সোনাবান মোবারক

উর্বশী ১৫ অক্টোবর ২০২০, বৃহস্পতিবার, ১২:৫২:০৮অপরাহ্ন অণুগল্প ১৮ মন্তব্য

।মাগরিবের নামাজ শেষ করে বাজারের পথে হাঁটা ধরেছে মোবারক মিয়া। আশ্বিনের কুয়াশায় গ্রামের রাস্তার ঘাসের শিশিরেরা পায়ে কাদার মতো জড়িয়ে যাচ্ছে।
আজকের চাঁদের আলো যেন বেশী মনে হয়,কারণ খুঁজতে থাকে।নাহ! কিছুই মনে আসছেনা।তবে এমন চাঁদের আলো আরও দেখেছে সে।

মোবারক মিয়া আপন মনে বিড় বিড় করে যেন বিরক্তির ভাব ফুটে উঠেছে।

এবারে রহিম মিয়ার মায়ের কথা মনে পরে।এমন একটা আশ্বিনের রাতে বারো বছরের কিশোরী সোনাবানকে ঘরে এনেছিলো সে। সেদিনও চাঁদের রাত ছিলো। রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে শেঁয়ালের ডাক শুনে শুনে বরযাত্রিরা গায়ের হাঁটা পথে এমনি কুয়াশায় ভেজা ঘাস ডিঙিয়ে বাড়ি এসেছিলো।

সেদিনের সেই রাতের কথা মনে পড়ে যেতেই ধক্ করে রহিম মিয়ার মা সোনাবানের কথা মনে হলে ডুকরে ওঠে মোবারক মিয়া। সময় কতো দ্রুত পার হয়। রহিম মিয়ার জন্মের সময় সোনাবান পরপারে চলে গেছে। অনেক কষ্ট পেয়েছিল। ভালোবাসা কাকে বলে মোবারক মিয়া জানেনা। লাঙলটা কাধে তুলে হালের বলদ নিয়ে সোজা ফসলের মাঠ।সংসারটা সামলাতে হিমশিম খেতো বারো বছরের সোনাবান।

কত রাতে এমন ঢলঢলে চাঁদ উঠতো।এমন শীত শীত সন্ধ্যার অন্ধকারে ভূতের মতো জমি থেকে সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতো মোবারক মিয়া। আসমানের চাঁদ তাকে টানেনি কখনো। ঘরের দাওয়ায় বসে থাকা কিশোরী বধু সোনাবানকে দেখলে যতটা শান্তি পেতো সে তার ছিটেফোটাও কোথাও পায়নি আজ অব্দি।

আকাশের দিকে তাকায় মোবারক মিয়া, পায়ে জড়িয়ে থাকা শিশিরের উপর এখন কেন যেন বিরক্ত লাগেনা তার। শুধু একরাশ কস্ট নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মনে হলো এক পশলা ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল।

বাজারের পথে যেতে যেতে এক মুহুর্ত মোবারক মিয়া থমকে যায়। একজন সোনাবান তার অস্তিত্বের সাথে এভাবে মিশে আছে কি করে সেটা তার বুঝে আসে না।

ভালোবাসা শেখেনি কখনো সে। তবুও তার মনে হয়,এটাই বোধহয় ভালোবাসা।
গ্রামের সহজ, সরল মানুষের চাওয়াও থাকে সীমিত।আর এই সীমিত চাওয়ার মাঝে কখন যে পাওয়ায় পরিণত হয় নিজেরাও টের পায়না বা বুঝে উঠতে পারেনা।
পৃথিবীর সব মোবারক ও সোনাবানেরা খুব ভাল থাকুক।
সবার প্রতি রইলো ভালোবাসা ও শুভ কামনা । 

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ