গল্প// কপাল

মাহবুবুল আলম ১৩ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০১:২৪:৩৮অপরাহ্ন গল্প ১৪ মন্তব্য

সকাল সাতটা না বাজতেই আজ সূর্য যেন আরও রুদ্রমূর্তি ধারন করছে। মহাবিশ্বের এ অগ্নিপিন্ডটি যেন পৃথিবীর বুকে তার সব আগুন ঢেলে দিয়েছে। শরীর ঘেমে পানির স্রোত নামছে পায়ের পাতা পর্যন্ত। বগল ও কুচকি ঘেমে একাকার। বাইরে বেরুলে মনে হয় গায়ে বোঝি কেউ মরিচ-লবণ মেখে দিচ্ছে। স্যাতস্যতে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা।

বস্তির ছাপড়া ঘর থেকে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকায় নুরালী। সূর্যের এ অগ্নিমূর্তি দেখে মনে কেমন একটা কাঁপন ধরে তার। ভয়ের একটা অজগর মনের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। এরপরই নূরালীর শিড়দারা বেয়ে যেন নিচের দিকে নেমে গেল ভয়ের সে অজগরটি।

মরুক না বাচুক আজ আর কাজে যাবেনা নূরালী এমনই সিদ্ধান্ত নেয় মনে মনে। গত পরশু বাড়ি থেকে এসে গতকাল ভোরে শহরের চৌমোহনাস্থ কামলা হাটে গিয়েছিল নূরালী। নয়টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে খালী হাতে ফিরে এসেছে। কোন কাজ জুটেনি। কিন্ত আজও কাজে না গেলে ধুম উপোস থাকতে হবে।

বাড়িতে বউসহ পাঁচজন খানেওয়ালা। বউ আর চার মেয়ে। বাড়ি থেকে আসার সময় খাওয়া খরচের কোন টাকা পয়সা দিয়ে আসতে পারেনি নূরালী। আসার পথে সে বলে এসেছিল দুইদিন রোজগারপাতি হলে কিছু টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু গতকালও কোন কাজ পায়নি, আজও যদি কাজে না যায় তা হলে নূরালী একাই উপোস থাকবেনা, পুরো পরিবারটিকেই উপোস থাকতে হবে।

সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বউ আবার পোয়াতি হয়েছে। একটা ছেলের আশায় আশায় চার চারটা মেয়ে হয়েছে। বড় ও মেঝ মেয়েটা বিয়ের উপযুক্ত। কিন্তু বিয়ের আলাপ আসলেও টাকার অভাবে বিয়ে দিতে পারছেনা। এমন কোন সম্বলও নেই যে বিক্রি করে বিয়ে দেবে। মেয়েগুলো মায়ের মতো সুন্দরী হয়েছে। কিন্তু মেঝ মেয়েটাকে নিয়ে নূরালীর চিন্তার শেষ নেই। এ মেয়েটার ভাবসাব যেন কেমন। স্কুলে আসা যাওযার পথে নাকি মাস্তানরা পিছু নেয়। এমন ভাবনার মাঝেই পাশের ছাপড়া ঘর থেকে কিতাবালীর ডাক ভেসে আসে। কিতাবালির ডাকে নূরালীর ভাবনার ঘুড়ির সুতো ছিড়ে যায়-

: কই নূরালী ভাই, কামে যাইতানানি?

: কামে যাইমু কি না ভবাবতাছি ভাই। শরীলডারঅ তাল পাইতাছিনা, কি করুম না করুম ভাইব্যা পাইতাছি না। তুমি যাও। দেহি কী করি।

বলেই নূরালী ছাপড়ার ভেতর চলে যায়। মাটির বিছানায় সটান শুয়ে পড়ে।

রাতে গরমে একফোটা ঘুম হয়নি নূরালীর সারারাত গরমে কেবল ছটফট করেছে। একদিকে প্রচন্ড গরম আরেক দিকে বাড়ি-ঘরের চিন্তা কোন চিন্তারই কূল-কিনারা নেই। এক চিন্তার ফাঁকে আরেক চিন্তা ঢুকে যায়।

কপাল খারাপ নূরালীর। জমি জমা বিক্রি করে সৌদি গিয়েছিল। সবার কপাল ফিরলেও তারটা শুধু ফিরল না। কফিলটা ভাল পড়েনি। তাছাড়া যে পরিশ্রমের কাজের ভয়ে বিদেশ গেল তার চেয়েও পরিশ্রমের কাজ জুটলো তার ভাগ্যে। সে আরও ভয়ঙ্কর কাজ।

মরুভূমিতে শ'দুয়েক দুম্বা চড়ানো কাজ। একটা এদিক যায়তো অন্যটা ওদিকে, কোনটা আবার উল্টা দিকে। দেশে থাকতে একটা দুইটা ছাগল সামলাতেই যখন পাগল হতে হয়েছে, সেখানে প্রায় ছাগল চরিত্রের শ-দুয়েক দুম্বা। ঠিক মতো খাওয়-দাওয় নেই, গোসল-ফোসল নেই, তার ওপর ‘পান থেকে চুন খসলে’ মালিকের নির্যাতন। মাসের বেতন মাসে না দেয়া। অতঃপর সেখান থেকে পলায়ন।

নূরালীর দেশের ভাগ্য সাথে সাথে সৌদিআরবেও তার সাথে পাড়ি জমালো। কাজ ফলে পালিয়ে আসার পর এখানে সেখানে ভেগে ভেগে চার পাঁচ মাস থাকার পর অবশেষে সৌদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শূন্যহাতে দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। বাড়িতে এসে আবার সে পুরনো রোজকামলার পেশায় ফিরে নূরালী।

নুরালীর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। সেখানে এখন কাজ নেই। অকাল বন্যায় মানুষের ক্ষেতের সব ফসল ভাসিয়ে নেয়ার পর সেখানে কামলা সব বেকার। তাই কাজের খোঁজে চলে এসেছে মৌলভীবাজার।

এখানে অকাল বন্যা তেমন দাঁত ফুটাতে পানেনি, তাছাড়া মৌলভীবাজার হলো, বাংলাদেশের লন্ডন। সব জায়গায় কাজ না থাকলেও এখানে কাজ থাকে। তাই নূরালীসহ তার এলাকার আরও কয়েকজন মিলে গত পরশু এখানে এসেছে। গুজারাই এক বস্তিতে ওঠেছে সবাই। আগে থেকেও নূরালীদের এলাকার বেশ কয়েকজন এই বস্তিতে থাকে। তাই থাকার জায়গা পেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি নূরালী ও কিতাবালীদের।

বস্তির ছাপড়ার ছোট্ট একটা ঘরে মাটিতে চাটাই বিছিয়ে পাঁচ/ছয় জন গাদাগাদি করে থাকে। আর পালা করে এক একদিন এক একজন করে রান্না করে খায়। এ যেন কোন রকমে থাকা আর কি।

আজ কাজে যাওয়া না যাওয়ার লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় নূরালী। নিজের কপালকে একটা অশ্রাব্য গালি দিয়ে কোদাল ও টুকরী কাঁধে ঝুলিয়ে দরজার ঝাপ টেনে কামলা হাটের উদ্দেশ্য বেরিয়ে যায় সে।

রোজকামলাদের নিদ্দিষ্ট কোন কাজ নেই। আজ মাটি কাটা, কাল পৌরসভার ড্রেন পরিষ্কার না হয় রাস্তা কার্পেটিং এর কাজ, পরশু কোনো বাগানে কাজ না হয় ছাদ ঢালাইয়ের যোগালীর কাজসহ কত কিসিমের কাজ যে করতে হয়, তার কোনো হিসেব নেই।

আবার কোন কোনো দিন কাজও জুটেনা। তখনই অন্যদিনের রোজকারের টাকায় হাত পড়ে। বৃষ্টি-বাদল বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে, অথবা হরতাল ধর্মঘট হলে কাজ তেমন পাওয়া যায়না। তবু এভাবেই চলতে হয় নূরালী বা কিতাবালীদের।

 

চৌমুহনা আসতে আসতে রৌদ্রের তাপে রাস্তা-ঘাট আরও তেঁতে ওঠেছে। কামলা হাটে এসেই একটা ছায়াযুক্ত জায়গায় বসে, একটা সিগরেট ধরায়। কিতাবালীরা এখনও কাজ পায়নি। আজ কোনো কাজ পাবে কিনা এমন চিন্তা পেয়ে বসে নূরালীকে। এমন সময় কিতাবালি এসে বলে-

: দেও নূরালী ভাই সিগরেটটা দেও দুইডা টান দেই। নিজে নিজেই আবার বলে-

: আইজ বোধয় কাম পাইতাম না।

নূরালি সিগারেট টানতে টানতে জিজ্ঞাস করে-

: আইজ ভাও কত টেকা ওটলো?

: পাঁচশ' টেকা। কিতাবালীর সংক্ষিপ্ত জবাব।

: গরমের কারণে নি একশ' টেকা বাড়লো? নূরালী বলে।

: হ, আইজ সবের এক কথা পাঁচ'শ টেকার নিচে কামে যাইব না। আইজ যারা কামে গেছে, পাঁচশ' টেকা কইরাই গেছে। যে গরম পরছে ঘামে খালি শরীলের চর্বি না মাংসও জাইনো খুইল্যা যাইতো চায়। আসমানের দিক দেহ যাইনো বাঘের লাহান সূর্য উটতাছে। ‘নিজে 'বাঁচলে বাফের নাম’ বলেই অসহায়ের মতো হাসি দিয়ে, নূরালীর দিকে আবার হাত পেতে বলে-

: দেও ভাই সিগরেটা দেও। দুইডা টান দেই। বলেই গায়ে একটা টানা দেয়।

নূরালী একটা সুখ টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কিতাবালীর দিকে এগিয়ে দেয় সিগারেটেরর আধাপোড়া অংশটা। কিতাবালী সিগারেটে টান দিতে না দিতেই তাদের সামনে এসে একটা ডায়না ট্রাক ব্র্যাককষে দাঁড়ায়।

কামলারা সবাই ট্রাকটা ঘিরে দাঁড়ায়। কেননা তারা জানে বড় বা বেশি লোকের কাজে ট্রাক দিয়েই কামলা নিয়ে যায়। যাদের মনে কাজ না পাবার ভয় কাজ করছিল, তাদের চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।  ট্রাক থেকে মধ্যবয়সী একটা লোক নামতে নামতে বলে-

: সোনাপুরে একটা তিনতলা বিল্ডিং ঢালাই হবে। ত্রিশ জন লোক লাগবে। কে কে যাইবা ওঠো।

নূরালী দাঁড়িয়ে বলে-

: ত্রিশজন ত অইত না সাব। আমরা মোটে বিশ পচিশজন আছি। আমরা যাইতে পারমু। দাম ফুরাইয়া লন। আইজ পাঁচশ'টেকা ভাও ওটছে।

: না, চারশ' করে পাইবা। বলে  ট্রাক থেকে নামা লোকটি।

: একটা কানা পয়সা কম হইলেও আমরা কেউ কামে যামুনা বলে নূরালী।

তার সঙ্গে উপস্থিত সবায় সুর মিলায়-

: না না কমে হইবো না।

: আরে মিয়া দুপুরে পেট ভরে বিরানী আছে, বলে লোকটি থামে। নূরালী বলে-

: সাব, খাওয়াইলে খাওয়াইবেন না খাওয়াইলে নাই। কিন্তু পাঁচশ' টাকার কমে হইব না।

লোকটি কি যেন ভাবলো কয়েক মুহূর্ত। তারপর বলে-

: ঠিক আছে। সবাইকে বল ট্রাকে ওঠতে।

কয়েক মিনিটের মধ্যে সবাই লাফিয়ে ট্রাকে ওঠে গেল।

নূরালীর জীবনে জৈষ্ঠ মাসে এমন গরম আর দেখেনি। কেয়ামতের আলামত যেন শুরু হয়েছে। সূর্য মাথার ওপর নেমে এসেছে। গা থেকে অবিরাম ঘাম ঝরছে। লুঙ্গি গামছা গায়ের পুরনো সার্ট ভিজে চিপচিপে গেছে।

ট্রাক কামলাদের নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাক চলতেই গায়ে একটা ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাসের আমেজ এসে আছরে পড়ে। এটুকু বাতাসেই যেন নূরালীর গারমের অস্বস্তিকর ক্লান্তির কিছুটা হলেও লাগব হলো। সে মনে মনে ভাবে যদি এমন করে দূরে বহুদূরে কোথাও চলে যাওয়া যেত! তা হলে কত মজাইনা হতো।

এভাবেই ছায়াসুনিবির পাহাড় টিলার আঁকাবাকা পথ পেরিয়ে, ট্রাকটা সাইটে এসে থামে। সবাই হুরমুরিয়ে নামে ট্রাক থেকে। নূরালী নামে সবার পরে। হঠাৎ করেই পোয়াতি বউটির কথা মনে পড়ে নূরালীর। এই শেষ সময়ে কত ভালমন্দ খাওয়ার দরকার ছিল বউটির। ভালমন্দ দূরে থাক, দুবেলা দুমুঠো ভাতও খাওয়াতে পারছে না নূরালীর। এ ভেবে নিজকে নিজেই ধিক্কার দেয় সে।

 

বাড়ি থাকতে বউকে নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়েছিল। সব বৃত্তান্ত শুনে ডাক্তার সাহেব বলছে এই মাসের শেষ দিকেই নাকি বাচ্চা হবে। বউ বলেছিল-

: অজুফার বাপ আইজকাইল টাউনের বড় ডাক্তররা কি এক মেশিন দিয়া দেইখ্যা আগে ঐ কইয়া দিতে পারে, গর্ভের বাচ্চা ছেইলে না মেইয়া। যদি হাতে টাকা থাকতো...

স্বামী কষ্ট পাবে ভেবে আর এগুইনি নূরালীর বউ শিরিয়া। বউ না বললেও নূরালী বুঝতে পারে বউ চায় এবারের তাদের সন্তানটি যাতে ছেলে হয়। নূরালী মুখে না বললেও মনে মনে খুব ইচ্ছা এবার যাতে একটা ছেলে হয়। আল্লাহ যেন এবার মনের আশা পূরণ করে।

 

এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। নূরালী আজ মিকচার মেশিনে বানানো মাল তাগারে ভরে দেয়ার কাজটা নিজ থেকেই বেছে নিয়েছে। মাল নিয়ে ওপরে ওঠার কষ্টের চেয়ে এই কাজটা একটু কম কষ্ট ও কম পরিশ্রমের।

এমুহূর্তে রোদের তেজ যেন সকালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বেড়ে গেছে। সব কামলাই ঘেমে নেয়ে যেন একাকার। ঘামে লুঙ্গি সার্ট ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। এ সময়েই দেখা গেল দুতলার সিড়ির কাছে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। মেশিনের আওয়াজে এখান থেকে ঠিক শোনা ও বুঝা যাচ্ছেনা ওপরে কি হয়েছে। কাজ ফেলে ওপরে দৌড়ায় নূরালীও। ভির ঠেলে উঁকি দিয়ে দেখে তাদেরই একজন পাশের গ্রামের রহিম বক্স বেহুস হয়ে সটান ঢালাইয়ের কাদাজলে পড়ে আছে। নুরালী আরও এগিয়ে পাশে বসে নিচু হয়ে রহিমের বুকে কান লাগায়। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলে-

: না শ্বাসপ্রশ্বাস সব ঠিক আছে। তাড়া তাড়ি সদর হাসপাতালে নিতে হবে।

ঠিকাদার এসে বলে-

: সদর হাসপাতালে নেওয়ার দরকার নাই। এই বাড়ির মালিক বড় ডাক্তার। খবর শোনে ওনি নিজেই আসতাছেন। ভয় পাওয়ার কিছু নাই।

ঠিকাদার কথা শেষ করতে না করতেই ডাক্তার সাহেব এসে পরীক্ষা করে বলেন-

ভয়ের কিছু নেই। হিটস্ট্রোক হয়েছে। ওকে নিচতলায় ফেনের নিচে নিয়ে শোয়াও। আর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভাল করে গা টা মুছে দিতে হবে। সবাই যার যার কাজে যাও আমি ওকে দেখছি। ঠিকাদারের লোকেরা ধরাধরী করে রহিমকে নিচে নিয়ে যায়। আবার শুরু হয় ঢালাইয়ের কাজ।

যোহরের আযান পড়েছে। কেউ কেউ নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নূরালীও নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। এরই মধ্য রহিমও ওঠে বসেছে। তাকে আজ কাজ না করে বিশ্রামে থাকতে বলেছে বাড়ির মালিক ডাক্তার সাহেব।

ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুস সবাইকে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করার তাগিদ দিচ্ছে।

নূরালী নামাজ শেষ করে সবার সাথে খেতে বসে।

ঠিকাদারের লোক মিথ্যা বলেনি। সবার জন্য বিরানী রান্না করা হয়েছে। বিরানীর মৌ মৌ গন্ধে পরিবেশটাই বিরানীময় হয়ে ওঠেছে। বিরানী খেতে খেতে বাড়ির কথা মনে পড়ে নূরালীর। বাড়িতে যেন ওরা কি খাচ্ছে কে জানে। তার বক্ষ ভেদ করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায়।

 

অভাবের কারণে একটা মোবাইলও কিনতে পারনি নূরালী, তাই এইজন সেইজনের মোবাইলে কথা বলতে হয়। বাড়ি থেকে আসার পথে কিতাবালীর মোবাইল নম্বরটা দিয়ে এসেছিল নূরালী, যাতে জরুরী প্রয়োজনে খবরাখবর দেয়া যায়।

কতদিন পর এমন পেটভরে বিরানী খেল তা মনে করতে পারছেনা নূরালী। খাওয়া শেষ করে একটা গাছের ছায়ায় বসে সিগারেট ধরায় সে।

আবার ঢালাইর কাজ শুরু হয়েছে। কয়েকটা তাগারে মসলা ভরে দেয়ার পর দৌড়ে আসে কিতাবালী। এসেই একটু দূরে ডেকে নিয়ে কিতাবালী বলে-

: এইমাত্র আমার ভাই ফোন কইরা কইলো তোমার একটা মাইয়া হইছে। কিন্তু...

কিন্তু কী! তাড়াতাড়ি কও, কিছু গোপন কইরো না। উদগ্রীব হয়ে নূরালী বলে।

: না তেমন খারাপ খবর না, ভাবীর অবস্থা নাকি খারাপ। ভাবীকে নাকি সদরে ভর্তি করছে। তোমারে এখনি যাইতে কইছে। কাম বাদ দিয়া তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও।

কথাটা শোনে নূরালী নিশ্চল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এ খরব শুনে নূরালী যে বোবা পাথর হয়ে গেছে। এমন দিনদুপুরেও তার চোখে যেন সব কিছু অন্ধকার অন্ধকার লাগছে।

 

0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ