সেই রাতটা ছিলো শুক্রবার। কেউ ছিলো না বাসায়। আর আমার এক বদ অভ্যাস আছে। কেউ বাসায় না থাকলে আমার রান্না করতে ইচ্ছে করে না। খেতে তো নয়ই। সেদিনও রান্নাবান্নার বালাই থেকে মুক্তি নিয়ে ঘরে টুকটাক যা ছিলো সারাদিন তাই খেয়েছি। রাতে এককাপ লিকার চা আর দুটো টোস্ট বিস্কুট খেয়েছি। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে দরজা ছিটকিনি লাগিয়ে বেডরুমে এলাম। বুক সেলফ সত্যজিৎ রায়ের গল্প ১০১  বইটি নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলাম।

 

হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আমি প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত অনুভব করলাম। এমন ক্ষুধা যেনো এ জীবনে আজই প্রথম লেগেছে। কিন্তু এতো ক্লান্ত লাগছিল যে উঠতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু না আর পারছি না, এবার যদি উঠে কিছু না খাই তবে এক্ষুনি আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবে। উঠতে যাবো এমন সময় মনে হলো ঘরে তো পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। দু'টো বিস্কুট ছিলো তা আগেই খেয়ে নিয়েছি। এখন কী খাবো? খালি পেটে পানিও তো খেতে পারি না গা গুলিয়ে যায়। উফফ! বড্ড রাগ হচ্ছে

 

ইশ্ পেটে যেনো ছুঁচো-ইঁদুর লাফালাফি করছে। কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না। এপাশ ওপাশ করছি আর বিড়বিড় করে বলছি এমন তো অনেক সময় গেছে টানা তিনদিন না খেয়ে থেকেছি। কই তখন এতো খুদা লাগেনি। যা হোক অনেক কষ্ট হলেও রাত পার করতে হবে। যদি ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাই তবে আর কি করার। ডান পাশ ফিরে পেটে কুশন চেপে চোখ বন্ধ করার চেষ্টা করলাম।

হঠাৎ পিঠে কারো হাতের আলতো স্পর্শ অনুভব করলাম।

বাসায় তো কেউ নেই, তবে যে হাতের স্পর্শ পেলাম। ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো। পাশ ফিরে হতভম্ব হয়ে গেলাম।

 

-এমন ভাবে চোখ ছানাবড়া করে তাকিয়ে আছো যেনো ভূত দেখছো! এই উঠো

-অ্যাঁ।

-অ্যাঁ নয় হ্যাঁ। উঠো দ্রুত

-তুমি কখন এলে? আর ঘরে ঢুকলে কিভাবে? কলিং বেলের আওয়াজ হলো না। কে খুলে দিলো দরজা?

-বলছি বলছি, আগে উঠো দ্রুত টেবিলে আসো। এভাবে দিনের পর দিন না খেয়ে থাকলে ওপারে যেতে বেশি সময় নেই।

-হা হা হা হা। তবে তো ভালোই হয় বলো। তোমাদের আর আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।

-এই থামো তো। একদম বাজে বকবক করবে না।

-আচ্ছা উঠছি। আগে এটা বলো তুমি কি করে জানলে আমার ক্ষুধা লেগেছে?

-বলছি তো সব বলবো। চলো আগে খেয়ে নাও

-হুম চলো।

 

ও নিজেই খাবার প্যাকেট থেকে বের করে প্লেটে নিয়ে এলো। বললো

-নাও খেয়ে।

 

ইশ্ আমাদের দুজনের ই পছন্দের ডিস গরুর মাংস ভুনা, সাদা ভাত, ডাল, সবজি। আমি দুষ্টামি শুরু করলাম নিজের হাতে কিছুতেই খাবো। আজ ও আমায় খাইয়ে দিক

-আমার খেতে ইচ্ছে করছে না এখন। তারচেয়ে বরং তুমি খেয়ে নাও। তুমিও তো কিছু খাওনি।

 

-হুম বুঝেছি। আর কতোদিন এভাবে জ্বালাবে আমাকে? এরকম ছেলেমানুষীর কোনো মানে হয় না। দিন দিন বড্ড অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো কিন্তু। আমার একটা কথাও শুনছো না। নাও হা করো আর খেয়ে আমাকে উদ্ধার করো।

-তুমি আগে নাও। তারপর আমি খাচ্ছি।

-তুমি এভাবে না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দাও তো দাও সাথে আমাকেও কষ্ট দাও। কেনো করো এমন?

-এই তুমি কি করে ঘরে ঢুকলে? দরজা বন্ধ ছিলো তো।

-দরজা বন্ধ থাকলে আমি এলাম কী করে? এতো খামখেয়ালি কেনো তুমি? বড়সড় একটা বিপদ না বাঁধালে হুশ হবে না দেখছি।

-মানে কি! আমি তো ছিটকিনি আটকেই ঘুমাতে গেলাম আর তুমি বলছো খোলাই ছিল।

-থাক থাক অনেক হয়েছে। আপনি এতো দায়িত্বশীল হলে, মনে করে দরজা নক করলে তো হয়েই যেতো। আমাকে আর এতো টেনশনে থাকতে হতো না।

-আমি কিন্তু সত্যি বলছি, কেনো বিশ্বাস করছো না বলো তো?

-কেনো বিশ্বাস করবো বলো তো? যখন আমি খোলা দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেছি।

-তাও তো ঠিক। কিন্তু...

-এবার একটু নিজের যত্ন নিতে শিখো। আর কত এভাবে চলবে। অফিস থেকে ফিরে মাঝরাত্তিরে তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে হচ্ছে।

-আচ্ছা সরি আর করবো না এমন। এই তুমি কী করে জানলে আমি ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছি?

 

-আমি ছাড়া কে জানবে, কে খোঁজ রাখে তোমার? কেনো যে এখানে এখনও পড়ে আছো কে জানে? আমি আর এতো টেনশন নিতে পারবো না। হয় আমার কাছে চলে আসো না হয় নিজের প্রতি কেয়ারিং হও।

 

-হুম বুঝলাম এই দেখ কান ধরেছি। আর কক্ষনো হবে না এমন। সত্যিই খুব ক্ষুধা লেগেছিল জানো। মনে হচ্ছিল বোধহয় মরেই যাবো।

 

আমরা দুজনেই খাওয়া শেষ করে বেড রুমে এলাম। ও বললো শুয়ে পড়ো‌।

-আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘুমিয়ে গেলেই আমি চলে যাবো।

-আজ থেকে যাও না। কাল সকাল সকাল না হয়

-হুম সে দেখা যাবে আগে ঘুমাও।

 

আমি ওর বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম। পশ্চিম পাশের জানালা দিয়ে পর্দা ভেদ করে আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলে এপাশ ওপাশ দেখলাম। ও গেলো কই? দ্রুত উঠে সবগুলো ঘর দেখলাম, ওয়াশরুম দেখলাম। নাহ কোথাও তো পাচ্ছি না। কোথায় ও? কোথায় কোথায় গেলো? আমাকে না বলেই চলে গেলো! হঠাৎ দরজায় চোখ গেলো। দরজা তো ভেতর থেকে লাগানো। তাহলে তো  ও বের হয়নি। কিন্তু ঘরেও তো কোথাও নেই। টেবিলে চোখ পড়তেই দেখি রাতের এঁটো বাসন, খাবারের প্যাকেট পড়ে রয়েছে। আমি খাবার নিয়ে আসিনি তবে এই প্যাকেট এলো কোথা থেকে? তবে কী তুমি সত্যিই এসেছিলে আমার ঘরে?

 

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ