
#পর্ব_৫০
ভাবনাপঠে আমার পিসিতো ভাই বিনোদ এক তুখোড় প্রেমিক বটে।
সে অন্নপূর্ণার প্রেমে পড়েছে। নিতান্ত ভাবুক কবি আর রসালো শব্দ না থাকলে যেমন করে কবিতার ছন্দপতন হয় তাদের রোজ ছন্দপতন হলেও ইহাতে বিভ্রান্তিকর কিছু ছিলো না। প্রেমে মান অভিমান থাকবেই।
কর্ম না করলে যেমন কর্মী হওয়া যায়না তেমনি প্রেম না করলে প্রেমিক হওয়া যায়না। বিনোদ প্রেমিক ও কর্মী ছিলো। এসবে তাহার বেশ পারদর্শিতার চিহ্নচাপ রয়েছে।
বর্তমান সমাজের অধিকাংশ মেয়েরা স্বয়ংবরা। তাদের মধ্যে অন্নপূর্ণা ছিলো স্বয়ংবরা। যদিও সে বিনোদকে স্বামী হিসেবে এখনো নির্বাচন করেনি তবুও অন্নপূর্ণা বিনোদকে বেশ ভালোবাসে। বলা যেতে পারে ভবিষ্যতে অন্নপূর্ণা বিনোদকে নিজের জীবনসাথী করে নিতে চায়।
কৃষ্ণনগর থেকে আসার আজ আমাদের প্রায় দুদিন হলো। আসার সময় বিনোদ ও অন্নপূর্ণার মন একটু বেশ ভারী ছিলো। এ যেন চোখেমুখে কালোমেঘের ছুটাছুটি।
এমন কালোমেঘের ছুটাছুটি আমার আর পার্বতীর হয়েছিলো। যখন পার্বতীর বিয়ে ঠিক হয়। এই কালোমেঘের ছুটাছুটি আজও আমায় মন খারাপ করে দেয়। কেননা পার্বতীর ঠাকুমার মৃত্যুের একবছর পর তাহার বিবাহ সম্পাদন হবে। প্রায় ছয় মাস অতিক্রম হয়ে গিয়েছে। তাই বুকের মধ্যে কত তাড়না,কত স্বপ্ন, কত ভালোবাসা বহে চলে মনের মধ্যে।
যদিও পার্বতীর বাগদান ও সম্প্রদান এখনো সম্পাদন হয়নি। পার্বতী এই বিবাহে অমত পোষণ করলেও পার্বতীর বাবা মা চান যে বিলেতে চাকরী করা সম্ভ্রান্তশীল পরিবারের এই বড় ছেলের সাথে বিবাহ দিতে। তাদের এই স্বপ্নচরে আমি যে বড্ড বেমানান আর বেকারত্বের অভিশাপে জর্জ জড়িত।
এসব জেনেও পার্বতী আমায় বেশ ভালোবাসে। কিন্তু আমাদের নিয়তি ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত।
বরাবর রং তুলি আর মনের ক্যানভাসে একে অপরকে কত রূপে এঁকেছি এই হেমন্তের শুভ লগ্নে। কখনো নিজেকে ধূলিতে মাখিয়ে কখনো বৈরাগ্যবসনে স্বপ্ন পূরণের আশায় ছুটে চলেছি আমি কলকাতার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
কখনো ছুটেছি সাগর পাড়ে কখনো নদীর মোহনীয়তার আবেশে। একফোঁটা চন্দনের সুগন্ধি আর মুগ্ধতার ছাউনিতে যার ভ্রুযুগল সে তো ষোড়শীরূপে পার্বতী।
উদ্ধাস্তু শরতের কাছে তার কেশরাশি যেমন ছিলো এলোমেলো এই হেমন্তে এসেও যে তার ভাবনা চোরাবালিতে আনমনা আর ভবঘুরে।
পৃথিবীর শেষ প্রান্ত আর মৃত্তিকাভেদে জলাধারার আস্তরণ যেমন ভিন্নতা তেমনি করে দুটি নদীর স্রোতধারা ভিন্ন। আমাদের অপার ক্লান্তি রোজ ঘুমিয়ে পড়ে স্বপ্নিল হৃদয়ের ভালোবাসার তৃষাতুরে।
আমি পার্বতীর বিশ্বস্ত প্রেমিক। প্রলয়ের মহা হুঙ্কারে চীনের প্রাচীর বেয়ে রোজ তার জন্য কুঁড়ে আনতাম বনলতার মহাকাব্য আর সিন্ধু নদীর তীরভূমিতে বেসে উঠা মুক্তামালার উপন্যাস।
#পর্ব_৫১
হেমন্তের নবীন নবগগণের ছায়াতলে বৃষ্টি ছোঁয়া নেই। আছে শিশিরভেজা কুয়াশা আর শীতলতার স্পর্শ হাওয়া। যেমন করে আমার রোজ কাব্য বিস্তরে লিখা থাকে শুভ্র আকাশের নিচে ভূমিপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা কুয়াশার কথা।
আমি বহুবার দেবদাস হইতে গিয়ে পার্বতীর আফিমের নেশায় মত্ত হয়েছি। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় কখনো তাহার মুখের দিকে চোখ মেলিয়া ভালো করে চাইতে পারতাম না। যদিও খানিক তাহাকে দেখার ভাগ্য আমার রোজ হতো তবুও আমি শিহরিত হইয়া উঠতাম তার চোখে।
পার্বতী রোজ আমার অল্পবিস্তর লেখা পড়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করে,আজ একটু ভিন্নরকম দেখাচ্ছে তাকে।
না জানি আজ কেন একটু মন বিষণ ভারী।
আমার আফিম খাওয়াতে কি না? কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না। আমি প্রতিদিনের ন্যায় আজ একটু ভিন্ন রকমের প্রচ্ছন্নে আবিষ্ট। রোজ সকালে তার কন্ঠে রবীন্দ্রসংগীত আর প্রকৃতি কবি জীবনানন্দের কবিতা আবৃতিতে আমার শুভ সকালের যাত্রা।
সময় যত যাচ্ছে আফিমের গন্ধ ততো প্রসারিত হচ্ছে।
অনেকটা পার্বতীর নাকের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছে।
রিক্ত আমি শূন্য আমি ক্ষণিকের তরে,ক্লান্তির বেদনা তবে লয়ে আছে মোর চিরতরে। পার্বতীর সম্মুখে কিঞ্চিৎ প্রকটিত করিবার প্রচেষ্টা করিলাম তাহা। যাতে করে সে বুঝে উঠতে না পারে আমি আফিমের ঘোরে আবদ্ধ।
খানিকক্ষণ পর হুট করে অকস্মাৎ নূপুরধ্বনিতে প্রবলবেগে ছুটে চলছে পার্বতী। হঠাৎ করে এই প্ৰহলহুংকারে আমার বুকে বাজিতে লাগিলো একে একে কত স্পন্দন ধ্বনি। ইহাতে আমি অনেকটা কুলষিত হইয়া পড়িলাম। শান্তিজলে গায়ের বসন প্রায় ভিজে গিয়েছে,শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রৌদ্রতাপ নেই। এই শিশিরভেজা সকালে আমার ঘরে অন্যদিনের ন্যায় কার্নিশ বেয়ে আসছে না রৌদ্র।
আমাদের বিগলিত জলধারার ন্যায় অজস্র অশ্রুপাত হয়ে জমেছে আকাশে কালোমেঘ। পার্থক্য শুধু কেউ কাউকে বুঝাতে দেই নি। বুঝে উঠেনি ঝর্ণাধারার বিন্দুপুঞ্জ গুলো।
বাঁকা চাঁদের গায়ে লেপটে থাকা সোনালী আঁচ আর পার্বতীর শাড়ির ডোরে নিজেকে রোজ গ্রন্থি বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখতাম। একমুঠো ভালোবাসা পাওয়ার আশায়।
.
ক্রমশ…
১৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
একফোঁটা চন্দনের সুগন্ধি আর মুগ্ধতার ছাউনিতে যার ভ্রুযুগল সে তো ষোড়শীরূপে পার্বতী।
উদ্ধাস্তু শরতের কাছে তার কেশরাশি যেমন ছিলো
ভাল থাকল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অজস্র ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা
আরজু মুক্তা
পার্বতী তো দুর্গা দেবির অপর নাম, তাই না?
গল্প ভালো হচ্ছে।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ দিদি
ধন্যবাদ আপনাকে
সাবিনা ইয়াসমিন
সত্যিই কি জিনিসটা আফিম ছিলো? বুঝিনি 🙁
প্রদীপ চক্রবর্তী
সত্যিই কিছুটা আফিমের খানিকছোঁয়া ছিলো !
রেজওয়ান
৫১তম পর্ব?🤔আমিতো অন্যান্য পর্ব খুজে পাচ্ছি না ভাই! প্রথম থেকে পড়ে এগুতে চাচ্ছি..
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ দাদা।
আমি আপনার লিংক দিচ্ছি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ দাদা।
আমি আপনাকে লিংক দিচ্ছি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
https://www.sonelablog.com/%e0%a6%85%e0%a6%b9%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b6-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a4%e0%a6%b6%e0%a7%82%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%af/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-2/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-3/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-4/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-5/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-6/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-7/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-8/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-9/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-10/
https://www.sonelablog.com/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%A4%E0%A6%95%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-11/
মনির হোসেন মমি
দাদা কিছু মনে করবেন না লিংকগুলো এ ভাবে নয়।লিংকগুলো চাইলে আপনি আপনার প্রতি পর্বেই দিতে পারেন।আমি হয়তো এর আগেও বলেছিলাম আপনা এ উপন্যাসটি অনেক উচু মানের তাই লিংক বাই লিংক দিলে অনেকে পূর্বের পর্বগুলো পড়তে পারত।হয়তো সময়ের ব্যাস্ততায় দিতে পারেননি। এ ব্লগে আমরা আমরাই আমিও অনেক কিছুই এ ব্লগ হতে শিখেছি।
লিংক দিতে হলে প্রথমে প্রকাশিত পূর্বের পর্বের লিংকটি কপি করবেন।এরপর নতুন পোষ্টের নীচে বা উপরে কিছু একটা লিখে তা হাইলাইট করে ড্যাসবোর্ডের উপরে শিকলের মত একটি চিহ্ন আছে তাতে ক্লিক করলে একটি অপসন আসবে তাতে আপনার সেই কপি করা লিংকটি পেষ্ট করুন এরপর এন্টার চাপুন হয়ে যাবে অল্প কথায় একটি পূর্ববর্তী লেখার লিংক।
ধন্যবাদ শুভ ব্লগিং।
রেজওয়ান
মনির হোসেন মমি ভাইয়ের সাথে একমত। প্রথম থেকে পড়ে নিবো ভাই। ভাল থাকুন✌
প্রদীপ চক্রবর্তী
অজস্র ধন্যবাদ দাদা।
আমার জানা ছিলো না…
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ ভাইয়া। ব্লগিং এ যে কোন সমস্যা আমরা আলাপ করতে পারি। ধন্যবাদ।