছেলেমানুষী কেনো করবে?
এতোগুলো বছর পর মায়ের নামে এমন চিরকুট দেখে সেঁজুতি যেমন বিস্মিত তেমনই অনেক খুশি হয়েছে এই ভেবে যে কেউ তার মামুনিকে এতোটা ভালোবাসে। মানুষটা সারাজীবন একাই কাটিয়ে দিল। যদি সত্যিই কেউ থাকে তবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজতেই হবে। আমি খুঁজে বের করবো যে কোনো উপায়ে।
শ্রাবণ শায়নের সামনে ফোনটা ধরে বললো…
-মামু দেখো তো এই ভদ্র মহিলাকে খুঁজছো কি না?
শায়ন ফোন হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আনমনে বলে উঠলো মায়াবতী, হ্যাঁ এই আমার মায়াবতী।
-মামু ঘটনা কী বলো তো?
-এ সুনয়না আমার ক্লাসমেট। আমরা দুই বছর একসাথে
পড়েছি। আমি প্রথম দেখায় ওকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু দু বছর একসাথে থেকেও কখনো বলতে পারিনি আমার মনের কথা। পরীক্ষার শেষে একদিন ঠিক হলো আমরা দেখা করবো। আর আমি সেদিনই আমার মনের কথা বলে দেবো। নির্ধারিত সময়ের আমি উপস্থিত হলেও সে আর আসেনি। সারাদিন অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যায় অবসন্ন মনে ফিরে এসেছি। পরের দিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে পাইনি এমনকি কেউ জানতোও না ওরা কোথায় গেছে?
তারপর আমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। আর তখন বাবা আর বড় আপা মানে তোমার মা আমাকে এক সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান। উনার আন্তরিক সেবায় আমি সুস্থ হয়ে যাই। উনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেন এবং একসময় আমাদের বাড়ির জামাই হয়ে যান। তারই অনুপ্রেরণায় প্রাইভেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাই। পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রেখেছি। এর মধ্যে আমার এক সহকর্মী ডাক্তার ফারিহা তাসনিম আমাকে খুব পছন্দ করলেন। দুলাভাই,বড় আপা এবং বাবাও চেয়েছিলেন আমাদের বিয়ে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি সুনয়নাকে ভুলে অন্য কাউকে সহধর্মিণী করতে। তারপর থেকে এই যে আমার একলা একা সংসার। জানো শ্রাবণ মায়াবতী আমার সাথেই থাকে। আমি তাকে সবসময় অনুভব করি।
-হুম জানলাম আর বুঝলামও। কিন্তু তুমি কী জানো? যার জন্য তোমার এই ত্যাগ স্বীকার সে আজ সংসারী। তার সংসার পরিপূর্ণ। সেখানে তোমার বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। অথচ তুমি এখনো তাকেই আকড়ে ধরে একলা একা জীবন পাড়ি দিচ্ছো মামু।
-শ্রাবণ এভাবে বলো না। তার তো কোনো দোষ নেই। সে তো জানেই না আমি তাকে ভালবাসি। শুধু আমার এটুকু জানার আছে সেদিন আসতে চেয়েও মায়াবতী কেনো এলো না?
-জানো মামু তোমার মায়াবতীর বেশ মিষ্টি মায়াবী এবং রণচণ্ডী একটা মেয়ে আছে। সম্ভবত মেয়েটির নাম সেঁজুতি। উফ্! প্রথম বার দেখে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না।…..
৩২টি মন্তব্য
শামীম চৌধুরী
হাজিরা দিয়ে গেলাম।
সময় নিয়ে পড়বো আপু।
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী দাদাভাই। কৃতজ্ঞতা অশেষ
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
মনির হোসেন মমি
জীবন কারোর জন্য থেমে থাকে না।।কেউ সংসারি কেউবা বিবাগী।পূর্ব পর্বগুলো পড়া হয়নি তাই ধোয়াসে লাগছে।সময় করে পড়ে নেব। লেখা চলুক।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ ধন্যবাদ
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
বন্যা লিপি
ভারী ইন্টারেস্টিং লাগছে তো! মোহ আছে লেখায়। জানি তুমি অক্লান্ত অনন্যা লেখক। ২৪ ঘন্টায় পরের পর্ব পড়ের পর্ব পড়ার অপেক্ষা জাগিয়ে দিয়েছো ঠিকঠাক। নেক্সট প্লিজ।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা অশেষ আপু
আপনি এমন ভাবে বললেন রিপ্লাই দেবার ভাষায় খুঁজে পাই না। দ্রুতই দেবো পরের পর্ব ইনশাআল্লাহ।❤️❤️❤️এত্তোগুলা
ইঞ্জা
বেশ টান আছে লেখায়, রোমান্টিকতা আর বিচ্ছেদ মিলিয়ে দারুণ এগুচ্ছে আপু।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু।
রেজওয়ানা কবির
আপনার গল্পের মত মনে হয় আপনিও বেশ রোমান্টিক।ভালো লাগল।পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় আছি।
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা হা
ঐ আর কী একটু আধটু রোমান্টিক তো হতেই হয় বলুন।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
খাদিজাতুল কুবরা
ও বাবা এতো দেখছি একের ভেতর চার। মামা ভাগ্নের মুশকিল আহসান করবে?নাকি ভাগ্নে মামার মুশকিল আহসান করবে
সুরাইয়া পারভীন
ক্রমশ প্রকাশ্য
দেখা যাক কে কার মুশকিল আসান করে।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
খাদিজাতুল কুবরা
গল্প জমে উঠেছে আপু। পরের পর্বের অপেক্ষায়
সুরাইয়া পারভীন
ইনশাআল্লাহ যথাসময়ে পেয়ে যাবে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
রোকসানা খন্দকার রুকু
অন্যদিকে যাচ্ছে । এটা আগে ভাবিনি। ভালো লিখিয়েরা কতকিছু প্লান করে রাখে।পাঠক কুপোকাত হতে যাচ্ছে।গলপও বেশ রোমান্টিক হবে মনে হচ্ছে।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো এখানেই লেখকের সার্থকতা। লেখক তা ভাবছে পাঠক তা কল্পনাও করতে না। তবে দারুণ মজার কিছু হবে আশা করা যায়।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার লাগল তবে সুনয়নার দেখা মিল না——————কেনো
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
আর সাথেই থাকুন
সুনয়নার দেখা পেয়ে যাবেন
ছাইরাছ হেলাল
ক্রমান্বয়ে বাঁক বদল হচ্ছে।
চলুক।
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী চলুক। এ বাঁক কোথায় গিয়ে থেমে যায় দেখা যাক!
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
ভালোবাসাগুলো এমনি হলে ভালো হতো।
নেক্সট…..
সুরাইয়া পারভীন
একদম ঠিক বলেছেন আপু। ভালোবাসা যদি সত্যিই এমন হতো তাহলে পৃথিবীই বদলে যেত।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সব সময়
আরজু মুক্তা
আপনিও ভালো থাকুন। বেশি বেশি লিখুন
শামীম চৌধুরী
দারুন একটা মোহনীয় লেখা লিখেছেন আপু।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদাভাই
ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সব সময়
তৌহিদ
সার্ভিস ম্যান সুনয়নার মনকে নাড়া দিয়ে গেলো। সুনয়না এরপরে কি করবে সেটাই ভাবনার বিষয়। গল্পের মোড় ঘুরে যাচ্ছে, লেখক যে আরো কি কি ভেবে রেখেছেন কে জানে! এটাই লেখার স্বার্থকতা।
ভালো লাগছে পড়তে।
সুরাইয়া পারভীন
দেখি গল্পের মোড় কোন দিকে ঘোরে।
কৃতজ্ঞতাসহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন সব সময়
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সেঁজুতি যদি পারে মায়ের ভালোবাসাকে পরিপূর্ণতা দিতে সেটাই হবে মায়ের জন্য মেয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। এমন ভালোবাসা আজকাল খুঁজে পাওয়া যায় না।যদিও পাওয়া যায় তাও কোন ছেলে অবিবাহিত থাকেনা । শ্রাবণের সাথে সেঁজুতির সম্পর্ক হবার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি জানিনা লেখিকার মনে কি আছে! শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
হা হা হা হা দিদিভাই
ক্রমশ প্রকাশ্য।
আমার তো মনে হচ্ছে সেঁজুতি তার মাকে শ্রেষ্ঠ উপহারটা দিতে চলেছে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
হালিম নজরুল
সেজুঁতি আর ওর মায়ের জন্য শুভকামনা রইল। গল্পের পটপরিবর্তন সুন্দর হচ্ছে।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়