বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ব্যতীত অন্য সমস্ত রাষ্ট্রের জন্য বৈধ ছিলো।সরকারী ভাবেই ইসরায়েল ভ্রমন নিষিদ্ধ ছিলো। এর অনেক আগে ইসরায়েলের সাথে তাইওয়ান নামটিও যুক্ত ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার একটি সিদ্ধান্তে ' ‘ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ’- বাংলাদেশের পাসপোর্টে লেখা এই বাক্যটি থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ কথাটি বাদ দিয়েছে। নতুন ইস্যুকৃত পাসপোর্টে ' বিশ্বের সব দেশের জন্য বৈধ ' বাক্য লেখা থাকবে।

সরকারের সিদ্ধান্তের পূর্বে লেখা ছিলোঃ
" THIS PASSPORT IS VALID FOR ALL COUNTRIES OF THE WORLD EXCEPT ISRAEL''
বর্তমানে নতুন ইস্যিকৃত পাসপোর্টে থাকবেঃ
" THIS PASSPORT IS VALID FOR ALL COUNTRIES OF THE WORLD

সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশ এবং বিদেশে ব্যপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
*দেশের জনগন যারা ধর্মীয় আবেগ দ্বারা পরিচালিত, তারা বলছেন যে এর দ্বারা সরকার মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছেন।
*ইসরায়েল সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালায় টুইটারে এক বার্তায় বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
* ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ সালেহ ওয়াই রামাদান সরকারের এই সিদ্ধান্তে ব্যথিত বোধ করেছেন জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত যা যা বলেছেনঃ
* এটা অগ্রহণযোগ্য, নিশ্চিতভাবে অগ্রহণযোগ্য। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
* “সার্বভৌম দেশ হিসাবে হিসাবে যে কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ নিতে পারে। আমরা কেবল সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অনুরোধ জানাতে পারি এবং আশা করি তারা ( বাংলাদেশ ) তা করবে।
* স্পষ্ট করে বললে, আমি এই খবরকে খুশি বা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করিনি। এই খবর আমি বেদনার সঙ্গে গ্রহণ করেছি।
ফিলিস্তিনি দূত এর এ সম্পর্কে মতামত বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করে পড়তে পারেন। 

বিশ্লেষনঃ
১। বাংলাদেশের জনগনের এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া
২। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের টুইট বার্তা
৩। ফিলিস্তিনি দূত এর আলোচনা

১। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের জনগনের (যারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে) এই আবেগ সম্পূর্ণই ধর্মীয় আবেগ। ইসরায়েল ইহুদি রাষ্ট্র। ইহুদিদের হাতে মুসলিম নিধন সহ্য হয় না বাংলাদেশের মুসলমানদের। যেমন ভারতে মুসলিম নির্যাতন সহ্য হয় না। অথচ পাকিস্থানে কিছুদিন আগে বোমা হামলায় আশি জন স্কুল ছাত্রী নিহত হওয়ায় এদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। স্কুল ছাত্রীরা তো মুসলিমই ছিলো। বা আফগানিস্থানে জঙ্গি হামলায় নিহত মুসলিম হত্যায় এরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না।
সৌদি আরব নের্তৃত্বাধীন জোট মুসলিম দেশ ইয়েমেন কয়েক লক্ষ মুসলিম হত্যা করেছে এখন পর্যন্ত।এই হত্যায় আমাদের দেশের জনগন ক্রন্দন করে না। যেন মুসলিম যদি মুসলিম হত্যা করে, তবে তা হবে বৈধ। আর ইহুদি বা হিন্দুরা যদি মুসলিম হত্যা করে তা হবে অবৈধ।

২। বাংলাদেশের এমন সিদ্ধান্তে ইসরায়েল খুশি হবে এটিই স্বাভাবিক। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের টুইটে উম্মা প্রকাশ বা অবাক হবার কিছু নেই।

৩। ফিলিস্তিন দূত খুব ব্যথিত হয়ে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনের পাসপোর্টে যে ইসরায়েল ব্যতীত সমস্ত দেশ ভ্রমন করা যাবে তা যে লেখা নেই তা কিন্তু বলেন নি। ফিলিস্তিন পাসপোর্ট দিয়ে ইসরায়েল ভ্রমন করা যায়। করেও ভ্রমন ফিলিস্তিন জনগন। আগে নিজের দেশের পাসপোর্টে ইসরায়েল ভ্রমন করা নিষেধ তা লিখে এরপর বাংলাদেশকে পরামর্শ দিলে ভালো হতো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকগণ ফিলিস্তিন দূতকে প্রশ্ন করলেই পারতেন " আপনার দেশের পাসপোর্টে কি ইসরায়েল ব্যতীত বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ - এই কথাটি লেখা আছে? যদি লেখা না থাকে তবে আপনি ব্যথিত কেন হচ্ছেন? "

ফিলিস্থিন জনগন ইসরায়েল ভ্রমনে ইসরায়েলের ভিসা প্রয়োজন হয়। যা এই স্ক্রিন শটে দেখানো হয়েছে। উইকিপিডিয়ার মূল সাইট দেখতে পারেন।

বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনকে সময়োচিত বলেই আমি মনে করি।

0 Shares

২৯টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ