অপরূপ পান্তুমাই

কামাল উদ্দিন ২৭ এপ্রিল ২০২০, সোমবার, ০৯:২০:৫১অপরাহ্ন ভ্রমণ ৩১ মন্তব্য

সিলেটের সীমন্তাবর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউপির একটি গ্রাম পান্তুমাই। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে খড়স্রোতা পিয়াইন নদী। পাশের দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সু-উচ্চ পাহাড় যেনো পান্তুমাই গ্রামের উপর দাড়িয়ে আছে। পিয়াইন নদীর মূল জলধারা এই মেঘালয়ের ঝর্ণাগুলো থেকেই সৃষ্ট। মেঘালয় রাজ্যের ইস্ট খাসিয়া হিল জেলার পাইনেচুলা থানার অন্তগর্ত পাহাড়ী ঝর্ণা বপহিল। এই বপহিল ঝর্ণাটাই আমাদের পান্তুমাই গ্রামে থেকে দেখা যায় বলে আমরা একে বলে থাকি পান্তুমাইয়ের ঝর্ণা বা পান্তুমাই ঝর্ণা।

ওখানে যাওয়ার কয়েকটি পথ হলোঃ জাফলং মামার বাজার হয়ে পিয়াইন নদী নৌকায় পার হয়ে যেতে হয় খাসিয়াদের গ্রাম সংগ্রাম পুঞ্জিতে । সংগ্রাম পুঞ্জি থেকে পান্তুমাই প্রায় ১০ কিলোমিটার । হাজিপুর বাজার পর্যন্ত প্রথম ছয় কিলোমিটার ভটভটিতে যেতে পারলেও বাকি চার কিলোমিটার পথ পায়ে হেটেই যেতে হবে।
আবার সিলেট নগরীর আম্বরখানাপয়েন্ট থেকে সিএনজি/ট্যাক্সি নিয়ে গোয়াইনঘাট বাজারে গিয়ে সেখান থেকে আবার ট্যাক্সি নিয়ে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন এর পাংথুমাই গ্রামে যাওয়া যায়। কিংবা আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিয়ে হাদার পার বাজার, ওখান থেকে ট্রলার নিয়ে পান্তুমাই গ্রামে। তৃতীয় পথেই আমরা গিয়েছিলাম এই সুন্দর ঝর্ণাটি দেখতে।

যেভাবেই যাইনা কেন মূলত আমরা এই ঝর্ণার পানি পাই আর সৌন্দর্য্য দেখতে পারি, ওকে হাতে ছুয়ে দেখতে হলে ভিসা পাসপোর্ট ইত্যাদি ঝামেলাটা থেকেই যায়। গত ১৫ আগষ্ট মুসলধারে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গিয়েছিলাম পান্তুমাই ঝর্ণা দেখতে । এবার আসুন পান্তুমাইকে দেখি আমার ক্যামেরায়........


(২) সিলেট থেকে আমরা সিএনজিতে করে গোয়াইন ঘাটের হাদার পার বাজারে যাই, ওখান থেকে প্রবল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ট্রলারে চেপে বসি।


(৩) প্রবল বৃষ্টি ওপেক্ষা করে আমাদের ট্রলার ছুটে চলে পান্তুমাই এর উদ্দেশ্যে।


(৪) নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।


(৫) প্রচন্ড বৃষ্টি আর মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে এপারের বাড়ি ঘর গাছ-পালা সবই প্রায় ডুবতে বসেছে।


(৬) ওপারের মেঘালয়ের পাহাড়ে মেঘের ঘনঘটা, আর এপারে মুসল ধারে বৃষ্টি। মনে হচ্ছে আমাদের অভিযানটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে যাবে।


(৭) এক সময় গাছপালার উপর দিয়া দুরে আমাদের দৃষ্টি সীমার ভেতরে চলে আসে পান্তুমাই ঝর্ণা।


(৮) চোখের সামনে ওই তো আমাদের কাঙ্খিত সেই পান্তুমাই ঝর্ণা।


(৯/১০) কাছে এসেতো আমাদের চক্ষু চড়কগাছ, প্রচন্ড শব্দে ভয়ঙ্কর গতি নিয়ে ছুটে আসছে পানির তোড়, যেন যখন তখন ঐ ছোট্ট স্টিল ব্রীজটাকে উড়িয়ে দিতে পারে এই গতি। আর ঝর্ণার উড়ন্ত পানি কণায় ঝাপসা করে দিচ্ছিল আমাদের ক্যামেরার ল্যান্স।।


(১১) এরা আবার কারা ? এই প্রচন্ড স্রোতের দিকে ডিঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে !!


(১২) ফেরৎ আসার পর জানতে পারলাম ওরা গাছ শিকারী, মেঘালয়ের পাহাড়ের ঝড় আর পানির তোরে ওখানকার পাহাড়ের অনেক গাছপালা ভেঙ্গে পানির সাথে ভেসে আসে, ওরা সেইগুলোকে ধরে আনে।


(১৩/১৪) যত বৃষ্টি আর ঢলই হোক না কেন এ্যডভেঞ্চার প্রিয় মানুষরা কখনো পিছু হটে না।


(১৫) পিয়াইনে এখন বয়ে চলেছে দুইটা স্রোতধারা, একটা স্বচ্ছ অন্যটা ঘোলাটে।


(১৬/১৭) এবার ট্রলার ছেড়ে আমরা পান্তুমাই গ্রামে নেমে পড়লাম, আমাদের গন্তব্য হাজীপুর ও সংগ্রামপুঞ্জি হয়ে জাফলং। প্রথমে চার কিলোমিটার এমন পানি পথে হাটা তারপর ট্রলার আবার ভটভটি আবার ট্রলার হয়ে জাফলং পৌছতে হবে।


(১৮) এপ্রিলে গিয়েছিলাম মেঘালয়ে, তখন এই পান্তুমাই বা বপহিল ঝর্ণার রূপটা কেমন ছিলেন দেখেন। এই ছবিটা ঐ লোহার ব্রিজটার উপর দাড়িয়ে তোলা।


(১৯) বিশ্বাস হয় না? দেখুন ঐ স্টিলের ব্রীজে বসা আমি আর আমার এক বন্ধু 😀


(২০) স্টিলের ব্রিজে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের পান্তুমাই গ্রামের দিকে ক্যামেরা তাক করে তুললে ছবি যেমন দেখায়।

0 Shares

৩১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ