শেষ থেকে শুরু_ পর্ব ছয়

সুরাইয়া পারভীন ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার, ০৬:১২:৫২অপরাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য

শেষ থেকে শুরু_পঞ্চম পর্ব

লজ্জায় সুনয়নার মরে যাবার জোগাড়। এই অবেলায় এসে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে তাও কিনা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানের সামনে তা ভাবতেই পারে না সুনয়না। অথচ আজ সেটাই ঘটলো। সুনয়না
অপরাধী বালিকার মতো মাথা নত করে রইল। সে বুঝতেও পারলো না এখন তার কী বলা বা কী করা উচিত? সেঁজুতি মায়ের দিকে তাকিয়েছিল কিছুক্ষণ। এমন অসহায় লাগছিল যা মুখে বলার নয়। সেঁজুতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে উঠল...

-মামুনি টেক ইট ইজি! এমন করছো যেনো তুমি খুব অন্যায় করেছো।
-নাহ্ সোনা! আমি এসবের কিছুই জানি না।
-আমি জানি তো মামুনি তুমি কিচ্ছু জানো না। যদি জানতে আমার কাছে আড়াল করতে না। তবে এগুলো কে পাঠালো আর কেনো পাঠালো ব্যাপারটা জানতে হবে? আচ্ছা মামুনি এমন কি কেউ ছিল যে তোমাকে পছন্দ করতো?
-আমায় তো কেউ কখনো সে কথা বলেনি।
-আচ্ছা মামুনি যে ছেলেটি এসেছিল তাকে তোমার কেমন লাগলো? না মানে সার্ভিস ম্যান মনে হলো? আমার কিন্তু মনে হয়নি।
-আমারও তো তাই মনে হচ্ছিল। বেশ পরিপাটি নম্র ভদ্র এবং শিক্ষিত মনে হচ্ছিল।
-একেবারেই ঠিক ধরেছো মামুনি। আমার মনে হচ্ছে ছেলেটিকে চেপে ধরলেই জানা যেতো আসল ঘটনা।
-হয়েছে হয়েছে অনেক হয়েছে। এবার ছাড়ো এসব

সুনয়না ঘুমাতে পারলো না। সারারাত এপাশ ওপাশ করে কেটে গেলো। সুনয়নার হঠাৎ করেই শায়নের কথা মনে পড়লো। ভাবছে শায়ন এমনটা করতে পারে! কিন্তু সে ঠিকানা জানবে কী করে? আর তাছাড়া শায়ন এমনটা করতেই যাবে কেনো? সে তো কখনো বলেনি আমাকে ভালোবেসে। তবে আজ এই বেলায় এমন ছেলেমানুষী কেনো করবে?

এতোগুলো বছর পর মায়ের নামে এমন চিরকুট দেখে সেঁজুতি যেমন বিস্মিত তেমনই অনেক খুশি হয়েছে এই ভেবে যে কেউ তার মামুনিকে এতোটা ভালোবাসে। মানুষটা সারাজীবন একাই কাটিয়ে দিল। যদি সত্যিই কেউ থাকে তবে তাকে খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজতেই হবে। আমি খুঁজে বের করবো যে কোনো উপায়ে।

শ্রাবণ শায়নের সামনে ফোনটা ধরে বললো...
-মামু দেখো তো এই ভদ্র মহিলাকে খুঁজছো কি না?
শায়ন ফোন হাতে নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আনমনে বলে উঠলো মায়াবতী, হ্যাঁ এই আমার মায়াবতী।
-মামু ঘটনা কী বলো তো?
-এ সুনয়না আমার ক্লাসমেট। আমরা দুই বছর একসাথে
পড়েছি। আমি প্রথম দেখায় ওকে ভালোবেসে ফেলি কিন্তু দু বছর একসাথে থেকেও কখনো বলতে পারিনি আমার মনের কথা। পরীক্ষার শেষে একদিন ঠিক হলো আমরা দেখা করবো। আর আমি সেদিনই আমার মনের কথা বলে দেবো। নির্ধারিত সময়ের আমি উপস্থিত হলেও সে আর আসেনি। সারাদিন অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যায় অবসন্ন মনে ফিরে এসেছি। পরের দিন ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে পাইনি এমনকি কেউ জানতোও না ওরা কোথায় গেছে?
তারপর আমার মানসিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। আর তখন বাবা আর বড় আপা মানে তোমার মা আমাকে এক সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যান। উনার আন্তরিক সেবায় আমি সুস্থ হয়ে যাই। উনি আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেন এবং একসময় আমাদের বাড়ির জামাই হয়ে যান। তারই অনুপ্রেরণায় প্রাইভেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাই। পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে কাজে ব্যস্ত রেখেছি। এর মধ্যে আমার এক সহকর্মী ডাক্তার ফারিহা তাসনিম আমাকে খুব পছন্দ করলেন। দুলাভাই,বড় আপা এবং বাবাও চেয়েছিলেন আমাদের বিয়ে দিতে। কিন্তু আমি পারিনি সুনয়নাকে ভুলে অন্য কাউকে সহধর্মিণী করতে। তারপর থেকে এই যে আমার একলা একা সংসার। জানো শ্রাবণ মায়াবতী আমার সাথেই থাকে। আমি তাকে সবসময় অনুভব করি।
-হুম জানলাম আর বুঝলামও। কিন্তু তুমি কী জানো? যার জন্য তোমার এই ত্যাগ স্বীকার সে আজ সংসারী। তার সংসার পরিপূর্ণ। সেখানে তোমার বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। অথচ তুমি এখনো তাকেই আকড়ে ধরে একলা একা জীবন পাড়ি দিচ্ছো মামু।
-শ্রাবণ এভাবে বলো না। তার তো কোনো দোষ নেই। সে তো জানেই না আমি তাকে ভালবাসি। শুধু আমার এটুকু জানার আছে সেদিন আসতে চেয়েও মায়াবতী কেনো এলো না?

-জানো মামু তোমার মায়াবতীর বেশ মিষ্টি মায়াবী এবং রণচণ্ডী একটা মেয়ে আছে। সম্ভবত মেয়েটির নাম সেঁজুতি। উফ্! প্রথম বার দেখে চোখ ফেরাতেই পারছিলাম না।.....

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ