আমাদের সোনেলার প্রিয় লেখক রিতু জাহান, যিনি সোনেলাকে ধারণ করেছেন ভালোবাসায়, হৃদয়ের মনি কোঠায়। তার লেখা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। একজন পরিপুর্ন ব্লগারের সমস্ত বৈশিষ্ট ই দেখতে পাওয়া যায় তার লেখার মাঝে। তার বড় সন্তান জুবায়ের আফতার মেমন। ক্যাডেট কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্র। বিভিন্ন বিষয়ে তার অগাধ উৎসাহ। এরমধ্যে সাহিত্য চর্চা অন্যতম। ইতিপূর্বে রিতু মেমনের কয়েকটি লেখা সোনেলায় প্রকাশ করেছেন। এবারের বই মেলায় এই কিশোরের একটি গল্পগুচ্ছ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা সোনেলার পক্ষ থেকে এই কিশোরকে জানাই অফুরান ভালোবাসা ও শুভ কামনা।

" জুবায়ের আফতার মেমন। বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশ করা নিঃসন্দেহে একটি গর্বের বিষয়। তার বইয়ের নাম মেমনের গল্পগুচ্ছ। নয়টি গল্প নিয়ে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। এটি তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। বইটি যখন আমাকে পড়তে দেওয়া হয় খুব আগ্রহ সহকারে সবক’টি গল্পই পড়েছি। বাংলা সাহিত্যের অনেকেই এই বয়সে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ দেখিয়েছেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে বিশ^ কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ‘অভিলাষ’ নামে একটি কবিতা লিখেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম ‘ভোর হলো’ কবিতাটি লিখেছেন যখন তিনি চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলের ছাত্রাবস্থায় জীবনানন্দ দশের প্রথম কবিতা “বর্ষ-আবাহন” ব্রক্ষবাদী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আর সুকান্ত তো মাত্র একুশ বছর বয়সে বাংলা কবিতায় অগ্নি সংযোগ করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন। বিশ^ সাহিত্যে রবিন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্তের মত অনেক বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক অল্প বয়স থেকেই সাহিত্যে উৎকর্ষ সাধন করেছেন। সাহিত্যের নিগুঢ় নির্যাস জন্মের পর থেকে এদের মজ্জাগত হয়েছে। এরা হয়ে উঠেছেন অমর সাহিত্যিক। যুগের পর যুগ পঠিত হচ্ছে তাঁদের মহামূল্যবান সাহিত্য কর্ম। সকালের সূর্য দেখলে একটি দিন কেমন যাবে তা যেমন বলা যায়, তেমনি বিখ্যাত সাহিত্যিকদের বাল্যকালে সাহিত্য সৃষ্টি দেখেই বুঝা গিয়েছিল অনাগত দিনে তাদের হাত ধরে স্ব স্ব সাহিত্য সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভবনা। তবে বাল্যকাল বা কিশোর বয়সে সাহিত্য চর্চার প্রতি অনুরাগ আমাদের দেশে কমে যাচ্ছে। আমরা আধুনিক থেকে উত্তর আধুনিক হতে না হতেই পুরো সমাজ ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড হচ্ছে। আমাদের কিশোর-তরুণদের কল্পনাশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি ও বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। সৃজনশীলতার অভাব দেখা দিচ্ছে তাদের মাঝে। ভার্স্যুয়াল জগত তাদের সৃষ্টিশীলতাকে গ্রাস করছে। ঠিক এ সময় মেমনের বয়সের একজন কিশোরের সাহিত্য চর্চা নিঃসন্দেহে আমাদের আশান্বিত করেছে। মেমনের গল্পগুলো পড়লে কেউই বলবে না এটি নবম শ্রেণী পড়ুয়া একজন কিশোরের লিখা। অত্যন্ত সাবলিল ও স্বতঃম্ফুর্ত ভাষায় প্রতিটি গল্প লিখেছে মেমন। শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে সে। ছোট গল্পের প্রধান উপজিব্য হচ্ছে একটি মাত্র আবেগ। এটি অনেক আবেগ ধারণ করতে পারে না। করলে সেটা ছোটগল্প হয়ে উঠে না। মেমন তার প্রতিটি গল্পে অত্যন্ত সুচারুরুপে কাজটা সম্পন্ন করতে পেরেছে। সব লেখকই নিজের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, পর্যবেক্ষণ ও আবেগকে কল্পনা মিশিয়ে কাজে লাগান তাদের সাহিত্য কর্মে। যদিও প্রকাশিত হবার পর এগুলো আর লেখকের নিজস্ব থাকে না। এগুলো নৈর্ব্যক্তিকে রূপ নেয়। মেমনের প্রতিটি গল্পই নিজের জীবনের গল্প। গল্পগুলোতে আবেগ থাকলেও কল্পনা একেবারেই অনুপস্থিত। এগুলোতে তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনা আর পর্যবেক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মাত্র। তবুও সেগুলো পাঠ করা সুখকর। সবচেয়ে বড় কথা এই গল্পগ্রন্থের কয়েকটি গল্পে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চমৎকারভাবে প্রয়োগ করেছে মেমন। এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হতে খুব কমই দেখা যায়। মেমনের গল্পে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে শৈল্পিকভাবে চিত্রায়িত হয়েছে অনেক পরিণত বয়সের লেখকও তা করতে পারে না। ছোটগল্প হলেও গল্পগুলোর প্রতিটি চরিত্রই পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হয়েছে। এখানেই গল্পকার হিসেবে মেমন সার্থক। নিশ্চই মেমন একদিন দেশের প্রধান ছোটগল্পকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিশোর বয়সে সে যে প্রতিভার প্রমান দিয়েছে, আমরা আশা করি একদিন সে ছোটগল্পের স¤্রাট হিসেবে আবির্ভূত হবে। একুশে বই মেলায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘এবং মানুষ প্রকাশনী’ এটির প্রকাশক। প্রচ্ছদ এঁকেছেন এম আসলাম লিটন। জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী বইটির পরিবেশক। একুশে বইমেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে।''
অনলাইন পত্রিকা দৈনিক বাহান্নর আলোর রফিক সরকার এর প্রতিবেদন থেকে রিভিউটি নেয়া হয়েছে। 

বই মেলায় এবং মানুষ স্টল # ৪৫ বহেরাতলা(বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন) ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনীর স্টল #৬১৭ তে পাওয়া যাচ্ছে।

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ