কিছুদিন আগে ফেইসবুকে একটি লেখা পোষ্ট করেছিলাম এমন " পর্যাপ্ত পিপিই পাবার পরেও ডাক্তারগণ কেন হাসপাতালে যান না? কেন কোনো হাসপাতালে সাধারণ রোগের রুগীদেরও ভর্তি করা হচ্ছে না? " লেখায় অনেকে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন। দুইজন ডাক্তার জানিয়েছেন তাদের অসহায়ত্বের কথা। এই দুজন ডাক্তারের একজন আমাদেরই সোনেলার ব্লগার।

প্রথম ডাক্তার তাঁর মন্তব্যে বলেছেনঃ
৩,৫৭,৩৫০ পিপিই দেয়া হয়েছে, ভালো কথা কিন্তু সেটা ডাক্তার নার্স পর্যন্ত সঠিক বন্টন হয়েছে কিনা সেটা কেউ দেখছে না। সেন্ট্রাল মেডিকেল  গুলোতে কেউ কেউ পেলেও বাকিরা নিজেরাই ব্যবস্থা  করেছে অনেকে। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশন, ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এইসব সংগঠন গুলোর নিজেরা ফান্ড করে কয়েক হাজার পিপিই দিয়েছে নিজেদেরই চেষ্টায়.. আর পেরিফেরির মেডিকেল গুলোর ডাক্তারদের দুর্দশার কথা আর না ই বলি। ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার ই আক্রান্ত হয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারপরেও তারা যতটুকু পারছে করছে। তাদের ও তো একটা প্রাণ আছে ভাই। পিপিই ওখান থেকে আসে ঠিকই, বাট ডাক্তার নার্স পর্যন্ত পৌঁছায় না।  এসব পেরিফেরির দিকের মেডিকেল গুলো পর্যাপ্ত প্রটেকশন পাচ্ছে না। তারা কিসের ভরসায় থাকবে বলেন? তাদের ও তো বাঁচার ইচ্ছে আছে, তাদের ফ্যামিলি আছে।

দ্বিতীয় ডাক্তার তাঁর মন্তব্যে বলেছেনঃ
সপ্তাহের সাত দিন পিপিই ছাড়াই ডিউটি করতেছি। PPE থাকুক বা না থাকুক, চাকরি রক্ষার্থে হাসপাতালে যেতেই হবে। কারা PPE পেলো, সেটার উত্তর দিবে প্রশাসন। একটা সিম্পল মাস্ক, গ্লাভস আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাই না, আর আপনারা আছেন PPE নিয়ে! হাতে গোণা কয়েকটা সেন্টারে PPE পাঠানো হয়েছে সীমিত পরিমাণে। আমাদেরকে PPE ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আগের চেয়ে বেশি ডিউটি করতে হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে সাধারণ  কাপড়ের তৈরী মাস্ক আর ক্যাপ দেয়া হয়েছে ব্যবহারের জন্য ( ফিচার ছবি দেখুন ) । এভাবেই প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি।

আমার পর্যবেক্ষনঃ
তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে ? সরকার থেকে যে পিপিই দেয়া হচ্ছে, তাহলে কি তা মিথ্যে সংবাদ? নাকি দেয়া ঠিকই হচ্ছে তবে সঠিক ভাবে বিতরণ করা হচ্ছে না? আমার মনে হচ্ছে এই যে বিতরণ করা পিপিই, তা যথাযথ ভাবে কর্মরত ডাক্তার এবং নার্সদের কাছে পৌছাচ্ছে কিনা তা তদারকি করছে না কেউ। এই সংকটকালীন সময়ে বিতরণ করা পিপিই গুলো হয়ত গুদাম ঘরে পরে আছে। যেহেতু এর তদারকিতে কেহ নাই, তাই ডাক্তার নার্সদের কাছে পৌছাচ্ছে না।  আর একারনেই  সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। আমাদের জেলা শহরের সরকারী হাসপাতালে কোনো ডাক্তার ছিল না গত ৪ এপ্রিল, এটি একটি উদাহরন। পত্রিকা এবং টিভি নিউজে দেখছি, সাধারণ রোগীরা তাদের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না হাসপাতালে, কোনো রোগীকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি নিচ্ছে না।

এই সময়ে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সেবার প্রতিষ্ঠান ( সমস্ত হাসপাতাল ) , স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট  (আইইডিসিআর), স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় , প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষয়ক শাখার মধ্যে একটি নিবিড় সমন্বয় এর দরকার। করোনা ভাইরাস সনাক্ত করনের টেস্টের কেন্দ্র আরো বৃদ্ধি করা, সম্ভব হলে প্রতি জেলায় একটি স্থাপন করা প্রয়োজন।

শুধু চিকিৎসা খাত নয় এই সমন্বয়হীনতা প্রায় সমস্ত কিছুতেই আছে। বিশেষ পরিস্থিতি বিধায় সরকার জনগনকে বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু একশত ভাগ পালন করা হচ্ছে বাসায় থাকার নির্দেশ?

একদিকে সরকার গন পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন, রাস্তায় বেড় হতে নিষেধ করেছেন। অন্যদিকে গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ হঠাৎ করে চালু হবার ঘোষণায় লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী রাস্তায় বেড় হয়ে আসলো। তারা পায়ে হেঁটেও অনেকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা এসেছে। যদিও গার্মেন্টস আবার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে পুনরায়, এখন এই সমস্ত লোক আবার পায়ে হেঁটে বাড়ি যাবে? গন পরিবহন তো বন্ধ। এদের মধ্যে যদি কারো করোনা থেকে থাকে তবে কত মানুষ একটা রিস্কের মধ্যে পরে গেলো! এখানেও সরকারের সাথে গার্মেন্টস মালিকদের সমন্বয়হীনতার দিকটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমাদের হাতে আর সময় নেই, আজ একদিনেই নতুন সংক্রমণ ধরা পরেছে ১৮ জনের।
আগামীতে আরো কঠিন দিন আসবে, এটি ধরে নিতে হবে আমাদের।
সমন্বয়হীনতার অবসান হোক।

0 Shares

৩৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ