Tom and Jerry

শামীম চৌধুরী ১০ আগস্ট ২০২১, মঙ্গলবার, ০২:৪৭:৪৪অপরাহ্ন সমসাময়িক ১২ মন্তব্য

 

কোন জাতিতে একজন নেতার অকাল মৃত্যু হলে সেই জাতি ১০০ বছর নেতা শূণ্য থাকে। তদ্রুপ বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করলে সেই জাতিতে নীতিনির্ধারকের অভাব ঘটে।

 

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী রাজাকার ও আল-বদরের সহায়তায় আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিদের বেঁছে বেঁছে হত্যা করে। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর। আজও আমরা বুদ্ধিজীবিহীন রাষ্ট্রে  নীতিনির্ধারকদের অভাব অনুভব করছি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রতিটি মুহুর্তে।

 

এবার আসা যাক মূল গল্পেঃ

================

২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম দেশে করোনা ভাইরাস দেখা দেয়। তারপর থেকে করোনা প্রতিরোধের জন্য সরকার নড়ে চড়ে বসে । স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে দেশে দেয়া হয় লকডাউন। যা বেশ কয়েক মাস দীর্ঘায়িত হয়। শর্ত সাপেক্ষে র্জীবন ও জীবিকার জন্য ধীরে ধীরে সব কছিু স্বাভাবিক করা হয়। এসবই পাঠকদের জানা।

 

মোটামোটি সবকিছু ভালো ভাবেই চলছিলো। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের কর্ম ব্যাস্ততা বেড়ে যায়। শিল্প কারখানা থেকে শুরু করে পর্যটনের স্থান গুলি এক সময় উম্মুক্ত করা হয়।

 

এ বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনার ২য় ঢেউ শুরু হয়। যার পূর্বাভাস স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিয়েছিলেন। এখানেও শর্ত সাপেক্ষে মানুষের চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়। যার মূল বিধি হলো মাস্ক পরিধান করা। অথচ দেশের মানুষের উদাসীনতায় বা অসচেতনতায় আমরা কেউ মাস্ক পরিধানে আগ্রহী নই। যার ফলে দেশে হু হু করে ভাইরাসের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। সরকার বাধ্য হয়ে আবারও কঠোর লকডাউনের ব্যাবস্থা করেন।

 

সরকার ঘোষিত লকডাউনে যে প্রজ্ঞাপন জারী হয় তা নির্ধারন করেন নীতিনির্ধারক বা বুদ্ধিজীবিরা। তারা যা সরকারকে বুঝান সরকার সেটাই বাস্তবায়ন করেন। আর এটাই হচ্ছে ধ্রুব সত্য। এখানে সরকারের কোন হাত নেই। নীতিনির্ধারকরাই নিয়ম-নীতির একটা ছক এঁকে দেন। সরকার সাধারন জনগণকে সেই ছকে বেঁধে রাখেন। ২৩শে জুলাই থেকে ১০ই আগষ্ট পর্যন্ত টানা লকডাউন ছিলো সারা দেশে। ফলাফল কি তা পাঠকরাই ভালো বলতে পারবেন।

 

আগামীকাল ১১ই আগষ্ট থেকে সবকিছু খুলে দিচ্ছে। এখানেও নীতিনির্ধারকরা ছক করে দিয়েছেন। তাদের ছকের একটা নমুনা তুলে ধরছি।

 

নীতিনির্ধারকদের কাছে জাতির ছোট্ট  একটি প্রশ্ন।

আপনরা কি বলতে পারেন করোনা কে ছড়ায় বা বহনকারী কে?

অথবা বলুনতো যানবাহন বা গণপরিবহন কি করোনা ছড়ায়?

জাতি জানে নীতিনির্ধারক বা বুদ্ধিজীবিদের কাছে এর উত্তর পাওয়া যাবে না।

তাহলে গণপরিবহন সেক্টর আপনাদের এতো রোষানলে কেন ?

এই সেক্টরের কোন চালক বা হেল্পার সংসদ সদস্য নেই বলে?

আজ পোষাক বা অন্যান্য শিল্পের মতন যদি কেউ গণপরিবহন থেকে সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতেন, তাহলে কি পারতেন এই সেক্টর মাসের পর মাস বন্ধ রাখতে? জাতি জানে পারতেন না।

 

ঢাকা শহরে প্রায় ৩.৫ কোটি লোকের বসবাস ও চলেফেরা। যার শতকরা ৯৮ জন জীবিকার জন্য গণপরিবহনে যাতায়ত করেন। দেশের বুদ্ধিজীবি বা নীতিনির্ধারকরা সরকার বাহাদুরকে বুঝালেন গণপরিবহন করোনা ছড়ায়। তাই যে সংখ্যক গণপরিবহন রোজ রাস্তায় চলাচল করে তার অর্ধেক চলবে। তাতে সংক্রমন কমবে।

 

বাহ! চমৎকার একটা ‍সমাধান দিলেন।

একবার কি ভেবেছেন, কর্মস্থল খোলা রেখে গণপরিবহনের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনে মানুষের দূর্বিসহ কষ্টের কথা?

যদি ভাবেন, তবে অফিস আদালতে মানুষের উপস্থিতি কেন অর্ধেক করলেন না? ৯৮ জন মানুষ কি এই অর্ধেক যানবাহনে স্বাচ্ছন্দ্যে বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়ত করতে পারবেন?

এ কেমন আপনাদের নীতিনির্ধারন?

 

কয়েকদিন পর দেখা যাবে, আপনাদের এই নীতির কারনে দেশে হু হু করে করোনা সংক্রমন বাড়ছে। আবারও সরকার বাহাদুরকে কঠোর লকডাউনের পরামর্শ দিবেন। জনগণের সঙ্গে আপনাদের “টম এন্ড জেরী” খেলা চলতেই থাকবে। তার চেয়ে লাভজনক হবে দেশের শতকরা ৮০ জন মানুষকে টিকার আওতায় আনা। সেটা কি করে করা যায় তা নিয়ে নীতিনির্ধারন করুন। দয়া করে আমাদের এই “টম এন্ড জেরী” খেলা থেকে রেহাই দিন। সাধারন মানুষকে দূর্বিসহ কষ্ট থেকে সহজ সরল ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার দিন।

 

সবাই মাস্ক পড়ুন। সংক্রমন থেকে নিজে বাঁচুন অন্যকেও বাঁচার সুযোগ দিন।

সবাই ভালো থাকুন।

0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ