মধ্যদুপুরে পরীর হাতছানি

সুরাইয়া পারভীন ১৯ এপ্রিল ২০২০, রবিবার, ১০:৫০:৩১অপরাহ্ন গল্প ২৫ মন্তব্য

জনি আর রনি ওরা দুই কাজিন। জনির থেকে রনি প্রায় তিন বছরের ছোট। তবুও তাদের মধ্যে দারুণ মিল। অনেকটা সময় ওরা একসাথে থাকে। জনি একটু শান্তশিষ্ট হলেও রনি প্রচণ্ড দুরন্ত। রনি সারাক্ষণ গাছে গাছে থাকে।  আম, জাম, তেঁতুল, বরই, পেঁপে, পেয়ারা আরো যতো যা আছে তা রনি জোগাড় করে গাছ থেকে। আর জনি শুধু শুধু ভাগ নেয়। যা হোক এমনি করেই দারুণ চলছিল ওদের দিন কাল।

ওদের বাড়ির পাশে বিশাল এক জঙ্গল আছে। জঙ্গলটার নাম তালপুকরা। ঐ  জঙ্গলে মানুষের যাতায়াত ছিলো না। কারণ জঙ্গলটা জ্বীন, ভূত, পেত্ন এমনকি কন্দকাটাও ( মাথা কাটা ভূত। অর্থাৎ যে মানুষ গুলো সুইসাইড করে কিংবা জ্বীন ভূতের কারণে মরে তাদের মাটি দেবার পর মাথা কেটে নেওয়া হয় তুকতাক করার জন্য। আর সেই মাথাকাটা লাশ গুলো হয় কন্দকাটা ভূত)আছে। তাই যে কারোরই আত্মা কেঁপে উঠবে ঐ জঙ্গলে যাবার কথা শুনলে।

একদিন জনি ও রনি ঠিক করলো ঐ জঙ্গলে যাবে। কারণ  ওখানে একটা বরই এর গাছ ছিলো আর তাতে লাল হলুদ সবুজ বরই এর ভারে গাছ  প্রায় ভেঙে পড়ে এমন অবস্থা। গাছ ভর্তি বরই কিন্তু কার সাহস আছে তা নামিয়ে আনবে। তো ওরা ঠিক করলো ঐ জঙ্গলে যাবে আর বরই খাবে। কিন্তু ওরা যাবে কি করে? কেউ যদি দেখে ফেলে তবে আর যাওয়া হবে না। তাই ওরা ঠিক করলো যে সময় মানুষ বাইরে থাকে না অর্থাৎ মধ্যদুপুরে যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। ওরা ওদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রওনা দিলো জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। ওরা যথাসময়ে পৌঁছে গেলো। বরাবরের মতোই রনির ভাগে পড়লো গাছে ওঠার ভার । কি আর করা অগত্যা রনি গাছে উঠলো।আর জনি বরাবরের মতোই নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। রনি গাছে ঝোক দিচ্ছে আর জনি বরই কুড়াচ্ছে। এমন সময় জনির চোখ যায় জঙ্গলে থাকা বিশাল ছাতিম গাছের দিকে। গাছের মগডালে একটা মেয়ে। ধবধবে ফর্সা, বিশাল বড় চুল। লালশাড়ি পরা ছিলো মেয়েটার পরনে।
হাতের আঙ্গুলে ও তালুতে ছিলো লাল রঙের বৃত্ত।  মেয়েটি মিষ্টি হেসে হাত ইশারায় ডাকছিলো।

জনির আর কিছু বুঝতে বাকি রইল না যে এটা কোনো সাধারণ মেয়ে নয়। জনি বরই গুলো ফেলে দিয়ে শুধু চিৎকার করে বললো রনি তুই তাড়াতাড়ি নেমে আয়। বলেই সে দিলো এক দৌড়। রনি কিছুই বুঝতে পারলো না। হঠাৎ আবার জনির কি হলো? জনি ভাই থামো থামো। বরই গুলো ফেলেই যাচ্ছো কেনো? জনি আবার চিৎকার করে বললো তাড়াতাড়ি নেমে আয়। পরে বলছি সব কথা। রনি এবার কিছুটা ঘাবড়ে গেলো, তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে পড়ে গেলো গাছ থেকে। ভাগ্যিস কাছ থেকে পড়েছিল তাই কোনো ক্ষতি হয়নি। উঠে বরই কুড়াবে এমন সময় রনিও দেখতে পেলো মেয়েটাকে। ওরে বাবারে বলে সেও দিল দৌড়। দৌড়ে বাড়ি এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। মাথায় পানি ঢালার পর জ্ঞান ফিরে এলে কি হয়েছে জানতে চাইলে সে সব কথা খুলে বললো। তারপর থেকে ওরা আর ঐ পথ মাড়ায়নি কোনোদিন।

(এটা বাস্তব ঘটনা। ওদের একজন আমার ভাই আর একজন আমার কাজিন)

0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ