শূণ্যতার সুখে ভুগতে

সুরাইয়া পারভীন ১০ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ০৮:৩৯:৩২অপরাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৩ মন্তব্য

আমাদের পাড়ায় প্রথম আমাদের ঘরে টিভি এসেছিলো। ঐ টিভিটা সাদাকালো ছিলো আর ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হতো। কারণ তখনও আমাদের পাড়ায় বিদ্যুৎ ছিলো না।
আমাদের টিভিতে দুটো চ্যানেল ছিলো। একটা বিটিভি আর একটা কলিকাতা বাংলা। আমার মা খুব সৌখিন আর বিনোদন প্রিয় মানুষ। আমি তখন ১০/১২ বছরের কিশোরী। টিভির অনুষ্ঠান নিয়ে আমার মাথা ব্যথা ছিলো না। তবে শুক্রবার যখন সবাই আসতো, তখন সবার সাথে আমি দেখতাম ‌। দেখতাম বলতে ঐ আর কি আমাদের টিভি আছে বলে একটা ভাব দেখাতাম। ছোট মানুষ কিনা? সে যা হোক।

 

একদিন বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে দেখি মা একটা নাটক দেখছেন। কলকাতা চ্যানেলে। নাটকের নায়িকা যে তাকে দেখেই আমার চোখ আটকে গেলো। ওহ মা কি সুন্দর দেখতে! বিটিভির নায়িকাদের মতো না। অদ্ভুত সুন্দর। মেয়েটির পরনেও ছিলো দারুণ সুন্দর ড্রেস। রাতের সিন চলছিলো। মেয়েটি বাঁধা চুল গুলো খুলে চিরুনি করে শুয়ে পড়লো। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে। সবচেয়ে অদ্ভুত লাগেছিলো যা তা হলো মেয়েটা কথা বলছে তবে মুখ নড়ছে না। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম মুখ বন্ধ অথচ কথা বলছে কি করে? মা বললেন খেয়াল দেখছে। ঐ কথা গুলো আগের পর্বে হয়ে গেছে। তারপর যতোটা সম্ভব আমাকে বোঝার চেষ্টা করে। সেদিন কতোটা বুঝেছিলাম জানি না। এখন কিন্তু বুঝি।
আস্তে আস্তে মায়ের থেকে সব জেনে নিলাম নাটকটা সম্পর্কে। নাটকের নাম ছিলো খুব সম্ভবত স্রোত।
গল্পটা ছিলো এ রকম। মেয়েটি অনেক ধনী। অনেক অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা গাড়ী বাড়ি ছিলো। কিন্তু সুখ ছিল না (যদিও সুখ বলতে তখন হাসি মাখা মুখ বুঝতাম) যেহেতু তার মুখে হাসি ছিলো না তাই ধরে নিয়েছিলাম সে অসুখী। মেয়েটির কেউ ছিলো না। প্রচণ্ড একা ছিলো। ভালো লেগে গেলো। নাটকটা দেখতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে আমি নিজেকে ঐ মেয়েটির মধ্যে দেখতে শুরু করলাম। আমি সেই থেকেই মনে মনে ঠিক করেছিলাম। আমারও ঐ নায়িকার মতো অনেক অর্থ সম্পদ টাকা পয়সা থাকবে কিন্তু কেউ থাকবে না, সুখ থাকবে না। একা একা থাকবো আমি।

অল্প বয়সের ভালোলাগাটুকু এতোটা মস্তিষ্কে গেঁথে গেছে যে আর কিছুতেই সেই ভাবনা থেকে বের হতে পারিনি। তবে মাঝে মাঝে কারো সংস্পর্শ পেয়ে সেই ভাবনা সুপ্ত থাকলেও পরমুহূর্তে আবার জাঁকিয়ে বসে। আবারও ইচ্ছে করে ঐ নায়িকার মতো শূণ্যতার সুখের ভুগতে। একা জীবন যাপন করতে
সবার সাথে থেকে একা থাকার চেয়ে একদম একা নিজের মতো থাকায় ভালো।

আমি খুব চাই আমার অল্প বয়সের ভালোলাগায় হারিয়ে যেতে। ঐ জীবনটাতে ফিরতে। একাকীত্বটাকে উপভোগ করতে। কিন্তু এখনো তা সম্ভব করে উঠতে পারিনি। আমার পিছুটান আমার সমাজ হয়তো কখনোই সেই সুখটুকু উপভোগ করতে দেবে না। আমি চাইলে সব ছেড়ে একা বাঁচতে পারবো না। হয়তো এখন পারছি না কিন্তু এই অসম্ভব কে একদিন ঠিকই সম্ভবে পরিণত করবো। করবোই ইনশাআল্লাহ।

0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ