সিলেটের সীমন্তাবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউপির একটি গ্রাম পান্তুমাই। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে খড়স্রোতা পিয়াইন নদী। পাশের দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সু-উচ্চ পাহাড় যেনো পান্তুমাই গ্রামের উপর দাড়িয়ে আছে। পিয়াইন নদীর মূল জলধারা এই মেঘালয়ের ঝর্ণাগুলো থেকেই সৃষ্ট। মেঘালয় রাজ্যের ইস্ট খাসিয়া হিল জেলার পাইনেচুলা থানার অন্তগর্ত পাহাড়ী ঝর্ণা বপহিল। এই বপহিল ঝর্ণাটাই আমাদের পান্তুমাই গ্রামে থেকে দেখা যায় বলে আমরা একে বলে থাকি পান্তুমাইয়ের ঝর্ণা বা পান্তুমাই ঝর্ণা।
ওখানে যাওয়ার কয়েকটি পথ হলোঃ জাফলং মামার বাজার হয়ে পিয়াইন নদী নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় খাসিয়াদের গ্রাম সংগ্রাম পুঞ্জিতে । সংগ্রাম পুঞ্জি থেকে পান্তুমাই প্রায় ১০ কিলোমিটার । হাজিপুর বাজার পর্যন্ত প্রথম ছয় কিলোমিটার ভটভটিতে যেতে পারলেও বাকি চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেটেই যেতে হবে।
আবার সিলেট নগরীর আম্বরখানাপয়েন্ট থেকে সিএনজি/ট্যাক্সি নিয়ে গোয়াইনঘাট বাজারে গিয়ে সেখান থেকে আবার ট্যাক্সি নিয়ে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন এর পাংথুমাই গ্রামে যাওয়া যায়। কিংবা আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিয়ে হাদার পার বাজার, ওখান থেকে ট্রলার নিয়ে পান্তুমাই গ্রামে। তৃতীয় পথেই আমরা গিয়েছিলাম এই সুন্দর ঝর্ণাটি দেখতে।
যেভাবেই যাইনা কেন মূলত আমরা এই ঝর্ণার পানি পাই আর সৌন্দর্য্য দেখতে পারি, ওকে হাতে ছুয়ে দেখতে হলে ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি ঝামেলাটা থেকেই যায়। গত ১৫ আগষ্ট মুসলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গিয়েছিলাম পান্তুমাই ঝর্ণা দেখতে । এবার আসুন পান্তুমাইকে দেখি আমার ক্যামেরায়........
(২) সিলেট থেকে আমরা সিএনজিতে করে গোয়াইন ঘাটের হাদার পার বাজারে যাই, ওখান থেকে প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ট্রলারে চেপে বসি।
(৩) প্রবল বৃষ্টি ওপেক্ষা করে আমাদের ট্রলার ছুটে চলে পান্তুমাই এর উদ্দেশ্যে।
(৪) নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
(৫) প্রচন্ড বৃষ্টি আর মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে এপারের বাড়ি ঘর গাছ-পালা সবই প্রায় ডুবতে বসেছে।
(৬) ওপারের মেঘালয়ের পাহাড়ে মেঘের ঘনঘটা, আর এপারে মুসল ধারে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে আমাদের অভিযানটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যাবে।
(৭) এক সময় গাছপালার উপর দিয়া দুরে আমাদের দৃষ্টি সীমার ভেতরে চলে আসে পান্তুমাই ঝর্ণা।
(৮) চোখের সামনে ওই তো আমাদের কাঙ্খিত সেই পান্তুমাই ঝর্ণা।
(৯/১০) কাছে এসেতো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ, প্রচন্ড শব্দে ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে ছুটে আসছে পানির তোড়, যেন যখন তখন ঐ ছোট্ট স্টিল ব্রীজটাকে উড়িয়ে দিতে পারে এই গতি। আর ঝর্ণার উড়ন্ত পানি কণায় ঝাপসা করে দিচ্ছিল আমাদের ক্যামেরার ল্যান্স।।
(১১) এরা আবার কারা ? এই প্রচন্ড স্রোতের দিকে ডিঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে !!
(১২) ফেরৎ আসার পর জানতে পারলাম ওরা গাছ শিকারী, মেঘালয়ের পাহাড়ের ঝড় আর পানির তোরে ওখানকার পাহাড়ের অনেক গাছপালা ভেঙ্গে পানির সাথে ভেসে আসে, ওরা সেইগুলোকে ধরে আনে।
(১৩/১৪) যত বৃষ্টি আর ঢলই হোক না কেন এ্যডভেঞ্চার প্রিয় মানুষরা কখনো পিছু হটে না।
(১৫) পিয়াইনে এখন বয়ে চলেছে দুইটা স্রোতধারা, একটা স্বচ্ছ অন্যটা ঘোলাটে।
(১৬/১৭) এবার ট্রলার ছেড়ে আমরা পান্তুমাই গ্রামে নেমে পড়লাম, আমাদের গন্তব্য হাজীপুর ও সংগ্রামপুঞ্জি হয়ে জাফলং। প্রথমে চার কিলোমিটার এমন পানি পথে হাটা তারপর ট্রলার আবার ভটভটি আবার ট্রলার হয়ে জাফলং পৌছতে হবে।
(১৮) এপ্রিলে গিয়েছিলাম মেঘালয়ে, তখন এই পান্তুমাই বা বপহিল ঝর্ণার রূপটা কেমন ছিলেন দেখেন। এই ছবিটা ঐ লোহার ব্রিজটার উপর দাড়িয়ে তোলা।
(১৯) বিশ্বাস হয় না? দেখুন ঐ স্টিলের ব্রীজে বসা আমি আর আমার এক বন্ধু 😀
(২০) স্টিলের ব্রিজে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পান্তুমাই গ্রামের দিকে ক্যামেরা তাক করে তুললে ছবি যেমন দেখায়।
৩১টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
সে তো বিশ্বাস হলো
কিন্তু আপনি এতো অগ্নিমূর্তি হয়ে বসে রয়েছেন কেনো?😛
ফটোগ্রাফার কথা শুনছিলো না বুঝি!
চমৎকার সব ছবি। পানিপথে চার কি.মি হাঁটা
বাপরে বাপ!
কামাল উদ্দিন
মনে হয় ক্যামেরার সামনে ভাব ধরতে গিয়া অতিরিক্ত ভাব হয়ে গেছে আপু। পুরো পথটাই পানি পথ ছিলনা, কোথাও ছিল তার থেকেও বেশী, মানে কাদাচ্ছন্ন আকাশ আর মেঘাচ্ছন্ন পথ…….ধন্যবাদ আপু, ভালো থাকুন সব সময়।
সুরাইয়া পারভীন
জাফলং যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমারও আছে
তবে পানি পথে নয় ভীষণ পিচ্ছিল প্যাচপ্যাচে কাঁদা পথে।
আপনি ও ভালো থাকবেন ভাইয়া
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
ছবির সাথে দারুণ বর্ণনা।
আমি ২০১৫ সালে গিয়েছি।
.
পরের মিশনে আমাদের মাধবকুন্ড ও হাকালুকি হাওরে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি দাদা।
কামাল উদ্দিন
মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ফেঞ্চুগঞ্জের হাকালুকি হাওরে যাওয়া হয়েছে দাদা, তবে হাকালুকিতে সময় স্বল্পতায় ভালো দেখা হয়নি। তাই হাকালুকি আমার ভ্রমণ তালিকায় আছে…….শুভ রাত্রী।
প্রদীপ চক্রবর্তী
পুনরায় আসলে আমাকে জানাবেন।
শুভরাত্রি দাদা।
কামাল উদ্দিন
সামনের শীতে একটা পরিকল্পনা মাথায় রাখলাম দাদা
জাহাঙ্গীর আলম
অসাধারণ পোষ্ট। আপনার পোষ্ট দেখে মন লকডাউন মানতে চায়না। মনে লয় লকডাউনের উপর ঠাডা মাইরা বেরিয়ে পড়ি। কিন্তু……. বাকি টা আপনি যানেন। হা হা হা।
কামাল উদ্দিন
সময় মতো তো তুমি সময় করতে পারোনা, এটাই তো সমস্যা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ। ঝর্ণার এমন রণমুর্তি বাপরে বাপ! আপনার সাহসের তারিফ করতেই হয়, সেই ব্রীজে বসে ছবিও তুললেন। ছবিগুলো যথারীতি চমৎকার, মনোমুগ্ধকর। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ আপু, আবার ইচ্ছে আছে ঐ ব্রীজে দাঁড়িয়ে বপহিলের রণমুর্তি দেখার।
তৌহিদ
পান্তুমাই নামটাই আগে জানতামনা। অনেক কিছু জানলাম ছবি আর লেখায়। ধন্যবাদ ভাই।
শুভকামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময় তৌহিদ ভাই।
ফয়জুল মহী
ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
কামাল উদ্দিন
আপনার জন্যও তাই
সঞ্জয় মালাকার
দাদা আমিও সিলেটের বাসিন্দা, কিন্তু
পান্তুমাই নামটা আগে জানাছিলনা,জানতাম জাফলং নামে।
দাদা ছবি আর লেখা অসাধারণ, দেখে মন ভরে গেলো।
ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা,
শুভেচ্ছা জানাবেন ধন্যবাদ //
কামাল উদ্দিন
এটা জাফলং ইউনিয়নের ভেতর হলেও এটা দেখার জন্য যেতে হবে পান্তুমাই গ্রামে……..শুভ কামনা সব সময়।
ছাইরাছ হেলাল
পাশাপাশি দু’সময়ের ছবি দেখে বুঝতে পারছি
স্টিলের ব্রিজ থেকে দেখা আর দূর থেক দেখায় অনেক পার্থক্য।
কামাল উদ্দিন
হুমম, কোন একদিন ওই ব্রীজে দাঁড়িয়েই এই ঝর্ণার যৌবন দেখবো বলে ইচ্ছে আছে বড় ভাই, ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
সিলেট থেকেছি অনেকদিন! জাফলংও গিয়েছি দুইবার। কিন্তু এই পান্তুমাই যাওয়া হয়নি একবারও। আপনার পোস্ট এবং ছবি দেখে পাখি হয়ে উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে, দাদা। কিন্তু তাতো আর সম্ভব নয়! তাই আপনার পোস্টের ছবির মাঝেই থেকে গেলাম। শুভকামনা থাকলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ নিতাই দাদা, আপনার জন্যও শুভ কামনা সব সময়।
জিসান শা ইকরাম
বর্ষায় ঝর্নার তো ভয়ংকর রুপ!
পানির মধ্যে দিয়ে চার কিলোমিটার হেটে যাওয়া! অবাক লাগছে খুব।
৩ নং ছবিটা ভাল লেগেছে খুব।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আসলে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায়ই এই বিরম্বনা। কিছু যায়গা পানির নিচে আর কিছু ছিল ভয়াবহ কাদাময়। শুভেচ্ছা জানবেন ইকরাম ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
পান্তুমাই নামে নতুন নামে হল চেনা
যদিও জানতাম জাফলং। ২ বার তো গেলাম
অপূর্ব দৃশ্যগুলো আপনার ছবি আর লেখায়
আবার দৃশ্যমান হলো।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, এবার তো জেনে গেলেন? সামনে হয়তো যেতে পারবেন।
হালিম নজরুল
এত সুন্দর জায়গার নামই শুনিনি
কামাল উদ্দিন
আসলে এটা জনগনের সামনে প্রকাশিত হয়েছে খুব বেশী বছর নয়, তাই অনেকেই এটার নাম জানে না।
সাবিনা ইয়াসমিন
কত অপরুপ সুন্দর আমাদের দেশ! সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে সবখানে। নৈসর্গিক ছবি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো।
শুভ কামনা 🌹🌹
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমিও তাই বলি আপু, শুভ কামনা জানবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
সে তো বিশ্বাস হলো
কিন্তু আপনি এতো অগ্নিমূর্তি হয়ে বসে রয়েছেন কেনো? ☺
ভয় পেয়েছিলেন নাকি!
লেখা ছবি সব মিলিয়ে চমৎকার লাগছে ভাইয়া।
জায়গা গুলো দেখে মুগ্ধ হলাম, সত্যি আল্লাহ্ সৃষ্টি কত সুন্দর আপনার হাতে তুলা সুন্দর ছবি গুলো তার প্রমান।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা রইল।
কামাল উদ্দিন
কিজানি আপু ভয় কিংবা রাগ কোনটা ছিলো এখন তো আর মনে নেই…….ভালো থাকবেন সব সময়।