• ১.

আমি ভালো শ্রোতা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সব কথা হজম করতে পারি না। যার ফলে মাঝেমধ্যে খুব বিশ্রী অনুভূতি হয়। যেমন- কেউ যদি হুদাই জ্ঞান দিতে থাকে, তখন তা না পারি হজম করতে না পারি মুখের উপর কিছু বলে তাকে থামিয়ে দিতে। মূলত এই কাজ আমার খুব কাছের মানুষরাই করে থাকে। তাই আমার থাকার রুমে দরজার পাশে ছফার ছবি’সহ কয়েকটা বাক্য প্রিন্ট করে লাগিয়ে দিলাম। তাতে লেখা- ‘কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরনের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট।’

কাজের কাজ ঘোড়ার ডিম- লোকে ছফার লেখাটা তো পড়েই না বরং ঘরের ভেতর মানুষের ছবি লাগানোর অপরাধে কয়েকটা হাদিস শুনিয়ে দেয়। জীবত বা মৃত কোন মানুষেরই ছবি ঘরের দেওয়ালে লাগানো যাবে না। ছবি থাকলে নাকি ঘরে ফেরেস্তা আসেনা। আরও কত কি!

২.

শামারোখের প্রতি যেমন লোভে অনেকে কাতর হয়েছে তেমনি ‘অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী’  পড়ার পর ছফার লেখার প্রতি আমার লোভ বেড়ে গেছে। যখন যেখানে যা পেয়েছি সবটুকু পড়ার চেষ্টা করেছি। আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রীদেরও ছফার বই কিনে উপহার দিয়েছি। টিউটরদের জন্য আমি সবসময় একটা কথা বলে থাকি- টিউশনে মাস শেষে যে সম্মানি পান, তা থেকে একশ টাকা আলাদা করে রাখুন। এই একশ টাকা দিয়ে স্টুডেন্টের জন্য উপহার কিনুন। স্টুডেন্টকে বুঝতেই দিবেন না আপনি তাকে কেন উপহার দিচ্ছেন । সবসময়ে ভালো রেজাল্টের জন্য নয়, মাঝেমধ্যে ভালো ব্যবহারের জন্যও উপহার দিন। এতে স্টুডেন্ট আনন্দিত হবে, উৎসাহ পাবে।

উপহার পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দিত হবে, উৎসাহ পাবে; এমন চিন্তা থেকে আমি তাদের প্রচুর বই উপহার দিয়েছি। বিশেষ করে যারা জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষা দেয় তাদেরকে দিয়ে থাকি। কারণ পরীক্ষা শেষে তাদের কাছে দীর্ঘ সময় থাকে, ওই সময়টাতে যদি কৌতুহলবশত আমার দেওয়া বইয়ের মলাট উল্টিয়ে একবার হলেও পড়তে বসে, তখন তাদের সুন্দর সময় কাটার পাশাপাশি  মাথাতেও কিছু সারপদার্থ ঢুকবে। একটা মাথা উর্বর করার জন্য ছফার বইয়ের পাতায় পাতায় প্রচুর উপাদান থাকে।

৩.

কাউকে বই উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি একটু চালাকি করি। বইটা কিনে একরাত নিজের কাছে রেখে দিই। ওই রাতে আমি বইটা পড়ে শেষ করি। নতুন বইয়ের ঘ্রানটা প্রথমে আমিই উপভোগ করি। পরে আবার সুন্দর করে প্যাকেট করে প্রিয় মানুষদের দিই। এভাবে নানাজনরে ছফার ‘উপলক্ষের লেখা’, ‘সূর্য তুমি সাথী ’, ‘ওঙ্কার’, ‘মরণবিলাস’, ‘গাভী বিত্তান্ত'সহ বেশ কয়েকটা বই উপহার দিয়েছি। মজার ব্যাপার হচ্ছে ছফার এতগুলা বই পড়া হলেও আমার বুক শেলফে শুধু ‘যদ্যপি আমার গুরু’ রয়েছে। এটা অন্যদের উপহার দিলেও নিজের জন্য একটা কপি কিনে রেখে দিয়েছি।

৪.

চট্টগ্রামে এখনও স্থানীয় অনেক পরিবার আছে, যারা তাদের সন্তানদের পরীক্ষার আগের রাতে মাজারে নিয়ে যায়। পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পীর-অলির মাজারে এটা-সেটা মানত করে। এমন সব পরিবারে ছফার ‘একজন  আলি  কেনানের উত্থান পতন’ দিয়ে আসা দরকার। আবার অনেক জায়গায় দেখি দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে। গভীর রাত অবধি মাইকে উচ্চস্বরে ওয়াজ করে। গরু-ছাগল জবাই করে। বিরিয়ানি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করে। তাদের ঘরেও এই বইটা দিয়ে আসা দরকার।

কিন্তু, আমার  একার পক্ষে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বই দিয়ে আসা সম্ভব না। তাই একদিন বুদ্ধি খাটিয়ে একটা কাজ করলাম। পীর-অলির মাজারের অন্ধভক্ত পরিচিত এক আপুকে ছফার ‘একজন আলি কেনানের উত্থান পতন’ বইটা দিলাম। উনি দুই বছর পর হঠাৎ একদিন কল দিলেন। উচ্চস্বরে আমার নাম উচ্চারণ করে বললেন, কিরে ব্যাটা তুই তো আমার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে দিলি’। আমিতো অবাক। উনার সাথে দেখা সাক্ষাৎ নাই অনেকদিন ধরে। আমি কিভাবে উনাকে মারবো! আমি এসব উনাকে জানালাম। উনি বললেন, ‘থাপ্পড় শুধু হাত দিয়ে মারেনা, উপহার দিয়েও মারা যায়’!

 

    

 

 

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ