অনু গল্প (ভোলা যায় কি প্রথম প্রেম?)

সুরাইয়া পারভীন ২৬ নভেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ১১:১৩:২০অপরাহ্ন গল্প ২৫ মন্তব্য

হঠাৎ এক যুগ আগের স্মৃতির করিডোরে এসে দাঁড়িয়েছে পুষ্প। এখনো বাদলের জন্য পুষ্পের বুকের বাম অলিন্দে চিনচিন ব্যথা অনুভূত হয়। নিঃশব্দে চুপিসারে হুহু করে কেঁদে ওঠে মন। মনে পড়ে যায় ফেলে আসা বিষণ্ণ অতীত। যে অতীত কখনো সুখের স্মৃতি হয়ে আবার কখনো বিরহ হয়ে ধরা দেয় পুষ্পের কাছে। এক যুগের ও বেশি সময় হয়ে গেছে পুষ্প বাদল কে ছেড়ে চলে গেছে। এ ছেড়ে যাও অনিচ্ছাকৃত পারিবারিক চাপের মুখে পড়ে। একই গ্ৰামে বেড়ে ওঠা পুষ্প বাদল দুটি নাম হলেও যেনো একটাই আত্মা। একে অপরের প্রাণ। একসাথে হেসে খেলে বেড়ে উঠার ফলে তাদের একে অপরের প্রতি মায়া সৃষ্টি হয়েছিল হাইস্কুলে ওঠার আগে থেকেই। আর তা শুধু মায়ায় থেমে থাকেনি। ওদের বয়স যতো বাড়তে থাকে সম্পর্কের গভীরতাও ততোই বাড়তে থাকে। পুষ্প খুব ছোট্ট থেকে তার মায়ের সাথে নানা বাড়িতে থাকতো। পুষ্পের বাবার সাথে কোনো কারণে ওর মায়ের বনিবনা হয়নি। ফলে তাদের সংসারটা টিকেনি। ধনী বাবার একমাত্র কন্যা সন্তান হওয়ার সুবাদে পুষ্পের মা যেমন ছিলেন আদরের তেমনি পুষ্পও। প্রচণ্ড অর্থ বৈভবের মধ্যেই বেড়ে উঠতে থাকে পুষ্প। অপর দিকে বাদল মোটামুটি মধ্যবিত্তের চেয়ে একটু উঁচুতে বিলং করে। পুষ্পের থেকে বাদল ছিলো ৩/৪ বছরের বড়ো। একটু একটু করে দিন যায় পুষ্প বাদলের বয়স বাড়তে থাকে আর সাথে সাথে প্রেমও। পুষ্প যখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী বাদল তখন ইন্টার মিডিয়েট পরীক্ষার্থী। সম্পর্কের গভীরতা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তা পারা প্রতিবেশীদের নজরে পড়ে।পারা প্রতিবেশীদের কানাঘোষায় তাদের সম্পর্কের কথা পুষ্প ও বাদল দুজনের পরিবারের সদস্যদের কাছেই পৌঁছে যায়। ওদের দুজনের পরিবারের সম্পর্ক দা আর কুড়াল। পুষ্পের মামা আর বাদলের বড়ো ভাই যেনো একে অপরের জন্ম জন্মান্তরের শত্রু। এরপর আর বলার অপেক্ষা রাখে না কি ঘটেছিল পুষ্প বাদলের সম্পর্কে।

জোর করে বিশাল সম্পদের অধিকারী একটি ছেলের সাথে পুষ্পের বিয়ে দিয়ে দেয়। নিরুপায় পুষ্প বাধ্য হয় বিয়ে করে নিতে। নববধূ বেশে পা দেন অজানা অচেনা সম্পূর্ণ একটি পরিবারের। শ্বশুর বাড়ির সবাই পুষ্পকে পুত্রবধূ রূপে পেয়ে খুব খুশি। পুষ্প দেখতে যেমন সুশ্রী তেমনি লম্বাচওড়া। তুলোর মতো সাদা ধবধবে ফর্সা, মাথা ভর্তি কালো লম্বা মসৃণ চুল যা কোমর অব্দি বিস্তৃত। এককথায় সুশ্রী সুর্দশনা। পরিবারের সবাই নববধূকে মাথায় করে রাখে। কথায় বলে না সুন্দরের পূজারী সবাই। পুত্রবধূর প্রশংসা পঞ্চমুখ। সারাদিন কেটে যায় বিভিন্ন ব্যস্ততায়। কিন্তু পুষ্পের রাত আর কাটে না কিছুতেই। বাদলকে অঝরে কাঁদে পুষ্প। ব্যাপারটা খেয়াল করে পুষ্পের স্বামী সোহাগ। সোহাগ ভাবে পুষ্পের কি তাকে পছন্দ নয়। কেনো সে আমার থেকে দূরে থাকে। আর কেনোই বা অঝরে অশ্রু ঝরার? সোহাগ জানতে চায় তার এমন কান্নার হেতু। জিজ্ঞেস করে তোমার কি আমাকে পছন্দ নয়? পুষ্প কিছু বলতে পারে না। সোহাগ মনোবেদনা নিয়ে দূরে থাকে পুষ্পের থেকে।
পুষ্পের ইচ্ছের বাইরে গিয়ে কখনো সোহাগ কখনো স্বামীর অধিকার ফলায় নি। দিনের পর দিন কেটে যায়। সোহাগ পুষ্পের জন্য অপেক্ষা করে। আর পুষ্প বুঝতে পারে এই বন্দিদশা থেকে তার মুক্তি। শ্বশুরবাড়ি তার কাছে কারাগার মনে হয়েছে ‌। হওয়ায় স্বাভাবিক। এতো টুকু বয়সের প্রেমকে ছেড়ে অন্যের বউ হয়ে কারো সংসারে গেলে তা সংসারটাকে কারাগার আর নিজেকে দণ্ড প্রাপ্ত আসামিই মনে হবে। আস্তে আস্তে পুষ্প কিছুটা সহজ হলো। সোহাগের প্রতি তার একটু একটু শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হলো। একদিন পুষ্প তা জীবনের গল্প সোহাগকে বলবে বলে ঠিক করলো। ইতিমধ্যে সোহাগ বাদলের ব্যাপারে সব জেনে গেছে। তবুও কখনো পুষ্পকে নিজে থেকে কিছু বলেনি।

পুষ্প: আপনাকে আমার কিছু,,,,

সোহাগ: আমায় কিছু বলতে হবে না পুষ্প। আমি সবটা জানি‌ ।
পুষ্প: জানেন তবুও কখনো কোনো অভিযোগ করেননি। জোর করেননি, অধিকার ফলাননি।

সোহাগ: জোর করে হয়তো আপনার দেহের অধিকার আদায় করতে পারতাম। মনের নয়। আমি যে আপনাকে বড্ড ভালোবাসি। পুষ্প আপনি যদি চান চলে যেতে পারেন বাদলের কাছে। আমি বা আমার পরিবার বাধা হয়ে সামনে দাঁড়াবো না।

পুষ্প: বিয়ের ছয় মাস হয়ে গেছে। এখন কি যাওয়া সম্ভব? যেতে পারলে সেদিন চলে যেতাম। এতে আমার নানা, মামার মুখে চুনকালি দেওয়া হতো। যা আমি কখনোই পারি না। আপনি তো সবটায় জানেন ওরা কতো আদর স্নেহে বড়ো করেছেন।

সোহাগ: তাহলে বলুন আপনি কি করতে চান?
পুষ্প: আমাকে কি আর একবার সুযোগ দেবেন? নিজেকে আপনার জন্য তৈরি করার। আপনি চাইলে আপনার অধিকার,,,

সোহাগ: না পুষ্প। যেদিন আপনি মন থেকে মেনে নিতে পারবেন। সেদিনই আমি আপনার কাছে আসবো।

সময়ের সাথে সাথে হয়তো বাদল ফিকে হয়ে যায় পুষ্পের জীবনে। বর্ণাঢ্য পরিবারের একমাত্র পুত্রবধূ পুষ্প এখন দুই কন্যা সন্তানের জননী। পুষ্প হয়তো এতো গুলো বছরে এক মুহূর্তের জন্যও বাদলকে ভুলতে পারেনি। তবুও তাকে ভুলে থাকার ভানে অন্যের সংসার সুনিপুণ ভাবে করতে হচ্ছে। সন্তান লালন পালন করতে হচ্ছে। চাকর বাকরদের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে হচ্ছে। পুষ্প কি ভুলে গেছে বাদলকে? প্রথম প্রেমকে, একসাথে কাটানো সুখের সময়কে? না পারেনি, কেউই পারে না প্রথম প্রেম ভুলতে।

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ