আমার ফেসবুকে একজন নাইজেরীয় প্রবাসী বান্ধবীর টাইমলাইনে আজ একটি লেখা পড়লাম। তিনি তার ছেলের স্কুলের চেয়ারম্যান মহোদয়ের একটি ই-মেইল নিয়ে লিখেছেন । তার ছেলে নাইজেরীয়ায় যে স্কুলে লেখা-পড়া করে সেখানে টিউশন ফি সারা বছরের টাকা এককালীন স্কুলের ব্যাংক হিসেবে জমা দিতে হয়। তিনি লিখেছেন, শুধুমাত্র প্লে-তে টিউশন ফি বছরে বাংলাদেশী টাকায় ১৫ লাখ টাকার মতন। উনার ছেলে নবম শ্রেনীতে পড়ে। তার বাৎসরিক টিউশন ফি আরো বেশী। একই খরচে নাইজেরীয়ানরাও তাদের তিন চারজন বাচ্চাদের পড়াচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাচ্চারা সেই স্কুলে লেখাপড়া করে। এই টাকার বাহিরে আর কোন খরচ স্কুলে দিতে হয় না। এক কথায় সেরা মানের একটি স্কুল।

স্কুল চেয়ারম্যান মিস্টার দারউইশ ফুদেহ মেইলে যা লিখেছেন তার কিছু অংশ ‍তার লেখা থেকে তুলে ধরছি-
পুরো মেইলে মিস্টার ফুদেহ করোনার জন্য এই যে মানুষের ব্যবসা, চাকরি, পুরো অর্থনীতি ভেংগে পড়েছে তা নিয়ে বার বার দুঃখপ্রকাশ করেছে, আফসোস করছে, সমবেদনা জানাচ্ছে।

মিস্টার ফুদেহ লিখেছে, অনেক প্যারেন্টস হয়তো চাকরি হারাবে, ব্যবসা পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু মিস্টার ফুদেহ এও বলেছেন, যে প্যারেন্টদের সমস্যা হবে চাকরিতে, ব্যবসায়, তারা যেনো অবশ্যই স্কুলের কমিটিকে জানান। মিস্টার ফুদেহ নিজে চেষ্টা করবেন, এবং যে সকল প্যারেন্টদের সাধ্য আছে জবে হেল্প করার তারাও যেনো করেন সেই আহবান করেছেন বার বার।
যেহেতু স্কুলের পুরো এক বছরের টাকা তারা নতুন সেসন শুরুর আগেই দিয়ে দেন,এরপর পুরো বছর আর এক টাকাও দিতে হয়না, তাই বাচ্চাদের এক বছরের সকল কার্যক্রম ও এই টাকার মধ্যেই। বাচ্চাদের লাঞ্চ স্কুল থেকে দেওয়া হয় এই টাকার মধ্যেই, এক্সট্রা কারিকুলাম থাকে এই টাকার মধ্যেই। যেহেতু ফাইনাল টার্মে লাঞ্চ আর এক্সট্রা কারিকুলাম স্কুলে করতে পারছেনা, তাই মিস্টার ফুদেহ লাঞ্চ আর এক্সট্রা কারিকুলামের টাকা ফেরত দিবেন।

মেইলের লাস্ট প্যারা পড়ে তিনি আরো অবাক হয়েছেন। মিস্টার ফুদেহ এর প্রতি আরো শ্রদ্ধা, ভালোবাসা বেড়ে গেছে। উনি বলেছেন, যখন স্কুলের নতুন সেসন সেপ্টেম্বরে শুরু হবে, এরমধ্যে অনেক প্যারেন্টস মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন, অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবেনা এই স্কুলে পড়ানো, কিন্তু মিস্টার ফুদেহ কোন বাচ্চাকেই হারাতে চান না। উনি বলেছেন, যদি কোন প্যারেন্টস তার বাচ্চার নতুন সেসনের পুরো টাকা জমা দিতে না পারেন তাহলে তারা যেনো অবশ্যই মিস্টার ফুদেহের সাথে যোগাযোগ করেন। উনি তাদের ডিস্কাউন্ট দিবেন, প্যারেন্টদের ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দিবেন।
এই ছিলো ই-মেইলের ভাষা।

আমি তার লেখাটি পড়ে স্কুল চেয়ারম্যান মিষ্টার ফুদেহ এর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি। উনাকে স্যালুট করি বর্তমানে করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বকে লন্ডভন্ড করার পরও তিনি তার স্কুলের একটি বাচ্চাকেও হারাতে চান না বলে।

অথচ আজ ৭১’টেলিভিশনে উপস্থাপিকা মিথিলা পারভীনের এক টকশোতে শুনলাম বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়াম্যানরা আগামী টিউশন ফি কিভাবে আদায় করা যায় তার একটি পরিকল্পনা করছেন। গত মার্চ থেকে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। যা আগামী ৩০শে মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। উপস্থিত টকশোতে দুইজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকও ছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিলো প্রতিষ্ঠান ভবনের ভাড়া,কর্মচারী,শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি সহ অন্যান্য খরচ এই টিউশন ফি দিয়ে মিটিয়ে থাকেন।
ইত্যাদি ইত্যাদি।

করোনাত্তোর বেশী সমস্যায় পড়বেন আমাদের মতন মধ্যবিত্ত পরিবার ও পরিববারভুক্ত সদস্যরা। যাদের আয়ের উপর নির্ভরশীল গোটা পরিবার। এই শ্রেনীর মানুষগুলো সবচেয়ে অসহায় ও সহনশীল। তারা না পারেন মুখ ফুঁটে কিছু বলতে না পারেন কোথাও হাত পেতে কিছু নিতে। বৈশ্বিক এই মহামারীর কথা চিন্তা না করে রক্তচোষা মানুষগুলি আমাদের মতন মধ্যবিত্ত পরিবারের উপর যদি সহায় না হয় তবে আমাদের সন্তানদের লেখা-পড়ায় বিরাট আঘাত আনবে। এমনও হতে পারে অনেক বাচ্চারা ঝরে যেতে পারে। স্কুল পর্যায়ে আঘাত না আসলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ুয়া আমাদের সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবার আশাংকা সবচেয়ে বেশী।

এবার আপনারাই মিস্টার ফুদেহ বনাম বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মন-মানসিকতার প্রার্থক্যটা খুঁজে দেখুন।

রঙিন জামা চকচক করিলেই স্থায়ী হয় না। স্থায়ীত্বের জন্য চাই প্রয়োজনীয় যত্নাদি। নইলে শুঁয়ো পোকা কেঁটে দিবে।
সবাই ভালো থাকুন।

0 Shares

১৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ