নীলকুঠি

আরজু মুক্তা ১৬ জুন ২০২১, বুধবার, ০৮:৫৩:৩২অপরাহ্ন ইতিহাস ঐতিহ্য ২০ মন্তব্য

নীলকর বা নীল চাষের জমি  না থাকলেও  তার স্মৃতি এখনো আছে মাদারীপুর সদর উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের আউলিয়াপুর গ্রামে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের কিছুকাল পর তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুরের অংশ হিসেবে মাদারীপুরে নীল চাষ শুরু হয়।

বিভিন্ন হিন্দু জমিদারের সহায়তায় ইংরেজ নীলকর ডানলপ সাহেবের কুঠিয়াল বাহিনী মাদারীপুরের আউলিয়াপুরে প্রায় ১২ একর জমির উপরে নীলকুঠি স্থাপন করেন। এলাকার কৃষকদের সেই সময়ে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্য ফসল চাষ বাদ দিতে হতো। শুধু নীল চাষে বাধ্য করা হতো।

যে জমিতে একবার নীল চাষ করা হতাে; সেখানে অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হতাে না। কৃষকদের আপত্তি সত্ত্বেও তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে নীল চাষে বাধ্য করা হতাে। নীল চাষে অনাগ্রহীদের ধরে এনে নির্যাতন করা হতাে।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৮৪৫ সালে ঐতিহাসিক ফরায়েজী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হাজী শরীয়তুল্লাহ ও তার ছেলে পীর মহসিনউদ্দিন দুদু মিয়া নির্যাতিত কৃষকদের নিয়ে গড়ে তােলেন বিশাল এক লাঠিয়াল বাহিনী। পরবর্তীতে হাজী শরীয়তুল্লাহ মৃত্যুবরণ করার পর তার ছেলে দুদু মিয়ার নেতৃত্বে নীলকুঠি থেকে ৩ কিলােমিটার দূরে ‘রণখােলা’ নামক স্থানে নীলকর ডানলপ বাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয় এবং পরাজিত হয়ে নীলকুঠির অধিকর্তা ডানলপ তার দলবলসহ নীলকুঠি ছেড়ে পালিয়ে যান। সেই থেকে ব্রিটিশদের অত্যাচারের নীরব সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের নীল কারখানার ধ্বংসাবশেষ। যা এখন ‘নীলকুঠি’ নামে পরিচিত। স্মৃতি হিসেবে আজও রয়ে গেছে ১২ কক্ষ বিশিষ্ট কুঠির, ইটের দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ, মাঝামাঝি রয়েছে একটি চুল্লি ও পাশেই রয়েছে প্রায় ৪০ ফুট উঁচু চিমনি।

নীলকুঠিটি পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাহমুদপুর গ্রামঘেঁষে অবস্থিত। তাই মাদারীপুর জেলার পাশাপাশি শরীয়তপুরের মানুষও নীল চাষ করতে বাধ্য হতো। এখনো শরীয়তপুরের অনেকেই নীলকুঠিটি দেখতে আসেন।

দেশ-বিদেশের অনেকেই স্থানটি দেখতে আসেন। তবে অযত্ন-অবহেলায় ইটের দেয়াল, চুল্লি ও চিমনি নষ্ট হচ্ছে।

এটি সংরক্ষণে সবার সহযোগিতা দরকার। তাহলে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবে।

0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ