না পাঠানো চিঠি

সুরাইয়া পারভীন ২২ এপ্রিল ২০২০, বুধবার, ১১:১৫:৩৭অপরাহ্ন চিঠি ২৭ মন্তব্য

প্রিয় অনিমেষ,

স্বপ্নে হোক বা দুঃস্বপ্নে আমি তোমাকে পেয়েছি। আমি তোমাকে ততোটুকুই পেয়েছি যতোটুকু তুমি আমার নিয়তিতে ছিলে। ঈশ্বর আমার ললাটে যতোটুকু তোমাকে লিখে রেখেছিল সেই ততোটুকু তোমাকে নিয়ে একটা জীবন অনায়াসে কেটে দিতে পারবো আমি। তাই আমাকে নিয়ে ভেবো না। আমি কেমন আছি একলা একা? যদি এমন প্রশ্ন করো উত্থান তবে শুনে রেখো আমি একা নই। আমার প্রতিটা মুহূর্ত আবৃত করে রাখে তোমার ছায়া। যদিও ছায়া হয়ে থাকতে তুমিই চেয়েছিলে। আমি সেদিন ভেবেছিলাম  বলবো তুমি আমার স্মৃতি হয়ে থাকবে? তুমি বলেছিলে একদমই না। স্মৃতি আর ছায়া কখনো পাশাপাশি থাকতে পারে না। আমি তোমার স্মৃতি নয় ছায়া হয়ে থাকতে চাই। সেই যে কথাটা মস্তিষ্কে গেঁথে গিয়েছিল সেই থেকে আর কখনো নিজেকে একা মনে হয়নি। মনে হয়নি এই তাবৎ পৃথিবীতে আর কোথাও কেউ নেই আমার।

 

জানো, যখন কেউ ইনসাল্ট  করে  বলে...

-আপনার তুমিটা কই? এতো তাড়াতাড়ি ভুলে কেনো গেলে?

আমার তুমি আমার সাথেই আছে। সে আমার হৃদয়ে আছে, আমার মনের মনিকোঠায় আছে। আমার স্বপ্নে আছে, আমার জাগরণে আছে।আমার কল্পনায় আছে, আমার নিঃশ্বাসে আছে। আমার বিশ্বাসে আছে।

 

জানো আমি হাসতে হাসতে দৃপ্ত কন্ঠে বলি ও আছে, ছিলো আর থাকবেও। গর্ব করে বলি পুরো পৃথিবী ওর বিপক্ষে গেলেও আমারই থাকবে। এমনকি পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও বলবে আবার যদি নতুন পৃথিবী জন্ম নেয়, তবে সে পৃথিবীতে আমি আবার জন্ম নেবো তোমার জন্য। আমি আবার ফিরে আসবো, আসবোই। তখন ব্যঙ্গ করে বলে...

-বাব্বাহ এতো বিশ্বাস!

আমি মিষ্টি হেসে বলি হ্যাঁ এতোটাই বিশ্বাস করি আমি ওকে।

 

-যদি কখনও ভুলে যায়?

 

আমি বিশ্বাস করি না সে আমাকে ভুলে যেতে পারে। যে নারীর প্রেমে লোহ/পাথর মানবের পাথর হৃদয়ে প্রেমের ফুল ফুটতে পারে সে নারীকে ভুলে যাওয়া যায় না কখনো। যে নারীর ভালোবাসা পাথরের বুক চিড়ে ঝর্ণার জল গড়াতে পারে সে নারীকে ভুলে যাবে এমন পুরুষ বোধহয় এই ধরিত্রীর বুকে নেই। শুধু এ জনম নয় আগামী কয়েকশ জনম চেষ্টা করলেও ভুলতে পারবে না।

শেষে আমার গায়ে অহংকারী তকমা লাগিয়ে দেয়।

 

হ্যাঁ অহংকারী আমি। আর হবোই না বা কেনো বলো? যখন মূল্যবান অপূর্ব সুন্দর মিষ্টি ঘ্রাণ দেওয়া গোলাপ ছেড়ে কেউ মূল্যহীন সাদামাটা পথের ধারে ফুটে থাকা বুনোফুল তুলে নিয়ে ভালোবেসে জড়িয়ে রাখে বুক পকেটে, ঘ্রাণহীন ফুলে মন মাতায় তখন বুনোফলের একটু, নাহ একটু নয় বরং অনেক বেশি অহংকার হবে বৈকি।

 

ভাবতেই অবাক হয়ে যাই এই আমি কখন এতোটা বদলে গেলাম! রাগী, জেদী, অভিমানী, ছিঁচকাদুনী আমি এখন শান্ত ধীরস্থির, ধৈর্য্যশীল পরিপূর্ণ নারী। যে আমি তোমাকে না দেখতে পেয়ে স্থির থাকতে পারতাম না, নাওয়া খাওয়া ভুলে যেতাম সেই আমি এখন আর তোমাকে দেখার জন্য বায়না করি না। তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করি না। এখন আমি বুঝতে শিখেছি যা আমার তা আমারই থাকবে আর যা আমার থাকবে না তা আমার ছিলোই না কখনো।

 

জানি তোমাকে লেখা চিঠি শেষ হবে না কখনও। তবুও আজ এখানেই ইতি টানছি। ভালো থেকো প্রিয়।

 

ইতি তোমার প্রিয়দর্শিনী💜💜💜

 

0 Shares

২৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ