আমি চিরকাল পৃথিবীর সৌন্দর্য-মাধুর্যকে উপভোগ করেছি নিজের মতন করে। শুধু আমি নই মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করা প্রতিটি ব্যক্তির জন্য এই কথাটি একটি অধিকারের মতন। নিজস্ব কল্পনার জগতে আবেগের স্নিগ্ধ গম্ভীর প্রকাশে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ- তার চোখ দিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখবে এটাইতো স্বাভাবিক। কিন্তু কতদিন? জীবন সায়াহ্নে জরা বার্ধ্যক্যের আধিপত্যে মৃয়মান হয়ে পড়া এসব প্রেম সৌন্দর্যের তীব্র অনুভূতিরা ক্ষীয়মান হয়ে পরে একসময়। যেতে হবে, যেতে হয়- এই প্রিয় জগৎ ও জীবনের রসবিহারের ক্ষমতা একটা সময় স্থিমিত হয়ে পড়ে। জন্ম-মৃত্যুর তান্ডব নৃত্যের সেই অমোঘ স্বপ্নজালকে অস্বীকার করার সাহস, প্রবৃত্তি কোনটাই আমার নেই।
বিশ্বপ্রকৃতির সব প্রাণে প্রবাহের একটা রুপান্তরের লীলাখেলা চলছে। সন্ন্যাসী বৈশাখের পরে আসে সজল শ্যামল মেঘমায়ার অজস্রধারা বর্ষণ। এ যেন সন্যাসী বৈশাখের সাথে মিলন হয় বর্ষার। ঠিক তেমনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয় চির সবুজ প্রাণকেও। জীবনের সোনালী আলোর স্বপ্নগুলো মিলিয়ে যায় হেমন্তের ধূসর ঘোমটার আড়ালে।
মানুষের জীবনে বয়সঋতুর আনন্দময় পরিবর্তনই চরম পরিচয় নয়। শৈশব, কৈশর,যৌবন, জরা-বার্ধক্য আনন্দময় জীবনের একটি রূপান্তর মাত্র। যাকে আমরা অনেকেই স্বীকার করিনা বা করতে চাইনা। এর কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের দেখার চোখকে এবং এর সৌন্দর্যকে কখনোই ভুলতে পারিনা আর নিজেদের জীবন থেকে কখনো হাড়াতেও চাইনা। আমাদের মনুষ্যপ্রকৃতি শৈশবকালের আনন্দ প্রবৃত্তিগুলোকে কিংবা যৌবনের নিত্য বসন্তকে বার্ধ্যক্যের আড়ালে চাপা দিতে রাজি হয়না। জীবন যৌবনের আনন্দ প্রবৃত্তিগুলো ক্ষণিকের জন্য হয়তো আবৃত হয় কিন্তু জরা-বার্ধক্যের চিরন্তন এই সত্যকে কিছুতেই চিরতরে মেনে নিতে চায় না।
সৃষ্টি হলে তার ধ্বংস হবেই। সৃস্টিকর্তার এ লীলাখেলায় নৃত্যের গতিতে একবার ধ্বংস হচ্ছে আর নবসৃষ্টির উদ্যামতায় জেগে উঠছে মহাকাল। গড়ের মাঠে সবাই জড়ো হয়ে দেখছি ভাঙা-গড়ার উৎসব। যেন এক অদৃশ্য মায়া মোহতায় আবিষ্ট হয়ে আছি আমরা। ক'জনইবা মনে রাখি - ভবের এ খেলায় একদিন সাঙ্গ হবে? গড়ের মাঠেই ঢলে পড়বো একে একে সবাই। নিস্তার নেই, পৃথিবীর মায়া মমতা সব এক নিমিষেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। হয়তো এখনই এই মুহূর্তটিই সে নির্ধারিত সময়, কে জানে?
যৌবনের আনন্দ উদ্বেলিত চোখে একরাশ রঙিন স্বপ্ন বিভোরতায় আমরা ভুলে যাই, দিনে দিনে নিজেরা এগিয়ে যাচ্ছি এক অমোঘ সত্য -মৃত্যুর দিকে। রিপুর তাড়নায় বিশ্বাস গেঁথে যায় মনে- মহাকালের এ আনন্দ নৃত্যের উদ্দামতা, সৌন্দর্য-মাধুর্য সোচ্ছল দিনগুলি যেন কোনদিনও শেষ হবেনা। কিন্তু এটাও যে সৃষ্টির এক অভিনব লীলা।
অবিনস্বর সৃষ্টিকারী সব দেখেন আর আমাদের কর্মকান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসেন। মানুষ আমরাতো আসলে কালের রাখাল। রাখাল যেমন সন্ধ্যাকালে বংশীধ্বনি করলে চরণরত সমস্ত গরু গোয়ালায় ফিরে আসে তেমনি আমাদের কানে যখন প্রলয়ের শিঙার আওয়াজ প্রবেশ করবে, চরণরত গরুর মত আমাদেরকেও প্রত্যাবর্তন করে সৃষ্টিকর্তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে। হায়! যদি শুনতে পেতাম সে ধ্বনি!
যৌবনকে, জীবনের বসন্ত উৎসবকে- কেউ চিরদিন রুদ্ধ করে রাখতে পারেনি আর পারবেও না। বার্ধক্যকে কিছুকাল যৌবনাবরণে আবদ্ধ করে রাখা যায় সত্যি কিন্তু কতদিন? একসময় দিগুণ শক্তিতে জরা এসে ধরা দেয় আমাদের মাঝে। তাকে আবদ্ধ করে রাখার শক্তি যে ইশ্বর আমাদের দেননি।
তবুও বিশ্বাস করি- ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষে অপেক্ষারত আমি অপার সুখাশ্রমে পতিত হবো একদিন। অকাল বসন্তের আবির্ভাবে আমি হব চিরতরুণ কিংবা যুবা। বিশ্বপ্রকৃতির চিরন্তন সত্য রূপান্তরকে মেনে নিয়ে শীতের উত্তর-বাতাসে বিকীর্ণ, শীর্ণ, জীর্ণ-পাতার শ্মশান শয্যাকে পায়ে ঠেলে শুরু করব অকাল বসন্তের সে নবীন যাত্রা। অজস্র পুষ্পসমারোহে নন্দনের সংগীত গাইতে গাইতে আমি হয়ে উঠবো প্রেম সৌন্দর্য উপাসক। সেদিন সৃষ্টিকর্তাকে বলবো- হে লীলারসিক! বুঝতে পারিনি ক্ষণিকের পৃথিবীতে এও যে তোমার এক অভিনব খেলা। তুমি ধ্যানের নিঃশব্দতার মধ্যে আমায় সংহরণ করে নিয়েছো। এ কোন নীলাবশে আজ বাহ্যদৃষ্টিতে তুমি আমায় এমন নিঃস্ব করেছো?
চারিদিকের আকাশ বাতাস আজ আঁধারে আচ্ছন্ন, শূন্যতার দীর্ঘশ্বাসে অশ্রুবাষ্পাকুল এ পরিবেশে মানিয়ে নেবার শক্তি দাও- হে পরমেশ্বর!
২৭টি মন্তব্য
মোস্তাফিজুর খাঁন
” বিশ্বপ্রকৃতির সব প্রাণে প্রবাহের একটা রুপান্তরের লীলাখেলা চলছে। সন্ন্যাসী বৈশাখের পরে আসে সজল শ্যামল মেঘমায়ার অজস্রধারা বর্ষণ। এ যেন সন্যাসী বৈশাখের সাথে মিলন হয় বর্ষার। ঠিক তেমনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয় চির সবুজ প্রাণকেও। জীবনের সোনালী আলোর স্বপ্নগুলো মিলিয়ে যায় হেমন্তের ধূসর ঘোমটার আড়ালে। ”
আপনাদের লেখা পড়ে অনেক কিছু শিখছি । ওপরের এই অংশটা আমাকে মুগ্ধ করেছে,,, ভাইয়া ।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই। সোনেলায় অল্প সময়ে আপনার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতন। লিখুন আপনার মনের মতো করে।
শুভকামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
উপস্থিতি জানান দিলাম। আবার আসবো ফিরে এ হৃদয়ের পাতায়।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই। আসুন অপেক্ষায় থাকবো। আর হ্যা দুইটা বাবা আর হাকিমপুরী জর্দা দিয়ে পান আনবেন কিন্তু।☺☺
মনির হোসেন মমি
হাকিমপুরী !! ভাগ্যিস কাচঁপুরী কন নাই!!
তৌহিদ
কাঁচপুরী জর্দাও আছে নাকি ভাই??
প্রদীপ চক্রবর্তী
তবুও বিশ্বাস করি- ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষে অপেক্ষারত আমি অপার সুখাশ্রমে পতিত হবো একদিন। অকাল বসন্তের আবির্ভাবে আমি হব চিরতরুণ কিংবা যুবা। বিশ্বপ্রকৃতির চিরন্তন সত্য রূপান্তরকে মেনে নিয়ে শীতের উত্তর-বাতাসে বিকীর্ণ, শীর্ণ, জীর্ণ-পাতার শ্মশান শয্যাকে পায়ে ঠেলে শুরু করব অকাল বসন্তের সে নবীন যাত্রা। অজস্র পুষ্পসমারোহে নন্দনের সংগীত গাইতে গাইতে আমি হয়ে উঠবো প্রেম সৌন্দর্য উপাসক। সেদিন সৃষ্টিকর্তাকে বলবো- হে লীলারসিক! বুঝতে পারিনি ক্ষণিকের পৃথিবীতে এও যে তোমার এক অভিনব খেলা। তুমি ধ্যানের নিঃশব্দতার মধ্যে আমায় সংহরণ করে নিয়েছো। এ কোন নীলাবশে আজ বাহ্যদৃষ্টিতে তুমি আমায় এমন নিঃস্ব করেছো?
.
বেশ ভালো উপস্থাপন দাদা।
যেমন করে নদীর ওপার ভাঙ্গছে এপার গড়ছে।
শৈবাল চায় সেথায় নদীর গতিধারা রুদ্ধ করে দিতে।
মোহনায় এসে তার খেলে যায় অভিনব লীলা।
এ তো লীলারসিক সৃষ্টিকর্তার অপার লীলা।
.
শুভকামনা দাদা।
নব শব্দের জালে ডুবে গেলাম।
তৌহিদ
লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রদীপ। ভালোবাসা জানবেন দাদা।☺
রেহানা বীথি
খেলিছো এ বিশ্ব লয়ে
বিরাটও শিশু আনমনে….
জাতীয় কবির গানটা মনে পড়ে গেলো ভাই লেখাটা পড়ে।
ভীষণ সুন্দর লিখলেন।
তৌহিদ
লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপু। শুভকামনা রইলো।
শবনম মোস্তারী
“তবুও বিশ্বাস করি- ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষে অপেক্ষারত আমি অপার সুখাশ্রমে পতিত হবো একদিন।”……এই বিশ্বাসেই প্রতিটা প্রান নব বসন্তে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। নব ছন্দে চলে উদ্দমতা।
তৌহিদ
তাই যেন হয়। দোয়া করবেন।
শুভকামনা রইলো। ☺
আরজু মুক্তা
এখানে আপনাকে দার্শনিক হিসেবে পেলাম।
জীবন সেতো পদ্মপাতার শিশির বিন্দু!
তৌহিদ
প্রতিটি মানুষই নিজেদের জীবনে কিছুনা কিছু দর্শন ধারণ করে। কেউ প্রকাশ করে কেউ করেনা আপু।
জীবন সেতো পদ্মপাতার শিশির বিন্দু! এই বাক্যটি কিন্তু অসাধারণ!!
শুভকামনা রইলো। ☺
নিতাই বাবু
আপনার সুলেখিত লেখনীয় আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে দাদা। সময় তো আমার আর বেশি নেই। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে যেকোনো সময়।
তৌহিদ
এই অমোঘ সত্যকে অস্বীকার করার শক্তি সামর্থ্য কোনটাই আমার নেই দাদা। প্রার্থনায় রাখবেন সবসময়।
ভালো থাকুন দাদা এটাই কাম্য।
সাবিনা ইয়াসমিন
নিজেদের জীবন থেকে আমরা হারাতে চাইনা। চোখকে তাই-ই দেখাতে চাই, যা আমাদের দেখতে ভালো লাগে। অপ্রিয় সত্যকে এড়িয়ে চলতে থাকি প্রতিনিয়ত। কিন্তু সত্য ঠিকই একদিন প্রতিশোধ নেয়।
জীবন ঘনিষ্ঠ পরম সত্যকে তুলে এনেছেন। সবগুলো লাইন একেকটি সত্যকে উন্মোচন করেছে। খুব ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে।
ছবিটা এক কথায় অসাধারন। শুভ কামনা তৌহিদ ভাই। 🌹🌹
তৌহিদ
আপনার এরকম মন্তব্যে সবসময় লেখার প্রতি ভালোলাগা তৈরী করে আপু। মাঝেমধ্যে ভাবি কি লাভ- জগত সংসার, টাকা পয়সা, বাড়ী গাড়ি এসব চিন্তা করে? রাতে শান্তিতে ঘুমানোতেই আসল সুখ। আমারতো মনে হয়, যার যত সম্পদ সে তত অসুখী। আমাদের মধ্যে এখন চলে কম্পিটিশন, লোক দেখানোর কম্পিটিশন। আমার কি নেই, অমুকের তা আছে এসব আর কি!! এসব আমার ভালোলাগেনা। ভালোভাবে চলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতেই আমি খুশি।
আপনিও ভালো থাকবেন সবসময় এটাই প্রার্থনা।
ছাইরাছ হেলাল
বিধাতার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে এমন উপলব্ধিকে প্রকাশে তুলে ধরা সত্যি কঠিন।
এ লেখায় তা আপনি পেরেছেন। ক্ষণ জীবনের এই ক্রম ক্ষয়িষ্ণুতা আমাদের মেনে নিতেই হয়,
তবুও আমরা থাকি স্রষ্টার কাছে আশাবাদী!
ওমরাহ এ গেলে জানান দিয়েন।
তৌহিদ
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম ভাই। একদিন যেতেই হবে চিরদিনের মত। তবুও বেঁচে থাকার বড্ড আকুতি স্রষ্টার কাছে।
হ্যা ওমরায় যাব ইনশাআল্লাহ।
মাছুম হাবিবী
আপনার লেখাগুলো এত ভালো লাগে কেন? একজন পাঠক কী চায়? কি তার পছন্দ সবকিছু কিভাবে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেন লেখার ভেতর। কি যে বলবো ভাই মাঝে মধ্যে আপনার লেখা পড়ে চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকে নাহ।
ঈশ্বর সমস্ত প্রতিকুলতাকে উপেক্ষা করে একটি সুষ্ট জীবন পরিচালনা করার তাহফিক দান করুক।
তৌহিদ
পাঠকের চাওয়া আর আমার চাওয়া মিলে গেলো দেখে আনন্দিত হলাম ভাই।
ভালো থেকো সবসময়।
ইঞ্জা
অসাধারণ অনুভাবী লেখা, ভালো লাগা রইলো ভাই। ❤💕
তৌহিদ
ধন্যবাদ দাদা, আপনিও ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
ভালোবাসা 😍❤
বন্যা লিপি
ক্ষণস্থায়ী জীবনে আমাদের কতইনা রকমারি বায়না থাকে। থাকে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষাকষি। মহান স্রষ্টার প্রতি কতটুকু আনগত্য প্রকাশ করতে পারছি? তবু বিশ্বাস করি ক্ষণস্থায়ী এ জীবন শেষে একদিন বিচরন করবো অপার সুখের উদ্যানে।
আমাদের সকলের হোক শুভ বোধের উদয়।
স্রষ্টার মার্জনা ব্যাতীত চাওয়ার থাকেনা যেন কিছুই।
তৌহিদ
সকল চাওয়া পূরণ হোক আপনার এটাই প্রার্থনা করি। ভালো থাকবেন আপু।