
ফেসবুকে ছবি দেখছি পিঠাপুলির। আজ পৌষ সংক্রান্তি। পৌষ সংক্রান্তি মানেই মা কাকীদের পিঠে বানানো। সংক্রান্তির আগে থেকেই ভাল খেজুরের গুঁড় যোগাড় করে রাখা। গাছীকে এমনভাবে গাছ কাটতে বলা হতো যেন সংক্রান্তির দিন সকালে ভাল খেজুর রসটা পাওয়া যায়। নরমালি আগের দিন রাতে চালকুটে আনা হতো। ছোটবেলায় ঢেঁকিতেই চাল কুটতে দেখতাম। আমি নিজেও ঢেঁকি পার দিয়েছি। আমাদের বাড়িতে মাকে সাহায্য করার জন্য যে মাসী ছিলো উনি আমাদের দুবোনকে নিয়ে যেতেন চাল কোটার সময়। আমরা বসে বসে চাল কোটা দেখতাম আর মাসীকে বলে আমরাও ঢেঁকি পার দিতাম। ঢেঁকি পার দেবার মতো শরীরে বল তখনও হয়নি কিন্তু মাসীর পাশে দাঁড়িয়ে যেতাম। বড়ই আনন্দের বিষয় ছিলো।
তবে আমাদের বাচ্চাদের সবচে মজার ছিলো সুবরে গাওয়া। মা কে জিজ্ঞেস করলাম এখনও বাচ্চারা সুবরে গাইতে আসে কিনা! মা বলল আসে তবে কম। এই জিনিসগুলা এখন হারিয়ে যাচ্ছে। সুবরে হলো গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চারা ধান চাল এসব নিয়ে আসে। এরপর এগুলা দোকানে বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে বাস্তু পুজো করে গ্রামের গাছতলায়। সংক্রান্তির তিন বা চারদিন আগে থেকেই এইটা করা হয়। আমরা সব বাচ্চারা হাতে একটা করে মোটা লাঠি নিতাম। এরপর দল ধরে আশেপাশের বাড়ি যেতাম এই ছড়া গান গাইতে। সব বাড়ির কাকী জেঠিরা চাল দিতো কেউ টাকা দিতো। তিনদিন ধরে এসব করে সংক্রান্তির দিন সেগুলা দোকানে বিক্রি করে এরপর বাতাসা জিলাপি কিনে গাছতালায় ভোগ দিয়ে নিজেরা খেয়ে ফেলতাম 😁। বাকি যে টাকা থাকতো তা দিয়ে পরে পিকনিক করা হতো সাথে কিছু চাঁদা দিয়ে। এগুলা পুরোটাই ছিলো মজার। এজন্য বাবা মাও না করতো না। সন্ধ্যায় ভোগ দিয়ে এরপর বাড়িতে এসে মায়ের বানানো পিঠা খেতাম। হাতে কাটা রসে ভেজানো পায়েস, দুধপুলি, ক্ষীরের আর নারকেলের পাটিসাপটা, দুধ চিতই, রসে ভেজানো চিতই, মালপোয়া, কলার বড়া, আন্দেসা …. জিভে জল চলে এলো। এরপর আবার এবাড়ি ওবাড়ি পিঠে আদান প্রদান হতো।
সুবরে গাওয়ার অনেক ছড়া ছিলো। একজন গাইতো বাকিরা প্রতি লাইনের পর সুবরে সুবরে বলে তাল দিতো। আমার আজও অনেকগুলা ছড়া মনে আছে। একটা বলি-
“সুবরের হরণে ( প্রতি লাইনের পর বাকীরা বলবে সুবরে)
লক্ষ্মী দেবীর চরণে,
লক্ষ্মী দেবী দিলেন বর
ধানে চালে গোলা ভর।
গোলা ভর না উঠোন ভর
কলা বোনে জায়গা কর
ধান দিয়ে ভর বাড়ি গাড়ি
দিবা ধান পেয়ে যাবো
বাস্তুর নামে ফুলজল বাড়াবো॥”
আহা আমাদের শৈশব কি রঙিন ছিলো!!
৭টি মন্তব্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
পৌষসংক্রান্তি মানে ঘরে ঘরে পিঠেপুলি আর এ বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ছুটে বেড়ানো। এছাড়া বাজার থেকে বড়বড় মাছ কিনে আনা ইত্যাদি।
এসবকিছুর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশব!
.
সংক্রান্তি উপলক্ষে শৈশবে স্মৃতিচারণ সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন।
শুভ পৌষসংক্রান্তির শুভেচ্ছা, দিদি।
রেজওয়ানা কবির
পৌষসংক্রান্তি মানেই পুরনো অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে, পিঠাপুলি,পায়েশ সাথে আড্ডার আসর। শুভকামনা।
শামীনুল হক হীরা
বাহঃ কি অপূর্ব লিখেছেন।। জবাব নেই প্রিয়।।শুভকামনা রইল পাতায়। ভালো থাকবেন সবসময় সপরিবারে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
সবচেয়ে ভালো লাগলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল উঠানো। শৈশব আসলেই আনন্দের ও মজার। শুভ হোক পৌষ সংক্রান্তি। শুভ কামনা আপনার জন্যও🥰🥰
বোরহানুল ইসলাম লিটন
স্মৃতিচারণে সুন্দর লেখা।
বেশ হৃদয়ছোঁয়া নিবেদন।
অনেক কিছুই আজ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পৌষ সংক্রান্তি নিয়ে চমৎকার স্মৃতিচারণ। শৈশব মানেই আনন্দের, মজার। পিঠা-পুলির কথা বলে তো লোভ ধরিয়ে দিলেন 😋😋😋😋। শুভ পৌষ সংক্রান্তি
আরজু মুক্তা
পিঠা, গরম গরম ধোঁয়া ওঠা। ভোলা যায় কি সেই স্মৃতি?