বৃষ্টিতে দেখা মেয়েটি

মাছুম হাবিবী ৩০ জুন ২০১৯, রবিবার, ১০:১২:৩৪অপরাহ্ন গল্প ২৮ মন্তব্য

কাক তাড়ানো বৃষ্টি! অামি পা'দুটি বাঁকা করে ছোট একটি চায়ের দোকানে গা ঢেকে দাঁড়িয়ে অাছি। আসার সময় বাসা থেকে ছাতাটা আনতে ভুলে গ্যাছি, তাই আজ এত দুর্দশা! গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোঁটায় কী যে এক অবস্থা শহরের তা বুঝাতে পারবোনা। চারিদিকে বাতাসের শোনশান শব্দ! আকাশ থেকে নেমে অাসা মেঘগুলো ধরণীকে বিদঘুটে করে রেখেছে। ঘনঘন বজ্রপাতে কেঁপে উঠছে শহরের বুক! আমি কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে অপলকে তাকিয়ে অাছি বৃষ্টির দিকে। কত দিন পর কোথাও একটানা দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুনছি। ইচ্ছে হচ্ছে চটকরে দৌঁড়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি! কিন্তুু ইচ্ছে হওয়া সত্বেও বৃষ্টিতে ভিজবো নাহ। কারণ ঢাকা শহরে বৃষ্টিতে ভেজা মানে সারা শহরের ধুলোবালিকে গায়ে মাখা।।

 

খেয়ালহীন দৃষ্টি নির্বিত্তে গেঁথে অাছে ছলছল অাকাশের দিকে। আহা কি এক তুলতুলে বৃষ্টি! যেন শহর ধুয়ে চকচকে করতে এসেছে। পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকা বিল্ডিংগুলোতে বৃষ্টির দাগ খুব বিশ্রী ভাবে লেপ্টে অাছে। বিল্ডিংএর ছাদে নুয়ে থাকা অাম গাছগুলো ছিঁটকে পড়ছে জানালার গ্লাসে! কয়েকজন নবযুবতীরা ছাদে দাঁড়িয়ে টুপটুপ করে গিলে খাচ্ছে বৃষ্টির জল। আমি অানমনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের বৃষ্টি ভেজা কৌতূহলগুলো দেখছি! তারপর,পকেট থেকে একটা বেনসন ধরালাম! নিকোটিনের প্যাকেট'টা প্রায় ভিজে গেছে। আর ভিজেরি তো কথা এত বৃষ্টির মাঝে কোনো কিছু কী শুকনো রাখা যায়? নাক দিয়ে নিকোটিনের কালো ধুয়া উড়াচ্ছি। বৃষ্টি ভেজা বিকেলে সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকাটা অনেকটাই সিনেমার হিরোদের মত। অর্ধেক নিকোটিন টেনে উপর করে টান দিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ গ্যাসগুলো উড়াতেই একটা অপরূপ মুখ আমার চোখে ভেসে উঠলো! আমি ট্যাবট্যাব করে তাকিয়ে অাছি শ্রাবস্তীর মায়াময় মুখের দিকে।

 

কি এক অদ্ভুত সুন্দর একটি মেয়ে। যেন স্বর্গ থেকে নেমে অাসা শাড়ি পড়া নীল এঞ্জেল! মেয়েটিকে দেখেই আমার মাথায় জীবনানন্দের বনলতা সেন কবিতাটা ঘুরঘুর করছে- 'চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর, তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?

 

কবি হয়তো এভাবেই বনলতাকে দেখেছিলেন কোনো এক বৃষ্টিমাখা বিকেলে। মেয়েটির ধবধবে সাদা দাঁতগুলো বের করে ধুতরা ফুলের মত হাসছে! রিক্সা দাঁড় করিয়ে ব্যস্ত শহরের কোলাহলে এই প্রথম কাওকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখছি। মেয়েটিকে দেখে মনে হল সে হয়তো জীবনে প্রথমবার বৃষ্টির ছুয়া পেলো! তাই এত চঞ্চল, এত উন্মাদ। অামি ঢেড় তাকিয়ে অাছি তার হরিণী চোখের দিকে। আহা কি হিমেশ্রী চোখ! যেন ঈশ্বর নিজ হাতে যত্ন করে বানিয়েছেন। এভাবে দেখতে দেখতে হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেল! খুব অদ্ভুত ভাবে মেয়েটিও নিমিষেই অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি চমকে উঠি! অারে এখানেইতো ছিল। আমি হন্য হয়ে খুঁজতে থাকি। কিন্তুু কোথাও মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছিনা।

 

তারপর, চা ওয়ালাকে জিজ্ঞাস করি ভাই এখানে যে মেয়েটি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গুনগুন করে গান করছিলো সে কী চলে গেছে? চা ওয়ালা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে- কি যে বলেন স্যার? এখানে মেয়ে কই পাইলেন? আমি কোনো মেয়ে-টেয়ে দেহি নাই। আপনার মাথা ঠিক নাই স্যার, আপনি ফাঁকা জায়গা মেয়ে দেখেন হাহাহা! অামি অবাক হয়ে লোকটার কথা শুনছি, কিছু বলার সাহস পাচ্ছিনা। তারপর থেকে অনেক খুঁজেছি তাকে কোথাও খুঁজে পাইনি। তার এই মিটমিটে হাসি, গুনগুন রবী ঠাকুরের গান! নাকে চিকচিকে হলুদ গোল্ড রিং সবকিছু অামাকে মুগ্ধ করেছিলো! জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের জন্য সাত ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। শুধু একটিবার দেখার অাশায় পুরো পাঁচটা মাস আমি প্রতিদিন চা খাওয়ার নাম করে মিরপুর দশ নাম্বার সেনা ক্যাম্প রোডের দিকে ঘুরঘুর করতাম!!

২০ জুন ২০১৯

0 Shares

২৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ