আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে নুতন করে বলার কিছু নেই। যারা সাহিত্যের খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা সবাই তাঁকে জানি আমরা। প্রায় অজানা বা কম জানা একটি কবিতা সবার সাথে শেয়ার করছি। এই কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন ১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সনে। আমাদের দেশের একজন মহান নেতাকে নিয়ে। নেতা তখন কারারুদ্ধ। নিরালোকে দিব্যরথ (১৯৬৯) কাব্যগ্রন্থের ‘টেলেমেকাস’ কবিতা। নেতা তখনো পিতা হয়ে ওঠেননি জাতির। কিন্তু শামসুর রাহমানের কবিতায় এসেছেন পিতা হয়ে। একটু বড় হলেও কবিতাটি পড়ুন।
টেলেমেকাস
তুমি কি এখনো আসবে না? স্বদেশের পূর্ণিমায়
কখনো তোমার মুখ হবে না নাকি উদ্ভাসিত, পিতা,
পুনর্বার? কেন আজো শুনি নি তোমার পদধ্বনি?
এদিকে প্রাকারে জমে শ্যাওলার মেঘ, আগাছার
দৌরাত্ম্য বাগানে বাড়ে প্রতিদিন। সওয়ারবিহীন
ঘোড়াগুলো আস্তাবলে ভীষণ ঝিমোয়, কুকুরটা
অলিন্দে বেড়ায় শুঁকে কতো কী-যে, বলে না কিছুই।
নয়কো নগণ্য দ্বীপ সুজলা সুফলা শস্যশ্যাম
ইথাকার আমার ধনধান্যে পুষ্পেভরা। পিতা, তুমি
যেদিন স্বদেশ ছেড়ে হলে পরবাসী, ভ্রাম্যমাণ,
সেদিন থেকেই জানি ইথাকা নিষ্পত্র, যেন এক
বিবর্ণ গোলাপ। আমি একা কৈশোরের জ্বলজ্বলে
প্রান্তরে দাঁড়িয়ে কোন্ কাক-তাড়ুয়ার মূর্তি দেখে
ভুলে গেছি হাসি। ‘কেন আপনার ঠোঁটের দিগন্তে
হাসির হরিণ-শিশু পালিয়ে বেড়ায় অবিরত?’-
কখনো করেন প্রশ্ন ধীমান প্রবীণ সভাসদ।
বিদেশীরা রাত্রিদিন করে গোল ইথাকায়; কেউ
সযত্নে পরখ করে বর্শার ফলার ধার, শূন্য
মদের রঙিন পাত্র ছুঁড়ে ফেলে কেউ, লাথি ছোঁড়ে,
কেউ বা উত্যক্ত করে পরিচারিকাকে। মাঝে-মাঝে
কেবলি বাড়ায় হাত প্রোষিতভর্তৃকা জননীর
দিকে, যিনি কী-একটা বুনছেন সুচারু কাপড়ে
দিনে, রাতে খুলছেন সীবনীর শিল্পে। কোলে তাঁর
সুতোর বলের সাথে খেলা করে মোহন অতীত।
লুকিয়ে কাঁদেন তিনি ছড়িয়ে জলজ দৃষ্টি ধু-ধু
সমুদ্রের প্রতি, কালো বেড়ালের মতো নিঃসঙ্গতা
তাঁর শয্যা, অস্থিমজ্জা জুড়ে রয় আজো সর্বক্ষণ।
সবুজ শ্যাওলা-ঢাকা পুকুরেও ছুঁড়ে দিলে ঢিল,
সেখানে চকিতে ওঠে ঢেউ আর বাতাসের ডাকে
এমন কি পত্রহীন গাছও দেয় সাড়া, কিন্তু এই
আমার মুখের রেখা সর্বদাই নির্বিকার, তাই
পালিয়ে বেড়াই ভয়ে, পাছে কেউ জনসমাবেশে
পৌরপথে নানাবিধ প্রশ্নের পেরেক ঠুকে ঠুকে
আমাকে রক্তাক্ত করে। জানি, এ বয়সে প্রাণ খুলে
হাসাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ঘরে শক্র নিয়ে মুখে
হাসির গোলাপ-কুঁড়ি ফোটানো কঠিন। নানা জন
রটায় নানান কথা শুনি, তুমি নাকি মৃত, তুমি
সার্সির সবুজ চুলে বাঁধা পড়ে আছো, বলে কেউ।
কূলে একা বসে থাকি, কোথায় ভরসা? ঘুরে ঘুরে
প্রতিদিন ফিরে আসি অলক্ষ্যে বাড়ির সীমানায়;
দাঁড়াই যেখানে সিঁড়ি শব্দ করে জানায় চকিতে
এখন বয়স কতো বাড়িটার আর আমি নিজে
আনাচে কানাচে ঘুরি, নিরালম্ব, বিদেশীর মতো।
মনে হয়, ক্রমাগত সশব্দে আমাকে দিচ্ছে কারা
কবরে নামিয়ে শুধু; পাগুলো মাটিতে লেগে লেগে
কেমন নির্বোধ হয়ে রয়েছে তাকিয়ে, যেন ওরা
পৃথিবীতে বাস্তবিক হাঁটতে শেখেনি কোনোদিন।
তুমি নেই তাই বর্বরের দল করেছে দখল
বাসগৃহ আমাদের। কেউ পদাঘাত করে, কেউ
নিমেষে হটিয়ে দেয় কনুই-এর গুতোয় আবার
‘দুধ খাও গে হে খুকুমণি’ বলে কেউ তালেবর
দাড়িতে বুলোয় হাত। পিপে পিপে মদ শেষ, কতো
ঝলসানো মেষ আর শুয়োর কাবার, প্রতিদিন
ভাঁড়ারে পড়ছে টান। থমথমে আকামের মতো
সমস্ত ইথাকা, গরগরে জনগণ প্রতিষ্ঠিত
অনাচার, অজাচার ইত্যাদির চায় প্রতিকার।
আমিও বাঁচতে চাই, চাই পড়ো-পড়ো বাড়িটাকে
আবার করাতে দাঁড়। বাগানের আগাছা নিড়ানো
তবে কি আমারই কাজ? বুঝি তাই ঋতুতে ঋতুতে
সাহস সঞ্চয় করি এবং জীবন তুরঙ্গের
বর্ণিল লাগাম ধরে থাকি দৃঢ় দশটি আঙুলে।
কখনো এড়িয়ে দৃষ্টি ছুটে যাই অস্ত্রাগারে, ভাবি
লম্পট জোচ্চোর আর ঘাতকের বীভৎস তাণ্ডব
কবে হবে শেষ? সূর্যগ্রহণের প্রহর কাটবে
কবে? জননীর মতো চোখ রাখি সমুদ্রে সর্বদা।
ইথাকায় রাখলে পা দেখতে পাবে রয়েছি দাঁড়িয়ে
দরজা আগলে, পিতা, অধীর তোমারই প্রতীক্ষায়।
এখনো কি ঝঞ্ঝাহত জাহাজের মাস্তুল তোমার
বন্দরে যাবে না দেখা? অস্ত্রাগারে নেবে না আয়ুধ
আবার অভিজ্ঞ হাতে? তুলবে না ধনুকে টঙ্কার?
পাদটিকাঃ টেলেমেকাস গ্রীক পুরানের একজন অসহায় সন্তান যিনি পিতৃহীন ছিলেন। ইথাকা নগরী অবরুদ্ধ ছিলো দখলদার বাহিনী দ্বারা, একজন বীরের অভাব বোধ করছিলেন ইথাকা নগরীর সবাই। টেলেমেকাস তাদেরই একজন, পিতাহীন অসহায় ছিলেন তিনি, তবে দখলদারদের প্রতি ঘৃনা ও ক্ষোভ ছিলো।
কবির বিখ্যাত কবিতা স্বাধীনতা তুমির আবৃত্তি শুনুন এখানে ক্লিক করে
স্বাধীনতা তুমি কবিতার গান শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন
আজ ২৩ অক্টোবর কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন। তাঁর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলী।
বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাস। তাঁর সম্পর্কেও জানি আমরা সবাই। যা জানিনা তা হচ্ছে, জীবিত অবস্থায় কবির তেমন নাম ডাক ছিলো না। বাংলা সাহিত্যে একমাত্র কবি তিনি যিনি মৃত্যুর পরে জনপ্রিয় হয়েছেন।
পারিবারিক জীবনে অসুখী ছিলেন তিনি। ধারনা করা হয়, আনমনে ট্রামের নীচে চাঁপা পরেছিলেন তিনি। আর এতেই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী তখন সিনেমা জগত নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন।
জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন বা আবার আসিব ফিরে কবিতা কাব্য প্রেমীদের মুখে মুখে।
আমাদের এই ব্লগের নাম সোনেলা শব্দটিও এই কবির কোন এক কবিতা থেকে নেয়া।
আবৃত্তি এবং গানে কবির বিখ্যাত কবিতা:
আবার আসিবো ফিরে কবিতাটির আবৃত্তি শুনুন প্রিয় আবৃত্তিকার সৌমিত্র চট্টপাধ্যয়ের কন্ঠে
আবার আসিব ফিরে কবিতাটির গান শুনুন লোপা মুদ্রার কন্ঠে
গতকাল ২২ অক্টোবর ছিলো এই কবির মৃত্যু দিবস। কবির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
গতকাল এবং আজ আমাদের মিডিয়া এই দুজন কবি সম্পর্কে নিরব। এমনটা এই প্রথম দেখলাম।
৩৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
দু’জন মহান কবিদের জানাই বিনয়ী শ্রদ্ধা এবং আত্ত্বার মাগফিরাত কামনা করছি।তাদের মত কবি সাহিত্যিক পৃথিবীতে বার বার আসেন না।তাদের কথাতেই আমরা পথ চলি।ধন্যবাদ আপনাকে গুণী দু’জন কবিকে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
তাঁদের আত্মার মাগফিরত কামনা করছি।
খেয়ালী মেয়ে
কবিতাগুলো পরিচিত, হয়তো জনপ্রিয় কবিতা তাই পড়া হয়েছে…অথচ যারা এই জনপ্রিয় কবিতাগুলোর স্রষ্টা তাদের সম্পর্কে অনেক কিছুই আমাদের অজানা…………..অজানা কিছু তথ্য শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ..
জিসান শা ইকরাম
আপনাকেও ধন্যবাদ খেয়ালী মেয়ে।
রিমি রুম্মান
শ্রদ্ধাঞ্জলি কবিদ্বয়কে …জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন বা আবার আসিব ফিরে কবিতা যতবারই পড়ি… ততোই ভাল লাগে।
জিসান শা ইকরাম
বার বার পড়তে ইচ্ছে করে এই কবিতা।
শুন্য শুন্যালয়
কবিতাটির প্রত্যেকটি লাইন সুন্দর। আজ প্রথম পড়েছি। শ্রদ্ধা অনেক এই দুজন মহান কবির প্রতি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য। মিডিয়ার উপর এখনো ভরসা আছে? অবশ্য এছাড়া আমাদের আর গতিই কি। সময়মতো তাদের মৌনতা এখন আর ভাবায়না। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
কবিতাটিতে বঙ্গবন্ধুকে ভিন্ন উচ্চতায় দেখানো হয়েছে
যখন তিনি জাতির পিতা হননি, তখনই তাঁকে পিতা হিসেবে আস্থার প্রতীক হিসেবে দেখেছেন কবি।
মিডিয়ার উপর সামান্য আস্থা নেই এখন আর।
বন্য
প্রিয় কবি শামসুর রহমানের জন্মদিনে কবির প্রতি রইল আন্তরিক শুভচ্ছা, কবি তার কবিতায় বেচে থাক আমাদের সকলের হৃদয়ে।
তার সাথে আরেক কবিত জীবনান্দ দাসের মৃত্যু দিবসে জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি।
মিডিয়ার নিরব ভুমিকা সত্যি রহস্যজনক যে সত্যি আগে কখনো তেমন দেখা যায়নি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য। -{@
এই দুই কবির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এই পোষ্টটি ব্লগের স্টিকি নামক পোষ্টে ঝুলার অধিকার রাখে বলেই মনে করি। আশা করি ব্লগ সঞ্চালক ভেবে দেখবেন।
জিসান শা ইকরাম
একদিন হয়ত ভুলেই যাবে জাতি এনাদের নাম ।
মডুরা আমাকে ভালো জানেনা, তাই ষ্টিকি করেনি 🙁
ধন্যবাদ আপনাকে।
সঞ্জয় কুমার
কর্পোরেট শ্রদ্ধার যুগে আমরা তাদের ভুলতে বসেছি ।
জিসান শা ইকরাম
একদিন হয়ত কিছুই থাকবেনা।
লীলাবতী
শামসুর রাহমান এর কবিতাটি আজ প্রথম পড়লাম। কবিদ্বয়ের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধাঞ্জলী।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
ছাইরাছ হেলাল
আমার অত্যন্ত প্রিয় দু’জন কবি। আর সোনেলা নামটির জন্য বাংলাভাষার শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাস এর
প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা।
প্রায় বিস্মৃত আমাদের প্রচার মাধ্যম।
জিসান শা ইকরাম
আপনি এই সোনেলা নামটি নির্বাচন করেছিলেন।
প্রিয় কবি দুজনের প্রতি শ্রদ্ধা।
সাতকাহন
ভালো লাগলো জিসান ভাই, অন্তত আপনি স্মরণ করেছেন আমার অতি প্রিয় দুই কবিকে, অবশ্য জীবনানন্দের উপরই আমার পিএইচডি, জীবনানন্দের শ্রুতিকল্প নিয়ে কাজ করছি। তবে রাহমান ভাইকে খুব কাছ থেকে দেখেছি কর্মসূত্রে। তাঁর স্নে পেয়েছি, কতোদিন যে শ্যামলির বাসায় দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে তা গুণে শেষ করতে পারবো না। বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। আপনার লেখাটা পড়ে এই দুইজন সম্পর্কে ছোট্ট আলোচনা।
জীবনানন্দ সম্পর্কে:
কুড়ি দশকের কবিতার চলনের পটভূমিতে মাত্রাবৃত্তের কিছু কৈশোরিক চর্চা করলেও উল্লিখিত ঐ এগার বছরের অনুশীলন ও রচনার মধ্যে জীবনানন্দ বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর মনের স্বাভাবিক সুর বিলম্বিত অক্ষরবৃত্তের উত্থান-পতনে নয় বরং ধীরে নুয়ে পড়ে পাথর এড়িয়ে জলের মতো ঘুরে ঘুরে। কেউ কেউ ইশারা দিয়েছেন যে এই ধ্বনির পূর্বসূত্র রবীন্দ্রনাথের কৈশোরিক রচনা তারকার আত্মহত্যা (সন্ধ্যাসঙ্গীত) কবিতায় নিহিত।
এ পুনরুদ্ধারের সায় আমার কানে বাজে না বরং এটাই বোধহয় অধিকতর সত্য যে, জীবনানন্দের মনের স্বাভাবিক মন্থরতার সুর যৌবনের ইয়েটসের কবিতার মেজাজ ও শ্রুতির সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলো। The Falling of the leaves, Ephemera, Down by the Salley Gardens (Crossways, 1889); The White Birds,(The Rose, 1893); The Lover Tells of the Rose in His Heart, He Reproves the Curlew, The Valley of the Blank Pig (The Wind Among the Reeds)-ইয়েটসের এই কবিতাগুলোয় জীবননান্দীয় বিলম্বিত সুরের ইংরেজি রূপ শোনা যায়। ইংরেজি উচ্চারণ অবশ্য ফরাসি বা ফারসি ভাষার স্বরবর্ণবাহিত টানা সুর মেনে চলে না বরং স্বর প্রক্ষেপনের ধাক্কায় গড়িয়ে চলে। এই ‘স্টোকাটো’ প্রক্ষেপের চলন এবং বৈচিত্র্য পাওয়া যাবে এলিয়টের কবিতায়।
তুলনামূলকভাবে উনিশ শতকের শেষ দশকের ইয়েটসের কবিতার (অন্তত উল্লেখিতগুলোর) ধ্বনি অনেক ঢিলে। জীবনানন্দ কি মনে মনে আরো ঢিলে করে পড়েছিলেন এ কবিতাগুলো; এই কবিতার বাক্যগুলোর ভিতরে ড্যাশ ভরে ভরে? বুঝেছিলেন বাঙলা কবিতায় এই সুর, আরো বিলম্বিত সুর ব্যবহারের সম্ভাবনা এবং প্রতিশ্রুতি? ইঁদুর, চাঁদ, হেমন্ত, ঘোড়া, চিল, শিশির, বুনোহাঁস, ঝরাপাতা-জীবনানন্দের বহুল ব্যবহৃত এইসব উপকরণও লক্ষ করা যাবে ইয়েটসের কবিতায়। অবশ্য এ তাঁর নিতান্ত পাঠজনিত উপলব্ধি নয়।
বরিশালের শহরপ্রান্তের বাইরে কুড়ি দশকে তিনি এইসব দেখেছিলেন, শুনেছিলেন, ছুঁয়েছিলেন, ঘ্রাণ নিয়েছিলেন। জীবনানন্দ অনুভব করেছিলেন, আবিষ্কার করের্ছিলেন কথ্য ভাষাকে কীভাবে ব্যবহার করলে, তৎসম শব্দের উচ্চারণ কীভাবে বিশ্লিষ্ট করলে বাঙলা উচ্চারণে ইয়েটসীয় আইরিশ কবিতা-সুর মেকন করে আরো গভীর, প্রগাঢ় ও মর্মভেদী হয়ে ওঠে। হৃদয়স্পর্শী হয়ে ওঠে স্মৃতি এবং প্রকৃতিসম্পৃক্ত বিষয় কবিতায় উদ্ভাসিত করতে গেলে।
শামসুর রাহমান সম্পর্কে:
তিরিশের কবিদের তৈরী শক্ত ভিতে পা রেখেই শামসুর রাহমান পঞ্চাশের দশকে কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রাথমিক দু-একখানা কবিতায় জীবনানন্দের ভাষা-সুর মাখা আছে। চতুর্থ কব্যগ্রন্থ ‘নিরালোকে দিব্যরথ’-এ কিঞ্চিৎ বিষ্ণু দে’র প্রতিধ্বনি রয়েছে। তাঁর নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গের সময়ে, রাহমানের যার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নাড়ীর যোগ, অন্তত ভাষা-বচন-সুর-ছন্দ প্রসঙ্গে, তিনি বুদ্ধদেব বসু। কিন্তু কোন বুদ্ধদেব বসু? তিনি ‘শীতের প্রার্থনা বসন্তের উত্তর’-এর ‘মৃত্যুর পরে : জন্মের আগে’ এবং ‘শীতরাত্রির প্রার্থনা’-র কবি বুদ্ধদেব বসু। ‘মৃত্যুর পরে জন্মের আগে’র দুটি শব্দও তিনি ব্যবহার করেছেন তাঁর প্রথম বইটির নামকরণে। ‘বিধ্বস্ত নিলীমা’ শব্দ দুটিও বুদ্ধদেব বসুর ‘যে আঁধার আলোর অধিক’-এর অন্তর্গত’ ‘অসহনীয়’ নামে একটি সনেটের শেষ শব্দদ্বয়। আরেকটু বিশদ করে বলা দরকার। জীবনানন্দের তাকিয়ে দ্যাখা, বোধ, কবিতার এবং এগুলোর উদ্ভূত এবং অঙ্গাঙ্গী জড়িত ভাষা এতো নিজস্ব যে ওই পথে অন্য কারুরই বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। বিষ্ণু দে’র ছন্দের লয়কারীর চলনও এতো মেজাজী এবং ঘরনাদার যে মাত্রাবৃত্তের ঐ বাজনাও তিনি একাই বাজিয়েছেন। সুধীন্দ্রিয় সংগীতের দাবী তৎসম শব্দের স্বায়ত্ব-শাসন এবং মাত্রার সূক্ষ্মাতিতম বিচার বুদ্ধি, এটিও মেজাজ ও পরিশ্রম সাপেক্ষ।
পঞ্চাশের এই পটভূমিকায় বুদ্ধদেব বসু যে আল ধরে চলছিলেন, অন্তত ভাষা-ধ্বনির দিক থেকে, শামসুর রাহমান একই ভূগোলের পথ বেছে নিলেন। তাঁর অন্তরের টান মাঝামাঝি লয়ের অক্ষরবৃত্তে। জীবনানন্দের অতি বিলম্বিত লয়ে ঢুলে পড়েন না তিনি, আবার সুধীন্দ্রিয় তৎসম শব্দের ঝংকারেও ধ্বনিত হন না। প্রথম থেকেই ‘খাচ্ছি, দাচ্ছি, আছড়ে পড়ছে, ঢুকে পড়ে, বসতে দিন, ধান ভানো’ এই জাতীয় ক্রিয়াপদ ব্যবহার্য ধ্বনি-সুর-লয়কে কায়েম রেখেছেন।
জিসান শা ইকরাম
ভাই আপনি এই মন্তব্যটিই একটি পোষ্ট দিন এখানে।
দারুন বিশ্লেষন করেছেন।
জীবনানন্দের উপরই আপনার পিএইচডি জেনে ভালো লাগলো।
সম্ভব হলে মাঝে মাঝে কিছু শেয়ার করুন এই কবি সম্পর্কে
জানার খুব ইচ্ছে আমার।
সাতকাহন
কাজ পুরো শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাবলিশ করা নিষেধ ভাই।
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা, বুঝেছি 🙂
ব্লগার সজীব
প্রিয় কবি দ্বয়কে শ্রদ্ধা জানাই অন্তরের অন্তস্থল থেকে।
জিসান শা ইকরাম
এনারাই আমাদের বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়েছেন বহুদুর ।
মোঃ মজিবর রহমান
দুই জন বাংলার প্রিয় কবি বেঁচে থাকবেন কবিতা প্রেমিদের মাঝে।
জিসান শা ইকরাম
এনারা আমাদের মাথার তাজ হয়ে থাকবেন।
শিপু ভাই
জীবনানন্দ সম্পর্কে মূল্যায়ন করার মত বিদ্যাবুদ্ধি আমার নাই। আমি স্রেফ তার কবিতা পড়ে অভিভূত হই।
শব্দ ছন্দের এমন চমতকার কারুকাজ আমি খুব কম কবিদের মধ্যেই দেখেছি। সবচেয়ে দারুন ব্যাপারটা হল উনি ঐ সময় রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত হয়ে কবিতা লিখতে পেরেছিলেন।
বাংলা ভাষার প্রথম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাস।
পোস্ট খুবই ভালো লাগলো মামা। ++++++++++++++++
জিসান শা ইকরাম
শিপু ভাইকে দেখে চমকে উঠলাম।
আমার ব্লগে প্রথম মন্তব্য করার জন্য শুভেচ্ছা।
জীবনানন্দ দাস আসলেই একজন অদ্ভুত সুন্দর কবি।
যার লেখা বারবার পড়তে ইচ্ছে করে।
ধন্যবাদ মামা 🙂
শিপু ভাই
এখন থেকে নিয়মিত হবো ইনশাল্লাহ!!!
জিসান শা ইকরাম
আলহামদুলিল্লাহ 🙂
কিছুটা সময় এখানে দেই আমরা।
অলিভার
বিস্তর জানাশোনা নেই আমার, আপনাদের বদৌলতেই জানতে পারছি অনেক কিছুই।
ধন্যবাদ বেশ কিছু মূল্যবান জিনিষ আমাদের উপহার দেবার জন্যে -{@
কবি দ্বয়ের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ অলিভার, আসলে তেমন কিছু আমিও জানিনা।
মেহেরী তাজ
শামসুর রাহমানের এই কবিতাটি পড়িনি আগে। জীবনানন্দ সম্পর্কে নুতন কিছু জানলাম। জানার ইচ্ছে থেকেই বলছি, রূপসী বাংলার কবি সম্পর্কে আরো লিখুন ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
চেষ্টা করবো লিখতে আরো।
শাহরিন আক্তার মুক্তা
ছোট বেলায় তাদের লেখা কিছু পরেছিলাম, কিছু বুঝিনি তবে আজকে সবার পরে ভাল লাগলো। আল্লাহ উনাদের বেহেশত নসীব করুক, আমীন।
জিসান শা ইকরাম
এতদিন পরে এই পোষ্ট খুঁজে পেলে কিভাবে?
নাকি গুগলে সার্চ দিয়ে পেয়েছ এই পোষ্ট।
পড়ার মধ্যে থেকো।
শুভ কামনা।