কিস্তিবন্দি

এক.

আখলিমা বেগম তার সংসার নামক ভাঙা নৌকার হাল কিছুতেই আর ধরে রাখতে পারছে না । তার সংসার নামের ভাঙা নৌকা যেন গভীর সমুদ্রে উথাল পাতাল ঢেউয়ের দোলায় দিশাহীন ঘুরছে। আখলিমার স্বামী মুনির মিয়াও নানা অসুখে বিসুখে কাবু। আয় রোজগারের অভাবে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে কাটে তাদের দিন। মুনির মিয়া তার ভাঙা শরীর নিয়ে স্থানীয় বেড়িবাঁধে রিক্সা চালিয়ে যে আয় করে, তাতে কিছুতেই সংসার চলে না। তা ছাড়া অসুখ বিসুখের কারণে রিক্সা চালাতে মনিরের খুব কষ্ট হয়। রিক্সা চালাতে চালতে  ক্রনিক শ্বাসকষ্ট কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তাকে। দুর্বল স্বাস্থ্য ও ক্রনিক শ্বাসটানের জন্য প্রায় সময়ই সে রিক্সা চালাতে পারে না। আর তখন ঘরে বসে খেয়ে না খেয়ে, অলস সময় কাটাতে হয় তাকে।

এই নিয়ে আখলিমার সাথে প্রায়ই মনমালিন্য চলে। কথা কাটাকাটি এমন কী ঝগড়া-ঝাটিও হয়। আমাদের দেশের হাজারো গরীবের সংসারে যা চিত্র ; আখলিমা মুনিরের সংসারও এর বাইরে নয়।  এ ভাঙা সংসার টানতে টানতে অখলিমা এখন একরকম বিপর্যস্ত। এ অভাব-অনটন টানাটানি আর নানাবিদ সাংসারিক যাতনা তাকে দগ্ধ করে সারাক্ষণ। কোন কিছুই  আর ভালে লাগে। না সংসার। না ছেলে মেয়ে।

এক ছেলে তিন তিনটা মেয়েকে ছেড়েও কোথাও যেতে পারছে না আখলিমা। বড় মেয়ে মরজিনা ডেং ডেঙিয়ে বড় হয়ে ওঠছে। তার মতিগতিও কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। তাই পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দেয়ার আগেই তিন চার বছর হলো পাঠশালার পাঠ চুকিয়ে দিতে হয়েছে তার। স্কুলে যাওয়া-আসার পথেই সরকার বাড়ির ছেলে তাজুলের সাথে তার একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠেছে বুঝতে পেরেই; মরজিনার স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল আখলিমা ও মুনির। কিন্তু সে সম্পর্ক একবারে উপড়ে ফেলা যায়নি, এখন মনে হচ্ছে এর ডালপালা আবার ভাল ভাবেই গজিয়েছে। এই নিয়ে আখলিমার চিন্তার অন্ত নেই। কখন না আবার মেয়েটি কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে।

মুনিরের পক্ষে এ সংসার টানা আর কিছুতেই সম্ভব নয় মনে করে; মানুষের ধারদেনা থেকে নিস্কৃতি লাভ এবং মুনিরকে রিক্সা থেকে নামিয়ে এনে ছোটখাট একটা টা-ষ্টল দিয়ে বসিয়ে দেয়ার ইচ্ছা থেকেই  শেষ ভরসা হিসাবে একদিন আখলিমা দ্বারস্থ হয় দেশের এক এনজিওর স্থানীয় অফিসের অফিসারের কাছে।

আখলিমা মাইল দেড়েক পথ হেটে, ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে যখন এজিও অফিসটিতে এসে যখন হাজির হয় তখন বেলা প্রায় ভাটির টানে। অর্ধেক পথ এসেই সে আছরের আযান শুনেছিল। এখন আসানিয়া বাজার মসজিদ থেকে মানুষজন নামাজ পড়ে বেরুচ্ছে। আখলিমা আফিসটির সামনে এসে একটি গাছের নিচে দাঁড়ায়। কাকে কি বলবে না বলবে ইতস্তত: করে। এ অবস্থা দেখে অফিসের একজন অধস্তন কর্মচারী আখলিমার অনেকটা গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে-

: এই বেটি! কি চাও এখানে।

: না গো ভাই। আমি কিছুই চাই না। আমি আইছি এই অফিসের বড় সাবের কাছে।

: ওনার কাছে তোমার কি দরকার।

: দরকার আছে বইলাই দ আইছি ভাই। আখলিমা জোর দিয়ে বলে।

অনেকটা ধমকের সুরেই ছেলেটি বলে-

: হে রে এখন পাইবানা।

: ক্যান? সাব কি অফিসে নাই।

: আছে। তয় হে ঘুমাইতাছে।

: আইচ্ছা। বড় সাব ওডুক। আমি এহানেই খাড়াই।

কি যেন মনে করে ছেলেটি অফিসের ভেতরে ঢুকে। একটু পড়েই ফিরে এসে আখলিমাকে বলে-

: এখানে কতক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকবা। আস। ভিতরে আইসা বস।

: না ভাই। অইব। আমি এহানেঐ খাড়াই। সাব ঘুম থাইক্যা ওডুক।

ছেলেটির কথা মেয়ে মানুষটি গ্রাহ্য করছে না দেখে সে অনেকটাই ধমকের সুরে বলে-

: আমার কথা শুন নাই। সাব ঘুম থাইক্যা ওঠছে। আইও।

আখলিমা ঘরে ভেতর ঢুকে একটা হেলান বেঞ্চে বসে এদিক ওদিক তাকায়। পাশের ঘরেই একজনের নড়াচড়া ও গলা খেকরির আওয়াজ শুনতে পায়। সে অফিসারের অপেক্ষায় বসে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঝবয়সী অফিসারটি এসে তার টেবিলে বসে। বসার সাথে সাথেই ছেলেটি এসে অফিসারটির সামনে দাঁড়ায়। ছেলেটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অফিসারটি বলেন-

: রহিম। তুমি কি কিছু বলবা?

: জ্বি স্যার। বাজারে আমার একটু দরকার আছিল...।

: ঠিক আছে যাও। তাড়াতাড়ি চইল্যা আইসো কিন্তু।

: আচ্ছা স্যার। কাজ শেষ হইলেই চইলা আসমু।

: যাও। দেরি করবা না।

ছেলেটি সালাম ঠুকে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।

আখলিমাকে দেখে অফিসারটি  যেন ভেতরে ভেতরে মেতে ওঠে আখলিমার শরীরচর্চায়। এ অবস্থা তাকে এক রকম ঘোরের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। গরীব ঘরের বউ হলেও আখলিমা দেখতে শুনতে খুবই সুশ্রী-সুন্দরী। একটু ভাল কাপড় চোপড় পড়ে সাজগোছ করলে শহরের অনেক সুন্দরীও তার পাশে এসে দাঁড়াতে হিসাব কষবে। এই জন্যই হয়তো অফিসার ফজর আলী কেমন ঘোরের মধ্যে পড়ে যায়। তাকে এক ধরনের নেশায় পেয়ে বসে। কেমন এক কাঙালের মতো অপলক তাকিয়ে থাকে সে আখলিমার দিকে। অফিসারের নেশার দৃষ্টি আখলিমার দৃষ্টি এড়ায় না। সে তার শরীরের কাপড় টেনেটোনে উদোম অংশ গুলো ঢেকে দিতে তৎপর হয়।

ফজর আলী সাহেবও মুহুর্তেই নিজকে গুছিয়ে নেন। চেয়ারে একটু নড়ে চড়ে বসে, সামনেই একটা  হেলান বেঞ্চ দেখিয়ে বলেন-

: বস। তুমি ঐ খানটায় বস।

: না ছার। বমু না। খাড়াইয়া খাড়াইয়াঐ কতাডা কই। বাইত গিয়া আমার আবার পোলা মাইয়ারে খাওয়াইতে অইব। আমি আইছলাম ছার আপনের কাছে একটা কামে।

: আমার কাছে যে একটা কিছুর লাইগা আইছো; তা ত তোমাকে দেইখাই বুঝতে পারছি। এনজিওর কাছে ত মানুষ এমনি এমনি আসে না। বস। বইসা আস্তে ধীরে কও কী সমাচার।

: ছার! ছেলে মেয়ে লইয়া খুব বিপদের মধ্যে পড়ছি। আমারে যদি কিছু ঋণ দিতেন তইলে আমার খুব উপকার অইলো অইলে।

আখলিমার কথায় বিরক্ত হয় ফজর আলী সাহেব। বিরক্তিটাকে প্রকটভাবে প্রকাশ করে তিনি বলেন-

: তোমার সম্মন্ধে ত আমি কিছুই জানলাম না। আইসা দাড়াইয়া দাড়াইয়া বললা আর আমি ঋণ মঞ্জুর কইরা দিলাম; ঋণ পাওয়া  ত এত সোঝা না। বস। বইসা সব আদি বিত্তান্ত খুইলা বল। তারপর হইল গিয়া ঋণ দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপার।

অফিসারের নিমপাতা মাখানো কথা শুনে আখলিমাকে ঋণ না পাবার আশংকায় পেয়ে বসে যেন। সে আড়চোখে অফিসারের রুম ও একটা খালী রুমটির দিকে তার চোখ দু‘টি ঘুরিয়ে আনে। এমন খালী নির্জন অফিস দেখে তার মনের মধ্যে ভয়ের একটা অজগর মোচর দিয়ে ওঠে। সন্তর্পনে একবার তাকায় ফজর আলী সাহেবের দিকে। লোকটার মতিগতি ভাল ঠেকে না আখলিমার কাছে। তবু সে কাচুমাচু হয়ে বসে অফিসারের দেখিয়ে দেয়া হেলান বেঞ্চের কোণা ঘেঁসে। বসেই আখলিমা তার সংসারের অভাব অনটনের সাতকাহন খুলে বলে।

আখলিমা যখন তার সংসারের অভাব-অনটনের কথা বলছিল; ফজর আলী সাহেব তখনো কেমন নির্বিকার। আখলিমার কথার প্রতি উত্তরে হ্যা বা না কিছুই বলছে না। সে একটা ফাইল নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। ক্ষাণিক পরে ফাইল থেকে চোখ ওঠিয়ে আখলিমার দিকে তাকিয়ে বলে-

: ঋণ যে নিবা ভাল কথা, কিন্তু তা পরিশোধ করবা কীভাবে?

ফজর আলী সাহেবের কথা শোনে আখলিমার চোখে-মুখে একটা হাসির রেখা ঝিলিক দিয়ে ওঠে যেন। সে অনেকটা দৃঢ়তার সাথেই বলে-

: ছার আপনে যদি দয়া কইরা ঋণ দেন, তইলে কিস্তি দিতে কোনু অসুবিধা অইবো না। যুদি ঋণ দেন তইলে আমার স্বামীরে দিয়া বেড়িবান্দের বাজারে একটা পান বিড়ি ও চায়ের দোকান খুইলা দিমু।

আখলিমার কথার পিঠেই ফজর আলী সাহেব বলেন-

: তোমার স্বামী এখন কী কাজ করে?

: জ্বে। হে রিক্সা চালায়।

ফজর আলী সাহেব বলেন-

: রিক্সা চালাইলে ত রোজগারপাতি ভালাই। ত ঋণ নিবা ক্যান?

: ছার! লোকটা সব সময় রিক্সা চালাইত পারে না। আর রিক্সা চালান ত পরিশ্রমের কাম। লোকটা  এত পরিশ্রমের কাম করত পারে না। একদিন রিক্সা চালায় ত তিন দিন বইসা খায়। আর এই কাছা রাস্তায় সারাদিন রিক্সা চালাইয়া যা পায়, রিক্সারভাড়া দিয়া আর থাহে ই  কি। তাই ভাবতাছি আপনের কাছ থাইক্যা ঋণ নিয়া বেড়িবান্দে একটা পান বিড়ির চায়ের দোকান দিয়া দিতে পারলে বইসা বইসা যা পারল রোজগার করল। দোকান চালান ত আর রিক্সা চালানের মত এত কষ্টের কাম না।

আখলিমার কথা শুনে ফজর আলী সাহেব বলেন-

: ধর। নতুন দোকানে তেমন রোজগারপাতি হইল না। কিন্তু সপ্তায় সপ্তায় ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হইবো। খাও না খাও কিস্তির টাকা দিতেই হইবো। কিস্তি পরিশোধ তো আর মাফ নাই। মইরা গেলেও মরা লাশের সামনে কিস্তির দাবী নিয়া দাঁড়াই আমরা।

ফজর আলী সাহেব আর কিছু বলার আগেই মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আখলিমা বলে-

: না ছার, কিস্তি দিতে অসুবিদা অইব না। দোকান থাইক্যা যুদি কিস্তির টেহার ব্যবস্থা না অয়, তইলে অন্য ব্যবস্থা করমু।

: অন্য কি ব্যবস্থা করবা।

ফজর আলী সাহেব জানতে চান আখলিমার কাছে। সে তখন বলে-

: ছার, আমার পাঁচ জোড়া আস আছে। এর মধ্যে চার জোড়ায় ডিম দেয়। পরায় দিন ঐ তিনডা চাইরডা ডিম পাই। আখলিমার কথা শুনে ফজর আলী সাহেব নিজে নিজেই হিসাবে লেগে যান।‘ ধরো প্রতিদিন এক হালি করে ডিম পাইলে সাপ্তায় হইল গিয়া সাত হালি। ২০ টাকা করে দাম ধরলে ডিমে পাইলা ১৪০ টাকা। এই আয় দিয়া কি খাইবা, না কিস্তির টাকা দিবা।

: জ্বে। পারমু ছার। পারমু। আল্লায় বাছাইলে টুকটাক এইডা হেইডা কইরা কিস্তির টেহার ঠিকঐ ব্যবস্থা করতে পারমু। আর চা সিগারেটের দোকানে আল্লায় দিলে কী কিছুই হইত না। আখলিমার গলায় বেশ দৃঢ়ভাবেই যেন আস্থার সুর বেজে ওঠে।

আখলিমার কথা শেষ হলে ফজর আলী সাহেব ক্যাটকুলেটার টিপে হিসেব নিকেশে ব্যস্ততার একটা ভান ধরে থাকেন কতক্ষণ। আর আখলিমার ভাবনায় তখন ঋণ পাওয়া না পাওয়ার চিন্তা। ফজর আলী সাহেবের এমন নির্লিপ্ততা যেন আখলিমাকে বেশ ভাবনায় ফেলে দেয়। সে আরো ক্ষাণিকটা অপেক্ষা করে গলা ঝেরে ফজর আলী সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে,

: ছার! ঋণ দিবেন কি দিবেন না কিছুইতো কইলেন না।

আখলিমার কথার পিঠে কেমন এক প্রসন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফজর আলী সাহেব বলেন-

: তোমাকে কি ভাবে ঋণ দেওয়া যায় না যায় তা নিয়াইতো ভাবতাছি। তোমারে দেখার পর তোমার প্রতি কেমন জানি মায়ায় পইরা গেছি। ঋণ তোমারে দিব। আজ যাও। কাল সকালে একবার তোমাদের বাড়িতে আসব। তোমার স্বামীকে বাড়িতে থাকতে বলবা।

অফিসারের কথা শুনে আখলিমার মন খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। সে ফজর আলী সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে-

: জ্বে ছার। জ্বে। হে বাড়িতে থাকবো। আমাগো মত গরীবরে ঋণডা দিলে আল্লাহ আপনের ভালা করব।

: ঠিক আছে, এখন যাও। দেখি তোমার জন্য কী করতে পারি।

কথাটা বলেই ফজর আলী সাহেব আখলিমার চুল থেকে নখ পর্যন্ত একবার চোখ বুলায়। আখলিমা আবার শরীরের কাপড় টেনে নিয়ে; চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে বলে-

ছার, আইজ তইলে যাইগা।

ঠিক আছে যাও। আমি কাল সকালেই আসবো।

আখলিমা আছ্ছালামালাইকুম বলে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।

ফজর আলী সাহেব কেমন ভুভুক্ষ মানুষের মতো আখলিমার পথের দিকে চেয়ে থাকে। ভেতরে ভেতরে তখন তার এক ধরনের অজানিত ভাঙন শুরু হয়।

এনজিওর ঋণ দেয়া ও কালেশনের চাপের কারণে দুই মাস যাবত বাড়ি যেতে পারে না ফজর আলী সাহেব। বউ ছেলেমেয়ে বাড়িতে থাকে। ছেলে মেয়েদের প্রতি মন পুড়লেও বউয়ের প্রতি আজকাল আর তেমন টান অনুভব করে না ফজর আলী। বিয়ে হয়েছে তাদের প্রায় পঁচিশ বছর । বউটা ফুলে ফেঁপে কেমন ডোল হয়ে ওঠছে। নিজেরও বয়স হয়েছে পয়তাল্লিশের মতো। আগের আর সেই উন্মাদনা নেই। তবে, মাঝে মাঝে শরীর বেতাল হয়ে ওঠে। আজ আখলিমাকে দেখে শরীরে আবার সুনামী দেখা দিয়েছে। গরীবের ঘরের বউ। তার একহারা শরীর। আখলিমাকে নিয়ে এখন ফজর আলী সাহেব এক অন্য রকম ভাবনায় মেতে ওঠ।[...চলবে ]

0 Shares

৬টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ