আমি প্রচন্ড জেদি স্বভাবের সেই ছোট থেকেই। এর পিছনে অবশ্য একটা কারণও আছে। বাবা মায়ের একটাই আর অনেক কাঙ্ক্ষিত কন্যা সন্তান আমি। মা বলেন তাঁর বিয়ের পর থেকেই নাকি তিনি কন্যা সন্তান চেয়েছেন। দুর্ভাগ্যবশত দুটো পুত্র সন্তানের পর আমার জন্ম হয়। বোঝায় যাচ্ছে কতোটা আদরের। আমার মা দুর্দান্ত কেয়ারিং মানুষ।

আমার বাবা প্রচণ্ড রাগী। এখন বলা হয়ে থাকে বাবার রাগটা আমার মধ্যে এসেছে। আমার বড় দুই ভাই আর ছোট ভাই মায়ের মতো শান্ত স্বাভাবিক। আমার মা পছন্দ করেন না সন্তানদের গায়ে হাত তোলা। মেয়ের বেলায় তো তা কল্পনাও করতে পারেন না। আমার বাবা আমার সাথে কখনো উচ্চস্বরে কথা বলেননি। গায়ে হাত তোলা দূরে থাক। একদিন মা মেরেছিলেন আমাকে। কারণ উনার সবচেয়ে অপছন্দের কাজটি করেছিলাম। পুকুরের ঘোলা নোংরা পানিতে নেমে ২-৩ ঘন্টা গোসল করেছিলাম। এই একবারই পিটিয়ে ছিলেন।

গেরস্ত বাড়িতে আমাদের জন্ম হলেও আমরা বেশ সুন্দর ভাবেই মানুষ হয়েছি। দারুণ পরিবার আমাদের। বেশ আন্তরিক আর সবাই বন্ধুত্বপূর্ণ। দারুণ কেটে গেছে আমার বালিকা বেলা। এবার আসল কথায় আসি

আমার সহপাঠী একটা মেয়ে। সম্পর্কে ফুফাতো বোন। আমার থেকে দুই এক বছরের বড় তবে আমি নামই ধরে ডাকতাম। আমরা প্রায় সময় একসাথেই থাকতাম। একসাথেই ঘুরতাম। একদিন আমরা আমাদের স্কুলের মাঠে খেলতে খেলতে পাঁচিল টপকে ছাদে উঠে পড়ি। কিছুক্ষণ ছাদে খেলার পর কথায় কথায় দুজনেই বললাম আচ্ছা এখান থেকে লাফ দিলে মরে যাবো আমরা। এসব চিন্তা ভাবনার একসময়ে ও আমাকে বললো পাগল নাকি এখান থেকে লাফ দিবি। তুই মেয়ে মানুষ লাফ দিয়ে হাত পা ভেঙ্গে পড়ে থাকলে বিয়ে হবে না। আর তাছাড়া তোর যশও নেই এখান থেকে লাফ দেওয়া।

ভেবে দেখুন প্রথমে বৈসাদৃশ্য করলো। বুঝাতে চাইলো ছেলেরা যা পারে তা আমরা করতে পারি না, উচিত নয়। এমনিই মেজাজ বিগড়ে গেছে তার উপর আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো। আমি আগ পাচ না ভেবেই কথা না বাড়িয়েই লাফ দিলাম।  যখন নিচে পড়ে উঠতে যাবো তখন অনুভব হলো আমি দাঁড়াতে পারছি না। আমার সহপাঠী ভয়ে ঘাবড়ে গেলো। ও দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে এলো আমাকে হাত ধরে তুলতে। আমি ওকে হাত না ধরতে দিয়েই দাঁড়িয়ে গেলাম। বুঝতে পারলাম পায়ে লেগেছে। কিন্তু সেটা স্বীকার না করেই হাঁটতে শুরু করলাম। একটু একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।

তার কিছু পর অসহ্য ব্যথা নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। একটু পর সব ঠিক হয়ে গেলো। সেদিন কিন্তু ভয়াবহ কোনো বিপদ হতে পারতো। হাত পা ভেঙ্গে সারাজীবন ঘরে পড়ে থাকতেও হতে পারতো। আজ এ বেলায় এসে সে বেলার কাজের জন্য ভয়। নেহাতই সেদিন ভাগ্য ভালো ছিল তাই সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিজ হাতে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। আমি মোটামুটি গেছো টাইপের ছিলাম। আম গাছ, কাঁঠাল গাছ,বেল গাছ, তেঁতুল গাছ, পিয়ারা গাছ, নিম গাছ (আমার বালিকা বেলার অনেকটা সময় নিম গাছে ও নিম গাছের নিচে বসে কেটে গেছে), তাল গাছেও ওঠেছি চ্যালেঞ্জ নিয়ে, রেইনট্রি গাছ , কড়ই গাছ

এমন কোনো গাছ ছিলো না যা আমাদের বাড়ির আসে পাশে ছিল আর আমি উঠিনি।

অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। লোক নিন্দার তোয়াক্কা না করে শ্বশুর বাড়িতে গাছে উঠে আম পেরেছি, পিয়ারা পেরেছি। এ নিয়ে পাড়ায় বেশ গালগল্পও চলেছে। এখন অনেকটা শান্ত হয়ে গেছি। আর গাছে গাছে উঠি না। উঠতে যে পারি না তা কিন্তু নয়। কাল রাজশাহীর শিলার আমি বাগান দেখে লাভ সামলাতে পারিনি।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ