লাগ ভেল্কি লাগ

ইঞ্জা ১৭ আগস্ট ২০২০, সোমবার, ১০:০৮:০০অপরাহ্ন সমসাময়িক ৩২ মন্তব্য

চীনে তখন করোনার প্রাদুর্ভাব চলছে, রোগটি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, এমন সময় ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিজ সচিবালয়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি জানাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বললেন, এই ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে না ভাইরাসটি খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়েছে।

এটি যাতে বাংলাদেশে আসতে না পারে, এ জন্য দেশের সব বন্দরে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে।

এ বক্তব্যের ঠিক ১৫-১৬ দিনের মাথায় ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়, পরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে এবং গতকাল পর্যন্ত ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৫৭ জন। এমনকি দেশের বড় বড় শহরসহ ৩০টি জেলায় এবং সারা দেশে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের সংখ্যায় সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। 

নতুন রোগী বেশি বাড়ছে এমন দেশগুলোর বৈশ্বিক তালিকায় আবারও বাংলাদেশের নাম এসেছে, প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের দিন থেকে হিসাব করলে প্রতিদিন গড়ে ২২ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে।

 

এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবার বললেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে, ইতিমধ্যে বাংলাদেশে কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। মৃত্যুর হারও  কমেছে, সুস্থতা বেড়ে গেছে, বেশিদিন লাগবে না বাংলাদেশ থেকে এমনি কভিড চলে যাবে, ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে কি না জানি না।

এমনকি বাংলাদেশ অনেক অনেক ভালো অবস্থানে আছে বলেও মন্তব্য করেন  জাহিদ মালেক, তিনি বলেন, করোনায় মৃত্যুর হার জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম, আমাদের সুস্থতার হার অনেক ভালো, ৬০ শতাংশের বেশি, সংক্রমণের হার কমে আসছে, হাসপাতালের ৭০ শতাংশ বেড খালি।

অথচ কুরবানির পর এখন কোভিড হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের ভীড় পরিলক্ষিত হয়, কোথাও কোথাও করোনা টেস্টের জন্য লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়, আবার টেস্ট করার জন্য ধাক্কাধাক্কিও হচ্ছে এমন খবর পাওয়া যায়।

 

শুধু গত শনিবারই নয়; করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে ও পর থেকেই করোনাকে ঘিরে নানা ধরনের বক্তব্যের কারণে বেশ আলোচিত ও সমালোচিত এই মন্ত্রী নানা সময় তিনি করোনা নিয়ে এমন সব কথা বলেছেন, যা রীতিমতো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। 

বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন কর্মকর্তারা, এমনকি করোনা নিয়ন্ত্রণে কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে ভুলবার্তা গেছে। 

উনার বক্তব্য বিজ্ঞানসম্মত না হওয়ায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব বক্তব্যে প্রশ্ন উঠেছে করোনা বিষয়ে মন্ত্রীর সঠিক জ্ঞান ও টিমওয়ার্ক নিয়ে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, মন্ত্রী যদি করোনার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ হতেন, উনি যদি কোনো গবেষণা বা সার্ভেকে গুরুত্ব দিতেন, তা হলে ওনার মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা বের হতো না, আমাদের দেশের ক্ষতি হতো না, এ ধরনের বক্তব্যে আমাদের দেশের আসলে ক্ষতি হচ্ছে।

এই বিশেষজ্ঞ মন্ত্রীর এসব কথায় হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে কর্মরত স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনগণের মধ্যে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন। 

তিনি দেশ আরও বলেন, আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, যখনই মন্ত্রী বা উচ্চ পর্যায় থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসে, বক্তব্যের পরে কিন্তু জনগণের মধ্যেও তার প্রভাব পড়ে, কিছু হবে না ভেবে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে, স্বাস্থ্যবিধি মানে না, পরীক্ষা কমে যায়, যা হচ্ছেও।

 

নানা বক্তব্যের কারণেই মার্চ থেকেই আলোচনা ও সমালোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, এ নিয়ে বিভিন্ন সময় মন্ত্রীর সমালোচনা করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন, মানববন্ধন পর্যন্ত হয়েছে। 

এমনকি জাতীয় সংসদে গত ৩০ জুন বাজেট নিয়ে আলোচনাকালে স্বাস্থ্য খাতের নানা অসামঞ্জস্যের বিষয় তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপসারণ দাবি করেন কয়েকজন সাংসদ, সে পরিপ্রেক্ষিতে কথা বলতে গিয়ে আবার নতুন আলোচনার জন্ম দেন মন্ত্রী। 

তিনি সেদিন বলেন, ‘আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে যে আমাদের ভেন্টিলেটর লাগবে, এটা নিয়ে বিরাট হইচই কিন্তু দেখা গেল ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই, ভেন্টিলেশনে যারা গেছেন, প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন, আমাদের চারশ ভেন্টিলেটর রয়েছে। তার মধ্যে ৫০টাও ব্যবহার হয়নি, ৩৫০টিই খালি পড়ে আছে কারণ, লোকে (এটা) জানত না তখন। ’

হাউ ফানি বলবো নাকি দুঃখজনক বলবো বুঝতে পারছিনা। 

 

‘ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই’- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর এ নিয়ে তখন বেশ আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়, আসলেই ভেন্টিলেটরের দরকার আছে কি না সে নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয় সাধারণ মানুষের মধ্যে। 

মন্ত্রীর কথাকে অমূলক বিবেচনা করে তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর এই দুটোরই প্রয়োজন আছে, কারণ, কিছু রোগী অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম এবং নিউমোনিয়াতে চলে যেতে পারেন, পাশাপাশি কো-মরবিডিটিও থাকতে পারে,  সেক্ষেত্রে রোগী এমন একটা পর্যায়ে যেতে পারে, যখন তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপ্লাই দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে, সুতরাং এটার কোনো বিকল্প নেই। ভেন্টিলেটর নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের যৌক্তিকতা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটা বৈজ্ঞানিক নয়, তার এ ধরনের মন্তব্য করা সঠিক হয়নি", বুঝেন অবস্থা, একেই বলে অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী। 

 

সংক্রমণের যখন ঊর্ধ্বগতি, ঠিক তখনই গত বুধবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা স্বাস্থ্য বুলেটিন, এমনকি সেটাও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই হয়েছে বলে জানা গেছে, এ ব্যাপারে পরদিন গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ সংক্রান্ত এক সভা শেষে দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমায় করোনা বুলেটিন প্রচার বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে এসেছে, তাই সরাসরি ব্রিফিং না করে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমনকি আগামী মাসে বেশ কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল করোনার জন্য চিহ্নিত করে বাকি হাসপাতাল অন্যান্য রোগের চিকিৎসার (নন-কভিড) জন্য নির্ধারণ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

মানে হলো আমাদেরকে মারার তালে আছেন মন্ত্রী সাহেব। 

 

বুলেটিন বন্ধ ও করোনা হাসপাতাল কমানো এই দুই সিদ্ধান্তেও বেশ সমালোচনা হচ্ছে মন্ত্রীর, বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ আবার আগের মতো অসচেতন হবে, তারা মনে করবে দেশ থেকে করোনা বিদায় নিয়েছে।

 

এ ব্যাপারে কভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি, পরামর্শক কমিটি হাসপাতাল বন্ধের বিষয়ে কোনো পরামর্শও দেয়নি। এতে ধারণা হবে, আমাদের বোধহয় সব ‘মিটে গেছে’। এতে করে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ যেসব স্বাস্থ্যবিধিতে সাধারণ মানুষ অভ্যস্ত হয়েছিল, সেগুলোতে ঢিলেমি আসবে।

 

আর অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, প্রথমত বুলেটিন বন্ধ করাটা ছিল অত্যন্ত বাজে সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে এখন যোগ হচ্ছে হাসপাতাল কমানোর সিদ্ধান্ত,  হাসপাতাল বন্ধ করার বিষয় নয়, বর্তমান পরিস্থিতি কী, সামনে কী পরিস্থিতি হতে পারে সেভাবে আমাদের কভিডের জন্য ব্যবস্থাপনা এমনভাবে রাখা দরকার যাতে প্রয়োজনে সংকুচিত এবং চাহিদা অনুযায়ী প্রসারিত করা যায়।

 

কভিড মোকাবিলায় যে জাতীয় কমিটি করা হয়েছে, পদাধিকার বলে সে কমিটির চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী,  অথচ তাকে কিছু না জানিয়েই নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কমিটি- এমন অভিযোগ করেন স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। 

আরেক দফা আলোচনার জন্ম দেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের বৈঠকে মন্ত্রী অভিযোগ করেন, কমিটির সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হচ্ছে না, কমিটি যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তার সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয় না, তিনি যেহেতু কমিটির প্রধান তাই বিষয়টি তার জন্য বিরক্তিকর, নিরুপায় হয়ে তিনি সচিব সাহেবকে বলেছেন, তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না নিলেও অন্তত পরামর্শ যেন করে সে বিষয়ে আলোচনা করতে, অন্য অসুবিধার জন্য নয়, দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের সদুত্তর দেওয়ার জন্য তার এ বিষয়টা জানা জরুরি।

 

গত এপ্রিলে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক এর মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, তার ছেলে, স্বাস্থ্যসেবা সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জড়িয়ে নানা ধরনের আলোচনা হতে থাকে। 

অবশ্য তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ওইসব ‘খবরের’ প্রতিবাদ জানায় সিএমএসডি কর্তৃপক্ষ।

এমনকি দেশে যখন করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মারাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে, ঠিক তখনই গত ১৩ মে ‘করোনা তেমন কোনো ভয়ানক রোগ না’ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য ঘিরে বিভ্রান্তি দেখা দেয় বিভিন্ন মহলে, সেদিন মহাখালীর বিসিপিএস মিলনায়তনে চিকিৎসক ও নার্সদের যোগদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু কভিড-১৯ ভাইরাস তেমন কোনো ভয়ানক রোগ বলে আমি মনে করি না, অন্তত বাংলাদেশে এই ভাইরাস তেমনভাবে মৃত্যু ঘটাচ্ছে না।

 

এর আগে গত জুলাই মাসে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে টানাপড়েন দেখা দেয়, এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজিকে সরে যেতে হয়।

 

সর্বশেষ গত শনিবারের বক্তব্যকে ঘিরে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী, করোনা এমনি চলে যাবে ও ভ্যাকসিন লাগবে না- মন্ত্রী এমন বক্তব্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলে মত দেন অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, তিনি বলেন, তিনি (মন্ত্রী) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা রাজনৈতিক বক্তব্য, বিজ্ঞানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। 

বিজ্ঞান বলছে, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এবং মৃত্যুও হচ্ছে, করোনা নিয়ন্ত্রণের দুটো উপায়,  একটা হলো ভ্যাকসিন, আরেকটা হলো ডব্লিউএইচও’র নির্দেশনা ব্যক্তি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক, সব পর্যায়ে প্রয়োগ করা, এখন এই দুটোর ব্যাপারেই গুরুত্ব দিতে হবে।

 

এর আগে গত বছরের আগস্টে ডেঙ্গুর সময়ও ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে বিদেশ সফরে যাওয়ায় এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন। 

তখন বলা হয়, ডেঙ্গু যখন মহামারী আকার ধারণ করেছে তখন আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে যান পরিবারিক সফরে, সে বছরের ৬ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে অথচ দেশে গত বছর দেশের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী, তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত ও হতাশ, এই ধরনের বক্তব্য এরকম দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে  মানায় না, মহামারী নিয়ন্ত্রণে দুইটি বিষয় খুবই জরুরি। একটি হলো তথ্য উপাত্ত। সঠিক তথ্য থাকতে হবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো সেই সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। আমরা শুরুতেই দেখলাম, আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। অথবা থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর উদাসীন ছিল। এই উদাসীনতার কারণে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাপনা নিতে পারেননি। সেটার জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হলো জনগোষ্ঠী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সরকারকে। সরকারের জনপ্রিয়তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলল। জনগোষ্ঠী ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলো ও মৃত্যুবরণ করল।

 

গত শনিবারের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবার একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে কি না, সেটা মনে হচ্ছে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন এই চিকিৎসক নেতা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কোনো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এমন বক্তব্য দিচ্ছেন কি না, জানি না। যদি তা না করেন তাহলে আবারও আরেকটা বিপর্যয় অনিবার্য। উনি ভ্যাকসিন নিয়ে যা বলেছেন, বিপর্যয় অনিবার্য।

 

এই বিএমএ নেতা বলেন, ওনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কোনো হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে কি না, উনি কী ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটা নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। উনি রাজনৈতিক মন্ত্রী, ওনার সরকার সেটা দেখবে। আমি শুধু বলব উনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা কোনো অবস্থাতেই স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে যায় না। তার এ বক্তব্য স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ও চিত্রের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। আমি বলব, পৃথিবীর করোনা সম্পর্কে ওনার কোনো ধারণাই নেই, অথবা কেউ তাকে সে ধারণা দিচ্ছে না, অথবা ধারণা নিলেও উনি সেই ধারণা পোষণ করেন না। উনি স্বাস্থ্যবিজ্ঞানকে উপেক্ষা করে ক্রমাগত বক্তব্য দিয়েই চলেছেন।

 

একইভাবে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন সময় মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের অন্যতম কারণ হলো প্রত্যেকটা কাজের একটা প্রসিডিউর আছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ একটা টিম ওয়ার্ক। বড় কাজ। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের অনেক বিষয় আছে। এটা একটা বিশাল টিমওয়ার্ক। সবগুলো মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। বিমান বন্ধ করতে হবে, সে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। অন্ততপক্ষে তার অধীনস্ত যে মন্ত্রণালয়, তাদের নিয়ে তো কাজ করতে হবে। তাদের নিয়ে কাজ করতে হলে একজন নেতার সঠিক নেতৃত্ব দরকার। সেই নেতৃত্বটা অনুপস্থিত।

 

আমাদের মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কোনো টিমওয়ার্ক নেই। কারিগরি বিষয় নিয়ে তার টিম ওয়ার্ক হওয়ার কথা অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে, তার পলিসি মেকিং করার জন্য তার টিম ওয়ার্ক হবে সচিব, অতিরিক্ত সচিবদের সঙ্গে। এসব অনুশীলন যদি রোজ হতো, উনি যদি ২৪ ঘণ্টা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পড়ে থাকতেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে বসতেন, তাহলে করোনার ব্যাপারে সবকিছু জ্ঞাত হতেন। আলোচনা করলে শিখতেন। করোনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান হতো। উনি এসব সুযোগ নেননি। এসব করেন না। উনি এমন এক জগৎ থেকে আসেন ও এমন সব কথা বলেন, সেই কথাটা তখন বর্তমানের সঙ্গে খাপ খায় না। তখন একটা হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই ধরনের কথা যখন বলেন, তখন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের জন্য বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। কারণ মন্ত্রীর কথা তো অধিদপ্তর উড়িয়ে দিতে পারে না। তখন তাদের কাছে একটি ভুল বার্তা যায় যে, রোগী কম করে দেখাতে হবে, টেস্ট কম করতে হবে। 

সাধারণ মানুষের কাছেও ভুল বক্তব্য যাচ্ছে, তারা মনে করছে তাদের আর সাবধানতার দরকার নেই,  বাংলাদেশ করোনা অর্জন করে ফেলেছে, আমাদের মাস্ক পরার দরকার নেই।

 

তাহলে আপনারাই বলুন এমন মন্ত্রী যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়  চালায় তাহলে দেশের মানুষ সুস্থ থাকবে কি করে, মানুষ বাঁচবে কি করে? 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন মন্ত্রী দিয়ে কি করবেন যিনি স্বাস্থ্যখাতকে আরও দূর্বল করে তুলছেন?

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দয়া করে এমন মন্ত্রীকে দ্রুত বরখাস্ত করে সৎ এবং স্বাস্থ্য  বিশেষজ্ঞ কাউকে দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চালান, দেশ ও জাতিকে বাঁচতে দিন। 

 

সমাপ্ত।

সূত্রঃ দেশ রুপান্তর, বিডি২৪ নিউজ। 

ছবিঃ গুগল।

0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ