
জীবন্ত ক্যানভাস
রেহানা বীথি
গতকাল থেকে শুধু ঘুম, খাওয়া আর ওয়াশরুমের ব্যক্তিগত সময়টুকু বাদ দিয়ে লেগে রয়েছি একটানা। কিন্তু কাজ যেন একটুও এগোচ্ছে না। নিজের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। মাঝে মাঝেই খামচে ধরছি মাথার চুল, কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম মুছে নিচ্ছি , বিরক্ত হয়ে চপেটাঘাত করছি নিজেরই গালে। রাগটা প্রশমিত হওয়া তো দূরের কথা, আরও বাড়ছে, বেড়েই চলেছে।
রেখে দিই বরং! রেখে দিয়ে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসি। মাথাটা চাপ ধরে গেছে একেবারেই। খোলা হাওয়া গায়ে লাগলে হয়তো মাথা হালকা হবে। কিন্তু বাইরে গেলে যে দেখতে পাই নানান রকম মানুষ। রাস্তা, দোকানপাট সবখানে গিজগিজ করে ওরা। আচ্ছা, ওরা এত বাইরে ঘোরে কেন? ঘরের জীবন ওদেরকে টানে না? আমার তো বেশ লাগে! ঘরে তো অদ্ভুত একটা আড়াল, একটা নিশ্চিন্তি। বোকা ওরা, বোঝে না। বোঝে না বলেই তো আমি বাইরে বেরোলে কেমন শকুনের মতো করে তাকায়। যেন আমি কোনও মুখরোচক মৃতদেহ, আর সেই মৃতদেহ থেকে ওদের ধারালো ঠোঁট দিয়ে খুবলে নেবে আমার মাংস। অসহ্য লাগে আমার। তারচেয়ে বরং ছাদে যাওয়া যাক! নয়তলা এ বাড়ির ছাদটা কেমন? কোনওদিন তো যাইনি! বোধহয় ভালোই হবে। কিন্তু ওখানেও যদি মানুষ থাকে? যদি ওরাও শকুনের মতো করে তাকায়? থাক, যাবো না। তারচেয়ে বরং কিছুক্ষণ এ ঘরেই বিশ্রাম নিই। একটানা তাকিয়ে থাকার জন্য চোখদুটোও করকর করছে। ও দুটোরও একটু বিশ্রাম দরকার।
কিন্তু বিশ্রাম নিতে চাইলেই কি নেয়া যায়? আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ সজাগ, ওরা আমাকে তাড়িত করে। ঘরের এককোনায় মেঝেতে পেতে রাখা যে বিছানায় গা এলিয়েছিলাম, ওখান থেকে উঠে পড়ি আমি। উঠে দাঁড় করিয়ে রাখা ক্যানভাসটার দিকে তাকিয়ে থাকি। কিছুই হয়নি। যে ছবিটা আমি এঁকে ফেলতে চাইছি গতকাল থেকে, ওটার কোনও রূপ-ই ফুটে ওঠেনি। অথচ ওই রূপ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য কতকিছুই না করছি! কেন পারছি না… কেন?
পুরো ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রঙ, তুলি, জল, ভেজা কাপড়। ক্যানভাসে এলোমেলো রঙের প্রলেপ। শুধুমাত্র একটি দেহের অবয়ব চোখে পড়ছে। ব্যস, ওটুকুই! ওতেই কি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে ছবি? বাস্টার্ড!! ভালো করে দেখ্! দেখে আত্মস্থ করার চেষ্টা কর শুয়োরের বাচ্চা!
দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ঘরের মেঝেতে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জিনিসপত্রের ভেতর থেকে শুধুমাত্র একটি বস্তুতেই মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলাম। বাতি নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালালাম। ধ্যানস্থ হলাম আমি। নিকষ অন্ধকার। ঘরে একটি মোমবাতি আর আমি জেগে আছি। আমরা গল্প শুরু করলাম। খোলা জানালা দিয়ে অন্ধকারের বাতাস ঢুকে কাঁপিয়ে দেয়া মোমবাতির শিখা বলল,
আরও কিছুক্ষণ ধ্যানে থাকো। মগজে গেঁথে নিতে হবে দেহটি, দেহের অভ্যন্তরের রূপ-সুধা।
বললাম, শুধু রূপ-সুধা, বেদনা নয়? দেহের ভাঁজে ভাঁজে লুকানো প্রেম নয়? কাম?
শিখা বলল, হ্যাঁ… ওসবও।
গোপন পাপের খোঁজও নিতে হবে। বিশ্বাসঘাতকতার রঙটাও ঠিকঠাক বুঝে নিতে হবে, কি বলো? বললাম আমি।
শিখা কেঁপে কেঁপে হাসলো।
চোখ বন্ধ করে ধ্যানে বসে রইলাম আরও দীর্ঘক্ষণ। দেখতে পেলাম, কে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার এই ঘরটায়। ছড়িয়ে থাকা রঙগুলো হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। একটা তুলি তুলে নিয়ে, জলের বাটিতে ডোবালো। মুহূর্তেই বাটির জল লাল হয়ে গেল। আমি বললাম,
রাখো রাখো, ওই রঙ ধুয়ে ফেলো না। লাল রঙ শুধুই আমার!
আমার দিকে এগিয়ে এসে বসে পড়লো ও। তারপর অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ।
বললাম, শুয়ে পড়ো।
ও শুনলো না। বসে রইলো ক্যানভাসের দিকে তাকিয়ে। প্রচণ্ড জোরে এক ধমক দিয়ে আবারও শুয়ে পড়তে বললাম ওকে। এবারে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ও ভয় পেয়ে গেল। আড়ষ্ট দেহ নিয়ে ও সটান শুয়ে পড়লো মেঝেতে।
ধ্যান ভেঙে ক্যানভাসটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গতকাল থেকে যেসব রঙের হালকা প্রলেপ দিয়েছি, সেগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম আরও একবার। লাল রঙ কোথায় ব্যবহার হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকলেও, অবয়বটা এখনও এতটাই অস্পষ্ট যে আমি আমার ভাবনার খেই হারিয়ে ফেলছি। তবুও তো চেষ্টা করতে হবে! এত পরিশ্রম তো জলে যেতে দেয়া যায় না।
কোনও পরিশ্রমই আমি জলে যেতে দিইনি কখনোই। রাতের পর রাত, দিনের পর দিন গাধার মতো খেটেছি একটা ছবি দাঁড় করাবো বলে। দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। ওরা বলতো,
ছবি তুমি ভালোই এঁকেছো মোজাফ্ফর, তবে জীবন্ত হয়নি। দেখো, তোমার ছবিতে নারীদের দেহ খুলে রেখেছো ঠিকই, কিন্তু কাম কোথায়? পুরুষদের পেশী আছে, শক্তি অনুপস্থিত। এক্সপ্রেশান কই? ওটা না থাকলে ছবি জীবন পায়? চেষ্টা করো… আরও বেশি করে চেষ্টা করো।
আমি একটু একটু করে ওদের থেকে দূরে সরে গেছি। প্রেমিকার কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়েছি। ও ভাবতো, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। যাকে দিয়ে হবে মনে হয়েছিল, ঝুঁকে পড়েছিল তার দিকে। ধনী পরিবার পর করে দিয়েছে আমাকে। অবশ্য মাঝে মাঝে খোঁজ-খবর করে, দিনযাপনের অর্থ পাঠায়। একটা গাড়িও দিয়েছে ব্যবহারের জন্যে।
সে যাই হোক, একা হয়ে আমার কাজের খুব একটা সুবিধে হয়েছে। ওই যে ওরা বলেছিল, বেশি বেশি চেষ্টা করো, তা নিরবচ্ছিন্নভাবেই করতে পারি। কেউ প্রশ্ন করার নেই, আমার কাজে বাগড়া দেয়ারও কেউ নেই। শুধু একটু ধুকপুকানি থাকে মনের ভেতর, নির্বিঘ্নে ছবি শেষ করতে পারবো তো? কিংবা… জীবন্ত, একেবারে তরতাজা অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে পারবো তো? কিন্তু একটা ছবি যখনই শেষ করি, সব দুর্ভাবনা কেটে যায়। নিশ্চিন্ত হই। যদিও অনেকটা যাযাবরের মতো জীবন আমার। তাতে কী? একেকটা ছবির জন্য যা যা করেছি, করি, তার কাছে তো যাযাবর জীবন কিছুই নয়!
এখন তো আমার কাছে রয়েছে জীবন্ত ছবির ভাণ্ডার। কাউকে দেখাবো না ওগুলো। কেউ কোনও দিনও জানতেই পারবে না ওগুলোর কথা। দেখিয়ে কী হবে! এখন যেটা আঁকছি, এটাও রেখে দেবো সযতনে। এই ছবির কাহিনী অন্যগুলোর চাইতে কিছুটা স্বতন্ত্র। প্রেম, অপারগতা, কাম, লোভ আর বিশ্বাসঘাতকতার এক অপূর্ব মিশেল হবে এই ছবি। অন্য ছবিতেও যে এগুলো আসেনি তা নয়, তবে এটাতে ভীষণ রগরগে একটা ব্যাপার আছে। শুধু লাল রঙটার ব্যবহার ঠিকমতো করতে হবে। ব্যস…যা দাঁড়াবে না!
প্রলেপের পর প্রলেপ পড়ছে। তুলি বিরামহীনভাবে এঁকে চলেছে মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকা একটি দেহ। উলঙ্গ দেহটির ডান পা হাঁটুর কাছে সামান্য ভাঁজ হয়ে আছে। বাঁ পা সটান। ধবধবে ফর্সা পায়ের আঙুল, নখ, নখে লাল নেইলপলিশ। চোখ বুলিয়ে ভালো করে দেখে নিয়ে এঁকে নিলাম। আবারও চোখ বোলানোর জন্য তাকাতেই নজরে এল হাঁটুর ওপরের অংশ। নজরে এল মাংসল উরু। একপাশের উরুতে কালসিটে। ধবধবে ত্বকে ওই কালসিটে বড় বেমানান। তবে কি আর করা যাবে? আছে যখন, ছবিতে তো আর তা বাদ দেয়া যায় না! দোষ অবশ্য আমারই। কামোত্তেজনার বশে ভীষণ জোরে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। ওই দাগ এঁকে নিয়ে অরক্ষিত যোনিতে চলে গেল আমার তুলি। ওখান থেকে কোমরের ঢেউয়ের চিকন বিছেয় এসে আটকে গেল। আমিই পরে আসতে বলেছিলাম। কোমরের বিছেতে নারীদেহের আদিম-রূপ খোলে ভালো। খুব যত্ন নিয়ে ওই অংশটুকু ফুটিয়ে তুলে চলে গেলাম মুখমণ্ডলে। ওখান থেকে একলাফে মুখে চলে আসার একটা যথাযথ কারণ আছে। বুক, দুইহাত, গলা, এগুলোই আমার ছবির মূল উপাদান। প্রিয় লাল রঙ এইসব জায়গায় খেলাতে হবে নিবিষ্ট হয়ে। তাড়াহুড়ো করা যাবে না একদম। তাড়াহুড়ো করলেই পুরো ছবি শেষ। গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত যতটা পরিশ্রম করেছি, পুরোটাই ওই জলে চলে যাবে।
মুখমণ্ডলের মধ্যে চোখদুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে কাম, লোভ, বেদনা আর আতঙ্ক ফুটিয়ে তুলছি ওই দুটোতে। এত নিখুঁত হচ্ছে! মেঝের দিকে তাকালাম। দেহটি তেমনই পড়ে আছে। স্থির। কিন্তু ছবিতে আমি স্থিরতা দেব না। এমনভাবে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবো, যেন যে কেউ দেখলে বুঝতে পারে, মৃতদেহ নয়, ওটার মধ্যে ঘটে চলেছে আত্মিক বিস্ফোরণ। হঠাৎ খোলা জানালা দিয়ে মাতাল হাওয়া এসে উড়িয়ে দিলো দেহটির মাথার এলোচুল। কিছু চুল এসে পড়লো মুখমণ্ডলের ওপর। একটা চোখ হালকা আড়াল হল। ওই চুল এঁকেবেঁকে চলে গেল ঠোঁট অব্দি। টসটসে কামুক ঠোঁটজোড়া মাদকতায় ভরে গেল। আমি মুগ্ধ হয়ে এঁকে নিলাম এ দৃশ্যটি।
মগ্ন হয়ে এঁকে চলেছি আমি। ঠোঁটের মদিরা ছেড়ে অসামান্য দক্ষতায় নেমে এসেছি গলায়। অলঙ্কারবিহীন গলার মাঝ বরাবর চক্রাকারে লাল রঙ ছুঁইয়ে দিলাম। আহ্, কী সুন্দর! রঙের পরিমাণ এতটাই বেশি দিলাম যেন তা গড়িয়ে চলে আসে বুক পর্যন্ত। শরীরটা যেহেতু বাঁ-দিকে সামান্য কাত হয়ে আছে, ওই রঙ বুকের মাঝখান দিয়ে গড়িয়ে এসে বাঁ-স্তনের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। পড়ে মেঝে সয়লাব। যেন রক্তের বন্যা বইছে। বাঁ-হাত একদিকে বাড়ানো, যেন কিছু ধরতে চাইছে। ডানহাত ডান-স্তন কিছুটা আড়াল করে গলার দিকে এগোতে চাইছে। ব্যস… শেষ!
কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে আমার সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকে ধপাস করে বসে পড়লাম মেঝেতে। দেহটি স্পর্শ করলাম। স্তনের ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া লাল রঙ শুকিয়ে গেছে দীর্ঘক্ষণ। এখন আর ওগুলো লাল নেই। মনে হচ্ছে একটা বিষাক্ত কালো সাপের মতো এঁকেবেঁকে নেমে গেছে মেঝেতে। তারপর ধীরে ধীরে জানালা গলে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আমি বসে আছি কেন? মেয়েটির দেহের এখন আর কোনও দাম নেই আমার কাছে। ওর মৃতদেহ ব্যবহার করে জীবন্ত একটা ছবি, এই চাওয়াটুকু পূরণ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। তাছাড়া দু’দিন ধরে পড়ে রয়েছে ওটা। গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বড় আকারের ট্রাভেল ব্যাগে দেহটা ঢুকিয়ে, কিছু সুগন্ধি ছিটিয়ে, আটকে দিলাম ব্যাগের মুখ। ছোট ব্যাগটায় গুছিয়ে রাখলাম নিজের যৎসামান্য জামাকাপড়। আমার আঁকা ছবিগুলোও বেঁধে রাখলাম একসাথে।
এখন গভীর রাত। এই নয়তলা ভবনের সাততলার দুই রুমের ফ্ল্যাটটাকে বিদায় জানাবো ভোরেই। আপাতত দেহটা বিসর্জন দিয়ে আসি কোথাও…
২৭টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
প্রথম হয়ে নিলাম।অনেক গভীর অনুভূতি দিয়ে লিখেছেন। সত্যি জীবন্ত ক্যানভাস।শিরোনামের পাশাপাশি বর্ণনাও সুন্দর।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
জীবন্ত ক্যানভাসে আঁকা চিত্রটি ভালই লাগছিল
যেমনটি দেখে আপু আমার কল্পনায় আঁকা রঙে।
অনেক দিন পরে এলেন সুন্দর গল্প নিয়ে।
ভাল লাগলো বলে। শুভ কামনা জানালাম।
রেহানা বীথি
ভালোলাগায় খুশি দাদা।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আরজু মুক্তা
ভালোই পোস্টমর্টেম করলো প্রেমিকার! ভালোবাসার আড়ালে এভাবেই হিংস্রতা বেড়ে ওঠে অবহেলায়, অবলীলায়। মানবিকতার মন্দায়, মুখে হৃদয়ে কলুপ এঁটে বসে রই। একটুও কাঁপে না হাত!
রেহানা বীথি
একজন ব্যর্থ আঁকিয়ের মানসিক টানাপোড়েনের গল্প। নিঃসঙ্গ হয়ে যাওয়া এক মানুষ মানসিক যন্ত্রণায় হয়ে উঠতে পারে প্রচণ্ড অমানবিক। গল্পে সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি আপু। এটা একটা থ্রিলার বলতে পারেন।
ভালো থাকবেন সবসময়।
ফয়জুল মহী
বেশ সুন্দর গল্প ।
ভাল লাগলো l শুভ কামনা নিরন্তর।
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অনেক দিন পর আপনার গল্প পেয়ে দারুন লাগছে। একটা মানুষ বারবার অবহেলিত হলে, কোনোকিছুর মূল্যায়ন না পেলে সে এতোটা অমানবিক হতেই পারে। নিঃসঙ্গ , একাকীত্বের দাবানলে পুড়ে যাওয়া মানুষটির আত্না প্রেতাত্মা বনে যায়, তখন সে নেশায় আসক্ত হয়ে যেকোন মূল্যে তার কাজের স্বীকৃতি চায়। চমৎকার, অসাধারণ উপস্থাপন করেছেন আপু। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন। শুভ কামনা রইলো
রেহানা বীথি
আপু এত্ত এত্ত খুশি আর এত্ত এত্ত ভালোবাসা দিলাম। ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা নিরন্তর।
বন্যা লিপি
অনেক অনেক দিন একটা গল্প পড়েছিলাম কলকাতার কোনো বিখ্যাত লেখকের, নাম মনে করতে পারছিনা। বইএর নামটাও মনে নেই। গল্পের সারাংশটা মনে আছে কেবল। এই গল্পটা পড়ে ওই গল্পটাই মনে পড়ে গেলো। প্রচণ্ড মেধাবী একজন গবেষক, দিনরাত বুঁদ হয়ে থাকেন নিজের কাজে। অনেক কাজের ব্যার্থতা ঘোচাতে তিনি একজন অতি সাধারন প্রতিবেশী পরস্ত্রীর শরনাপন্ন হন যখন যেমন মন চায়। প্রয়োজনে খুব ভালো ব্যাবহার করেন, আবার যখন কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন তখন কয়েকদিনে আর নিজঘরের দরজা খোলেন না।শেষাবধি নিজের কাজের সাক্সেস তাঁকে একটাই অহংকারী করে তোলে যে, পরস্ত্রীর সমস্ত অবদান অস্বীকার করে তখন -যখন পরনারী সব ছেড়ে পুরোপুরি গবেষকের প্রেমে মত্ত হয়ে পড়ে। পরিনতি পরস্ত্রী সেই নারীর মৃতদেহ পড়ে থাকে তাঁরই ঘরের বাইরে। সমস্ত উৎফুল্লতা দিয়ে যে নারী গবেষকের কাজের প্রেরনা যোগালো, সেই অবদানও ভুলে গিয়ে তিসি হলেন অহংকারী সফল একজন বিজ্ঞানী। কোনোএকদিন অনুত্প্ত হলেও করার কিছু থাকেনা আর।
আপনার নিখুঁত গল্পে আমি সেই গল্পটারই ঘ্রান পেলাম। মানুষ! নিজেকে প্রকাশ করতে অন্যের ব্যাবহার যখন করে, তখন আর সঠিক/বেঠিক ভাবনার জায়গা দিতে চায়না। এজন্যই হয়তো জগৎজুড়ে বিখ্যাত হবার পেছনে থেকেই যায় নৃশংসতার কোনো ইতিকথা।
অনেকদিন পরে ঠিকঠাক মতো তৈরী হয়েই গল্প লিখলেন উকিল আপু। দুর্দান্ত লিখেছেন।আমিও মনে হয় এতবড় কমেন্ট এর আগে আর করিনাই☺
ভালবাসা জানবেন।
রেহানা বীথি
এত বিস্তারিত কমেন্ট পেয়ে কি বলবো বুঝতে পারছি না। আপনার এ মূল্যায়ন হৃদয়ে ধারণ করলাম। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলাম প্রিয় বন্যা আপু।
ভালো থাকবেন সবসময়। শুভকামনা নিরন্তর।
খাদিজাতুল কুবরা
আপনার স্বপ্নগল্প ছাড়া আর কোন লেখা পড়া হয়নি আমার।
চমৎকার একটি থ্রীলার গল্প পড়লাম। আসলে সফলতা সবার কাছে মানবিকতার হাত ধরে আসে না।
ধনী ব্যাক্তিদের দেখেছি সবকিছুর উর্ধ্বে তাদের নিজের স্বার্থ সাথে পরিশ্রম।
আর সৃষ্টিশীল কৃতিমানরা ও কোনো না কোনো সৃষ্টিকে নিজের সার্থে ব্যবহার করেই সফল হন।
একটা বিষয় উঠে এসেছে গল্পে খুনি অপরাধী হয়ে কেউ জন্মায়না।
অপরাধী হওয়ার পেছনে ও কোন যন্ত্রণার গল্প থাকে।
জানিনা কতোটা বুঝতে পেরেছি।
তবে দুর্দান্ত লেখনশৈলী আপনার।
অনেক শুভেচ্ছা আপু
রেহানা বীথি
একদম ঠিক বলেছেন আপু, মানুষ পরিস্থিতির শিকার। অপরাধী হয়ে কেউ-ই জন্মায় না। আপনার সুন্দর মন্তব্য ভীষণ ভালো লাগলো। অনেক ভালোবাসা দিলাম। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভকামনা নিরন্তর।
খাদিজাতুল কুবরা
আপনার জন্য ও অনেক ভালোবাসা রইলো আপু
তৌহিদ
আপনার গল্প পড়া মানেই অন্যরকম অনুভূতি। অবহেলায় ভালোবাসাহীন জীবনের তিক্ততার গ্লানি বহন করা খুবই কষ্টসাধ্য। এরকম অবস্থায় প্রেমিকাকে ক্যানভাসে ধারণ করতে চাওয়া প্রেমিকের মানসিক অবস্থা সহজেই অনুমেয়।
চমৎকার গল্প পড়লাম আপু। নিয়মিত লেখা চাই কিন্তু!
রেহানা বীথি
আপনার সুন্দর মন্তব্যে খুব খুশি হলাম ভাই। ভালো থাকুন সবসময়। শুভকামনা নিরন্তর।
শামীম চৌধুরী
দারুন লিখেছেন আপু।
সত্যিই বলেছেন বললেই তো আর বিশ্রাম নেয়া যায় না।
শুভ কামনা
রেহানা বীথি
খুশি হলাম ভাইয়া।
ভালো থাকবেন সবসময়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
থ মেরে গেলাম! কি লিখেছেন আপু॥ দুর্দান্ত॥ভাষা নেই।
একজন কিভাবে অন্যজনকে নিঃশেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।বিশেষ করে মেয়েরা কিভাবে বলি হয়।তারই জ্বলন্ত ক্যানভাস এঁকে ফেলেছেন।
শুভ কামনা রইলো। শুভ রাত্রি।
রেহানা বীথি
মন্তব্যে ভীষণ আপ্লুত হলাম আপু। ভালোবাসা দিলাম। ভালো থাকবেন সবসময়।
জিসান শা ইকরাম
গল্পটি পড়লাম, এমন গল্প খুব কমই পড়া হয়।
আপনি জানেন যে এ ধরনের গল্পে আমার আগ্রহ প্রচুর। আপনার এক গল্পের মন্তব্যে জানিয়েছিলাম।
এ গল্পের বিস্তারিত মন্তব্য আগামিকাল দেব।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
আলমগীর সরকার লিটন
গল্পটা পড়লাম চমৎকার লেখেছেন বীথি আপু
রেহানা বীথি
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
থ্রিলার ধর্মী হলেও একজন শিল্পীর ছবি আঁকার যে প্রানান্তকর চেষ্টা থাকে ,
পারা না পারার মধ্যে সেটি ঠিক ঠাক তুলে ধরেছেন। যন্ত্রনা সমেত।
একই সাথে নারীর প্রতি বীভৎস অবমাননা।
এত নিখুঁত গল্প পড়তে পেরে ভাগ্যবান বোধ করছি।
আসলে এমন লেখায় কী মন্তব্য করবো ঠিক বুঝতে বুঝতে দেরি ই করে ফেললাম, তাই কী কিছু লিখতে পারলাম!!
রেহানা বীথি
ভাইয়া, আপনি পড়েছেন এতেই আমি ধন্য। আর লিখতে না পেরেও যেটুকু লিখলেন, সেটুকুই অমূল্য।
ভালো থাকবেন ভাইয়া সবসময়।