ঈদুল আজহা, কোরবানির ঈদ। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হবার ঈদ। নিজের মনের পশুত্বকে বিসর্জন দেয়ার ঈদ। কিন্তু আদৌ কি আমরা তা পেরেছি?

এই কোরবানির কথাই ধরুন। লোক দেখানো লক্ষাধিক টাকার কোরবানি যেন সমাজের উঁচুতলার মানুষদের নিজেদের একে অপরের সাথে একধরনের অসুস্থ প্রতিযোগীতা চলছে।

কোরবানির মাংস ভাগবাটোয়ারা করতে গিয়ে গরীব অসহায়দের বঞ্চিত করছি নিজের অজান্তেই। হলো কি মনের পশুত্ব বিসর্জন?

পাড়াপড়শি কেমন আছে খোঁজ নেয়ার সময় কই? এমনকি আত্মীয় স্বজনদের পর্যন্ত খোঁজ নেইনি অনেকেই এই ঈদের দিনেও। পারলাম কি অমানবিকতাকে বিসর্জন দিতে?

একবার ভাবুনতো সেইসমস্ত বাবা মায়ের কথা যারা সন্তান জন্ম দিয়েও আজ তাদের সাথে নেই। অসহায় একাকী পড়ে আছেন বৃদ্বাশ্রমে। নিজেদের অসহায়ত্ব ঢাকতে তারা চোখের কান্নাটুকুও কাউকে দেখাতে পারছেন না। তাদের সন্তানেরাও কোরবানি দিয়েছে। কিন্তু পশুত্ব বিসর্জন দিতে পেরেছে কি?

আসি কোরবানির চামড়া প্রসঙ্গে। কোন এক অদ্ভুতরস সঞ্জীবনী ক্লিষ্টতার যাঁতাকলে পিষে চামড়া শিল্পের প্রান্তিক পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের মুখে হাসি নেই। হাসি এসেছে যারা গাছের মগডালে বসে সঞ্জীবনী সুধা পান করে যাঁতা ঘোরাচ্ছে তাদের মুখে।

সরকার নির্ধারিত মুল্যে কেনা চামড়ায় এই প্রান্তিক পর্যায়ের লোকেরা আর লাভের মুখ দেখছেনা। চামড়ার ন্যায্য মুল্য নেই কিন্তু ফ্যাক্টরিতে বানানো জুতার দাম নিম্নমুখী হয়েছে এমন একটাও নজীর নেই।

বিষয়টি অবশ্যই গভীর ভাবনার এবং উদ্বেগজনক। এ কথা গত ক'বছর থেকেই আমরা বলে আসছি এবং এ ঘটনাটি দায়িত্বশীলদের তাদের নিজের মনের পশু কোরবানির অন্তরায় বলেও মনে করি।

আমার চার দশকের জীবদ্দশায় এই প্রথম দেখলাম চামড়া কিনতে কেউই আসেনি। চামড়াটি নষ্ট না করে এতিমখানায় দান করে দিয়েছি। আগামীবছর থেকেও একই কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।

পরিশেষে আর একটি কথা। ফেসবুকে অনেকের লাইভ দেখলাম। কারও গরু কোরবানি লাইভ, চামড়া ছড়ানোর লাইভ। একজনতো গরুর হৃৎপিন্ড হাতে নিয়ে লাইভে এসেছে। সেলুকাস!

এদের জন্য করুণা হয়। এরা ফেসবুকে, বাজারে ঘাটে মনের পশু কোরবানির ওয়াজ নসিহত করে সেই ফেসবুকেই নিজেদের বনের পশু প্রমাণ করলো। আমরা পারলাম কি মনের পশুকে কোরবানি দিতে? একটু ভেবে দেখবেন সবাই।

(ছবি- নেট থেকে)

0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ